ওজন কমানোর কৌশল জানাচ্ছেন স্বয়ং ডাক্তার, জেনে নিন

ওজন কমানোর কৌশল

ওজন কমানোর কৌশল নিয়ে হাজির ডাক্তাররা। জিম, ডায়াট, হাঁটা, যোগা বা বাজারে বিক্রি হওয়া নানান পথ্য অনেক কিছুই তো করে দেখলেন। হু হু করে নতুনভাবে ওজন কমানোর কৌশল চমকে দিচ্ছে চিকিৎসকদেরও। লিখছেন বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যপ্রশিক্ষক ধ্রুবজ্যোতি লাহিড়ী


প্রথমেই স্পষ্ট করে লিখে দেওয়া ভাল, ও ভাবে ওজন কমে না। টিভি বা খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে বিভ্রান্তই হয়ে পড়ি আজকাল। নানা ধরনের ওষুধ আর নতুন রকমের ডায়েটের কথা দেখে-শুনে চমকে যাই। বাজারে এত রকমের ওষুধ আর প্রোডাক্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে— সবই নাকি দ্রুত ওজন কমিয়ে দেয়! মেডিক্যাল-ছাত্র হিসাবে সারা জীবন যা যা পড়ে এসেছি, পড়াশোনা আর অভিজ্ঞতার নিরিখে এত দিন যা বোধ সঞ্চয় হয়েছে, সে সব থেকেই এ লেখার প্রথম বাক্যটি লিখেছি, ও ভাবে ওজন কমে না। একা আমি নই, এই সব ওষুধ আর প্রোডাক্ট দেখে গোটা চিকিৎসক মহল বিস্মিত।

আসলে এই বিস্ময়ের কারণটা লুকিয়ে রয়েছে অন্যত্র। প্রথাগত চিকিৎসায় আমরা যেখানে ওজন কমাতে হিমশিম খাচ্ছি, সেখানে এই ধরনের ওষুধ বা প্রোডাক্ট হু হু করে কমিয়ে দিচ্ছে সকলের ওজন! এবং সেই পদ্ধতি কতটা সঠিক? ওই ধরনের ওষুধগুলি কতটা শরীরের উপরে প্রভাব ফেলবে? না, তার কোনও সদুত্তর নেই। কাজেই আমরা চিকিৎসকেরা নিশ্চিন্ত হব কী ভাবে? কোনও ডায়েট ছাড়া বা প্রতি দিনের রুটিনে কোনও পরিবর্তন ছাড়াই কী ভাবে কেউ ১৫ দিনের মধ্যে ২৫ কেজি বা ৩০ কেজি ওজন কমাতে পারে!

স্থূলতা বা চলতি ভাষায় আমরা যেটাকে মোটা বলি, বৈজ্ঞানিক ভাবে তা কিন্তু অনেক রোগের প্রমাণিত কারণ। এবং বয়সের জন্য দায়ী। একটা সমেয় আমেরিকায় স্থূলতা এতটাই বেড়েছিল যে, একে জাতীয় জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। মার্কিন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, স্থূলতা থেকে আসে মানসিক সমস্যা।

এই মানসিক অবসাদকে হাতিয়ার করে বাজারে নেমে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনা এবং ওষুধ। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতি অর্থাৎ ব্যায়াম, হাঁটা, দৌড়নো এবং সঠিক ডায়েটই পারে ওজন কমানোর একমাত্র দিশা দেখাতে।

কিছু খাবার আছে যেগুলি সত্যিই ওজন কমাতে সাহায্য করে। যেমন, গ্রিন কফি। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা বলছে, গ্রিন টি নিয়মিত পান করলে বিপাক প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। ফলে ফ্যাট গলানোর জন্য সাধারণ অবস্থার চেয়ে ৩১৮ শতাংশ শক্তি বৃদ্ধি হয়। গ্রিন কফির ৯৫ শতাংশ খাঁটি নির্যাস আমাদের শরীরে পৌঁছয়। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভিটামিনের জৈব মিশ্রণটি আমাদের দেহের ওজনকে কমিয়ে দেয় এবং স্বাস্থ্যকর রাখে। এই ধরনের খাবার বা পানীয় আরও আছে। কিন্তু সেগুলো শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শমতোই আমরা খেতে পারি। টিভি বা খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে যে কোনও ধরনের ওষুধ বা পণ্য কিনে নিজেরাই খেতে শুরু করে দেওয়াটা সবচেয়ে বড় ভুল। এতে বিপদ বেড়ে যেতে পারে।

আপনার কী কী সমস্যা রয়েছে, কোন কোন ওষুধ রোজ খাচ্ছেন— সে সব চিন্তাভাবনা করেই চিকিৎসক আপনাকে সঠিক দিশা দেখাতে পারেন। বিভিন্ন ব্যায়াম, জগিং বা জিমে গিয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা অবশ্যই করবেন। তবে সেটাও চিকিৎসকের পরামর্শে। কারণ, হার্ট, ফুসফুস বা হাঁটু-কোমরের হাড় আপনার সঙ্গে সহযোগিতা করছে কি না সেটা বুঝতে হবে। অত্যধিক ওজন কমানো আপনার শরীরে মারাত্মক অসুবিধা ডেকে আনতে পারে।

সঠিক পদ্ধতিতে ওজন কমাতে গেলে কী কী করতে হবে—

  • আপনার খাবারের মধ্যে প্রাত্যহিক ভাবে প্রোটিন রাখতে হবে যেমন, তেমনই ফ্যাট জাতীয় খাবার কম থাকতে হবে।
  • জল পান করতে হবে প্রচুর পরিমাণে।
  • প্রসেসড ফুড খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে একেবারে।
  • মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
  • বেশি পরিমাণে চকোলেট, আইসক্রিম, বাদাম খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
  • খাবারের মধ্যে ভিটামিন-সি বা লেবু রাখুন।
  • রসুন খেতে হবে।
  • ঘুমাতে হবে সঠিক সময় অনুযায়ী ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা।
  • ক্যারম সিডস, ব্লাক কামিন সিডস খেতে পারেন।

মনে রাখবেন, শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া ওজন কখনও কমে না।

সময় পেলেই হেঁটে আসুন খানিক ক্ষণ মাঠে অথবা রাস্তায়।

নিয়মিতভাবে হাঁটা, শারীরিক পরিশ্রম করা, যোগব্যায়াম করা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসই পারে আপনাকে সুস্থ ও সবল রাখতে।

(লাইফস্টাইল সংক্রান্ত আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)