ISL 2022-23 KBFC vs EBFC: হার দিয়ে শুরু লাল-হলুদের

ISL 2022-23 KBFC vs EBFC

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: হিরো আইএসএল ২০২২-২৩-এর শুরুটা অসাধারণ হল গতবারের রানার্স কেরালা ব্লাস্টার্সের । শুক্রবার কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ৩-১-এ তারা হারাল ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে (ISL 2022-23 KBFC vs EBFC)। ৭২ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য থাকার পর আদ্রিয়ান লুনার গোলে এগিয়ে যায় ব্লাস্টার্স। কিন্তু ম্যাচের একেবারে শেষে আট মিনিটের মধ্যে তিনটি গোল হওয়ায় উল্লাসে ফেটে পড়েন গ্যালারিতে থাকা হাজার পঞ্চাশ ফুটবলপ্রেমী।

৮০ মিনিটের মাথায় পরিবর্ত হিসেবে নামার দু’মিনিট পরেই গোল পান প্রথম আইএসএল ম্যাচ খেলা ইউক্রেনিয়ান সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার ইভান কালিউঝনি। এর সাত মিনিট পরে আবার এক অসাধারণ গোল পান তিনি। এর মাঝে ৮৮ মিনিটের মাথায় ইস্টবেঙ্গলের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যালেক্স লিমা একটি গোল শোধ করলেও এর বেশি গোল পায়নি তাঁর দল।

কেরালা ব্লাস্টার্স ঘরের মাঠে এ দিন যতটা আধিপত্য বিস্তার করে খেলে, তার প্রায় কিছুই ছিল না ইস্টবেঙ্গল এফসি-র পারফরম্যান্সে। আক্রমণে ধারের অভাব, অগোছালো মাঝমাঠ এবং রক্ষণে বোঝাপড়ার অভাব এ দিন লাল-হলুদ ডিফেন্সকে ডুবিয়ে দেয়। গোলকিপার কমলজিৎ সিং এ দিন অন্তত হাফ ডজন গোল সেভ করেন। তাঁর এই দক্ষতা স্টিফেন কনস্টান্টাইনের দলকে আরও বড় ব্যবধানে হারের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়।

এ দিন কেরালা ব্লাস্টার্স যেখানে ৪-৪-২-এ খেলা শুরু করে, সেখানে ব্লাস্টার্সের কোচ দল সাজান ৩-৪-১-২-এ। লাল-হলুদ শিবিরের ক্লেটন সিলভা ও ভিপি সুহের ছিলেন আক্রমণের দায়িত্বে এবং ব্লাস্টার্সের বিদেশি ফরোয়ার্ড জুটি আপোস্তোলোস গিয়ানু ও দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস ছিলেন একেবারে সামনে।

শুরু থেকেই দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু হয়। মাঝমাঠ থেকেই বিপক্ষের আক্রমণ আটকানোর প্রবণতা দেখা যায় দুই দলের মধ্যেই। তবে ভুল পাসও দেখা যায় অনেক। দশ মিনিটের মধ্যেই একটি করে গোলের সুযোগ তৈরি করে নেয় দু’পক্ষ। ইস্টবেঙ্গলের অ্যালেক্স লিমা মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে উঠে বক্সের মাথা থেকে গোলে শট নেন, যা বাঁচিয়ে দেন ব্লাস্টার্সের গোলরক্ষক প্রভসুখন গিল। অন্য দিকে, জেসেল কার্নেইরোর ক্রস থেকে বল পেয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হন গিয়ানু।

ব্লাস্টার্স দুই উইং দিয়ে সমানে আক্রমণে উঠতে শুরু করে। ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ শুরু থেকেই ছিল বেশ আঁটোসাঁটো। প্রতি আক্রমণের সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন লাল-হলুদ ফুটবলাররা। খেলার বয়স যত বাড়তে থাকে, তত আক্রমণের তীব্রতা বাড়াতে থাকে ব্লাস্টার্স। ২৬ মিনিটের মাথায় প্রথম গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায় ব্লাস্টার্স। যখন বাঁ দিক দিয়ে ওঠা জেসেলের কাছ থেকে বল পেয়ে সহাল আব্দুল সামাদ বক্সের মধ্যে ডানদিকে কাট করে দেন বক্সের মাথায় থাকা পুইতিয়াকে। তিনি সোজা গোলে শট নিলেও তা হাওয়ায় গতিপথ বদলে অল্পের জন্য গোলের বাইরে দিয়ে চলে যায়।

মাঠের পরিবেশ এতটাই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল যে তার প্রভাব মাঠের খেলোয়াড়দের মধ্যেও পড়ে। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তবে কোনও কার্ড ব্যবহার না করেই রেফারি সিআর শ্রীকৃষ্ণ অবস্থা সামলে নেন। উত্তেজনায় ঠাসা পরিবেশের কারণে দুই দলের ফুটবলাররা ভুল পাসও দিচ্ছিলেন প্রায়ই। দু’বছর ফাঁকা গ্যালারির সামনে খেলার পর হাজার হাজার অশান্ত দর্শকের সামনে খেলতে নামলে এমনটা হতেই পারে। স্বাভাবিক ভাবেই মাথা ঠান্ডা রাখা কঠিন হচ্ছিল ফুটবলারদের পক্ষে।

প্রথমার্ধের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে বিপক্ষের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ফ্রি কিকে সোজা গোলে শট নেন ব্লাস্টার্সের তারকা মিডফিল্ডার আদ্রিয়ান লুনা। যে কোনও গোলকিপারের পক্ষে এমন ধূর্ত, ভাসানো শট আটকানো কঠিন। কিন্তু কমলজিৎ সিং সেই বিপজ্জনক শট বাঁচাতে সফল হন।

প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেরও শুরু থেকে ইস্টবেঙ্গল আক্রমণ শুরু করে। কিন্তু ম্যাচের রাশ ক্রমশ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় ব্লাস্টার্স। প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সুহেরের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পরে দু’বার পরপর সেভ করে দলকে বিপদ থেকে বাঁচান কমলজিৎ সিং। প্রথমে আপোস্তোলোস ও পরে পুইতিয়ার গোলমুখী শট বাঁচান তিনি।

ফের, ৫০ ও ৫৪ মিনিটের মাথায়, গোল বাঁচান কমলজিৎ। সহালের কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সের মাঝখান থেকে সোজা গোলে শট নেন গিয়ানু। এই শট বাঁচিয়ে যেমন অসম্ভবকে সম্ভব করেন লাল-হলুদ গোলকিপার, তেমনই ডান দিক দিয়ে ওঠা গিয়ানুর ক্রস থেকে নেওয়া লুনার শটও বাঁচিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন কমলজিৎ। লাল-হলুদ রক্ষণের বোঝাপড়ার অভাবের জেরে পুরো চাপটা পড়ে যায় কমলজিতের ওপর। যা তিনি সামলাতেও দেন এ দিন।

দলের আক্রমণে তেমন ধার নেই দেখে ৬১ মিনিটের মাথায় সুহেরের জায়গায় সেম্বয় হাওকিপকে নামান ইস্টবেঙ্গল কোচ। এর ন’মিনিট পরে সহালকে বসিয়ে রাহুল কেপি-কে নামায় ব্লাস্টার্স। রাহুলই এ দিন তাঁর দলের পক্ষে পয়া হয়ে থাকলেন। তাঁর মাঠে আসার এক মিনিটের মধ্যেই গোল পেয়ে যায় কেরালা ব্লাস্টার্স।

৭১ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে হরমনজ্যোৎ সিং খাবরার আকাশে ভাসানো বল সোজা ইস্টবেঙ্গলের ইনসাইড বক্সের মাথায় গিয়ে ল্যান্ড করে, যেখানে ছিলেন আদ্রিয়ান লুনা। তিনি সেই গতিময় বল পা ছুঁইয়ে জালে জড়িয়ে দেন (১-০)। কমলজিৎ এতক্ষণ ধরে একাধিক সেভ করে দলকে বারবার বিপদের হাত থেকে বাঁচালেও এ বার তাঁরই ভুলে গোল পেয়ে যান লুনা। এই অবস্থায় গোলকিপার আরও এগিয়ে এলে লুনা হয়তো গোল পেতেন না।

আক্রমণে আরও গতি আনার জন্য এলিয়ান্দ্রো, জেরি ও অমরজিৎ সিং কিয়ামকে নামান স্টিফেন কনস্টান্টাইন। তুলে নেন যথাক্রমে কিরিয়াকু, তুহীন দাস ও শৌভিককে। কিন্তু তাদের আক্রমণের ধার বাড়ার আগেই বিপক্ষের তুমুল চাপে রক্ষণে আরও বড় ফাটল দেখা যায় এবং সেই ফাটল কাজে লাগিয়েই দ্বিতীয় গোল পেয়ে যায় কেরালা ব্লাস্টার্স। ৮০ মিনিটের মাথায় গিয়ানুর জায়গায় যিনি নেমেছিলেন, সেই ইভান কালিইউঝনির গোলেই এগিয়ে যায় তারা। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে একাই বাঁ দিক দিয়ে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে গোল করে আসেন কালিউঝনি (২-০)। তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেও পারেননি ইস্টবেঙ্গলের চার ডিফেন্ডার।

এর ছ’মিনিট পরেই একটি গোল শোধ করেন ইস্টবেঙ্গলের অ্যালেক্স লিমা। কর্নার থেকে হেডে হওয়া ক্লিয়ারেন্স পেয়ে জোরালো শটে জালে বল জড়িয়ে দেন বক্সের মধ্যেই থাকা লিমা (২-১)। এক গোল শোধ হওয়ায় লাল-হলুদ সমর্থকদের মনে আশা জাগলেও সেই আশায় ফের জল ঢেলে দেন কালিউঝনি। লিমার গোলের এক মিনিটের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন তিনি। এ বারও লুনার কর্নার থেকে হেডে বল ক্লিয়ার হয়ে আসে বক্সের অনেকটা বাইরে থাকা কালিউঝনি। তিনি সেখান থেকেই গোলে শট নেন এবং কমলজিৎ সিং এ বারও পরাস্ত হন (৩-১)। এর পরে চার মিনিট অতিরিক্ত সময় পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি লাল-হলুদ ব্রিগেড।

ইস্টবেঙ্গল দল: কমলজিৎ সিং (গোল), অঙ্কিত মুখার্জি, লালুচুঙনুঙ্গা, ইভান গঞ্জালেজ, কিরিয়াকু (এলিয়ান্দ্রো), সুমিত পাসি, শৌভিক চক্রবর্তী (অমরজিৎ সিং কিয়াম), অ্যালেক্স লিমা (জর্ডন ও’ডোহার্টি), তুহীন দাস (জেরি লালরিনজুয়ালা), ক্লেটন সিলভা (অধি), ভিপি সুহের (সেম্বয় হাওকিপ)।

(লেখা  ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle