আইএসএলের ডার্বিতে টানা ছ’নম্বর জয় এটিকে মোহনবাগানের

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ফের ডার্বি জয়ের হাসি মুখে নিয়ে মাঠ ছাড়লেন এটিকে মোহনবাগান তারকারা। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জেতার আনন্দ বুকে নিয়ে স্টেডিয়াম থেকে বাড়ির পথে গেলেন সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা। অন্য দিকে ১৪৯০ দিন ধরে চিরপ্রতিদ্বন্দীদের হারাতে না পারার যন্ত্রণা বুকে নিয়ে আরও এক ডার্বির শেষ বাঁশি শুনতে হল লাল-হলুদ জনতাকে। ফের ব্যর্থতার জ্বালায় জর্জরিত হয়ে মাঠ ছাড়ল ইস্টবেঙ্গল এফসি। হিরো আইএসএলের তিন মরশুমে এই নিয়ে টানা ছ’নম্বর ম্যাচে জয় পেল এটিকে মোহনবাগান। ফল ২-০।

শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ষাট হাজারেরও বেশি ফুটবলপ্রেমীর সামনে এ দিন সারা ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করে সবুজ-মেরুন বাহিনী। ৬৮ মিনিটের মাথায় সার্বিয়ান ডিফেন্ডার স্লাভকো দামিয়ানোভিচ ও ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে পেট্রাটসের সুযোগসন্ধানী গোলে ম্যাচ জিতে নেয় এটিকে মোহনবাগান। অস্ট্রেলীয় ডিফেন্ডার ব্রেন্ডান হ্যামিল কার্ড সমস্যায় এ দিন খেলতে পারেননি। কিন্তু তাঁর জায়গায় নামা সার্বিয়ান ডিফেন্ডার স্লাভকোই বহু প্রতিক্ষীত গোলটি এনে দেন দলকে। কার্ল ম্যাকহিউও এ দিন চোটের জন্য খেলতে পারেননি। তবে হুগো বুমৌসের উপস্থিতি বরাবরের মতো দলকে রীতিমতো চাঙ্গা করে তোলে।

এ দিন সারা ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে প্রবল চাপে রাখে এটিকে মোহনবাগান। গোলের সংখ্যা ছাড়াও বল পজেশন (৫৭-৪৩), গোলে শট (৪-১), পাসের সংখ্যা (৪৫১-৩০৪) সব দিক থেকেই এগিয়ে ছিল তারা (নীচের পরিসংখ্যান দেখুন)। এই জয়ের ফলে তিন নম্বরে থেকে লিগ শেষ করল এটিকে মোহনবাগান। সুতরাং, নক আউটের প্রথম ম্যাচে তাদের ঘরের মাঠে ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে খেলতে হবে।

মুম্বই সিটি এফসি-কে হারানোর পরে যতটা আগ্রাসন প্রত্যাশা করা হয়েছিল লাল-হলুদ শিবিরের কাছ থেকে ততটা তারা দিতে পারেনি এই ম্যাচে। পুরো ম্যাচে এ দিন তারা তিনটির বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। সেখানে এক ডজন গোলের সুযোগ পায় এটিকে মোহনবাগান। এই পরিসংখ্যানগুলি থেকেই আন্দাজ করা যেতে পারে, কতটা দাপট দেখিয়ে এদিনের ম্যাচ জেতে গতবারের সেমিফাইনালিস্টরা।

এটিকে মোহনবাগান এ দিন দলে দুটি পরিবর্তন করে ৪-২-৩-১-এ খেলা শুরু করে। এই প্রথম হুগো বুমৌস ও ফেদরিকো গায়েগোকে এক সঙ্গে খেলতে দেখা যায়। ইস্টবেঙ্গলের চেনা ৪-৪-২ ছকে ও প্রথম এগারোয় কোনও পরিবর্তন ছিল না। যে দল নিয়ে মুম্বই সিটি এফসি-কে হারিয়েছিল তারা, সেই দলই এ দিন নামায় লাল-হলুদ বাহিনী। কিন্তু সেই দলই যে চিরপ্রতিদ্বন্দীদের সামনে কার্যত আত্মসমর্পণ করবে, তা ভাবা যায়নি।

শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দেয় এটিকে মোহনবাগান। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আশিক কুরুনিয়ান ও প্রীতম কোটালকে গোলে শট নিতে দেখা যায়। তবে দু’বারই লক্ষ্যভ্রষ্ট হন তাঁরা। ১১ মিনিটের মাথায় প্রতিপক্ষের বক্সের ডি-এর মাথায় ফ্রিকিক থেকে বারের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে দেন দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। ডানদিক দিয়ে মনবীর ও বাঁ দিক দিয়ে আশিক আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করেন বারবার। আশিক সচেষ্ট থাকলেও মনবীরকে কিন্তু চেনা ছন্দে পাওয়া যায়নি এ দিন। তবে ব্যাকহিল করে স্লাভকোকে তাঁর গোল সাজিয়ে দেওয়া বহুদিন মনে থাকবে সবার।

১৮ মিনিটের মাথায় ডানদিক দিয়ে ওঠা আশিস রাইয়ের মাপা ক্রসে ঠিকমতো শট নিতে পারলে ম্যাচের প্রথম গোলটি পেয়ে যেতেন বুমৌস। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। ২০ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক দিয়ে ইস্টবেঙ্গল বক্সে ঢুকে কোণাকুনি গোলে শট নেন পেট্রাটস। কিন্তু সেই শট নেওয়ার আগেই অফসাইডের পতাকা তুলে দেন সহকারী রেফারি। ৩৪ মিনিটের মাথায় আশিস রাই বক্সের বাইরে থেকে সোজা গোলে শট নেন, যা বাঁচান কমলজিৎ সিং। প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডাররাও বেশ তৎপর ছিলেন। বারবার আটকেছেন প্রতিপক্ষের অ্যাটাকারদের।

ইস্টবেঙ্গল কিন্তু প্রথম ১৫ মিনিট পর্যন্ত প্রতিপক্ষের রক্ষণ ও গোলকিপারকে পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারেনি। ১৭ মিনিটের মাথায় ভিপি সুহের বল নিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়লেও গোলে শট নেওয়ার আগে পড়ে না গেলে হয়তো বিপদে পড়ত সবুজ-মেরুন শিবির। ২৯ মিনিটের মাথায় বক্সের ডানদিক দিয়ে বক্সে ঢুকে নাওরেম মহেশের উদ্দেশ্য মাপা মাইনাস দেন সুহের। কিন্তু দুই ডিফেন্ডারের মাঝে পড়ে সেই বলে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি মহেশ। বল বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। ৩৩ মিনিটের মাথায় ফের ডানদিক থেকে বক্সের মাঝখানে মাপা ক্রস দেন সুহের, যাতে মাথা ছোঁয়াতে পারলে গোল পেতেন ক্লেটন সিলভা। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন।

শুরুর দিকে সে ভাবে আক্রমণে যেতে না পারলেও প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময় থেকে তারা আক্রমণে উঠতে শুরু করে। প্রথমার্ধে দুই দলই একটি করে শট গোলে রাখে। তবে গোলের বাইরে নেওয়া শটে এটিকে মোহনবাগান ছিল অনেক এগিয়ে (৪-১)। বল পজেশনেও এগিয়ে ছিলেন পেট্রাটসরা (৫৮-৪২)। এটিকে মোহনবাগানের আক্রমণ বেশি হলেও তা গোলে পরিণত করার ক্ষেত্রে তেমন কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেনি তারা। সব মিলিয়ে ছ’টি গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। সেখানে ইস্টবেঙ্গল এফসি একটির বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পেট্রাটসকে গোলের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দেন আশিক। বাঁদিক দিয়ে উঠে কাট-ইন করে ভিতরে ঢুকে বক্সের বাইরে থেকে যে ফরোয়ার্ড পাস করেন তিনি তাতে বক্সের মধ্যে প্রায় ৪৫ ডিগ্রি কোণ থেকে গোলে শট নেন পেট্রাটস, যা দূরের পোস্টে লেগে বাইরে চলে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে ইস্টবেঙ্গলও গোলের চেষ্টা শুরু করে। ৬১ মিনিটের মাথায় ক্লেটন সিলভার স্কোয়ার পাস পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে জেক জার্ভিস গোলে জোরালো শট নিলেও তা পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

জার্ভিসের এই চেষ্টার ছ’মিনিট পর মিনিট খানেকের মধ্যে পরপর তিনটি কর্ণার পায় এটিকে মোহনবাগান। এই তিন কর্নারের শেষটি থেকেই বহু আকাঙ্খিত গোলটি পেয়ে যায় সবুজ-মেরুন বাহিনী। পেট্রাটসের কর্নার কিক থেকে প্রথমে বল যায় মনবীরের কাছে। মনবীর ছ’গজের বক্সের বাইরে থেকে ব্যাকহিল করে তা গোলের সামনে স্লাভকো দামিয়ানোভিচকে বাড়ান। স্লাভকো তাতে হেড করলেও তা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল গোললাইনের সামনে থেকে আলতো টোকায় জালে জড়িয়ে দেন সার্বিয়ান (১-০)। কিন্তু জামা খুলে সেলিব্রেশন করায় হলুদ কার্ড দেখতে হয় তাঁকে।

নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে দুই দলই পরিবর্ত খেলোয়াড় নামায়। সার্থক গলুই ও সুহেরের জায়গায় নামান যথাক্রমে সুনিত পাসি ও মহম্মদ রকিপকে। মনবীরের জায়গায় লিস্টন কোলাসোকে নামায় সবুজ-মেরুন শিবির। এই সময় গোল শোধ করার জন্য আক্রমণের ধার বাড়াতে শুরু করে লাল-হলুদ বাহিনী। কিন্তু নিজেদের দূর্গ রক্ষা করতে রক্ষণে তৎপরতা আরও বাড়িয়ে তোলেন প্রীতম কোটালরা। ৮৭ মিনিটের মাথায় কিয়ান নাসিরি নামেন হুগো বুমৌসের জায়গায়। অন্যদিকে জর্ডন ও’ডোহার্টি নামেন অ্যালেক্স লিমার জায়গায়।

মাঠে নামার দু’মিনিটের মধ্যে পরপর দুটি গোলের সুবর্ণ সুযোগ পান কিয়ান। প্রথমবারে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা তাঁকে আটকে দিলেও দ্বিতীয়বারে তাঁর গোলমুখী শট গোলকিপারের হাতে লেগে ফিরে আসার পরে সেই বল জালে জড়িয়ে দেন পেট্রাটস (২-০)। কিয়ানকে অসাধারণ ফরোয়ার্ড পাসটি বাড়িয়েছিলেন গ্ল্যান মার্টিন্সের জায়গায় আসা পুইতিয়া। শেষ মিনিটের এই গোলের পর চার মিনিট বাড়তি সময়ে পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল এফসি। ডার্বি জয়ের আনন্দ এ বারও উপভোগ করছে এটিকে মোহনবাগান। এই নিয়ে টানা ছ’বার।

ইস্টবেঙ্গল এফসি দল: কমলজিৎ সিং (গোল), সার্থক গলুই (মহম্মদ রকিপ), লালচুঙনুঙ্গা, জেরি লালরিনজুয়ালা, চ্যরিস কিরিয়াকু, মোবাশির রহমান, অ্যালেক্স লিমা (জর্ডন ও’ডোহার্টি), ভিপি সুহের (সুমিত পাসি), নাওরেম মহেশ সিং, ক্লেটন সিলভা (অধি), জেক জার্ভিস।

এটিকে মোহনবাগান দল: বিশাল কয়েথ (গোল), আশিস রাই, প্রীতম কোটাল (অধি), স্লাভকো দামিয়ানোভিচ, শুভাশিস বোস, ফেদরিকো গায়েগো, গ্ল্যান মার্টিন্স (পুইতিয়া), হুগো বুমৌস (কিয়ান নাসিরি), আশিক কুরুনিয়ান, মনবীর সিং (লিস্টন কোলাসো), দিমিত্রিয়স পেট্রাটস।

(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle