Days At Chittagong: যেখানে মিলেছে সমুদ্র-পাহাড়, তৃতীয় পর্ব

Days At Chittagongচট্টগ্রামের পাতেঙ্গা বিচে সূর্যাস্ত

সুচরিতা সেন চৌধুরী: সেই দিনটা কাটল চট্টগ্রামের (Days At Chittagong) বিভিন্ন দ্রষ্টব্য দেখে। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের যে গল্প আমরা ছোটবেলা থেকে পড়ে এসেছি, সেই জায়গাটা দেখা হয়নি। কোনও কারণে বন্ধ ছিল। কিন্তু বিকেলে মন ভরিয়ে দিয়েছিল চট্টগ্রামের সমুদ্র সৈকত পাতেঙ্গা। অনেকটা দিঘার মতোই পরিবেশ। আলাদা করা মুশকিল। জলটা কী দিঘার থেকে বেশি স্বচ্ছ্ব ছিল? মনে পড়ছে না। তবে কয়েক ঘণ্টা ওই বিচেই সময় কাটিয়েছিলাম। বাদামভাজা খেয়েছিলাম। অন্ধকার নামলে সমুদ্র সৈকত যেভাবে মোহময়ী হয়ে ওঠে পাতেঙ্গাতেও সেই দৃশ্য দেখেছিলাম। একের পর এক ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার শব্দ। দূর থেকে ভেসে আসা কোনও নৌকোর আলো। কখনও সেটা ভ্যানিশ হয়ে যাচ্ছে কখনও আবার জেগে উঠছে। জাহাজের সাইরেন। ওয়াচ টাওয়ারের ঘুরতে থাকা আলো। সব পসরাই সাজিয়ে দিয়েছিল পাতেঙ্গা।

পর দিন পরিকল্পনা ছিল রাঙামাটির। সে এক অনবদ্য জায়গা। বাস যাত্রাটা বেশ আতঙ্কের। ওই যে ঢাকার কথা বলেছিলাম, যেখানে কোনও ট্র্যাফিক নিয়ম নেই। এই পথেও সেটাই দেখলাম। পাহাড়ি পাকদণ্ডিতে যেভাবে বাস চলল যাতায়াতের পথে, একটা সময় মনে হচ্ছিল সুস্থ শরীরে দেশে পৌঁছতে পারলে হয়। কিন্তু বাকিটা সুন্দর। অপূর্ব সুন্দর পাহাড়ি রাস্তা তার অনেকটাই লাল মাটি, পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম বিশালাকার এক লেকের ধারে।

লেকের নাম কাপতাই। যেখানে ভেসে বেড়াচ্ছে নানা রঙের নৌকো। এটাই রাঙামাটি। সেখানেও আমাদের সঙ্গী ছিলেন স্থানীয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অভিলাষ চাকমা। নৌকা করে লেকের ও পারে পৌঁছে গেলাম সুন্দর সাজানো এক দ্বীপৈ, নামপেদা টিন টিন। কেন এমন নামতা জানতে পারিনি। সেখানে রয়েছে রেস্তরাঁ, সময় কাটানোর নানা রকম ব্যবস্থা। সেখানেই একটি রেস্তরাঁয় প্রথম ব্যাম্বু চিকেন খেয়েছিলাম। সে স্বাদ আজও লেগে রয়েছে জিভে। সে দিনই ফিরে আসা চট্টগ্রামে।

Days At Chittagong

রাঙামাটির কাপতাই লেক

পর দিন, গন্তব্য এশিয়ার দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্স বাজার। কিন্তু কী ভাবে যাব! আবার উদ্ধার করলেন সেখানকার বন্ধুরা। সঙ্গে এক জন যোগ দিলেন আমাদের কক্স বাজার ঘোরানোর জন্য। তাঁর নাম লিখন। নামটাই যাঁর অসাধারণ। লিখন কবিতা লিখত তখন। ওর কবিতার বইও আমাদের উপহার দিয়েছিল। সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসা। আমি সমুদ্রপ্রেমী নই। কিন্তু কক্সবাজারের সৈকত দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। দিগন্ত বিস্তৃত সৈকত। সাদা বালি। এক কথায় এমন ঝাঁ-চকচকে ‘সি বিচ’ এর আগে দেখিনি। শুধু কী তাই? বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে রয়েছে এই কস্কবাজার। কোনও বাধা ছাঁড়া যে বিচের দৈর্ঘ্য ১৫৫ কিলোমিটার।

অনেকটা সময় কেটে গেল সেখানেই। লাঞ্চ সেরে আবার বিচে খানিকটা সময় কাটিয়ে রিকশা করে বাস স্ট্যান্ডের দিকে রওনা দিলাম। ওই যে বলেছিলাম, বাংলাদেশের ট্র্যাফিক নিয়মহীন রাস্তার শিকার হয়েছিলাম আমরাও। বিভিন্ন দিক থেকে গাড়ি আর রিকশার জটলা। তার মধ্যে আমাদের রিক্সার পিছনে আচমকা এসে জোরে ধাক্কা মারে কোনও গাড়ি। আর সেই ধাক্কায় রিকশা থেকে ছিটকে পড়েন আমার মা। খুব চোট পান। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার পর কোনও রকমে আমরা আবার রওনা দিই। ট্রেনে তুলে দিয়ে যান লিখন।

Days At Chittagong

কক্সবাজার সমু্দ্র সৈকত

এ বার চট্টগ্রাম থেকে আমাদের গন্তব্য ছিল দিনাজপুর। এখানেই আসলে আমার বোনের কাজের ফিল্ড। এই পথ আমরা পাড়ি দেব ট্রেনে। আমাদের দেশের শতাব্দীর মতো ট্রেন। এসি আর সিটিং। চট্টগ্রামের বন্ধুরা আমাদের ট্রেনে তুলে দিয়ে গেলেন। ভোরবেলা পৌঁছে গেলাম দিনাজপুর। ঠিক যেন আমাদের জলপাইগুড়ি। গাছ, রাস্তা, আকাশ, গন্ধ— সব কিছুতে মিল পাচ্ছিলাম। সেখানেও গেস্ট হাউস তৈরিই ছিল।

(তৃতীয় পর্ব)

ছবি: সংগৃহীত

1st Day At Dhaka: ঘুরতে গিয়ে সাংবাদিকতা, দ্বিতীয় পর্ব

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle