ভারতীয় হকির ঝুলিতে অলিম্পিক ব্রোঞ্জ, ১৯৮০-র পর এই প্রথম

ভারতীয় হকির ঝুলিতে অলিম্পিক ব্রোঞ্জ

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ভারতীয় হকির ঝুলিতে অলিম্পিক ব্রোঞ্জ পদকটা ইতিহাসকে মনে করানোর যথেষ্ট। দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ৪১টা বছর। ভারতীয় হকি প্রশাসনের টানাপড়ে‌নে বিধ্বস্ত খেলাটাই হারিয়ে গিয়েছিল ভারতীয় ক্রীড়ার গৌরব থেকে। তার পর ঘুরে দাঁড়াতে লেগে গেল এতগুলো বছর। প্রায় ৪ যুগ পর আবার অলিম্পিকের ময়দানে দাপট দেখাল ভারতীয় হকি। লেখা হল নতুন ইতিহাস। একটা সময় টানা সোনা জয়ের রেকর্ড রয়েছে ভারতের ঝুলিতে। তার পর ব্রোঞ্জ, রুপো। এবং শেষ পদক ভারত জিতেছিল সোনা ১৯৮০-তে। তার পর থেকে বার বার মুখ থুবড়ে পড়েছে ভারতীয় হকি দল। এক এক দীর্ঘ লড়াইয়ের কাহিনি। হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরিয়ে আনার লড়াই।

সোনার স্বপ্ন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল সেমিফাইনালে হারের সঙ্গেই। কিন্তু ছিল ব্রোঞ্জের স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেই শেষ লড়াই দিয়েছিলেন মনপ্রীত, রুপিন্দররা। ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়া একটা দলকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৫-৪ গোলে জয় তুলে নিতে যে কী লড়াই দিতে হয় তা সেই সময় মাঠে থাকা প্লেয়াররাই বলতে পারবেনয় যার ধারণা এত দূরে বসে কেন গ্যালারিতে বসেই পাওয়া মুশকিল। এদিন অসাধ্য সাধনই করেছে ভারতীয় পুরুষ হকি দল। ব্রোঞ্জ পদকের ম্যাচে জার্মানিকে হারিয়ে ৪১ বছর পর দেশকে অলিম্পিকের মঞ্চ থেকে পদক এনে দিয়েছে।

ম্যাচ শুরুর ২ মিনিটের মধ্যেই ডিফ্লেক্ট হওয়া গোলে জার্মানিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন তিমুর অরুজ। প্রথম কোয়ার্টারে জার্মানির মিডফিল্ডাররা ম্যাচে দাপট দেখাতে থাকে এবং পর পর ভারতের দূর্গ বাঁচাতে থাকেন শ্রীজেশ। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ভারতকে সমতায় ফেরান সিমরানজিৎ সিং। এই ম্যাচের সব থেকে উত্তেজক কোয়ার্টার হয়তো ছিল এটিই। জার্মানির হয়ে আবার ব্যবধান বাড়িয়ে নেন নিকলাস উইলেন। ৩-১ করেন বেনেডিক্ট ফুর্ক। ৩-১-এ পিছিয়ে পড়ে পর পর পেনাল্টি কর্নার তুলে নিয়ে তা গোলে রুপান্তরিত করে ভারত। প্রথম পেনাল্টি কর্নার ধাক্কা খেয়ে ফিরে এলে তাকে গোলে ফেরৎ পাঠান হার্দিক সিং। আর দ্বিতীয় গোল তুলে নেন হরমনপ্রিত সিং। ৩-৩ গোলে প্রথমার্ধ শেষ হয় ব্রোঞ্জ পদক ম্যাচের।

দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের আরও গুছিয়ে নামেন ভারতীয় প্লেয়াররা। ততক্ষণে প্রতিপক্ষকে মেপে নেওয়া হয়ে গিয়েছে। তৃতীয় কোয়ার্টারের প্রথম মিনিটেই পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে ভারতের হয়ে ৪-৩ করেন ড্র্যাগ ফ্লিকার রুপিন্দর পাল সিং। ঠিক তার ৩ মিনিটের মাথায় নিজের দ্বিতীয় ও দলের পঞ্চম গোলটি করে ফেলেন সিমরানজিৎ সিং।  তৃতীয় কোয়ার্টারেই ৫-৩-এ এগিয়ে যায় ভারত। চতুর্থ কোয়ার্টারে  লুকাস উইন্ডফেডারের গোলে ৫-৪ করে জার্মানি। শেষবেলায় শ্রীজেশের সেভটা না হলে ফল অন্যরকমও হতে পারত।

ম্যাচ শেষের হুটার বাজতেই উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভেঙে যায় ভারতীয় হকি শিবিরে। দলের অভিজ্ঞ প্লেয়ার তথা ড্র্যাগ ফ্লিকার রুপিন্দর পাল সিংকে দেখা যায় কান্নায় ভেঙে পড়তে। শ্রীজেশ সব সময়ই খ্যাপাটে। তাঁর অদ্ভুত সেলিব্রেশনের ছবি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। যে গোল ৬০ মিনিট ধরে আগলেছেন তারই মাথায় উঠে বসেন তিনি।

ম্যাচ শেষে আবেগাপ্লুত রুপিন্দর বলেন, ‘‘ভারতের মানুষ হকিকে ভুলতে বসেছিল। ওঁরা হকি ভালবাসে কিন্তু আমরা জিততে পারি এই আসা ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু আজকে আমরা জিতেছি। সবাই আমাদের থেকে ভবিষ্যতে এর থেকে বেশি কিছু আশা করতে পারে। আমাদের উপর ভরসা বজায় রাখুন।’’

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)