1st Day At Dhaka: ঘুরতে গিয়ে সাংবাদিকতা, দ্বিতীয় পর্ব

1st Day At Dhaka

সুচরিতা সেন চৌধুরী: কেন হঠাৎ বাংলাদেশ? সেটা ছোট্ট করে বলি। আমার বোন তখন পিএইচডি করছে। ওর গবেষণার কাজের জন্যই বাংলাদেশ যাওয়া (1st Day At Dhaka)। এবং  বিভিন্ন অংশের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। ওর  সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিলাম মা আর আমি।

ঢাকা পৌঁছনোর রাতে কী খেয়েছিলাম মনে নেই। কিন্তু এত ক্লান্ত ছিলাম যে, সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়েও পড়েছিলাম। মাঝ রাতে যখন ঘুম ভাঙল, তখন টের পেলাম ‘পাওয়ার কাট’। আর আমরা ঘেমে-নেয়ে একাকার। কিন্তু জানলা, দরজা রাতে খুলতে বারণ করে গিয়েছিলেন গেস্ট হাউসে পৌঁছে দেওয়া সেই ব্যক্তি। তাই অন্ধকারেই প্রায় জেগে বাকি রাতটা কাটল। সকালে আমাদের সঙ্গে জুটে গেল বেশ কয়েক জন— যাঁরা বোনের পূর্ব পরিচিত। সকলেই কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, তাঁদের মধ্যে যাঁদের নাম মনে পড়ছে তাঁরা কামরান, সোহেল, শাহিন আ। যাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। ব্যস! ওরা আসতেই আমাদের সব চিন্তা হাওয়া।

এই প্রথম ঢাকা শহরটাকে দেখা দিনের আলোয়। গতকাল তো অন্ধকারের মধ্যে পৌঁছেছি। তাই কিছুই বুঝতে পারিনি। এক কথায় জমজমাট। মানুষ, গাড়ি, অটো, রিকশা, গরু, ছাগল— কী নেই রাজপথে। সবার জন্যই সটান খোলা সে দোর। তার মধ্যেই কোনও রকমে কাটাতে কাটাতে এগোলাম। এই প্রথম দেখলাম একটি রাজধানী শহরে কোনও ট্র্যাফিক নিয়ম নেই। পাঁচ মাথার মোড়ে ‘যেমন ইচ্ছে গাড়ি চালাও’ প্রতিযোগিতা চলছে। তবে এখানে গাড়ি চালালে যে কেউ, যে কোনও জায়গায়, যে কোনও পরিস্থিতিতে গাড়ি চালাতে পারবে নিশ্চিত। কে কাকে কী ভাবে কাটাচ্ছে দেখতে দেখতে রীতিমতো আতঙ্ক হচ্ছিল। রিকশার সঙ্গে অটো, গাড়ির সঙ্গে বাসের সংঘর্ষও দেখলাম বার কয়েক। তেমন দুর্ঘটনার হাতে আমরাও পড়েছিলাম। সে গল্পে পরে আসছি।

1st Day At Dhaka

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার

ঢাকার দুটো দিন বিভিন্ন কাজে কেটে গেল। আমি পরিকল্পনা করেই গিয়েছিলাম, বেশ কয়েকটি স্টোরি করব। তখন আমি ‘খেলা’ ম্যাগাজিনে লিখি। আমার তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার, ইস্টবেঙ্গলে খেলে যাওয়া মুন্নার পরিবারের সঙ্গে দেখা করা আর বিপ্লবদা (বিপ্লব দাশগুপ্ত) বলে দিয়েছিলেন সামাদের কথা। আমার কাছে কারও কোনও যোগাযোগের কিছু ছিল না। না ফোন, না ঠিকানা— কিছু না। পুরো অন্ধের মতোই খুঁজতে শুরু করলাম।

ওই যে বললাম, সকালে আমাদের সঙ্গে জুড়ে গেল স্থানীয় কয়েক জন যুবক। তাঁরাই একে একে জোগাড় করে দিলেন হাবিবুল আর মুন্নার স্ত্রীর ফোন নম্বর। ফোন করে কথা বলে একই দিনে দুটো সাক্ষাৎকারের সময় ঠিক হল। সত্যি কথা বলতে কী, হাবিবুলের বাড়িতে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম সস্ত্রীক ওঁর ব্যবহারে। আমাকে জোর করে লাঞ্চ করিয়েছিল পদ্মার ইলিশ দিয়ে। সেই বন্ধুত্ব আজও অটুট। একজন অচেনা মানুষকে এত আপ্যায়ন করতে পারেন একজন সেলিব্রিটি তা ওঁদের সঙ্গে আলাপ না হলে জানতেই পারতাম না। সাক্ষাৎকারের সঙ্গে সঙ্গেই চল আড্ডা। বাংলাদেশের ক্রিকেট, বিশ্বকাপের ময়দানে ভারতকে হারানোর সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত আজও তাজা হাবিবুলের কাছে। সেখান থেকেই বাংলাদেশ  ক্রিকেট নতুন মাত্রা পেয়েছিল বিশ্ব ক্রিকেটের ময়দানে।

1st Day At Dhaka

প্রয়াত ফুটবলার মোনেম মুন্না যিনি ভারতে খেলেছেন ইস্টবেঙ্গলের হয়েও

মুন্নার বাড়ি হাবিবুলের বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না। হেঁটেই পৌঁছে গিয়েছিলাম। বাড়ির দেওয়াল জুড়ে শুধুই মুন্না। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার আগে নিজের এই ছবিগুলো বাঁধাতে দিয়ে গিয়েছিলেন মুন্না।  মৃত্যুর পর তা বাঁধাই হয়ে আসে। সেই স্মৃতির কথা বলতে বলতে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন ওঁর স্ত্রী। কত স্মৃতি ওই ছোট্ট ফ্ল্যাট বাড়িটার মধ্যে। বাবার শোক তখনও ভুলতে পারেনি মুন্নার কন্যা। তাই সাংবাদিক শুনলে ও আর সামনে আসে না। কিন্তু ছেলে পুরো সময়টাই বসেছিল মা-র পাশে।

শুনেছিলাম কীভাবে মুন্নার ফ্যান থেকে তাঁর স্ত্রী হয়ে ওঠার কাহিনী। আরও অনেক অনেক কিছু। মুন্নার খেলা আমি দেখিনি কিন্তু ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ফিরেছিলাম সে দিন। সামাদের গল্পে পরে আসছি। ঢাকায় প্রথম দু’দিন থাকার পর আমাদের ঘোরার পরিকল্পনা বলতে ছিল চট্টগ্রাম। রাতের বাসে ঢাকা থেকে উঠে পর দিন ভোর ভোর পৌঁছে গেলাম চট্টগ্রামে। ঢাকা থেকে আমাদের বাসে তুলে দিয়েছিলেন ওই বন্ধুরাই। আবার চট্টগ্রামেও বন্ধুদের বলে রেখেছিলেন। বাস স্ট্যান্ড থেকে আমাদের হোটেলে পৌঁছে দেওয়া তো বটেই, পুরো সফরটায় যেন ওঁরা থাকেন। তাই-ই ছিলেন সকলে।

(দ্বিতীয় পর্ব)

ছবি: সংগৃহীত

Journey To Dhaka: ওপার বাংলার পথে ১৪ বছর আগে, প্রথম পর্ব

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle