কাঠমান্ডু শহরের খাবার-এর স্বাদ কেন এত বিখ্যাত বুঝলাম, প্রথম পর্ব

কাঠমান্ডু শহরের খাবার

কাঠমান্ডু শহরের খাবার নেপালের রাজধানীর সব থেকে আকর্ষণীয় বিষয়। গোটা শহরে ছড়িয়ে রয়েছে সে দেশের রাজ রাজাদের নানান স্থাপত্য। যার অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল ভূমিকম্পে। তবুও কাঠমান্ডুর মাহাত্য অপরিসীম, লিখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী।


সালটা ২০১২। ক্রীড়া সাংবাদিকতার টানেই পাড়ি দিলাম নেপালের রাজধানীতে। ভারতীয় ফুটবল দল সেখানে খেলবে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ। লক্ষ্য ফুটবল সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ দেখার ইচ্ছে সঙ্গে জাঁকিয়ে বসেছিল প্রথম বিমান চাপার উত্তেজনা। সঙ্গে এক কলিগ। সেবার কলকাতা থেকে অনেক সাংবাদিকই এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ কভার করতে গিয়েছিল কাঠমান্ডুতে। সবার সরাসরি বিমান থাকলেও আমার ও আমার সেই সতীর্থর বিমান ছিল দিল্লি হয়ে। তখন জেট এয়ারওয়েজের রমরমা ছিল। কলকাতা থেকে দিল্লি, সেখানে কিছুক্ষণের অপেক্ষা তার পর দিল্লি থেকে কাঠমান্ডু। পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেল। মনে হয় বিমান বন্দরে আমার কোনও পরিচিত গাড়ি পাঠিয়েছিলেন। সঠিক মনে নেই।

হোটেল আগে থেকেই বুক করা ছিল কাঠমান্ডুর সব থেকে বিখ্যাত বিদেশিদের কাছে থামেলে। এখানে যেমন বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে তেমনই রয়েছে দেশি-বিদেশি খাবারের পসরা সাজানো রেস্টুরেন্ট। সঙ্গে নেপালের ট্র্যাডিশনাল জিনিসের বাজার। মানে এক ছাতার তলায় থাকা, খাওয়া, শপিং সব হয়ে যাবে। এক কথায় কাঠমান্ডুর হ্যাপেনিং প্লেস থামেল। হোটেলে পৌঁছে সবার প্রথমে কাজ ছিল স্থানীয় ফোন নম্বর নেওয়া। এবং টাকা বদলে নেপালি টাকা নেওয়া। দুটো কাজই হোটেল থেকেই খুব দ্রুত হয়ে গেল।

নেপালের ট্র্যাডিশনাল খাবার

প্রথম দিনটি বিশ্রামেই কাটল। কারণ আমাদের যাত্রাটা যেহেতু দিল্লি হয়ে ছিল তাই বেশ দীর্ঘ ছিল। কাক ভোরে বেরিয়ে বিকেলে কাঠমান্ডু পৌঁছেছিলাম। সেই রাতে থামেলের স্থানীয় রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলাম। কাজের ফাঁকে যে ক’টা রেস্টুরেন্টে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে সেখানে দেখেছি ছোট-বড় সব রেস্টুরেন্টেরই অন্দরসজ্জা চোখে পড়ার মতো সঙ্গে খাবারের স্বাদ অসাধারণ। বিশেষ করে সেখানকার কন্টিনেন্টাল ফুড চেখে দেখতেই হবে। এই এলাকাটি এই জন্য বিদেশিদের কাছে এত জনপ্রিয়। যে কোনও সময় থামেলে ঢুকলে মনে হবে উৎসবের আবহ। দিনে একরকম তো রাতে অন্য রকম পরিবেশ। নানা রঙের পতাকার চাদোয়ায় ঢাকা রাস্তায় যখন আলো জ্বলে ওঠে তখন মায়াবি পরিবেশ তৈরি হয়।

পরদিন সকাল থেকে শুরু হয়ে গেল কাজ। ১০ দিনে তিনটে ম্যাচ খেলেছিল ভারতীয় ফুটবল দল। দুর্ভাগ্যবশত সবগুলোই হেরেছিল। সঙ্গে হয়েছিল একগুচ্ছ বিতর্ক। যার ফলে কাজ যেমন জমে উঠেছিল তেমনই কাজের ফাঁকে ফাঁকে কাঠমান্ডু শহরটাকেও গোগ্রাসে গিলছিলাম। কখনও একা তো কখনও সতীর্থদের সঙ্গে। সুযোগ পেলেই থামেলের ঘিঞ্জি রাস্তায় ঘুরে বেড়াতাম। চকলেট কিনতাম। মনে আছে একবার একা একা মাঠে যাচ্ছি, লাঞ্চ হয়নি। স্টেডিয়ামের পাশেই একটা ছোট্ট দোকানে ঢুকেছিলাম কিছু খাবারের আশায়। দেখলাম স্থানীয় লোকেরা খাচ্ছে আর অদ্ভুতভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছে। বুঝলাম মেয়েরা যায় না  সেখানে। কেন, তা অবশ্য বুঝিনি। অনেক সংশয় নিয়ে একটা চিকেন স্যান্ডুইচ অর্ডার দিলাম। না জানি কেমন হবে। সেই সময় তার দাম নিয়েছিল ১০০টাকার কাছাকাছি নেপালি টাকায়। ভাবছি কী আসবে, আদৌ খেতে পারব কিনা? স্যান্ডুইচ নিয়ে মাঠে ঢুকতেও দেবে না। তাই ওখানে বসেই খেতে হবে সবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টির মধ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার সামনে হাজির হল এক জাম্বো স্যান্ডুইচ। সত্যি বলছি পুরোটা শেষ করতে পারিনি এবং স্বাদ নিয়ে কোনও কথা হবে না, অনবদ্য।

কাঠমান্ডুর বিখ্যাত এলাকা থামেল

কাঠমান্ডুর শহরের খাবার আজও জিভে লেগে আছে। আমরা যে হোটেলে ছিলাম সেখানে ব্রেকফাস্ট ফ্রি ছিল। এক অদ্ভুত ব্রেকফাস্ট দিত। ব্রেডের সঙ্গে বাটার বা জ্যাম তো থাকতই সঙ্গে একটা আলু, মেয়াজের সবজি দিত যা আমি কলকাতায় ফিরে অনেক বানানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুতেই সেই স্বাদ আনতে পারিনি। রেস্টুরেন্টের ছেলেটি আমাকে রেসিপিও বলে দিয়েছিল তাও পারিনি। অনবদ্য একটা স্বাদ ছিল ওই আলুর সবজির। সঙ্গে বাটার বা জ্যাম দিয়ে ব্রেড, দারুণ কম্বিনেশন। ওই লোভে আমি একদিনও বাইরে ব্রেকফাস্ট করিনি। বরং সেই ব্রেকফাস্টে এতটাই পেট ভরে যেত যে বেশিরভাগ দিন লাঞ্চ স্কিপ করে যেতাম। সঙ্গে চা, কফি। চাইলে কাবা, হুক্কা—সব কিছুরই স্বাদ নেওয়া যায় সেখানে। আজ খাবারেই থাক। কাল বলব কাঠমান্ডু শহরে প্যালেস ঘোরার গল্প।

ছবি: লেখক ও সংগৃহিত

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)