ইস্টবেঙ্গলের কোচ হয়ে শুরু থেকে কী কী হাল ধরতে হবে কুয়াদ্রাতকে

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আগামী ক্লাব মরশুম শুরু হওয়ার প্রায় একশো দিন আগে দলের নতুন কোচ ঠিক করে ফেলল ইস্টবেঙ্গল এফসি। নিঃসন্দেহে একটি দুর্দান্ত পদক্ষেপ। হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগের গত তিন মরশুমে যে রকম ভরাডুবি হয়েছে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবের, তার পর এ বার তাদের একটুও সময় নষ্ট না করে, খোল-নলচে পাল্টে, গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াতেই হবে। সারা দেশে তথা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ক্লাবের কয়েক লক্ষ সমর্থকের কথা ভেবেই ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা শুরু করা উচিত ক্লাব কর্তৃপক্ষের।

ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে যথেষ্ট সাফল্যের সঙ্গে কোচিং করে যাওয়া স্প্যানিশ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতের সঙ্গে দু’বছরের চুক্তি করে বোধহয় ক্লাবের কর্তারা ইঙ্গিত দিলেন যে, তাঁরা আগামী মরশুমে ভাল ফল করতে চান। কুয়াদ্রাতকে কোচ হিসেবে আনার সিদ্ধান্তে এর স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। এ বার দেখার, এর পরে কোচ কী কী পদক্ষেপ নিয়ে দলকে নতুন দিশা দেখাতে পারেন।

লাল-হলুদ শিবিরে যোগ দিয়েই প্রথমে যে পদক্ষেপগুলি নেবেন কুয়াদ্রাত, দলে তার প্রভাব পড়বে সারা মরশুমেই। ২০১৮-১৯-এ প্রধান কোচ হিসেবে বেঙ্গালুরু এফসি-র দায়িত্ব নিয়েই সে বার তাদের হিরো আইএসএল খেতাব এনে দিয়েছিলেন তিনি। তাই ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের অনেকেরই হয়তো  প্রত্যাশা থাকবে, ইস্টবেঙ্গলকেও প্রথম বছরই ট্রফি বা শিল্ড জেতাবেন কুয়াদ্রাত। তবে কাজটা যে অত সোজা হবে না, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

বেঙ্গালুরুতে কোচ হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে দু’বছর তিনি সেই ক্লাবের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। ফলে একেবারে নতুন ছিল না সেই দায়িত্ব ও পরিবেশ। কিন্তু কলকাতায় সবকিছুই তাঁর কাছে নতুন। তাই তাঁর মানিয়ে নিতে যেমন সময় লাগতে পারে, তেমনই ক্লাব ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে ও একটা ভাল কাজের পরিবেশ তৈরি করাও তাঁর পক্ষে বড় কাজ হবে।

প্রথমেই একটা ভাল দল গড়ে তুলতে হবে কুয়াদ্রাতকে, যার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য থাকবে। ভারতীয় ও বিদেশী ফুটবলারদের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য থাকা খুবই জরুরি। দলের ফুটবলারদের মধ্যে ভাল বোঝাপড়া গড়ে উঠতে গেলে এই ভারসাম্য থাকা খুবই জরুরি। যে বিদেশী খেলোয়াড়দের আনবেন কোচ, মানের দিক থেকে তাঁরা যেন দলের ভারতীয় ফুটবলারদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে না থাকেন, সে দিকটা নজরে রাখতে হবে নতুন কোচকে।

গতবারের দলে যেমন ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভার চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিলেন দলের বাকিরা। একমাত্র নাওরেম মহেশ সিং তাঁর সঙ্গে একটা বোঝাপড়া গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। পরে এসেছিলেন ব্রিটিশ ফরোয়ার্ড জেক জার্ভিস। কিন্তু বাকিদের সঙ্গে ক্লেটনের দূরত্ব ছিল অনেকটাই। এ বার ক্লেটন থাকছেন দলে। আরও অনেককে হয়তো নিয়ে আসা হবে। কিন্তু এবারেও যেন মাঠে সতীর্থদের সঙ্গে ক্লেটনের ও অন্যান্য বিদেশী ফুটবলারদের মানে বিস্তর ফারাক না থাকে, সে দিকে নজর দেওয়া দরকার। গতবারের চেয়ে ভাল মানের ভারতীয় ফুটবলারও আনতে হবে কুয়াদ্রাতকে।

হিরো আইএসএলে তাদের অভিষেক মরশুম থেকেই ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগেছে ইস্টবেঙ্গল এফসি। গত বারই প্রথম দলের মধ্যে উন্নতি দেখা গিয়েছিল। এই উন্নতি ধরে রাখতে লালচুঙনুঙ্গা, মহেশ, সার্থক গলুই, মোবাশির রহমান, ভিপি সুহেরদের দলে রেখে দেওয়া উচিত। এই খেলোয়াড়দের রেখে যদি আরও কিছু ভাল ফুটবলার আনতে পারে ইস্টবেঙ্গল, তা হলে এই দলটাই আগামী মরশুমে ভাল ফল দিতে পারে। দরকার একজন ভাল সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারও।

ভাল মানের ও ভারসাম্যযুক্ত একটা দল তৈরির পরে অন্তত মাস তিনেকের প্রাক মরশুম প্রস্তুতি শিবির করতে হবে কুয়াদ্রাতকে। সম্পুর্ণ নতুন একটা কম্বিনেশন তৈরি করতে গেলে মাস তিনেকও যে যথেষ্ট নয়, তা তারা আগেও টের পেয়েছে। কিন্তু আগামী মরশুমে হিরো আইএসএল যেহেতু মাস খানেক এগিয়ে আসতে পারে এবং ডুরান্ড কাপ শুরু হতে পারে তারও এক মাস আগে, তাই তাদের মে মাসের শুরু থেকেই প্রাক-মরশুম শিবির শুরু করা দরকার। পুরো দল নিয়ে এবং আধুনিক পরিকাঠামো ও সুযোগ সুবিধা যেখানে পাবেন খেলোয়াড়-কোচেরা, সে রকম কোনও জায়গায় এই প্রাক-মরশুম প্রস্তুতি শিবির আয়োজন করা দরকার।

শুধু প্রাক-মরশুম প্রস্তুতি শিবিরই নয়, মরশুম শুরুর আগেই প্রয়োজন বেশ কিছু প্রস্তুতি ম্যাচও। প্রস্তুতি শিবির প্রায় দু-আড়াই মাস হয়ে যাওয়ার পর কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজনের আর্জিও ক্লাবকে এখন থেকেই জানিয়ে রাখা উচিত নয়া কোচের। হিরো আইএসএলে খেলা দলগুলির বিরুদ্ধেই এই প্রস্তুতি ম্যাচগুলি খেলা প্রয়োজন তাদের। কয়েকটি ডুরান্ড কাপের আগে এবং বেশির ভাগই হিরো আইএসএল শুরুর আগে খেলা প্রয়োজন। যদি সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এই কাজগুলো করতে পারে লাল-হলুদ শিবির, তা হলে আগামী মরশুমে নিশ্চয়ই ভাল ফল এনে দেবে তাদের।

তবে সবার আগে দরকার একটা ভাল দল গড়া। গত মরশুমে দলের আক্রমণ বিভাগ ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। সেই তুলনায় মাঝমাঠ ও রক্ষণ সে রকম তৎপর ছিল না। ফলে আগে গোল করে এগিয়ে গিয়েও বারবার পিছিয়ে পড়তে হয়েছে তাদের। এ বারে রক্ষণ গোছাতে হবে তাদের। বেঙ্গালুরুর কোচ থাকার সময় তাঁর রক্ষণাত্মক পরিকল্পনা বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। এ বারও নিশ্চয়ই কলকাতার দলের রক্ষণকে আঁটোসাঁটো করার দিকে জোর দেবেন তিনি। সঙ্গে আক্রমণের ভারসাম্যও নিশ্চয়ই বজায় থাকবে। অতীতে হিরো আইএসএলে যে রকম সাফল্য পেয়েছেন কুয়াদ্রাত, এ বার নিশ্চয়ই তাঁর হাত ধরে তেমনই সাফল্যের মুখ দেখবে ইস্টবেঙ্গল এফসি, এমন আশা করতে পারেন সমর্থকেরা।

 (লেখা ও ছবি— আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle