বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারিয়ে সুপার কাপ ওড়িশা এফসি-র

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: প্রথমবারের চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারিয়ে হিরো সুপার কাপ ২০২৩ জিতে নিল ওড়িশা এফসি। ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে উদয় হল এক নতুন চ্যাম্পিয়নের। পূর্ব ভারতের চারটি ক্লাব এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়, এটিকে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এফসি ও জামশেদপুর এফসি সাফল্য অর্জন করতে না পারলেও পূর্বের সন্মান বজায় রাখল ওড়িশা এফসি। এই প্রথম তারা কোনও সর্বভারতীয় খেতাব জিতল।

মঙ্গলবার কোঝিকোড়ের ইএমএস কর্পোরেশন স্টেডিয়ামে ওড়িশা এফসি-র ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার দিয়েগো মরিসিওর জোড়া গোলই দলকে জয়ের পথে নিয়ে যায়। প্রথমার্ধে ১৫ মিনিটের মধ্যেই দুই গোল করেন তিনি। লড়াইয়ে ফেরার জন্য বেঙ্গালুরুর কাছ থেকে যে চ্যালেঞ্জ আশা করা গিয়েছিল, তা এ দিন প্রায় দেখা যায়নি বললেই চলে।

বরং ম্যাচের শেষ দিকে কিছুটা নড়েচড়ে বসেন রয় কৃষ্ণারা। ৮৫ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান কমান সুনীল ছেত্রী। এর পর সমতা আনার জন্য তাঁরা মরিয়া হয়ে উঠলেও ট্রফির গন্ধ পেয়ে যাওয়া ওড়িশার রক্ষণ কার্যত দুর্ভেদ্য পাঁচিল তুলে দেওয়ায় আর লড়াইয়ে ফিরে আসা সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে।

এই খেতাব জয়ের ফলে এএফসি কাপের গ্রুপ লিগে যোগ্যতা অর্জন করার জন্য প্লে-অফে খেলার সুযোগও অর্জন করে নিল কলিঙ্গ বাহিনী। এই প্লে-অফে তারা গোকুলাম কেরালা এফসি-কে হারাতে পারলেই পেয়ে যাবে আগামী মরশুমে এএফসি কাপের গ্রুপ লিগের টিকিট।

এ দিন ম্যাচের শুরু থেকে কোনও দলকেই অযথা ঝুঁকি নিতে দেখা যায়নি। প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার প্রবণতা সে ভাবে দেখা যায়নি কোনও দলেরই পারফরম্যান্সে। ২৩ মিনিটের মাথায় ফ্রি কিক থেকে মরিসিও গোল পাওয়ার পর থেকে ওড়িশা কিছুটা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। কিন্তু বেঙ্গালুরু এফসি আক্রমণের ধার বাড়াতে পারেনি। সারা অর্ধে একটিও শট গোলে রাখতে পারেনি তারা। সেখানে পাঁচটি গোলমুখী শট নেয় ওড়িশা এফসি।

মরিসিওর প্রথম গোলটিতে যেমন তাঁর কৃতিত্ব অবশ্যই ছিল। বক্সের বাইরে প্রায় ৩৫-৪০ গজ দূর থেকে নিখুঁত মাপা শট গোলে রেখেছিলেন তিনি। তবে তার চেয়ে বেশি অবদান ছিল বেঙ্গালুরুর অভিজ্ঞ গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধুর। একেবারে তাঁর হাতের মধ্যে এসে যাওয়া বল যে ভাবে পিছলে গোলে ঢুকে যায়, তা অবাবনীয় (১-০)। এমন মিস তিনি জীবনে আর কখনও করেছেন কী না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

তবে ৩৮ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় গোলটিতে অবশ্যই পুরো কৃতিত্ব ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ডের এবং জেরির। বক্সের মধ্যে একটি ক্রস উড়ে এলে প্রথমে তা গোলে পাঠানোর চেষ্টা করেন জেরি। তবে তার গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ায় তা গোলে পাঠানোর দায়িত্ব নেন মরিসিও (২-০)। এই অর্ধে গোলের ব্যবধান বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন মরিসিও ও নন্দকুমার শেখর জুটি। তবে শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি প্রতিপক্ষের রক্ষণ ও গোলকিপার আরও সতর্ক হয়ে ওঠায়।

দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের ধার একই রকম ভাবে বজায় রাখে কলিঙ্গবাহিনী। বেঙ্গালুরু এফসি একসঙ্গে চারটি পরিবর্তন করে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই, যাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রবীর দাসও। উদান্ত সিংয়ের জায়গায় নামেন তিনি। বেঙ্গালুরুও ক্রমশ চাপ বাড়াতে থাকে ওডিশার ওপর। আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণে যে জমজমাট ফুটবল দেখতে অভ্যস্ত ফুটবলপ্রেমীরা, সেই ফুটবলই শুরু হয় দ্বিতীয়ার্ধের মিনিট দশেক গড়িয়ে যাওয়ার পর থেকে।

ম্যাচের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনাও বাড়ে। জোয়াও ভিক্টরকে বাধা দিতে গিয়ে হলুদ কার্ড দেখে বসেন সুনীল ছেত্রী। যদিও সে সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি বেঙ্গালুরুর দলনেতার। দু’গোলে এগিয়ে থাকা ওডিশা এফসি ক্রমশ নিজেদের রক্ষণ আরও আঁটোসাঁটো করতে শুরু করে। ফাঁকফোঁকর ক্রমশ কমতে শুরু করে তাদের ডিফেন্সে। ফলে আক্রমণের ধারও কিছুটা হলেও কমে।

এই সুযোগে চাপ বাড়াতে শুরু করেন সুনীল, রয় কৃষ্ণা, প্রবীর দাসরা। তবে হাভিয়ে ফার্নান্ডেজের অনুপস্থিতি এ দিন ভাল মতোই ভুগিয়েছে তাদের। মাঝমাঠ থেকে যে বলগুলি দেন হাভি বা মাঝে মাঝে নিজেই কীব্র গতিতে ছুটে এসে আক্রমণে যোগ দেন, তা এদিন ছিল না। ফলে বেঙ্গালুরু এফসি-র আক্রমণের চেনা ঝাঁঝ এ দিন পাওয়া যায়নি।

তবে ৮৩ মিনিটের মাথায় বেঙ্গালুরু এফসি-কে ‘লাইফলাইন’ দিয়ে দেন অনিকেত যাদব। নিজেদের বক্সের মধ্যে গোলমুখী শিবশক্তি নারায়ণকে ফাউল করে। পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিতে যেমন দেরি করেননি রেফারি, তেমনই গোল করতেও খুব একটা সময় নেননি সুনীল ছেত্রী (২-১)। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে দিয়েগো মরিসিওকে তুলে নেওয়ায় তিনি দৃশ্যতই অসন্তুষ্ট ছিলেন। হয়তো হ্যাটট্রিকের আশায় ছিলেন বলে।

পেনাল্টি থেকে গোল পাওয়ার পর থেকে সমতা আনার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন সুনীলরা এবং একাধিক শটও নেন গোল লক্ষ্য করে। কিন্তু তৎপর অমরিন্দর সিং এবং ওড়িশার রক্ষণের খেলোয়াড়রা বারবার তাদের বাধা হয়ে দাঁড়ান। ৬ মিনিট বাড়তি সময় দেন রেফারি। শেষ দশ মিনিটে খেলাটা মূলত ওড়িশার গোল এরিয়াতেই হয়। এই অঞ্চলেই বেশিরভাগ সময় দেখা যায় দুই দলের ১৮-২০জন ফুটবলারকে। কিন্তু লড়াইয়ে ফেরার জন্য যে গোলটি প্রয়োজন ছিল তাদের, সেই গোলটি করতে পারেনি বেঙ্গালুরু।

শেষ দিকের প্রবল প্রচেষ্টার জন্য বল দখলের লড়াইয়ে বেঙ্গালুরু এফসি এগিয়ে (৫৬-৪৪) থাকলেও গোলমুখী শটের সংখ্যায় তাদের অনেক পিছনে (৭-২) ফেলে দেয় ওডিশা।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle