মুসৌরি গিয়ে কেম্পটি ফলসে গা ভেজাতে পারলে তো কথাই নেই, দ্বিতীয় পর্ব

মুসৌরি

মুসৌরি শুনলেই অনেকে নাক সিঁটকে বলেন, ‘‘ধুর ধুর বড্ড ঘিঞ্জি’’। কিন্তু সেই মুসৌরিই খুলে দেয় মনের জানলা। যে জানলা দিয়ে ঢুকে আসে মেঘের দল। যে মুসৌরির রাস্তায় প্রচুর মানুষের ভিড়েও একা হওয়া যায় বার বার। গম গমে বাজারে একলা হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যাওয়া যায় দূরের পাহাড়ের বাঁকে। কী ভাবে? সেই কথাই লিখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী, আজ দ্বিতীয পর্ব।


মুসৌরির দ্বিতীয় রাতে বৃষ্টির জন্য বেশিক্ষণ লনে বসে দেরাদুনের আলোর খেলা দেখা সম্ভব হয়নি। মুহূর্তে মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছিল জানলার কাঁচ। আবছা হয়ে যাচ্ছিল দৃষ্টি। সঙ্গে ঝমঝম বৃষ্টির কনসার্ট কখনও বাড়ছিল কখনও কমছিল। রাতে যতক্ষণ জেগেছিলাম বৃষ্টির শব্দ শুনেছি। সেই রাতে ঠান্ডাটাও পড়েছিল জাঁকিয়ে। লেপ মুড়ি দিয়ে ওয়াকম্যানে তখন গুলজার বেজে যাচ্ছিল লুপে।

পরদিন সকালটা একটু আগেই হল। পরিকল্পনাটা ছিলই। তবে আগের রাতের বৃষ্টি কিছুটা সংশয় তৈরি করেছিল। আদৌ বৃষ্টি থামবে তো? নাকি দিনটা কেটে যাবে হোটেলের ঘরেই। কিন্তু সকাল হল ঝলমলে আলোয়। রেডি হয়ে সকাল সকালই বেরিয়ে পড়লাম কেমটি ফলসের উদ্দেশে। মুসৌরি ঘুরতে যাবেন আর কেমটি ফলস যাবে না তা কি হয়?

আগের রাতে বৃষ্টি হওয়ায় এদিন সকালে ঠান্ডাটাও পড়েছিল জাঁকিয়ে। মল রোজ থেকে বেরিয়ে স্থানীয় একটি গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়লাম কেমটি ফলসের উদ্দেশে। মূল রাস্তা থেকে কয়েকধাপ উঠে গিয়েছে ফলসের রাস্তা আবার একদিকে নেমেও গিয়েছে। রোপওয়ে রয়েছে এখানেও। সিঁড়ি ভাঙতে না চাইলে উঠে পড়া যায় রোপওয়েতে। আমরা যদিও সিঁড়ি ভাঙারই পরিকল্পনা করলাম।

সিঁড়ি দিয়ে সটান নেমে গেলাম একদম সেখানে যেখানে উপর থেকে এসে পড়ছে জল। সেখানে তৈরি হয়েছে একটা জলাশয়। সেই কনকনে ঠান্ডা জলে অনেকেই নেমে পড়েছেন স্নান করতে। আমার দুই বন্ধুকে আর কে আটকায়। ওরাও নেমে পড়ল এই জলে। রীতিমতো বকাঝকা করে ওদের জল থেকে তুলতে হল। তার মধ্যে হল বিপত্তি। সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় আবিষ্কার করলাম বোনের পায়ে হানা দিয়েছে জোঁক বাবাজি। বেশ রক্ত পড়ছে। তাঁকে কোনওভাবে টেনে ছাঁড়ানো যাচ্ছে না।

কেম্পটি ফলস

শেষ পর্যন্ত ওই সিঁড়িতে বসে থাকা এক বাবাজি ত্রাতার ভূমিকায় হাজির হলেন। সামনে এক ফলের দোকান থেকে তিনি জোগার করলেন বিটনুন। সাদা নুন ছিল না। আর জোঁকের জম নুন। তাতেই তিনি বোনের পা থেকে বিদায় নিলেন রক্তে টইটম্বুর হয়ে। সেখানে স্থানীয় পোষাকে ফটোসেশনের পর হোটেলের পথ ধরলাম। ততক্ষণে প্রবল ঠান্ডাটা কেটে গিয়ে সূর্যের তাপ বেড়েছে। রাস্তার পাশের দোকানে চা, ম্যাগি খেয়ে হোটেলে ফেরার পথ ধরলাম। রাস্তায় হালকা বৃষ্টিও পেলাম। দুপুর হওয়ার আগেই পৌঁছে গেলাম হোটেলে। লাঞ্চ করে সামান্য বিশ্রাম। বিকেলে আবার প্রিয় মল রোডে ঘুরে-বেড়ানো। মুসৌরির ঘিঞ্জি মল রোডই আমার খুব পছন্দ।

প্রথম যখন মুসৌরি গিয়েছিলাম তখন আমাদের হোটেলের ভিতরে একটা রেস্টুরেন্ট ছিল কিন্তু পরেরবার গিয়ে দেখলাম সেটা আর নেই। ওরা জানালো রেলের হলিডে হোমের জন্য যে অংশটা ওরা রেখেছিল সেটা আপাতত বন্ধ। কারণ রেলের তরফে প্রচুর টাকা বাকি পড়ে রয়েছে। তাই ওরা আর রেলকে দেয় না। আর সেই অংশটাও ঠিক করা হয়নি। দেখে খারাপই লাগল। ওই ফ্লোরেই ছিলাম পরের বার গিয়েও। কিন্তু সেদিকটা সুন্দর করে সাজানো গোছানো, পরিষ্কার।

রোদ ঝলমলে মুসৌরি

দু-তিনটে ঘর পরেই সেই চেনা জায়গাটা যেখান থেকে প্রথম রাতের দেরাদুনকে দেখেছিলাম, মুসৌরিকে উপভোগ করেছিলাম, মেঘের সঙ্গে খেলা করেছিলাম। যে ক’দিন ছিলাম বার বার ওই জায়গাটায় গিয়ে দাঁড়াতাম। পুরনোটা ফিরে আসতো চোখের সামনে। বদলায়নি মুসৌরি একটুও। মল রোডে আলো বেড়েছে, বেড়েছে দোকান, রেস্টুরেন্ট। এবার দশেরায় রাবনকে জ্বলতে দেখলাম মুসৌরির মল থেকে। থিক থিক করছে স্থানীয়দের ভিড় সঙ্গে ট্যুরিস্ট। তবুও ভাললাগাটা বদলালো না। আর কোনও দিন বদলাবে না।

মুসৌরির প্রথম পর্বের সঙ্গে ছিল হরিদ্বার-ঋষিকেশ। আর দ্বিতীয় পর্বের সঙ্গে ছিল ধনৌলটি। তৃতীয় পর্বে হরিদ্বার-ঋষিকেশের গল্প বলব। পরের পর্বে ধনৌলটি।

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)