ISL 8 KBFC vs SCEB ম্যাচে আবার হার লাল-হলুদ ব্রিগেডের

ISL 8 KBFC vs SCEB

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: এসসি ইস্টবেঙ্গলকে ন’নম্বর হারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সেরা চারে ফিরে এল কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি (ISL 8 KBFC vs SCEB)। সোমবার তিলক ময়দান স্টেডিয়ামে বসনিয়ান সেন্টার ব্যাক এনেস সিপোভিচের দ্বিতীয়ার্ধের গোলে ১-০ জয় পায় কোরালার দলটি। পুইতিয়ার কর্নার থেকে হিরো আইএসএলে তাঁর প্রথম গোলটি করে দলকে চলতি লিগের সাত নম্বর জয় এনে দেন এই দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার।

সোমবার কোনও দলই তেমন তীব্র পারফরম্যান্স দেখাতে না পারলেও আক্রমণের প্রবণতার দিক থেকে বেশ এগিয়েই ছিল কেরালার দলটি। সারা ম্যাচে যেখানে পাঁচটি শট গোলে রাখে তারা, সেখানে লাল-হলুদ শিবির মাত্র একটি শট গোলে রাখতে পেরেছে (নীচে ম্যাচের পরিসংখ্যান দেখুন)। সেই আন্তোনিও পেরোসেভিচকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আক্রমণেই বারবার ব্যর্থ হয় এসসি ইস্টবেঙ্গল শিবির। এই জয়ের ফলে ১৫ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট পেয়ে জামশেদপুর এফসি-কে (১৪ ম্যাচে ২৫) এক ধাপ নামিয়ে ছয় থেকে তিন নম্বরে উঠে এল কেরালা ব্লাস্টার্স। ফলে সেরা চার থেকে বেরিয়ে গেল মুম্বই সিটি এফসি (১৫ ম্যাচে ২৫)।

প্রথম দলে ছ’টি রদবদল করে খেলতে নামা এসসি ইস্টবেঙ্গল এ দিন শুরু থেকেই আক্রমণে ওঠার ঝুঁকি নেয়নি। কিন্তু অপ্রত্যাশিত ভাবে কেরালা ব্লাস্টার্সের পারফরম্যান্সেও কোনও তাড়াহুড়ো বা ঝড় তোলার প্রবণতা দেখা যায়নি। মূলত মাঝমাঠেই চলছিল খেলাটা। মাঝে মাঝে আক্রমণে উঠছিলেন কেরালার ফুটবলাররা। যদিও তৎপর লাল-হলুদ ডিফেন্সে আটক হয়ে যাচ্ছিলেন আলভারো ভাস্কেজ, আদ্রিয়ান লুনা-রা।

অবশ্য ১৭ মিনিটের মাথায় গোলের সামনে থেকে ভাস্কেজের হেড গোলে ঢোকার আগেই গোলকিপার শঙ্কর রায়ের হাতে জমা হয়ে যায়। আদ্রিয়ান লুনার ক্রস থেকে এই হেড করেন ভাস্কেজ। এ দিন পেরোসেভিচের সঙ্গে আক্রমণে জুটি বাঁধেন কলকাতা লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা রাহুল পাশোয়ান। ১৯ মিনিটের মাথায় ডানদিক দিয়ে বল নিয়ে উঠে রাহুলকে উদ্দেশ্য করে ইনসাইড কাট করেন রাহুলের উদ্দেশ্যে। কিন্তু রাহুল বলের কাছে পৌঁছনোর আগেই তা বিপক্ষের গোলকিপার প্রভসুখন গিলের হাতে চলে যায়। ২৭ মিনিটের মাথায় স্লাইড করে রাহুলের পা থেকে বল কেড়ে নেন গিল।

জলপানের বিরতির পরে খেলা কিছুটা পাল্টায় এসসি ইস্টবেঙ্গল। তাদের আক্রমণের ধার কিছুটা বাড়ে। তবে গোলের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা। ৩৫ মিনিটের মাথায় পেরোসেভিচের কর্নার গোলের সামনে থেকে ক্লিয়ার হয়ে যাওয়ার পর ফিরতি বল পেয়ে ফের বক্সের মধ্যে ক্রস দেন হীরা মন্ডল, যা কেরালা ডিফেন্সে ব্লক হয়ে ফের ফিরে আসে ও মহম্মদ রফিকের পায়ে পড়ে। এ বার রফিক ফের গোলে শট নিলে, তা আবার আটকে যায় রক্ষণে। প্রথমার্ধে লাল-হলুদ শিবির একটিও শট গোলে রাখতে পারেনি। কেরালা তিনটি শট গোলে রাখে এবং তিনটিই সেভ করেন শঙ্কর।

প্রথমার্ধে লাল-হলুদ রক্ষণ যথেষ্ট তৎপর থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তারা গোল খেয়ে যায় কর্নার থেকে। পুইতিয়ার মাপা কর্নার উড়ে যায় দ্বিতীয় পোস্টে, যেখানে ছিলেন প্রায় সাড়ে ছ’ফুট উচ্চতার ডিফেন্ডার এনেস সিপোভিচ। তিনি লাফিয়ে উঠে হেড করে বল জালে জড়িয়ে দেন (১-০)। তাঁকে মহম্মদ রফিক মার্ক করলেও উচ্চতায় তাঁর নাগাল পাননি। সঙ্গে ছিলেন জয়নার লরেন্সো, হনামতেও। তাঁরাও সিপোভিচকে বাধা দিতে ব্যর্থ হন।

এই গোলের পর স্বাভাবিক ভাবেই চাঙ্গা হয়ে ওঠে কেরালা ব্লাস্টার্স। তবে এসসি ইস্টবেঙ্গলও হাল ছেড়ে দেয়নি। ৫৪ মিনিটে বক্সের মাথা থেকে গোলে শট নেন রফিক। কিন্তু তা ডিফ্লেক্ট হয়ে গোললাইনের বাইরে চলে যায়। এই সময়েই রাহুল পাশোয়ানকে তুলে নিয়ে অভিজ্ঞ জ্যাকিচন্দ সিংকে নামান লাল-হলুদ কোচ। উদ্দেশ্য অবশ্যই সমতা আনা। আক্রমণে তাদের ধার বাড়েও। তবে সেটা পুরোটাই পেরোসেভিচ-কেন্দ্রিক। ৭০ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে সোজা গোলে ভলি মারেন ক্রোয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড। যা দুর্দান্ত ভাবে লাফিয়ে ফিস্ট করে দেন কেরালার গোলকিপার প্রভসুখন গিল।

৭৭ মিনিটের মাথায় একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন আনে এসসি ইস্টবেঙ্গল। নাওরেম মহেশ, ওয়াহেংবাম লুয়াং ও সৌরভ দাস নামেন যথাক্রমে হনামতে, কিয়াম ও রফিকের জায়গায়। এই তিন পরিবর্তনে আর যাই হোক আক্রমণে ধার বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা ছিল বলে মনে হয়নি। ৮২ মিনিয়ের মাথায় ফ্রান্স সোতা বক্সের মাথা থেকে ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে গোলের উদ্দেশ্যে শট নিলেও তা গোলের কয়েক ইঞ্চি দূর দিয়ে বেরিয়ে যায়। এই শটটা ছাড়া সোতার কাছ থেকে এ দিন গোলের সুযোগ তৈরির চেষ্টা দেখা যায়নি।

ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে ৮৮ মিনিটের মাথায় ডিফেন্ডার লরেন্সোকে বসিয়ে ফরোয়ার্ড শুভ ঘোষকে নামান লাল-হলুদ কোচ। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। তবে ম্যাচের একেবারে শেষ মিনিটে এসসি ইস্টবেঙ্গল শিবির হারের চেয়েও খারাপ একটা খবর পায়, যখন আদ্রিয়ান লুনার সিন বোনে পা দিয়ে আঘাত করে হলুদ কার্ড দেখেন হীরা মন্ডল। এটি চতুর্থ হলুদ কার্ড হীরার। ফলে পরের ম্যাচে খেলতে পারবেন না তিনি।          

এসসি ইস্টবেঙ্গল দল: শঙ্কর রায় (গোল), জয়নার লরেন্সো (শুভ ঘোষ), হীরা মন্ডল, নাওচা সিং, ফ্রানিও পর্চে, মহম্মদ রফিক (সৌরভ দাস),  লালরিনলিয়ানা হনামতে (নাওরেম মহেশ), ফ্রান সোতা, অমরজিৎ কিয়াম (ওয়াহেংবাম লুয়াং), আন্তোনিও পেরোসেভিচ, রাহুল পাশোয়ান (জ্যাকিচন্দ সিং)।

(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)