অভিনব কফিন ভুলিয়ে দিচ্ছে মৃত্যু শোক, অকল্যান্ডে ঘটছে এমন ঘটনা

অভিনব কফিন

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: অভিনব কফিন বানিয়ে মৃত্যুকে উদ্‌যাপন করার রাস্তা দেখাচ্ছে নিউজিল্যান্ডের এক কফিন প্রস্তুতকারী সংস্থা। এ এক অভিনব উদ্যোগ। মৃত্যুকেও যে সেলিব্রেট করা যায় তা দেখিয়ে দিল নিউজিল্যান্ডের এক পরিবার। গোটা দেশ এখন মৃত্যু ভয়ে আক্রান্ত যা ছাপিয়ে গিয়েছে মারণ কোভিড-১৯-কেও। যেভাবে মারণ ভাইরাস একের পর এক গ্রাস করে নিচ্ছে গোটা বিশ্বকে তাতে জীবন নয় মৃত্যুই অনিবার্য হয়ে উঠেছে। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুকে সামনে দেখার যন্ত্রণা, আতঙ্ক নিয়ে বাঁচতে হচ্ছে। আর কোনও প্রিয় ব্যক্তির মৃত্যু হলে সেই যন্ত্রণা তো সারাজীবনের। সবাই জানে তিনি আর ফিরে আসবেন না তবুও তাঁর না থাকা প্রতিমুহূর্তে কষ্টে ডুবিয়ে দিতে থাকে তাঁর কাছের মানুষগুলোকে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ক্ষতই ভরে যায়, কমে আসার তার প্রভাব। কিন্তু সেই সময়টা যখন কাছের মানুষটিকে সারা জীবনের জন্য বিদায় জানাতে হয় তার কষ্টকেও কি কম করা যায়? চোখের জল ফেলতে ফেলতে ঠোঁটের কোণায় ফুটে ওঠে হাসি?

হ্যাঁ, এমন উদ্যোগই নিয়েছিল ফিল ম্যাকলিনের পরিবার তাঁর মৃত্যুর পর। চার্চে ফিল ম্যাকলিনকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য অপেক্ষা করছিল বহু মানুষ। বন্ধু, পরিবার, প্রতিবেশি, সতীর্থ—অনেক লোক। সকলের চোখেই ছিল জল। কাছের মানুষকে হারানোর কষ্ট। কিন্তু যখন ফিল ম্যাকলিনের কফিন সেখানে পৌঁছল তখন কান্না নয় হেসে উঠল গোটা হল।

বিশাল এক ক্রিম ডোনাটে করে এসেছেন যে ফিল ম্যাকলিন। আর পুরো উদ্যোগটাই ম্যাকলিনের স্ত্রী ডেবরার। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘আসলে শেষ স্মৃতিটাই সবার মনে থেকে যাবে যে, থেকে যাবে ডোনাট। মনে থাকবে ফিলের মজা করাগুলো।’’

ডোনাটের আকাড়ে কফিনটি বানিয়েছিলেন ফিলের আত্মীয় রোজ হল। নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে তাঁর কপিন বানানোর ব্যবসা। তাঁর সংস্থার নাম ডাইং আর্ট। বিভিন্ন অভিনব কফিন বানিয়ে মানুষের শেষযাত্রাকে রঙিন করে রাখতে সাহায্য করে এই সংস্থা।

ফিলের জন্য ডোনাট বানালেও এই সংস্থা এর আগে বানিয়েছে, নৌকো, দমকলের গাড়ি, চকলেট বার, বাচ্চাদের খেলনা লেগো বক্সের মতো অভিনব দেখতে কফিন। ‘দ্য ম্যাট্রিক্স’ তাঁকে অনুপ্রানিত করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এবং রোজ জানিয়েছেন, কেউ যদি নিজের ইচ্ছের কথা বলেন তাহলে তাও বানিয়ে দেবে তাঁর সংস্থা।

কী ভাবে এই ভাবনা মাথায় এল রোজ হলের?

১৫ বছর আগের ঘটনা। নিজের মৃত্যুর কথা ভেবে তিনি একটি উইল করছিলেন। তখন তাঁর মাথায় আসে তিনি কী ভাবে মৃত্যু বরণ করতে চান। তিনি ভেবে নেন তার মৃত্যুর পর শেষযাত্রাটা অন্য কে নয় তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন। তাই তিনি তাঁর উইলে লেখেন, ‘‘আমি একটি লাল বাক্স চাই যার মধ্যে অগ্নিশিখা থাকবে।’’

সেই শুরু অভিনব কফিন বানানোর কাজ। এমন কিছু আবদার এসেছে যা নিয়ে তাঁকে বেশ সমস্যায়ও পড়তে হয়েছে। আর এখন তাঁর তৈরি কফিনের মূল্য ৩০০০-৭,৫০০ নিউজিল্যান্ড ডলার পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তাঁর মতে, মৃত্যুর মানেটা বদলে গিয়েছে। মৃত্যু আসলে জীবনকে উদ্‌যাপন করা। তাঁর ভাললাগা, ইচ্ছে, বেঁচে থাকার দিনগুলোকে পালন করা। আর তা থেকেই ফিলের জন্য তৈরি হয় ডোনাট। তাঁর খুব পছন্দের ছিল বলে জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী।

ফিল নিজেই এই ডোনাট কফিনের কথা বলেছিলেন তাঁর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর। রোজ অবশ্য এত বিভিন্ন ধরনের কফিন বানানোর পর নিজের পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন এনেছেন। লাল বক্স আর অগ্নিশিখার বদলে এবার তিনি তাঁর সন্তানদের ই-মেল করে জানিয়েছেন, তিনি লেপার্ডের শেডে জি-স্ট্রিং-এর মতো দেখতে দৃশ্যমান কফিনে করে কোনও পরিধান ছাড়া যাবেন। মজা করে বলেন, তাঁর সন্তানরা জানিয়ে দিয়েছে তাঁরা যাবে না।

(আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)