ISL 8 ATKMB vs JFC: প্রথম চারের বাইরে এটিকে মোহনবাগান

ISL 8 ATKMB vs JFC

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ISL 8 ATKMB vs JFC: মুম্বই সিটি এফসি-র পরে এ বার জামশেদপুর এফসি। টানা দু’টি ম্যাচে হারতে হল এটিকে মোহনবাগানকে। সোমবার বাম্বোলিমের অ্যাথলেটিক্স স্টেডিয়ামে জামশেদপুর এফসি ২-১-এ হারাল আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দলকে। হিরো আইএসএলে এই প্রথম সবুজ-মেরুন শিবিরকে হারাল ইস্পাতনগরীর দল।

এ দিন ৩৭ মিনিটের মাথায় গোল করে দলকে এগিয়ে দেন জামশেদপুরের তরুণ মিডফিল্ডার সেমিনলেন দুঙ্গেল। এটিকে মোহনবাগান গোলশোধ করার একাধিক সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি। ৮৪ মিনিটের মাথায় পরিবর্ত হিসেবে নেমেই মিডফিল্ডার আলেকজান্দার লিমা দলের ব্যবধান বাড়িয়ে দেন। ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে জেএফসি গোলকিপার রেহনিশের ভুল কাজে লাগিয়ে একটি গোল শোধ করেন প্রীতম কোটাল।

তার পরেও আরও সাত মিনিট সময় পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা। এই হারের সেরা চার থেকে বেরিয়ে গেল কলকাতার দল। চার ম্যাচে ছয় পয়েন্ট পেয়ে তারা এখন পাঁচ নম্বরে। জামশেদপুর চার ম্যাচে আট পয়েন্ট নিয়ে মুম্বই সিটি এফসি-র পরেই, দুই নম্বরে।

এ দিন রক্ষণে আশুতোষ মেহতা ও সুমিত রাঠিকে দিয়ে শুরু করান আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। ৩-৪-৩-এ দলকে সাজান তিনি। শুভাশিসকে এ দিন লেফট উইঙ্গার হিসেবে ব্যবহার করেন তিনি। অন্যদিকের উইংয়ের দায়িত্বে ছিলেন মনবীর। একেবারে সামনে, আক্রমণে ছিলেন তিন বিদেশি জনি কাউকো, রয় কৃষ্ণা ও হুগো বুমৌস।

ISL 8 ATKMB vs JFC

অন্য দিকে, জামশেদপুরের কোচ আওয়েন কোইল ৪-৪-২ ছকে শুরু করান তাঁর দলকে। নেরিয়ুস ভাল্সকিস ও গ্রেগ স্টিউয়ার্টের বিপজ্জনক জুটিকে আটকানোর জন্য তিন ডিফেন্ডারকে রাখেন হাবাস। তিন ব্যাকের লাইন-আপে তিনি রাখেন আশুতোষ, প্রীতম ও সুমিতকে। সবুজ-মেরুন রিজার্ভ বেঞ্চে এ দিন ছিলেন চোট সারিয়ে ফেরা তিরি।

প্রথমার্ধে জামশেদপুরের আধিপত্যই দেখা যায়। আক্রমাত্মক জেএফসি বিপক্ষকে বেশ চাপে ফেলে দেয় শুরু থেকেই। এটিকে মোহনবাগানের গোলকিপার অমরিন্দরকে বেশ ব্যস্ত রাখে তারা। অন্য দিকে, সবুজ-মেরুনের আক্রমণ বিভাগ কিন্তু এ দিন প্রথম ৪৫ মিনিটে বিপক্ষের গোল এরিয়ার ধারে কাছেও আসতে পারেনি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে রয় কৃষ্ণার যে শট এলি সাবিয়া ক্লিয়ার করে দেন, সেটা ছাড়া আর তেমন কিছুই সুযোগ তৈরি করতে পারেনি এটিকে মোহনবাগান।

তিন দুর্দান্ত বিদেশি আক্রমণ বিভাগে থাকা সত্ত্বেও তাঁরা কড়া পাহাড়ায় থাকায় বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারেননি রয় কৃষ্ণারা। উল্টো দিকে নেরিয়ুস ভাল্সকিস ও গ্রেগ স্টিউয়ার্টের যুগলবন্দি ঝড় তুলে দেন সবুজ-মেরুন ডিফেন্সে। ঘন ঘন আক্রমণ সামলাতে ব্যস্ত ছিলেন প্রীতম, সুমিতরা।

ক্রমশ চাপ বাড়ার ফলে ৩৭ মিনিটের মাথায় এটিকে মোহনবাগান রক্ষণের বাঁধ ভেঙে যায় এবং সেমিনলেন দুঙ্গেল অসাধারণ এক গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। মাঝ মাঠ থেকে বল ধরে বিপক্ষের বক্সের সামনে গিয়ে জিতেন্দ্র সিং তাঁর ডানদিকে দুঙ্গেলকে পাস করেন। তিনি সেই বল নিয়ে বক্সে ঢুকে নিখুঁত কোণাকুণি শটে জালে বল জড়িয় দেন।

৪৩ মিনিটের মাথায় রয় কৃষ্ণার গোলমুখি শট প্রথমে গোলকিাপার রেহনিশের হাতে লেগে ছিটকে যায় ও অপর পোস্টের দিকে গড়িয়ে যায়। সেই বল গোললাইনে সেভ করেন এলি সাবিয়া। গোলদাতা দুঙ্গেল এই সময়েই চোট পেয়ে বেরিয়ে যান ও তাঁর জায়গায় নামেন বরিস সিং।

প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মিনিটে বাঁ দিকের উইং থেকে দেওয়া শুভাশিসের ক্রসে হেড করে গোলে ঠেলার জন্য এগিয়ে যান রয়। কিন্তু গোলের সামনে পিটার হার্টলের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় সেই সুযোগ আর পাননি তিনি। সুযোগ নষ্টের ধারাবাহিকতা এই সময়েও বজায় থাকে।

৬১ মিনিটের মাথায় সুমিত রাঠির জায়গায় প্রবীর দাস ও কার্ল ম্যাকহিউয়ের জায়গায় ডেভিড উইলিয়ামসকে নামান হাবাস। উদ্দেশ্য অবশ্যই আক্রমণের ধার বাড়ানো। কিন্তু ততক্ষণে রক্ষণে জমাট বাঁধা শুরু করে দিয়েছে জামশেদপুর। ৬৫ মিনিটের মাথায় ম্যাচের প্রথম কর্নার পায় এটিকে মোহনবাগান। হুগো বুমৌসের কর্নার কিক সোজা বক্সের মধ্যে থাকা এলি সাবিয়ার হাতে লাগলেও তা রেফারির নজর এড়িয়ে যায়।

রেফারি সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে হয়তো পেনাল্টি পেয়ে যেত সবুজ-মেরুন বাহিনী। পরে ম্যাচের শেষ দিকে আরও একটি ঘটনায় গ্রেগ স্টিউয়ার্টও তাঁদের বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল করে পার পেয়ে যান রেফারির ভুলে।

৭০ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে হুগো বুমৌসের নেওয়া ভাসানো কর্নার কিকে মাথা ছোঁয়াতে পারলে গোল পেয়ে যেতেন মনবীর সিং। কিন্তু লাফিয়ে উঠেও তা পারেননি তিনি। এর পরেই মনবীরকে বসিয়ে লিস্টন কোলাসোকে মাঠে নামান হাবাস।

৭২ মিনিটের মাথায় মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে গোলের দিকে ছুটে যাওয়া হুগো বুমোসকে পিছন থেকে পায়ে আঘাত করায় হলুদ কার্ড দেখতে হয় জামশেদপুরের বঙ্গ মিডফিল্ডার প্রণয় হালদারকে। মেজাজ হারিয়ে প্রণয়কে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন বুমৌস। ফলে তাঁকেও হলুদ কার্ড দেখতে হয়। এই ঘটনার জেরে প্রায় মিনিট দুয়েক খেলা বন্ধ থাকে।

এই সময়ে গোল শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে এটিকে মোহনবাগান। ৮০ মিনিটের মাথায় ডান দিক দিয়ে ওঠা বুমৌস ও কাউকো বল দেওয়া নেওয়া করে বাঁ দিকে লিস্টন কোলাসোকে দিলে তিনি বক্সের বাইরে ডেভিড উইলিয়ামসকে ব্যাক পাস করেন ও সেই বল সোজা গোলে শট নেন ডেভিড, যা রেহনিশ লাফিয়ে উঠে ফিস্ট করে বার করে দেন।

স্টিউয়ার্টের পরিবর্ত অ্যালেক্স লিমা মাঠে নেমেই জামশেদপুরের দ্বিতীয় গোলটি করেন। সোজা গোলে শট নেন তিনি এবং ৮৪ মিনিটের মাথায় গোলের ডানদিকের কোণ দিয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি। এর পাঁচ মিনিট পরেই, অর্থাৎ ৮৯ মিনিটের মাথায় একটি গোল শোধ করেন প্রীতম কোটাল।

বাঁ দিক থেকে হুগো বুমৌসের গোলমুখী ভাসানো ক্রস রেহনিশের হাতে লেগে ছিটকে আসে আশুতোষের কাছে। তাঁর গোলমুখী শট গোললাইনের সামনে থাকা প্রীতমের পায়ে লেগে ঢুকে যায় গোলে।

পরের মিনিটেই কাউকোর দূরপাল্লার শট অল্পের জন্য গোলে ঢোকেনি। এই সময়েই প্রণয় হালদারকে স্টেচারে শুইয়ে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। ছ’মিনিটের বাড়তি সময় দেওয়া হলেও এটিকে মোহনবাগান তা কাজে লাগাতে পারেনি।

আগামী শনিবার সবুজ-মেরুন বাহিনীর পরবর্তী ম্যাচ চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে। তার আগে বৃহস্পতিবার জামশেদপুর মাঠে নামবে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে।

এটিকে মোহনবাগান দল: অমরিন্দর সিং (গোল), সুমিত রাঠি (প্রবীর দাস), আশুতোষ মেহতা, প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বোস, জনি কাউকো, কার্ল ম্যাকহিউ (ডেভিড উইলিয়ামস), লেনি রড্রিগেজ, হুগো বুমৌস, মনবীর সিং (লিস্টন কোলাসো), রয় কৃষ্ণা (অধি)।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

সৌজন্যে: আইএসএলের ওয়েবসাইট