রানিক্ষেত-এর গলফকোর্সে শুয়ে আকাশ দেখার অনুভূতি, শেষ পর্ব

রানিক্ষেত

রানিক্ষেত নিয়ে আগে থেকেই একটা রোমাঞ্চ ছিল মনের মধ্যে। বিশেষ করে সেখানকার অপূর্ব সুন্দর গলফকোর্স যেন সবুজের গালিচা বিছিয়ে রেখেছে প্রকৃতি। আর নৈনিতাল বেড়াতে গিয়ে রানিক্ষেত না যাওয়াটা অন্যায়, যাওয়ার পর তা নিয়ে নিশ্চিত হলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী, চতুর্থ ও শেষ পর্ব।


শেষ দিনের গন্তব্য বেশ খানিটা দূর। ৫৭-৫৮ কিলোমিটার আর আলমোরা ৬৫ কিলোমিটারের মতো। পাহাড়ি রাস্তা বলে যাতায়াতে কিছুটা সময় লাগে। তবুও রানিক্ষেতে ঘণ্টা দু’য়েক লাগলে আলমোরা পৌঁছতে লাগবে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। হোটেল থেকে তেমনটাই বলেছিল। সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট প্যাক করে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। গতপরশু রাতে যে বৃষ্টি কমেছে আর দেখা দেয়নি। ঝকঝকে রোদে ট্যুরিস্টদের মাত্রাও বেশ খানিকটা বেড়েছে বলে মনে হল। চেনা নৈনিতালকে পিছনে ফেলে আমাদের গাড়ি চলল আলমোরার দিকে।

ড্রাইভার গাড়িতে ওঠার পরেই বলেছিলেন আগে আলমোরা যাবে। তাই সই। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলে বেশ খানিকটা সময় গেল। আলমোরা পৌঁছতে ঘণ্টা চার-সাড়ে চার লেগে গেল। যদিও আমাদের কোনও তাড়া নেই। আলমোরার উচ্চতা সাড়ে পাঁচহাজার ফিটের কাছাকাছি। নৈনিতালের থেকে বেশ খানিকটা কম। তাই ঠান্ডাটাও কম। তার উপর রোদ ওঠায় একটু যেন অনেকদিন পর গরমের অনুভূতিও হল।

আলমোরা ক্যান্টনমেন্ট টাউন হওয়ায় বেশ ভিড়। পাহাড়ি গঞ্জ। রাস্তার ধার ধরেই পাহাড়ি সবজি, ফলের প্রচুর দোকান। কিছুটা এগিয়ে গেলে হোটেল, যেখানে চাইলে থাকা যেতে পারে। কিন্তু আলমোরা আমাদের মনে ধরল না। বরং আলমোরা থেকে বেরিয়ে ফাঁকা জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে কিছুটা মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস নিলাম। সঙ্গে করে আনা ব্রেকফাস্টও পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়েই খাওয়া হয়ে গেল। লক্ষ্যটা আসলে রানিক্ষেত। বিশ্বাস ছিলই হতাশ করবে না।

আলমোরা থেকে রানিক্ষেত পৌঁছে গেলাম ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে। রানিক্ষেতও মিলিটারি এলাকা। তবে শান্ত। গ্রামের বাড়িঘরকে পিছনে ফেলে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে যখন চৌবাতিয়া গার্ডেনে পৌঁছলাম তখন আবার ঠান্ডাটা লাগতে শুরু করেছে। বিশাল এই গার্ডেনে রয়েছে নানা রকমের ফলের গাছ। আর এখানে দাঁড়িয়েই এক ফ্রেমে ধরা দেয় নীলকণ্ঠ, নন্দাদেবী, নন্দাঘুন্টি, ত্রিশূলদের সাড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। তবে আকাশ পরিষ্কার থাকলে। বর্ষাকালে সেই আশা না করাই ভাল। একাবর নভেম্বরে গিয়ে এই সব শৃঙ্গকে একফ্রেমে দেখেছিলাম কৌশানি থেকে। রানিক্ষেত থেকে কিছুটা আগে।

রানিক্ষেত

সব পাহাড়ের মতো এখানেও অনেক মন্দির রয়েছে। এখানকার মন্দিরগুলোর গুন হল সেখানের প্রায় সব চাতাল থেকে দেখা যায় বরফশৃঙ্গ আর দু’হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রকৃতি। আসল লক্ষ্য এশিয়ার সর্বোচ্চ গলফকোর্সে গিয়ে গা এলিয়ে দেওয়া। ন’গর্তের এই গলফকোর্সের লোভে অনেক বড় বড় গলফার ছুটে আসেন। এই গলফকোর্সের টানটান হয়ে শুয়ে থাকা যায় আকাশের দিকে তাকিয়ে। সামনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে তুষার শৃঙ্গ। চাইলে সদস্যপদ নিয়ে যে কেউ নিজের গলফার হওয়ার শখ পূরণ করে নিতে পারেন।

এবার ফিরতে হবে সেই চেনা নৈনিতালে। এক কথায় নৈনিতালের মায়া ত্যাগ করা কঠিন। এত কিছু দেখেও নৈনিতালের টান উপেক্ষা করতে পারলাম না শেষ পর্যন্ত। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই ফিরে এলাম নৈনিতালে। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম। অদ্যই শেষ রজনী। কাল ফেরা চণ্ডিগড়, দিল্লি হয়ে কলকাতা। তার আগে ভাললাগারল ভালবাসার নৈনিতালকে জীবনের মুহূর্তগুলোর সঙ্গে বেঁধে নেওয়া।

রানিক্ষেত

নৈনিতালে বেশ ঠান্ডা। ভাল কথা, এদিন দুপুরে আমাদের খাওয়া হয়নি। তাই সবার আগে লেকের ধারের রেস্টুরেন্টে পেটপুজো সেরে লেকের পাড়ে এসে দাঁড়ালাম। ঠান্ডাটে বেশ জাঁকিয়েই পড়েছে। আকাশ বলছে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল, বিকেল গড়িয়ে রাত। কোথা দিয়ে যে কেটে গেল সময়টা। মন খারাপটা জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছে তখন থেকেই। একটু শপিং সেরে রাতের অন্ধকার গাঢ় হওয়া পর্যন্ত এদিন বাইরেই থাকলাম। চোখের সামনে চারদিনের চেনা দোকানগুলো এক এক বন্ধ হয়ে গেল। রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেল আর আমরাও ফিরে এলাম হোটেলের ঘরে।

পর দিন ফেরা। সকালটা আরও একবার নৈনিতালকে মনের ফ্রেমে ধরে রাখবো এ যাত্রায় শেষবারের মতো। শেষবারের মতো নৈনিলেকে বোটিং করতে করতে নীল আকাশ থেকে সাদা মেঘেদের দলকে নেমে আসতে দেখব নৈনিলেকের জলে। লেকের উল্টো পাড়ের স্যাঁতস্যাঁতে রাস্তাটায় একবার হেঁটে আসব। নয়না দেবীর মন্দিরের ঘণ্টার ধ্বনীর সঙ্গে একটা একটা করে খুলে যাবে দোকান। সেজে উঠবে মোমের পুতুল। আমরা বিদায় জানাব নৈনিতালকে।

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)