সিকিমে বাংলার গ্রাম, স্নো-ফল থেকে রডোডেনড্রন সব মিলবে সেখানে

সিকিমে বাংলার গ্রাম

সিকিমে বাংলার গ্রাম আছে জানতেন আপনারা? একবার ঘুরেই আসুন। দেখবেন রূপ কী করে মরসুমের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় সে গ্রামের। আমি রাবাংলার কথা বলছি। লিখলেন মেঘ বালিকা।


দূরপাল্লার ট্রেন যখন বাঁশি বাজিয়ে শহুরে স্টেশন ছাড়ে তখনই মনের মধ্যে রোমান্টিসিজমটা জাকিয়ে বসতে শুরু করে। ঘোরার স্বপ্ন তো সারাদিনই চলতে থাকে। বেরিয়ে পড়াটাই যা কঠিন। চাই অফিসের ছুটি, ট্রেনের টিকিট, হোটেল, প্রয়োজন মতো টাকা। আর এই সব ভাবতে ভাবতেই সময় হাত থেকে তাই ফুরুৎ। আমার সে সব নেই। আমার দর্শন হল, ‘‘আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব, হারিয়ে যাব আমি তোমার সাথে।’’

তাই মন চাইলেই সব ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়া ছাড়া আমার কোনও উপায় নেই। সে বারও কোনও রকমে ছুটি ম্যানেজ করে বেরিয়ে পড়েছিলাম রা বাংলার উদ্দেশে। মাসটা জানুয়ারি। কলকাতাতেই জাকিয়ে পড়েছে শীত। সঙ্গে বৃষ্টি মানে পাহাড়ে স্নোফলের ইঙ্গিত। বেরিয়ে পড়েছিলাম আমরা পাঁচজন।

পর দিন তৎকালেও জার্ভেশন করে দার্জিলিং মেলের চেপে বসা। পাহাড় ডাকছে বলে কথা। বেড়ানোর তাগিদে রাতের গুম উধাও, আড্ডাআড্ডা দিতে দিতে ভোর হয়ে গেল। সক্কাল সক্কাল স্বপ্নের নিউজলপাইগুড়িতে ট্রেন থামতেই সব ক্লান্তি উধাও। স্টেশনের বাইরে থেকে গাড়ি বুক করে সটান পৌঁছে যাওয়া দক্ষিণ সিকিমের রাবাংলা। দুপুর দুপুর পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। গাড়ি থেকে নামতেই ঠান্ডার কামর বুঝিয়ে দিল তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গিয়েছে এখানে।

এক স্থান‌ীয়ের হোটেলে মিলে গেল দুটো ঘর। অন্য হোটেল থেকে আনানো হল রুম হিটার। তাতেও ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচা গেল না। রীতিমতো কষ্টকর ঠান্ডা মুহূর্তে ভুলিয়ে দিল রাতের স্নোফল। পাহাড়ে সেটা মধ্যরাতই। তার আগেই জমিয়ে ডিনারে খাওয়া হয়েছে চিলি পর্ক। যা কিছুটা উষ্ণতা দিয়েছে। সঙ্গে সিকিমের স্থানীয় ওয়াইন।

বেড়ানোর আরও গল্প পড়তে ক্লিক করুণ এখানে

প্রথম রাতই উজার করে দিল প্রকৃতি। পেজা তুলোর মতো মিহি হয়ে আকাশ থেকে নেমে আসছে সাদা বরফের পাল। অল্প থেকে তার পরিমাণ বাড়ল ক্রমশ। নিচে দাড়িয়ে থাকা গাড়ির বনেটের উপর বরফ জমতে শুরু করেছে। রাস্তার কালো পিচ সাদা হচ্ছে। অনেকটা সময় কেটে গেল এই অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য় দেখতে দেখতে। লেপের তলায় সব গরম জামাকাপড় পড়ে সেধিয়েও ঠান্ডার জন্য ঘুম আসতে বেশ দেড়ি হল।

রালং গুম্ফা। দেখে নেওয়া যায় রাবাংলার সাইড সিনে।

পর দিন যখন সকাল হল তখন আকাশ পরিষ্কার তবে রোদ ওঠেনি। ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম সাইড সিনের উদ্দেশে। হোটেলের রাস্তা ছেড়ে গাড়ি একটা বাক নিতেই চমকে উঠলাম। রাস্তা, গাছ, পাহাড়ের গা সব সাদা হয়ে রয়েছে বরফে। ড্রাইভার বললেন, কাল সারারাত বরফ পড়েছে। বরফ নিয়ে বাঙালির আদিখ্যেতা চিরকালই বেশি। আমরাও ব্যাতিক্রম নই। যেখানেই মনে হল নেমে পড়লাম বরফ নিয়ে খেলতে। সাইড সিনে স্বাভাবিকভাবেই দেড়ি। ড্রাইভার অবশ্য আমাদের তালেই তাল মেলালেন। ফিরতে ফিরতে অন্ধকার নামল রাবাংলার পাহাড়ে। বৃষ্টি এল ঝেঁপে। সারারাত বৃষ্টি হল। সেই রাতে আর বরফ পড়েনি। পর দিন ফেরা। হঠাৎ বেরিয়ে পড়ার এটাই মজা। প্রকৃতি কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই যে উজার করে দেয়।

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)