নিকলেশ জৈন-অ্যাঞ্জেলা ফ্র্যাঙ্কো: খেলার আসরে নতুন প্রেমের গল্প লিখলেন এই দাবাড়ু জুটি

নিকলেশ জৈন-অ্যাঞ্জেলা ফ্র্যাঙ্কো

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: নিকলেশ জৈন-অ্যাঞ্জেলা ফ্র্যাঙ্কো , যোগ দিতে গিয়েছিলেন চেস অলিম্পিয়াডে। কিন্তু জীবনের খেলাটাই সেরে ফেললেন দুই দাবাড়ু। নিকলেশ জৈন ও অ্যাঞ্জেলা ফ্র্যাঙ্কো দাবার ছকেই বাঁধা পড়ে গেলেন একে অপরের সঙ্গে। দেশ বিদেশের প্রচুর প্রতিযোগীর সামনেই ঘটে গেল ঘটনাটা চকিতে। যার পর সকলেই মাতলেন উৎসবে।

ঘটনাটা ঠিক কী হয়েছিল?

ভারতের দাবাড়ু নিকলেশ জৈন আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। কিন্তু জানাননি অ্যাঞ্জেলাকে। অ্যাঞ্জেলা কলোম্বিয়ার বাসিন্দা। তিনি কিন্তু গ্র্যান্ডমাস্টার। নিকলেশ যেটা ঘটাতে যাচ্ছে তা শুধু জানতেন তিনি ও অ্যাঞ্জেলার বোন। অ্যাঞ্জেলার বোনও দাবাড়ু।

তখন প্রথম সেট সবে শেষ হয়েছে। সব প্রতিযোগিই একটু হালকা মুডে রিল্যাক্স করে নিচ্ছেন। তার মধ্যে ছিলেন নিকলেশ-অ্যাঞ্জেলাও। দ্বিতীয় সেট একটু পরেই শুরু হবে। তখনই ঘটনাটা ঘটিয়ে ফেললেন নিকলেশ। পরিকল্পনাটা চেস অলিম্পিয়াড শুরু আগেই করে রেখেছিলেন নিকলেশ। একঘর মানুষের সামনে অ্যাঞ্জেলাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলেন। অ্যাঞ্জেলাও যেন এটির জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছিলেন কলম্বিয়ান গ্র্যান্ড মাস্টার। সঙ্গে সঙ্গেই নিকলেশের সেই প্রস্তাব মেনে নেন অ্যাঞ্জেলা। হাততালিতে ফেটে পরে গোটা হল।

বৃহস্পতিবার জর্জিয়ার বাতুমি হয়ে উঠেছিল এই দুই প্রেমীর স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেওয়ার আতুরঘর। যার সাক্ষী থাকল ১৮৯টি দেশ। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে ১৮৯টি দেশ। আর এটাকেই প্রেমের রূপ দেওয়ার আদর্শ মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন নিকলেশ। চেস ডট কমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুরো ঘটনাটি খোলসা করেছেন নিকলেশ। তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় একজন দাবা খেলোয়াড়ের জন্য এর থেকে আদর্শ মঞ্চ আর কী হতে পারে।এটা আমাদের জন্য মন্দিরের মতো। যে কারণে আমার মনে হল এখানেই বলতে পারি।’’

এ দিন সকালে অ্যাঞ্জেলার সামনে হাঁটু মুরে বসে আংটি নিয়েই প্রোপোজ করেন নিকলেশ। প্রথমে চমকে গিয়েও সামলে নেন অ্যাঞ্জেলা। পরে সেখানেই নিকলেশের হাত থেকে আংটি পরেন অ্যাঞ্জেলা। নিকলেশ বলছিলেন, ‘‘আমি সকালে ওর বোনকে বলেছিলাম। ওর বোনও গ্র্যান্ড মাস্টার। ওকে আমার পরিকল্পনা বলার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই বিষয়টি করার।’’

সব ডার্বিই নতুন তারকার জন্ম দেয়

দেড় বছর আগে দু’জনের দেখা হয়েছিল এমনই এক প্রতিযোগিতার আসরে। সেই থেকে পরিচয়। কথা বলার শুরু। এর পর ১৭ হাজার ৫০০ কিলোমিটারের দূরত্ব কী ভাবে একটু একটু করে মিটে গেল তাও জানিয়েছেন নিকলেশ। বলেন, ‘‘বার্সেলোনায় একট প্রতিযোগিতায় আমরা পাশাপাশি বসে খেলছিলাম। আমি খুব ভাল একটা গেম জিতেছিলাম। তখনও ওর সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না। সেখানেই আলাপ। তার পর কথা বার্তার শুরু।’’

একটা সময় পর্যন্ত তো ভাষা সমস্যায় জেরবার ছিলেন এই যুগল। অ্যাঞ্জেলা ইংরেজি বলতে পারতেন না। নিকলেশেরও ইংরেজি অতটা ভাল নয়। তখন তা হলে কী ভাবে কথা হত?

নিকলেশ বলেন, ‘‘আমরা মোবাইলে একে অপরের কথা নিজেদের ভাষায় ট্রান্সলেট করে কথা বলতাম।’’ আসলে ভালবাসার কোনও ভাষা হয় না। না বললেও বুঝে নেওয়া যায় উল্টোদিকের মানুষটা কী বলতে চাইছে। একটা ইঙ্গিতই হয়ত যথেষ্ট। আর সেই না বলার ভাষার উপর ভর করেই নিকলেশ আর অ্যাঞ্জেলা জুটি বেঁধেছে। তৈরি করে চান ভালবাসার পৃথিবী, শান্তির আস্তানা।

গত জানুয়ারিতেই ভারতের এসেছিলেন অ্যাঞ্জেলা। গিয়েছিলেন নিকলেশের বাড়িতেও। দেখা হয় ভারতীয় এই পরিবারের সঙ্গেও। মনে ধরে যায় অ্যাঞ্জেলার। নিকলেশও দু’মাস আগে ঘুরে এসেছেন কলোম্বিয়ান শ্বশুর বাড়ি থেকে। এখন শুধু আই মেনে বিয়ের অপেক্ষা। মিয়া-বিবি তো রাজিই ছিলেন, রাজি কাজিরাও, রাজি দুই পরিবার, রাজি গোটা দাবার বিশ্ব। কে আটকায় আর এই প্রেমীদের। অ্যাঞ্জেলার সেই ভালবাসাতেই নিকলেশ শান্তির বিশ্বের কথা বলেন। বলতে পারেন ভালবাসার কোনও ভাষা নেই, নেই কোনও রঙ, নেই কোনও মাপকাঠি। ‘‘আমরা শুধু ভাল মানুষ হতে চাই যা বিশ্বের জন্য ভাল।’’