পরিত্যক্ত সি-বিচে ৭ দিন আটকে থাকার পর উদ্ধার হার্নান্ডেজ

পরিত্যক্ত সি-বিচে ৭ দিনঅ্যাঞ্জেলা ও অ্যাঞ্জেলার গাড়ি

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: পরিত্যক্ত সি-বিচে ৭ দিন কী ভাবে বেঁচে ছিলেন তা আর মনে করতে পারেন না ২৩ বছরের অ্যাঞ্জেলা। ৬ জুলাই নিজের এসইউভি নিয়ে অ্যাঞ্জেলা হার্নান্ডেজ রওনা দিয়েছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশে। বিগ সার এরিয়া দিয়ে যখন যাচ্ছেন তখন হঠাৎই তাঁর চোখে পড়ে তাঁর গাড়ির সামনে চলেছে এসেছে কোনও এক পশু। তাকে বাঁচাতে গিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরান অ্যাঞ্জেলা। কুয়াশায় ঢাকা থাকায় বুঝতে পারেননি রাস্তার একদম কোণায় পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ২০০ ফিট নিচে পড়ে যায় তাঁর গাড়ি।

বেশ কিছু সময় পর জ্ঞ্যান ফেরে অ্যাঞ্জেলার। দেখেন তাঁর গাড়ির ভিতরে হাঁটু পর্যন্ত জল। চারদিকে শুধুই সমুদ্র। ড্রাইভারের পাশের জানলার কাচ অনেক কষ্টে ভাঙতে সক্ষম হন তিনি। সেখান দিয়েই বেরিয়ে এসে অনেকটা পথ সাঁতরে একটি পাথড় খুঁজে পান। তার উপরই কেটে গিয়েছে একটা সপ্তাহ। জল, খাবার কিছুই জোটেনি। পরিত্যক্ত সেই বিচে কেউ যায় না। ততক্ষণে অ্যাঞ্জেলার স্বামী পুলিশকে তাঁর নিখোঁজ হওয়ার রিপোর্ট করেছেন। কিন্তু অ্যাঞ্জেলার গাড়ি যে ওই পরিত্যক্ত বিচে পৌঁছে যেতে পারে তা কারও মাথায়ই আসেনি।

উদ্ধার হওয়ার পর হার্নান্ডেজ ফেসবুকে লেখেন, ‘‘আমার একটাই কথা মনে আছে, আমি গাড়ির মধ্যেই ছিলাম। আমি অনুভব করি জল আমার হাঁটু ছাড়িয়ে গিয়েছে। আমার মাথায় খুব ব্যথা হচ্ছিল। হাত দিয়ে দেখলাম রক্ত পড়ছে। আমি নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে জানলার কাঁচ ভাঙার চেষ্টা শুরু করলাম। আমার কাছে মাল্টিটুল বক্স ছিল। সেটা দিয়েই শেষ পর্যন্ত জানলার কাঁচ ভাঙি।’’

চাদের সঙ্গে অ্যাঞ্জেলা।

সাঁতরে অনেকটা রাস্তা পেড়িয়ে একটা পাথড়ের উপর পৌঁছে ঘুমিয়ে পড়েন অ্যাঞ্জেলা। যখন ঘুম ভাঙে দেখেন দিনের আলো। তার পর অনুভব করেন তাঁর সঙ্গে কী হয়েছে। লিখেছেন, ‘‘আমি দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝতে পারি সারা শরীরে ব্যথা। পাথড় আর সমুদ্র ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। নিজের গাড়িটা বেশ কিছুটা দুরে দেখতে পাচ্ছিলাম। অর্ধেক জলে ডোবা। বুঝতে পারি এখান থেকে চিৎকার করে মরে গেলেও কেউ শুনতে পাবে না। মাথার উপরের হাইওয়ে ধরে ছুটে চলা গাড়ির শব্দ কানে আসছিল। কিন্তু কিছু করার ছিল না। শুধু ভাবছিলাম যদি কেউ আমাকে দেখতে পায়।’’

বিরাট হিমশৈল এগিয়ে আসছে গ্রিনল্যান্ডের গ্রামকে গিলে খেতে

এক রাতে তিনি স্বপ্ন দেখেন দু’জন মানুষ তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে। পর দিন যখন সত্যিই চাদ ও চেলসি মুর তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায় তখনও অ্যাঞ্জেলার মনে হয় তিনি স্বপ্নই দেখছেন। এই দম্পতি ট্রেক করতে বেরিয়েছিলেন। তখনই তাঁরা ওই গাড়িটি দেখতে পায়। আর তাঁদের দুর থেকে দেখতে পান অ্যাঞ্জেলা। ঘোর কাটতেই তিনি সাহায্যের জন্য চিৎকার করেন। চাদ বলেন, ‘‘আমরা ওকে জিজ্ঞেস করি এই গাড়িতে তুমি ছিলে? ও বলে ওটা আমারই গাড়ি। ও আমাদের দেখে প্রাণ ফিরে পায়।’’ ওরা সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয়। চেলসিকে অ্যাঞ্জেলার কাছে রেখে চাদ সাহায্যের জন্য ছুটতে শুরু করেন। ওরাই অ্যাঞ্জেলাকে জানান, ওরা বিবাহিত দম্পতি। সমুদ্র ভালবাসেন। তাই মাঝে মাঝেই আবিষ্কার করতে বেরিয়ে পড়েন। ওরাই শেষ র্পযন্ত ৯১১তে ফোন করে সাহায্য চান।

শেষ পর্যন্ত সাত দিনের লড়াই শেষে উদ্ধার হন অ্যাঞ্জেলা। চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। পরে ডাক্তাররা তাঁকে জানান, তাঁর ব্রেন হ্যামারেজ হয়েছে, বুকের চারটি হারে চির ধরেছে। ভেঙেছে কলার বোন, ফুসফুস ঠিক মতো কাজ করছে না। চোখের ব্লাড ভেসেল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সঙ্গে আরও চোট রয়েছে। অ্যাঞ্জেলা বলেন, ‘‘আমি কৃতজ্ঞ ওই দম্পতির কাছে। আমি প্রথমে বুঝতেই পারিনি ওরা সত্যি মানুষ। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না শেষ পর্যন্ত আমাকে কেউ খুঁজে পেয়েছে।’’ চাদ বলেন, ‘‘অ্যাঞ্জেলা তুমি হিরো। তুমি অস্বাভাবিক কাজ করেছ।’’

এ যেন এক হলিউড সিনেমার চিত্রনাট্য। কখনও সিনেমায়ও দেখা যেতে পারে আর্নান্ডেজের এই কাহিনী।