জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: নিউজ ডেস্কে বসে খবর পড়ছেন তরুণী। পরনে ধূসর রঙের শার্ট। কালো-সাদা প্রিন্টেড উড়নি, কাঁধের এক পাশ থেকে নামানো। উল্টো দিকের কাঁধ বেয়ে ঝুলে রয়েছে রেশমি চুল। দু’হাত ডেস্কের উপর রাখা। আর তিনি তর তর করে উপস্থাপন করছেন একের পর এক খবর। এ দৃশ্য আক্ষরিক অর্থেই ঐতিহাসিক! কারণ, ওই উপস্থাপক মারভিয়া মালিক এক জন বৃহন্নলা।
ভিন্ন লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষ হিসাবে মারভিয়াই পাকিস্তানের প্রথম টেলিভিশন উপস্থাপক। গত শনিবার তিনি উপস্থাপক হিসাবে প্রথম বার দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছিলেন। সে দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলির মধ্যে অন্যতম ‘কোহিনুর’। সেই চ্যানেলেই লাইভ একটি অনুষ্ঠানে উপস্থাপক হিসাবে কাজ করেন মারভিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় তাঁর খবর পড়ার ভিডিও।
গ্রিনল্যান্ডে গরম, বরফ পড়ছে ইউরোপ জুড়ে
কিন্তু, কয়েক মাস আগেও মারভিয়ার জীবনটা একেবারে অন্য খাতে বইছিল। তাঁর কথায়, ‘‘রাস্তায় যে সমস্ত হিজড়েদের ভিক্ষে করতে দেখেন, তাঁদের সঙ্গে আমার গল্পটা একফোঁটাও আলাদা ছিল না!’’ কিন্তু, হঠাৎ করেই পাল্টে যায় সব। সপ্তাহ দুয়েক আগে একটি ফ্যাশন শোয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন মারভিয়া। সেখানে ক্যাটওয়াক করেন। তার পরেই পরিচিতি বাড়তে শুরু করে।
‘‘রাস্তায় যে সমস্ত হিজড়েদের ভিক্ষে করতে দেখেন, তাঁদের সঙ্গে আমার গল্পটা একফোঁটাও আলাদা ছিল না!’’ মারভিয়া মালিক
শুভেচ্ছার বন্যা বয়ে যায়। দেশ-বিদেশের ফোন— সবার কথা ভাল করে মনেও পড়ে না তাঁর। বছর একুশের মারভিয়া বলেছেন, ‘‘ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রচুর শুভেচ্ছা পেয়েছি। এ সব সত্যিই আমার পুরনো জীবন যুদ্ধের এক্কেবারে বিপরীত।’’ ওই তরুণীর মনে পড়ে যাচ্ছিল বছর ছয়েক আগের কথা। কলেজের খরচ জোগাতে ক্লাস টেন পাশ করার পর একটি সেলুনে কাজ নিয়েছিলেন। কিন্তু, সে বড় দুঃসহ সময়। তবে, সে সব মারভিয়া ভুলে গিয়েছেন। কারণ, তিনিই পাকিস্তানের প্রথম রূপান্তকামী মডেল। এ সব আনন্দ তাঁকে ভুলিয়ে দিয়েছে পুরনো সব রাগ এবং দুঃখ।
এমনিতেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে রূপান্তরকামীদের বেঁচে থাকার লড়াইটা বেশ যন্ত্রণার। যৌন পরিচয়ে তেমন করে স্বীকৃতিও মেলে না। পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট বছর নয়েক আগে নির্দেশ দেয়, রূপান্তরকামীদেরও পরিচয়পত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক। সেই পরিচয়পত্রে তাঁদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে রূপান্তরকামী পরিচয়ে ইস্যু করা হয় প্রথম পাসপোর্টও। জনগণনার সময়েও রূপান্তরকামীদের তালিকাভুক্ত করা শুরু হয়েছে গত বছর থেকে। এমনকী, খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রভিন্সে গত বছর থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হচ্ছে রূপান্তরকামী পরিচয়ে। এটা শুধু লিঙ্গ পরিচয়ের জন্য নয়, কাজের ক্ষেত্রেও সুবিধা পাচ্ছেন তাঁরা। কারণ, ওলা-উব্র-সহ বিভিন্ন ক্যাব কোম্পানিতে চাকরির ব্যবস্থা হচ্ছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের। সব মিলিয়ে রূপান্তরকামীদের সমাজের মূলস্রোতের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে সে দেশের সরকার এবং অসরকারি সংগঠনগুলির ভূমিকা অনেকটাই।
পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট বছর নয়েক আগে নির্দেশ দেয়, রূপান্তরকামীদেরও পরিচয়পত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক।
মারভিয়া সেই ভূমিকারই ফসল। নিজের ইচ্ছেকে, নিজের লিঙ্গ পরিচয়কে বাঁচিয়ে রেখে নিজের কর্মক্ষেত্রও বেছে নেওয়ার অদিকার পেয়ে স্বভাবতই খুশি ওই তরুণী। কারণ, এত দিন ভিক্ষা, শরীর বেচা এবং বারে নাচ করা ছাড়া আর কোনও পেশার কথা সমাজ ভাবতেই দিত না তাঁদের। পরিস্থিতি পাল্টাছে। আর তাতেই খুশি মারভিয়ারা।
Marvia Malik from #KoheNoor wants to thank everyone for their love and best wishes.
May you have all the success in life Marvia, More power to you !#MarviaMalik #Anchor pic.twitter.com/h96U2AECvQ— Ali Arif SamaaTv (@i_aliarif) March 24, 2018