সমর্থকদের উন্মাদনায় মুগ্ধ আইরিশ তারকা কার্ল ম্যাকহিউ

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ডার্বিতেই টের পেয়েছিলেন কলকাতায় ফুটবল উন্মাদনা কোন পর্যায়ে পৌঁছয়। হিরো আইএসএল চ্যাম্পিয়নের ট্রফি নিয়ে শহরে ফেরার পর এটিকে মোহনবাগানের আইরিশ মিডফিল্ডার কার্ল ম্যাকহিউ রীতিমতো অবাক হন সমর্থকদের বিজয়োল্লাস দেখে। যে ভাবে লিগ চ্যাম্পিয়নদের বরণ করে নিয়েছিলেন এটিকে মোহনবাগানের সমর্থকেরা, সে রকম উন্মাদনা আর কখনও কোথাও দেখেননি বলে জানিয়েছেন কার্ল।

এই নিয়ে দ্বিতীয় হিরো আইএসএল খেতাব পেলেন আইরিশ তারকা। প্রথমবার পেয়েছিলেন এটিকে এফসি-র সঙ্গে ২০১৯-২০-তে। এ বার পেলেন এটিকে মোহনবাগানের সঙ্গে। গত মাসে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে পেনাল্টি শুট আউটে বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন কার্ল-রা।

ট্রফি নিয়ে দল কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পর হাজার হাজার সবুজ-মেরুন সমর্থক চ্যাম্পিয়নদের অভ্যর্থনা জানাতে আসেন। বিমানবন্দর থেকে ক্লাবে যাওয়ার পথেও রাস্তার দু’ধারে সবুজ-মেরুন পতাকা হাতে কয়েক হাজার সমর্থককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অনেকে আবার নিজেদের গাড়িতে, মোটরবাইকে টিম বাসকে অনুসরণ করে স্লোগান দিতে দিতে যান। পরের দিন মোহনবাগান ক্লাবের তাঁবুতে এক অনুষ্ঠানে দলের ফুটবলারদের ও কোচেদের অভিনন্দন জানাতে আসেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং হিরো আইএসএলে সফল হওয়ার জন্য ক্লাবকে ৫০ লক্ষ টাকা উপহার দেওয়ার ঘোষণাও করেন।

হিরো আইএসএল চ্যাম্পিয়ন দলকে নিয়ে এই তুমুল হইচই দেখে রীতিমতো অভিভূত কার্ল ম্যাকহিউ। নিজের দেশের এক ওয়েবসাইট ‘ডোনেগালাইভ’ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কলকাতায় ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা বিরল। এমনটা তিনি কোনও দিন দেখেননি।

এই সাক্ষাৎকারে কার্ল বলেন, “এই জয়টা সত্যিই বিশাল। ক্লাবের কাছে যে এর গুরুত্ব অপরিসীম, সমর্থক, ক্লাব কর্তাদের প্রতিক্রিয়া দেখলেই তা বোঝা যায়। এই সাফল্য তাদের কাছে সবচেয়ে দামী। আমরা যখন বিমানবন্দরে এসে নামি, তখন সমর্থকেরা কার্যত পাগল হয়ে যায়। ফুটবলের জন্য ওরা পাগল”।

ফাইনালের রাতেও তারা জমিয়ে সেলিব্রেট করেছিলেন বলে জানান কার্ল। বলেন, “চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাতেও গোয়ায় আমরা সবাই উল্লাসে মেতে উঠি। কিন্তু কলকাতায় ফিরে আসার দিনটা যেন পুরো আলাদা রকমের ছিল। ওটা একেবারে অন্য মাত্রার সেলিব্রেশন। বিমানবন্দর থেকে বেরোতেই আমাদের কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। কিন্তু রাস্তাঘাটে একসঙ্গে এত সমর্থককে দেখে আমাদের দারুন লেগেছে। আসলে এখানকার মানুষরা আমাদের কাছে যা চেয়েছিলেন, তা আমরা দিতে পেরেছি। সেই জন্যই আমরা এত প্রশংসা, ভালবাসা পাচ্ছি”।

লিগ টেবলে তৃতীয় দল হিসেবে প্লে-অফে উঠে এটিকে মোহনবাগান প্রথমে ওডিশা এফসি-কে হারায় ও সেমিফাইনালে গতবারের চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের দুই লেগেই গোলশূন্য ড্র করার পরে পেনাল্টি শুট আউটে জিতে ফাইনালে বেঙ্গালুরু এফসি-র মুখোমুখি হয়।

ফাইনালে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলায় ১৪ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন সবুজ-মেরুন বাহিনীর অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মিনিটে পেনাল্টি থেকেই গোল শোধ করেন সুনীল ছেত্রী। ৭৮ মিনিটে কর্নারে হেড করে দলকে এগিয়ে দেন প্রাক্তন সবুজ-মেরুন তারকা রয় কৃষ্ণা। কিন্তু ৮৫ মিনিটের মাথায় ফের পেনাল্টি পায় এটিকে মোহনবাগান ও তা থেকে ফের সমতা আনেন পেট্রাটস।

অতিরিক্ত সময় গোলশূন্য থাকার পরে ম্যাচ পেনাল্টি শুট আউটে গড়ায়। এটিকে মোহনবাগানের দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, লিস্টন কোলাসো, কিয়ান নাসিরি ও মনবীর সিং একের পর এক গোল করে চলে যান। তাঁদের গোলকিপার গোল্ডেন গ্লাভজয়ী বিশাল কয়েথ প্রথমে বেঙ্গালুরুর ব্রুনো সিলভার শট আটকাতেই জয়ের উল্লাস শুরু হয় গ্যালারিতে। শেষে সুনীল ছেত্রীর দলের মিডফিল্ডার পাবলো পেরেজ বারের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে দিতেই প্রায় শব্দের বিষ্ফোরণ ঘটে জওহরলাল নেহরু স্টেডেয়ামে। এ রকম একটা কষ্টার্জিত অথচ অনিশ্চয়তায় ভরা জয়ের পর এমন প্রতিক্রিয়া হওয়াই স্বাভাবিক। আর বঙ্গ ফুটবলপ্রেমীরা যে ফুটবলের জন্য পাগল, সে তো সারা দুনিয়া জানে। এ বার সঠিক ভাবে তার রূপ দেখতে পেলেন কার্ল ম্যাকহিউও।

এটিকে মোহনবাগান তাদের শেষ দুটি ম্যাচে জেতে কেরালা ব্লাস্টার্স ও ইস্টবেঙ্গল এফসি-র বিরুদ্ধে। কিন্তু তার আগে তারা ন’ম্যাচে মাত্র দুটিতে জিতেছিল। শেষটা যেভাবে হয়েছিল তাদের, তার প্রশংসা করে কার্ল বলেন, “শেষদিকে আমাদের সবকিছু ভাল হয়েছে। প্লে-অফের ঠিক আগে আমাদের সময়টা ভাল যায়নি। কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে এক গোলে পিছিয়ে ছিলাম আমরা। প্লে অফে জায়গা করতে হলে যে ম্যাচে আমাদের জয় অবশ্যই দরকার ছিল, সেই ম্যাচে শুরুটা এমন হবে ভাবা যায়নি।” কিন্তু ২৪ ও ৭১ মিনিটের মাথায় দু’টি গোল করে দলকে জেতান এই কার্ল-ই। সে জন্যই তিনি বলছেন, “একটা কঠিন মরশুমের পর শেষটা এত ভাল হওয়ায় আমরা আমাদের পরিশ্রমের ফল পেলাম”।

ভারতে এই নিয়ে চারটি মরশুম খেলা হয়ে গেল কার্লের। হিরো আইএসএলে ৬৬টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ভারতে আসার আগে যিনি মাদারওয়েল এফসি-তে খেলতেন, সেই কার্ল ম্যাকহিউকে নিয়ে গর্বিত তাঁর দেশের সংবাদ মাধ্যমও। তাঁর পথ ধরে এ বার হয়তো ইউরোপের আরও ফুটবলার ভারতের সেরা ফুটবল লিগে খেলার কথা ভাববেন।

কার্ল নিজেও মনে করেন, বিদেশি ফুটবলাররা এখন এই লিগকে অন্য চোখে দেখতে শুরু করেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যখন লিগ শুরু হয়েছিল, তখন ৩০-৪০ এর মধ্যে থাকা ফুটবলাররা বিদেশ থেকে এখানে খেলতে আসত। কিন্তু এখন ইউরোপের বড় বড় লিগে খেলা ফুটবলাররা এখানে আসছে, যাদের বয়স ২৫-৩০ এর আশেপাশে। লা লিগার মতো বিভিন্ন দেশের সর্বোচ্চ স্তরের লিগে খেলা ফুটবলাররাও হিরো আইএসএল নিয়ে খোঁজখবর রাখছে। অনেকে এখানে আসতেও চাইছে। এই প্রবণতা হয়তো আরও বাড়বে। এখানকার অভিজ্ঞতা আমি খুবই উপভোগ করেছি”।

(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle