নৈনিতালের সাইট সিন আর ভীমতালের বিরিয়ানির স্বাদ, তৃতীয় পর্ব

নৈনিতালের সাইট সিন

নৈনিতালের সাইট সিন মানে আরও অনেকগুলো লেক। এক কথায় লেকের শহর এই নৈনিতাল। দু’দিন কাটিয়ে ফেলার পর একটু অন্য স্বাদের লক্ষ্যেই সাইট সিনের জন্য বেরিয়ে পড়া। কিন্তু তা করতে গিয়ে যে স্বাদ পাওয়া গেল সেটা আজও ভুলতে পারেননি সুচরিতা সেন চৌধুরী,  আজ তৃতীয় পর্ব


হাতে সময় আছে তাই আশপাশটা দেখে আসা যেতেই পারে। রাতেই সেই পরিকল্পনাটা হয়ে গিয়েছিল। সকালে গেলে বিকেলের মধ্যেই আমার লেকের পাড়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে। সেই সকাল সকাল চা-ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়লাম। হোটেল থেকেই গাড়ি ঠিক করে দিল। বলে রাখা ভাল, গত কাল রাত থেকে আর বৃষ্টি হয়নি। হালকা রোদ উঠেছে। পাহাড়ে বৃষ্টির পর রোদ উঠলে অদৃশ্য ডানা মেলে উড়তে ইচ্ছে করে আকাশে। হাওয়ায় উড়তে থাকা গাছের পাতায় গিয়ে বসতে ইচ্ছে করে। পাতায় জমে থাকা জল ঠোঁট দিয়ে শুষে নিতে মন চায়।

পাহাড়ের পাকদণ্ডি পথে ঘুরতে ঘুরতে গাড়ি কখনও উঠছে, কখনও নামছে। পাহাড়ি পথে আমার এভাবেই চলতে বেশি ভাললাগে। থামতে ইচ্ছে করে না। রাস্তা শেষ হলেই মনটা কেমন খারাপ হয়ে যায়। তবুও থামতেই হয়। ওই পথে তিনটি আরও লেক রয়েছে। দারুণভাবে সাজানো। নওকুচিয়াতাল, সাততাল ও ভীমতাল। তিনটি লেকেই বোডিং করা যায়। আর ভীমতালের মাঝখানে রয়েছে একটা ছোট্ট দ্বীপ। নৌকো করে যেতে হয়। আর সেখানেই রয়েছে একটা রেস্টুরেন্ট। লেকের মাঝে বসে জমিয়ে লাঞ্চ করার মজাটাই আলাদা। কিন্তু ঘটল বিপত্তি সেখানেই।

সবার শেষে পৌঁছলাম ভীমতালে। ততক্ষণে দুপুর হয়ে গিয়েছে। ঘুরেও ক্লান্ত। পেটে ছুঁচো ডন দিচ্ছে। সব মিলে একটু কোথায় বসতে হবে। বিশ্রাম সঙ্গে লাঞ্চ দুটোই হবে। ড্রাইভার বলল, ‘‘লেকটা ঘুরে আসুন রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাব লাঞ্চের জন্য।’’ কিন্তু আমরা তো তখন লেকের মাঝে বসে লাঞ্চ করার রোমান্টিসিজমে ভুগতে শুরু করেছি। তাই গুলি মারো ড্রাইভারের রেস্টুরেন্টকে। নৌকো করে পৌঁছে গেলাম ছোট্ট ওই দ্বীপে।

খুব ভিড় না থাকলেও লোকজন খাচ্ছে। লেকের ধার ঘেষে পাতা টেবিলে বসলাম। সঙ্গে সঙ্গে এল মেনু কার্ড। আর বাঙালির জিভ মেনু কার্ডে বিরিয়ানি দেখলে আর বাধ মানে কোথায়। তিন জনেই একমত বিরিয়ানি। সেই যে কলকাতা ছেড়েছিলাম আর বিরিয়ানির নামও শুনিনি নৈনিতালে এই ক’দিন। অর্ডার হল চিকেন বিরিয়ানি। তিন জনের জন্য আবার তিনটে। পেটে, মনে সবেতেই খিদে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণের অপেক্ষার পর এল তিন প্লেট বিরিয়ানি। প্রথম দেখাতেই জোড় ধাক্কা খেলাম।

নৈনিতালের সাইট সিন

একজন অভয় দিয়ে বলল, দেখায় যাস না খেয়ে দেখ। তিন জনেই চামচ করে বিরিয়ানি মুখে চালান করলাম। আবার স্তব্ধতা। সাময়িক খিদে মেটাতে কয়েক চামচ কোনও রকমে গিলে বিদায় জানালাম সেই রেস্টুরেন্ট আর বিরিয়ানিকে। সবাই ভাবছেন তো এমন কী ছিল তাতে। আসলে কিছুই ছিল না, শুধু বিস্বাদ হলুদ ভাত আর তার মধ্যে শুকনো শুকনো চিকেনের টুকরো। ভীমতালের বিরিয়ানি সারাজীবন মনে থাকবে। পরে অবশ্য এটা মনে করে খুব হেসেছি আমরা। সবাইকে সাবধানও করেছি আর যাই কর, নৈনিতালে গিয়ে বিরিয়ানি খাস না।

বিকেল বিকেল ফিরে গেলাম নৈনিতালে। কেন জানি না নৈনি লেকের ধারে ফেরার জন্য মনটা ছটফট করছিল। নৈনিতারে মায়াই আলাদা। বিকেল নামছে তখন নৈনিতালের নীল জলে। অন্ধকার নামতে তখনও অনেকটা দেড়ি। লেকের পাশ থেকেই রোপওয়ে যাচ্ছে স্নো ভিউ পয়েন্টে। টিকিট কেটে উঠে পড়লাম। লেকের ধার দিয়ে, পাহাড়ের গা বেয়ে রোপওয়ে নিয়ে গেল স্নোভিউ পয়েন্টে। নিচে সারাদিন হালকা রোদ থাকলেও ওপরটা পুরোই মেঘে ঢাকা। তাই স্নো ভিউ হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।

বরং অনেকটা উপরে হওয়ায় কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। উপর থেকে যে দিকে বরফ শৃঙ্গরা সাড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সেদিকে তাকালে শুধুই মেঘের সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। গরম গরম চায়ের কাপ হাতে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে সেই মেঘের রাজত্বের দৃশ্যও মনোমুগ্ধকর। লাঞ্চটা ঠিকমতো হয়নি তাই ওখানেই চায়ের সঙ্গে গরম গরম ম্যাগি খেয়ে পেটকে শান্তি দিলাম। অন্ধকার নামছে দেখে ফেরার রোপওয়ে ধরলাম।

সন্ধেটা কেটে গেল লেকের ধারে। লেকের পাশের ছোট্ট বাগানে ঘাসের উপর বসে। এখন আর সেই বাগান নেই। পরের বার গিয়ে আর খুঁজে পাইনি। ফেরার পথে ড্রাইভার বলেছিল, এখান থেকে দিনে দিনে ঘুরে আসা যেতে পারে আলমোরা, রানিক্ষেত। শুনেই লোভ হল। রানিক্ষেত নামটার মধ্যেই একটা রোমান্টিকতা রয়েছে। আলোচনা করে ঠিক করলাম যাওয়ার কথা। ড্রাইভারকে ফোন করে জানিয়েও দেওয়া হল।

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)