এজিএম ঘিরে ধুন্ধুমার মোহনাবাগানে, আহত সচিবের জামাই

এজিএম ঘিরে ধুন্ধুমার মোহনবাগানেমঞ্চে টুটু বসু ও অঞ্জন মিত্র।

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো:  এজিএম ঘিরে ধুন্ধুমার মোহনাবাগানে ।  ক্লাবের ইতিহাসে এমন কালো দিন অতীতে কখনও আসেনি। ফুটবল মাঠে প্রতিনিয়ত নানা ঝামেলা, গন্ডোগোল, মারপিট, রক্তাক্ত হতে দেখা যায়। কিন্তু এ ভাবে ক্লাবের শীর্ষ কর্তারা একে অপরকে রক্তাক্ত করবে এমন ভরা হাটে তা কে জানত। শনিবার দুপুর থেকে সন্ধে পর্যন্ত মোহনবাগান ক্লাব তাঁবুকে যা হল তা  লজ্জার বললেও কম বলা হবে। মঞ্চ থেকে এই কথাটা বলতেও শোনা গেল সচিব অঞ্জন মিত্রকে।

শনিবার ক্লাব তাঁবুকে বসেছিল মোহনবাগানের বার্ষিক সাধারণ সভা। এ দিনের নক্কারজনক ঘটনা যেমন মোহনবাগানের ইতিহাসে কখনও হয়নি তেমনই সব ইতিহাসকে ছাপিয়ে গিয়েছে এ বারে এজিএম-এ সদস্যদের উপস্থিতি। প্রায় ১১০০ সদস্য এ দিন উপস্থিত ছিলেন সভায়। হয়ত আবহাওয়া উত্তপ্ত হবে ভেবেই এত বেশি পরিমানে সদস্যরা এসেছিলেন এজিএম-এ।

ঘটনার সূত্রপাত  সভার সভাপতির নাম ঘোষণা না করাকে কেন্দ্র করে। ক্লাব সভাপতি টুটু বসু মঞ্চে উপস্থিত থাকা স্বত্বেও কেন তাঁকে সভাপতি করে এজিএম শুরু হচ্ছে না বলে দাবি তুলতে শুরু করে টুটু পন্থীরা। অঞ্জন পন্থীরা ততক্ষণে পাল্টা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে। শুরু হয় দু’পক্ষের বচসা। তা একটা সময় ধাক্কাধাক্কি থেকে হাতাহাতিতে পৌঁছে যায়। এই অবস্থায় মঞ্চে উঠে পড়েন প্রাক্তন ফুটবলার শিশির ঘোষ, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়রা। ততক্ষণে সবাইকে শান্ত করতে মাইক হাতে তুলে নিয়েছেন ফুটবল সচিব বাবুল বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে মাইক হাতে একই সঙ্গে বলতে শুরু করেন প্রসূনও। কারও কথাই শোনা যাচ্ছিল না।

যে তিন তারকাকে নিয়ে ফুটবল বিশ্ব তোলপাড় হয় সেই তিনের দু’জনেই গোলের মধ্যে রয়েছেন

সহ-সভাপতি সৃঞ্জয় বসুকে দেখা যায় মাইক হাতে পাগলের মতে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে। তিনি কোনও কথা না বলে চিৎকার করতে থাকেন। এই ধাক্কাধাক্কির মধ্যে মঞ্চে ওঠার সময় সচিব অঞ্জন মিত্রর জামাই তথা ভারতের প্রাক্তন গোলকিপার কল্যান চৌবেকে ধাক্কা দেন সৃঞ্জয়। প্রথম ধাক্কা সামলে নিলেও পরে দ্বিতীয় কোনও এক জনের ধাক্কায় মঞ্চ থেকে নিচে পড়ে যান কল্যান। কানের পিছনে চোট লেগেছে। হাতে চিড় ধরেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

সেই সময় মঞ্চেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সচিব। ছুটে আসেন মেয়ে সোহিনী। শিশির ঘোষকে দেখা যায় অসুস্থ অঞ্জন মিত্রকে আগলে রাখতে। তার মধ্যেই অঞ্জন মিত্রর হাতে একাধিকবার মাইক তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সদস্যদের চিৎকারে তিনি তাঁর কথা শেষ করতে পারেননি। তবে যতটুকু বলতে পারেন তার নির্যাস হল, ‘‘যা পরিস্থিতি হল তা লজ্জাজনক। আদৌ এই এজিএম কোথায় গিয়ে থামবে বুঝতে পারছি না।’’ যদিও পরে সভা শুরু হয়।

নিজে মুখে সভাপতি হিসেবে টুটু বসুর নাম ঘোষণা না করলেও সদস্যদের দাবিতে মেনে নেন। তার পরই শুরু হয় সভা। এবং শেষও হয়। শেষে টুটু বসু জানিয়ে দেন, ‘‘খুব দ্রুত ক্লাবে নির্বাচন হবে। হয়তো একমাসের মধ্যেই।’’ প্রসঙ্গত, ক্লাবের দুই শীর্ষ কর্তা সৃঞ্জয় বসু ও দেবাশিস দত্ত আই লিগের পরই তাঁদের সহ-সভাপতি ও কোষাধক্ষের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। ইস্তফার কারণ হিসেবে আঙুল তোলা হয়েছিল সচিবের দিকেই। এ দিন মোহনবাগান ক্লাব তাঁবুতে যা ঘটল তা দেখে স্তম্ভিত কল্যান চৌবেও। তিনি বলেন, ‘‘চোট পেয়েছি। কিন্তু এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির ঘোরটা কাটছে না। আমি স্তম্ভিত।’’