বড় জয় দিয়ে সুপার কাপ শুরু করল মোহনবাগান

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: হিরো আইএসএল ট্রফি জয়ের ছন্দে যে এখনও রয়েছে তারা, তা হিরো সুপার কাপের প্রথম ম্যাচেই প্রমাণ করে দিল এটিকে মোহনবাগান। গোকুলাম এফসি-কে ৫-১ গোলে হারিয়ে মরশুমের শেষ টুর্নামেন্ট শুরু করল তারা। এ দিন এটিকে মোহনবাগান সমর্থকদের কাছে বড় জয় ছাড়াও বোনাস দলের অন্যতম সেরা দেশীয় ফরোয়ার্ড লিস্টন কোলাসোর ছন্দে ফেরা। দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে ম্যাচ জিতে নেয় এটিকে মোহনবাগান। যা তাদের টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচগুলোতেও প্রচুর আত্মবিশ্বাস জোগাবে।

সোমবার কোঝিকোড়ের ইএমএস কর্পোরেশন স্টেডিয়ামে দু-দু’টি অসাধারণ নাকল্ গোল করে এটিকে মোহনবাগানকে জয়ে পথে নিয়ে যান কোলাসো। গত মরসুমে যে ছন্দে দেখা গিয়েছিল গোয়ানিজ তারকাকে, এ দিন সেই ছন্দেই পাওয়া যায় তাঁকে। হুগো বুমৌস, মনবীর সিং ও কিয়ান নাসিরি বাকি তিনটি গোল করেন। প্রথমার্ধে কোলাসো ও বুমৌস দলকে ৩-০-য় এগিয়ে দেওয়ার পরে দ্বিতীয়ার্ধে মনবীর ও কিয়ান জয় সুনিশ্চিত করেন। গোকুলামের একমাত্র গোলটি করেন সের্গিও মেন্ডি ইগলেসিয়াস।

দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ও আশিক কুরুনিয়ানকে প্রথম এগারোর বাইরে রেখেই এ দিন দল নামান এটিকে মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দো। তাঁরা ছিলেন রিজার্ভ বেঞ্চে। গ্ল্যান মার্টিন্সও ছিলেন রিজার্ভেই। তুমুল উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় রিজার্ভ বেঞ্চকে শক্তিশালী করে রাখার জন্যই সম্ভবত তাঁর এই সিদ্ধান্ত।

এ দিন শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিল এটিকে মোহনবাগান এবং ছ’মিনিটের মাথাতেই দলকে এক দুর্দান্ত গোল করে এগিয়ে দেন লিস্টন কোলাসো, যিনি হিরো আইএসএলে একটির বেশি গোল করতে পারেননি। কোলাসোর চেনা নাকল্ শটে গোল না দেখতে পেয়ে যারা হতাশ হয়েছিলেন, তাঁরা এ দিন গোয়ানিজ ফরোয়ার্ডের গোলটি দেখলে অবশ্যই খুশি হবেন।

গোকুলামের গোলকিপার শিবিন রাজের হাত থেকে ছিটকে আসা বল বাইলাইনের সামনে থেকে কোলাসোকে ব্যাকপাস করেন হুগো বুমৌস। কোলাসো বক্সের বাঁ দিকের কোণ থেকে যে গোলমুখী শট নেন, তা গোলের ডানদিকের ওপরের কোণ দিয়ে ঢুকে জালে জড়িয়ে যায়। গোলকিপারের এখানে কিছুই করার ছিল না (১-০)।

গোল খাওয়ার পরে তা শোধ করার চেষ্টা শুরু করে গোকুলাম। কিন্তু এটিকে মোহনবাগানের শক্তিশালী রক্ষণে চিড় ধরিয়ে তাদের পক্ষে অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে বিশেষ কিছু করার উপায় ছিল না। বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল কলকাতার দলই এবং তাদের আক্রমণের ধারও ছিল একই রকম।

২৭ মিনিটের মাথায় যে গোলটি করেন লিস্টন কোলাসো, হিরো আইএসএলের পাঁচ-পাঁচটি মাস তা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। এ বার বক্সের বাইরে, গোল লাইনের প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে ফের একটি দূরপাল্লার শট নেন তিনি, যা হাওয়ায় গতিপথ পরিবর্তন করে ডানদিকের কোণ দিয়ে গোলে ঢুকে পড়ে (২-০)। সেন্টার লাইনের পিছন থেকে দূরপাল্লার উড়ন্ত ক্রসটি তাঁকে দেন আশিস রাই। গত মরশুমে এমন একাধিক গোল করেছিলেন কোলাসো। কিন্তু এই মরশুমে তাঁর পা থেকে এমন গোল প্রায় দেখাই যায়নি। যতবার চেষ্টা করেছিলেন, ব্যর্থ হয়েছেন। সুপার কাপে সম্ভবত তিনি চেনা ছন্দে ফিরলেন।

কোলাসোর মতো কার্লিং শটে গোলের চেষ্টা করেন গায়েগোও। ৪০ মিনিটের মাথায় প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে থেকে সোজা গোলে শট নেন উরুগুয়ে থেকে আসা এই ফুটবলার। যা গোলকিপার শিবিনের বাঁদিক দিয়ে গোলে ঢোকার আগেই বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে সেভ করেন তিনি।

তবে বিরতিতে তিন গোলের ব্যবধান নিয়েই ড্রেসিং রুমে যায় সবুজ-মেরুন বাহিনী। সৌজন্যে হুগো বুমৌস। সেন্টার লাইনের সামনে ডানদিক থেকে বাঁদিকে থাকা বুমৌসকে লম্বা উড়ন্ত ক্রস বাড়ান কিয়ান। সেই বল নিয়ে তীব্র গতিতে বক্সে ঢুকে কোণাকুনি শটে জালে বল জড়িয়ে দেন বুমৌস (৩-০)। গোকুলামের তিন ডিফেন্ডার তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেও সফল হননি। প্রথমার্ধে এটিকে মোহনবাগান যেখানে আটটির মধ্যে চারটি শট গোলে রাখে, সেখানে গোকুলামকে একটিমাত্র শট নিতে দেখা গেলেও একটিও গোলে রাখতে পারেনি তারা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে গোকুলামকে প্রথমার্ধের চেয়ে বেশি তৎপর হয়ে উঠতে দেখা যায়। আক্রমণ, রক্ষণ সব দিক থেকেই বাড়তি চেষ্টা দেখা যায় জসিম, আমিনু বুবা, ফারশাদ নুর, সের্গিও ইগলেসিয়াসদের মধ্যে। সবুজ-মেরুন রক্ষণকে চাপে রাখা শুরু করে তারা। ৬০ মিনিটের মাথায় নুর প্রতিপক্ষের গোলের সামনে বল পেলেও তা অসাধারণ ভাবে ক্লিয়ার করেন শুভাশিস বোস।

এই সময় পর্যন্ত গোকুলাম তিনটি পরিবর্তন এনে ফেললেও এটিকে মোহনবাগান কোনও বদল আনেনি। তাদের প্রথম পরিবর্তন আসে ৬৪ মিনিটের মাথায়। প্রায় ১৩ মাস পরে মাঠে নামেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার তিরি। গায়েগোর জায়গায় নামেন তিনি। মনবীরের জায়গায় নামেন লালরিয়ানা হ্নামতে।

মাঠ ছাড়ার আগের মিনিটেই (৬৩) অবশ্য দলের চতুর্থ গোলটি করেন মনবীর। বক্সের বাঁ দিক থেকে বুমৌস তাঁকে ক্রস বাড়ান এবং ডানদিক দিয়ে ঢোকা মনবীর কোণাকুনি শটে দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন (৪-০)। বুমৌস ও মনবীর দু’জনই কার্যত বিনা বাধায় নিজেদের কাজ করে ফেলেন। গোকুলামের একাধিক ফুটবলার ওই সময় বক্সের মধ্যে থাকলেও তাঁরা খুব একটা তৎপর ছিলেন না তখন।

৭২ মিনিটের মাথায় একটি গোল শোধ করে গোকুলাম। ওমরের ফ্রিকিক থেকে সবুজ-মেরুন বক্সের মধ্যে বল উড়ে এলে তাতে হেড করেন বুবা, যা পান গোলের সামনে থাকা সের্গিও ইগলেসিয়াস বা মেন্ডি। কার্যত অরক্ষিত অবস্থায় থাকা মেন্ডি হেড করে সেই বল ঠেলে দেন গোলে (৪-১)।

নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ১২ মিনিট আগে একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন করে এটিকে মোহনবাগান। দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, পুইতিয়া ও সুমিত রাঠি নামেন যথাক্রমে হুগো বুমৌস, কার্ল ম্যাকহিউ ও শুভাশিসের জায়গায়। ৮৬ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ পায় এটিকে মোহনবাগান, যখন পেট্রাটস মাঝমাঠের বাঁদিক থেকে দূরপাল্লার উড়ন্ত ক্রস বাড়ান ডানদিকে থাকা আশিস রাইয়ের উদ্দেশ্যে। আশিস বক্সে ঢুকে গোলের উদ্দেশ্যে শট নিলেও তা পোস্টে লাগে।

আশিস ব্যর্থ হলেও দলের পাঁচ নম্বর গোলটি কার্যত কিয়ান নাসিরিকে উপহার দেন গোকুলামের পরিবর্ত ডিফেন্ডার পবন কুমার। সবুজ-মেরুনের অর্ধ থেকে উড়ে আসা বল যখন গোকুলামের বক্সে গিয়ে পড়ে তখন সেখানে কিয়ান, পবন ও তাদের গোলকিপার ছাড়া কেউই ছিলেন না। পবন বল ক্লিয়ার করতে গেলে তা কিয়ানের গায়ে লেগে সোজা গোলে ঢুকে যায় (৫-১)। মরশুমের শুরুতে ডুরান্ড কাপে দু’টি গোল পেয়েছিলেন। তার পরে এই প্রথম গোল পেলেন কিয়ান। এটিকে মোহনবাগানের জার্সি গায়ে ছ’নম্বর গোলটি পেলেন তিনি।

তিন পয়েন্টের লক্ষ্য নিয়ে নামলেও এ রকম ব্যবধানে যে জয় পাবে তাঁর দল, তা আশা করেননি দলের কোচ হুয়ান ফেরান্দো। ম্যাচের পরে টিভিতে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “পাঁচ গোলে জয় আশা করিনি। তিন পয়েন্টের লক্ষ্যে নেমেছিলাম। ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়েছে ছেলেরা। এ বার পরের ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। আইএসএলে আমরা অনেক সুযোগ নষ্ট করেছি। এই ম্যাচেও সে রকমই সুযোগ পেয়েছি। এ বার সেগুলো ছেলেরা কাজে লাগাতে পেরেছে। এখন পরের ম্যাচও জিততে হবে। পারফরম্যান্সে আরও উন্নতি করতে হবে। সব দলের অবস্থাই একই রকম। ম্যাচের মাঝখানে প্রস্তুতির সময় খুব কম। দম ফেলার সময় নেই। তবে সেরা দলই জিতবে। আমাদেরও প্রতি ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে হবে”।

এটিকে মোহনবাগান দল: অর্শ আনোয়ার শেখ (গোল), আশিস রাই, প্রীতম কোটাল (অধি), স্লাভকো দামিয়ানোভিচ, শুভাশিস বোস (সুমিত রাঠি), কার্ল ম্যাকহিউ (পুইতিয়া), ফেদরিকো গায়েগো (তিরি), হুগো বুমৌস (দিমিত্রিয়স পেট্রাটস), লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিং (লালরিনলিয়ানা হ্নামতে), কিয়ান নাসিরি।

(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট, ছবি এআইএফএফ থেকে)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle