Sandakphu Trekking 4: স্মৃতির পাতা থেকে, সান্দাকফু টু শ্রীখোলা

Sandakphu Trekking 4

কতটা পথ পেড়লে তবে পথিক বলা যায়? এই প্রশ্নটা সারাক্ষণই ঘোরে মনে, মাথায়। আদৌ কি আমি পথিক? নাকি শুধুই সুখি ভ্রমণার্থী (Sandakphu Trekking 4)। তবে যাই হই না কেন সব চিন্তাকে পিছনে ফেলে প্রকৃতির টানে বেরিয়ে পড়তে কার না ভাল লাগে। যেন সেই স্বপ্নই বুনতে থাকে মানুষ দিনের পর দিন। তার পর একদিন হঠাৎ করে সুযোগটা চলে আসে। আসলে মন থেকে চাইলে একদিন স্বপ্নটা সত্যি হয়। গত দু’বছর গৃহবন্দি থাকা মানুষ আবার নতুন করে ডানা মেলতে শুরু করেছে। ঘর ছেড়ে কেউ পরিবার, কেউ বন্ধু আবার কেউ একাই বেরিয়ে পড়েছে চেনা গণ্ডির বাইরে। তার আগে একটু স্মৃতির পাতা উল্টে দেখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী


আমরা একটু বেশিই রিল্যাক্স হয়ে গিয়েছিলাম। আর তার ফল পেতে হল হাতে নাতে। ভেবেছিলাম আজ তো নামা। একটু হালাকা চালেই চলা যাক। কিন্তু মুশকিলটা টের পেলাম কিছু দূর এগোতেই। সান্দাকফু থেকে শ্রীখোলার দুরত্ব ১৬ কিলোমিটার। পুরো রাস্তাটাই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। সে এক অপূর্ব পথ চলা। কিন্তু রাস্তা বলে কিছু নেই। পায়ে হাঁটাও নেই। গাইড না থাকলে হারিয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। তার মধ্যে খাড়া উতড়াই। কোথাও কোথাও গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ। সেই গাছ ডিঙিয়ে যেতে গিয়ে বিপত্তিও কম ঘটল না। তার মধ্যে পুরো পিচ্ছিল রাস্তা। প্রতি মুহূর্তে পা স্লিপ করছে। একে অপরের হাত ধরে আমরা এগিয়ে চলেছি। দ্রুত হাঁটার উপায় নেই। উতড়াই যে এত কঠিন হবে তা কখনও ভাবিনি।

আর একটি যে দল ছিল সান্দাকফুতে তারা আমাদের আগেই বেরিয়ে পড়েছিল। তাঁদের সঙ্গে রাস্তায় দেখা। তাঁরাও দেখলাম বড়সর সমস্যায় পড়েছেন। শর্টকাট রাস্তা ধরতে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁদের সঙ্গে কোনও গাইড ছিল না। তার উপর একজন পড়ে গিয়ে বেশ ভালই চোট পেয়েছেন। তাঁদের বললাম আমাদের সঙ্গে চলতে। এক সঙ্গে আবার হাঁটা শুরু হল। তার মধ্যেই যার কাছে যা অসুধ ছিল আহত ট্রেকারকে দেওয়া হয়েছে। সে কিছুটা ফিট হওয়ার পরই হাঁটার শুরু। পথে গাইড বললেন, পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে, রাস্তায় কিছু খেয়ে নেওয়ার কথা। গুরদুমে আমরা লাঞ্চ করতে থামলাম। অপূর্ব একটা হোমস্টে। শ্রীখোলায় বুকিং না থাকলে ওখানেই থেকে যেতাম। কিন্তু ওদের কাছে ভাত-ডাল আর কোয়াশের তরকারি ছাড়া কিছু নেই। খিদের পেটে তাই সই। তাও খিদে মেটার আগেই শেষ হয়ে গেল।

Sandakphu Trekking 3: স্মৃতির পাতা থেকে, কালিপোখড়ি টু সান্দাকফু

Sandakphu Trekking 4

গাইডের তাড়ায় আবার হাঁটার শুরু। তবে লাঞ্চ করতে গিয়ে যে বেশি সময় নষ্ট করে ফেলেছি তখন সেটা বুঝিনি। গুরদুম পেরিয়ে আবার ঢুকে পড়লাম গভীর জঙ্গলে। অপূর্ব সে জঙ্গল। ওই যে ট্রেকার দল আমাদের সঙ্গে রওনা দিয়েছিল তারা আমাদের গাইডের থেকে রাস্তা যেনে আগেই বেরিয়ে গিয়েছিল। জঙ্গলের পথ যে এত সুন্দর হতে পারে তা না দেখলে বুঝতাম না। যত গভীর হচ্ছে তত মনে, মাথায় জাঁকিয়ে বসছে সেই জঙ্গলের সৌন্দর্য। নাম না জানা ফুলে ভরে রয়েছে অনেক গাছ। যেন হোলি খেলছে প্রকৃতি। হাঁটতে হাঁটতে এসে পৌঁছলাম জঙ্গলঘেরা একটা ফাঁকা ভ্যালিতে। ক্লান্তি কাটাতে ওখানেই থামলাম। আসল উদ্দেশ্য অবশ্য এই অভূতপূর্ব শোভার মধ্যে সময় কাটানো। গাইড অবশ্য ভয় দেখিয়ে বললেন, এই ভ্যালিতে মাঝে মাঝেই লেপার্ড চলে আসে। আর আসবে নাই বা কেন? এ তো ওদেরই জায়গা আমরা মাঝে মাঝে এসে বিরক্ত করে ফেলি।

সবুজ ভ্যালিকে কে যেন নানা রঙের ফুলে সাজিয়ে তুলেছে। সেখানে শুয়ে আকাশ দেখার মজাই আলাদা। কোথাও কোথাও বড় বড় ঘাসের দল হাওয়ায় মাথা দোলাচ্ছে। তবে এই ভাললাগা ছেড়ে এগোতেই হল। আবারও সেই জঙ্গলে ঘেরা না চলার পথে। কোথাও কোথাও রাস্তার উপর দিয়ে ঝর্ণা বয়ে চলেছে। সেই জায়গা এতটাই পিচ্ছিল যে, যে কোনও সময় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মন্থর গতিতেই পেরতে হচ্ছে সেই পথ। পাহাড়ে যে এমন ঝুপুৎ করে অন্ধকার নামে তা জানা ছিল না। হঠাৎই খেয়াল করলাম সামনের রাস্তা আর দেখতে পাচ্ছি না। অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। তার উপর জঙ্গল। আলো থাকলেও তা জঙ্গল ভেদ করে ভিতরে ঢুকছে না। আবারও সবার হাতে জ্বলে উঠল টর্চ। শেষ টুকু ছিল বেশ কঠিন। তার মধ্যেই শুরু হল বৃষ্টি। সে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। ত্রিসীমানায় দাঁড়ানোর মতো কোনও জায়গা নেই। পাহাড়ের গা ধরে ধরে কোনও রকমে এগিয়ে যাওয়া।  বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ভরসা উইন চিটার।

Sandakphu Trekking 4

গাইডের চূড়ান্ত চেষ্টায় আমরা যখন শ্রীখোলায় পৌঁছলাম তখন বাজে রাত ৮টা। কিছু আগে থেকেই খরস্রোতা নদীর শব্দ কানে ভেসে আসছিল। বুঝলাম এই সেই শ্রী নদীর গর্জন। আর এই নদীর নামেই জায়গার নাম। সবাই জানে পাহাড়ে নদীকে খোলা বলা হয়। ঘুটঘুটে অন্ধকার শ্রীখোলার গেস্ট হাউস। এখন হয়তো সব জায়গায় বিদ্যুৎ এসেছে। কিন্তু তখন পুরো ট্যুরে কোথাও বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল না। মোমবাতি সঙ্গেই থাকত। আর হোম স্টে বা রেসর্টের হ্যাজাক। ছোটবেলায় আমাদের উত্তরবঙ্গের বাড়িতে দেখেছি। সন্ধে হলেই সেটা জ্বালিয়ে বারান্দায় রেখে দেওয়া হত যাতে রাস্তাটা দেখা যায়। যার আলো হাল ফিলের এলইডিকেও হার মানাতে পারে। যাক সে সব কথা। তবে সান্দাকফুর পর শ্রীখোলায়ও যে আমরা দু’দিন থাকার জন্য রেখেছিলাম সেটাই বড় বুদ্ধিমানের মতো কাজ হয়েছে। না হলে জায়গাটা উপভোগই করা হত না।

(পঞ্চম পর্ব আগামীকাল)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)