ISL 2022-23 EBFC vs OFC: এগিয়েও ৪ গোল হজম লাল-হলুদের

ISL 2022-23 EBFC vs OFC

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: দু-গোলে এগিয়ে থেকে যখন বিরতিতে যায় ইস্টবেঙ্গল এফসি, তখন যুবভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারিতে উপস্থিত লাল-হলুদ সমর্থকেরা হিরো আইএসএলে ঘরের মাঠে প্রিয় দলের প্রথম জয় দেখার অপেক্ষা শুরু করেন। কিন্তু আশায় বুক বাঁধা সমর্থকদের হতাশায় ডুবিয়ে দেয় বিরতিতে ওডিশা এফসি-র তিনটি পরিবর্তন। ডাগ আউট থেকে নামা ওডিশার তিন ফুটবলারই ওডিশা এফসি-কে লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনেন এবং শেষে ৪-২-এ জয়ও এনে দেন। হিরো আইএসএলের ইতিহাসে ঘুরে দাঁড়ানোর অন্যতম সেরা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে এই ম্যাচ (ISL 2022-23 EBFC vs OFC)।

প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গলের দুই উঠতি তারকা সেম্বয় হাওকিপ ও নাওরেম মহেশের গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হওয়ার তিন মিনিটের মধ্যে জোড়া গোল করে সমতা এনে ফেলেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড পেদ্রো মার্টিন এবং এই অর্ধের মাঝামাঝি ১১ মিনি

টের মধ্যে আরও দুই গোল করে জেরি মাউইমিঙথাঙ্গা ও ধনচন্দ্র মিতেই জয় সুনিশ্চিত করে ফেলে ওডিশা এফসি। এই জয়ের ফলে তিন নম্বরে উঠে এল ওডিশা এফসি। ইস্টবেঙ্গল এফসি রয়ে গেল আট নম্বরেই।

গত ম্যাচের দলে একটিমাত্র পরিবর্তন করে এ দিন প্রথম এগারো নামান ইস্টবেঙ্গল এফসি কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন। আহত জেরির জায়গায় মাঝমাঠে তিনি নামান তরুণ প্রীতম সিংকে। চলতি লিগে এটিই তাঁর প্রথম ম্যাচ। অন্যদিকে, ওডিশা দলে ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড দিয়েগো মরিসিওর খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও এ দিন তিনিই শুরুতে মাঠে নামেন।

ম্যাচের পাঁচ মিনিটের মধ্যেই গোলের সুযোগ পেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল এফসি। ওডিশার রক্ষণে ভুল পাস থেকে বল পেয়ে প্রথমে কিরিয়াকু বক্সের বাইরে থেকে গোলে শট নিলে তা ব্লক করে দেন ওসামা মালিক। ফিরতি বলে বক্সের বাঁ দিক থেকে গোলের সামনে বল প্রায় সাজিয়ে দেন ভিপি সুহের, যাতে ঠিক মতো হেড করতে পারলে গোল পেতেন সেম্বয় হাওকিপ। কিন্তু তিনি বলে মাথা ছোঁয়াতে না পারায় বল গোলের বাইরে চলে যায়।

শুরু থেকেই এ দিন আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের ঝড় ওঠে। হাওকিপ ও ক্লেটন সিলভাকে আক্রমণে রেখে আক্রমণ তৈরি করে লাল-হলুদ বাহিনী এবং রেইনিয়ে ফার্নান্ডেজ, নন্দকুমার শেকর ও মরিসিওকে দিয়ে আক্রমণ সাজান ওডিশা কোচ জোসেপ গোম্বাউ। ফার্নান্ডেজ সাধারণত ওই জায়গায় খেলেন না। এবং নন্দকুমারও এ দিন দিক পরিবর্তন করে খেলেন। সম্ভবত প্রতিপক্ষকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত।

শুরু থেকে দুই উইং দিয়ে আক্রমণে ওঠে ইস্টবেঙ্গল। ডানদিক দিয়ে সুহের ও বাঁদিক দিয়ে নাওরেম মহেশ আক্রমণ তৈরির চেষ্টা করেন। ১৫ মিনিটের মাথায় বাঁ দিকের উইং থেকে মহেশের পাসে বল পেয়ে প্রতিপক্ষের বক্সের মাথা থেকে সোজা গোলে শট নেন ক্লেটন। কিন্তু তা গোলকিপার অমরিন্দর সিং তালুবন্দী করে নেন।

গোলের জন্য অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের। ২৩ মিনিটের মাথায় অসাধারণ একটি মুভ থেকে গোল পান সেম্বয় হাওকিপ। মাঝমাঠ থেকে ডানদিকের উইংয়ে সুহেরকে বল দেন জর্ডন ও’ডোহার্টি। ওই সময় সুহেরকে পাহাড়া দেওয়ার মতো কেউ ছিল না ওডিশার। বল নিয়ে বক্সে ঢুকে গোলের সামনে হাওকিপকে ক্রস দেন তিনি। কার্যত অরক্ষিত হাওকিপ গোলে বল ঠেলতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি (১-০)। হিরো আইএসএলে এই প্রথম কোনও ম্যাচের ৩০ মিনিটের মধ্যে গোল পেল ইস্টবেঙ্গল।

দ্বিতীয় গোল পেতেও খুব বেশি সময় লাগেনি লাল-হলুদ ব্রিগেডের। মাঝেমাঝেই উইং বদলে খেলছিলেন সুহের ও মহেশ। এমনই এক দিক বদলের পর মাঝমাঠ থেকে চ্যারিস কিরিয়াকুর পাস পেয়ে বাঁ দিক দিয়ে উঠে বক্সের মাঝখানে থাকা মহেশকে প্রায় গোলের বল সাজিয়ে দেন সুহের, যা নিখুঁত ভাবে কাজে লাগান মণিপুরি ফরোয়ার্ড (২-০)।

১২ মিনিটের মধ্যে পরপর দু’গোল খেয়ে গোলশোধের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় গোলের চার মিনিট পরেই নন্দকুমারের ক্রস থেকে গোলশোধের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান ওডিশার রেইনিয়ের ফার্নান্ডেজ। কিন্তু তাঁর গোলমুখী হেড বারের কয়েক ইঞ্চি ওপর দিয়ে চলে যায়। ৪১ মিনিটের মাথায় পরপর দু’বার যথাক্রমে থৈবা সিং ও মরিসিওর শট ব্লক হয়ে যায় ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণে। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মুহূর্তে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া নন্দকুমারের শট বারের নীচ দিয়ে ঢোকার আগে কমলজিৎ তা বাঁচিয়ে নেন। কিন্তু তাঁর হাত পিছলে বল পড়ে তাঁর সামনে, যা ইভান গঞ্জালেজ ক্লিয়ার না করলে বিপদে পড়তে হত তাঁর দলকে।

লাল-হলুদ শিবির দু’গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়ার সময় বোধহয় দুঃস্বপ্নেও তারা ভাবতে পারেনি যে, দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ছবিটা পুরোপুরি পাল্টে যাবে। একসঙ্গে তিন-তিনটি পরিবর্তন করেন ওডিশা এফসি-র কোচ গোম্বাউ এবং এটাই ছিল তাঁর ‘মাস্টারস্ট্রোক’ আইজ্যাক ছাকছুয়াকের জায়গায় যিনি নামেন, সেই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড পেদ্রো মার্টিন খেলা শুরু হওয়ার তিন মিনিটের মধ্যেই পরপর দু’টি গোল শোধ করে দেন। দু’টি গোলেই অ্যাসিস্ট করেন পেদ্রোর ব্রাজিলীয় সঙ্গী মরিসিও।

প্রথমে তাঁর ফরোয়ার্ড পাস থেকে বক্সের মধ্যে টার্ন করে গোলে বল ঠেলে দেন পেদ্রো (২-১)। ইবান গঞ্জালেজ তাঁকে বাধা দিতে ব্যর্থ হন। পরের মিনিটেই বাঁ দিক থেকে উড়ে আসা ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে গোলের বল সাজিয়ে দেন মরিসিও, যা থেকে হেড গোল পেয়ে যান সেই পেদ্রো (২-২)। উড়ে আসা বল আগেই দখলে নেওয়ার চেষ্টা করলে বোধহয়, এই গোলটি আটকাতে পারতেন গোলকিপার কমলজিৎ।

এর মধ্যে ৫৩ মিনিটের মাথায় কিরিয়াকু বল দখলের লড়াই করতে গিয়ে মাথায় চোট পেয়ে বেরিয়ে যান। তাঁকে স্ট্রেচারে করে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার পরে অ্যালেক্স লিমা মাঠে নামেন। কিন্তু তিনি তেমন কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেননি। দু’গোল খাওয়ার পরে এই দুর্ঘটনা ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের আরও হতাশ করে তোলে।

পেদ্রো ছাড়াও বিরতির পরে জেরি মাউইমিঙথাঙ্গাকে নামান ওডিশা কোচ। এই দুই ফরোয়ার্ড নামার পরেই ওডিশা আক্রমণে ঝড় তোলে এবং শুরুর কয়েক মিনিটে লাল-হলুদ রক্ষণ নিজেদের ঠিকমতো গুছিয়ে নেওয়ার আগেই দু’টি গোল শোধ হয়ে যায়। গোল শোধের পরেও ওডিশা প্রতিপক্ষের ওপর ধারাবাহিক ভাবে চাপ বজায় রাখে এবং অপ্রত্যাশিত ভাবে তৃতীয় গোল করে তারা এগিয়েও যায়।

লাল-হলুদ রক্ষণ যে পরপর দুই গোল খেয়ে যে কিছুটা ছন্নছাড়া হয়ে যায়, তার প্রমাণ ওডিশার তৃতীয় গোল। বক্সের বাঁ দিক থেকে মাপা ক্রস দেন বিরতিতে তৃতীয় পরিবর্ত খেলোয়াড় দনচন্দ্র মিতেই এবং সেই ক্রস থেকে দ্বিতীয় পোস্টের সামনে থাকা জেরি হেড করে জালে বল জড়িয়ে দেন (২-৩)। প্রথমার্ধে নিজেরা চাপে থাকার পরে দ্বিতীয়ার্ধে ওডিশা পাল্টা চাপে ফেলে দেয় প্রতিপক্ষকে। প্রথমার্ধের একেবারে উল্টো ছবি দেখা যায়। ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের ভুলের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করে।

নির্ধারিত শেষ হওয়ার ১৪ মিনিট আগে একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন আনে ইস্টবেঙ্গল। এলিয়ান্দ্রো, সার্থক গলুই ও হীমাংশু জাঙরা নামেন যথাক্রমে জর্ডন, অঙ্কিত ও সুহেরের জায়গায়। কিন্তু এই পরিবর্তনের পরের মুহূর্তেই সেট পিস থেকে চতুর্থ গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করে ওডিশা।

এই গোলটিও অসাধারণ। সল ক্রেসপোর অসাধারণ ও মাপা একটি পাস থেকে বল নিয়ে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে মাটি ঘেঁষা কোণাকুনি শটে জালে বল জড়িয়ে দেন নন্দকুমার (২-৪)। সদ্য মাঠে নামা সার্থক তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেও পারেননি।

নির্ধারিত সময়ের শেষ পাঁচ মিনিট গোল শোধের চেষ্টা দেখা যায় লাল-হলুদ শিবিরের ফুটবলারদের মধ্যে। ৮৬ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে মহেশের মাপা ক্রসে ঠিকমতো জায়গায় পৌঁছতে পারলে হয়তো গেল পেতেন এলিয়ান্দ্রো। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। পাঁচ মিনিট বাড়তি সময় পেয়েও তা কাজে লাগিয়ে ঘরের মাঠে প্রথম জয়ের সম্ভাবনা ফেরাতে পারেনি তারা।

ইস্টবেঙ্গল দল: কমলজিৎ সিং (গোল), অঙ্কিত মুখার্জি (সার্থক গলুই), লালুচুঙনুঙ্গা, ইভান গঞ্জালেজ (অধি), প্রীতম সিং (তুহীন দাস), চ্যারিস কিরিয়াকু (অ্যালেক্স লিমা), ভিপি সুহের (হীমাংশু জাঙরা), জর্ডন ও’ডোহার্টি (এলিয়ান্দ্রো), নাওরেম মহেশ সিং, ক্লেটন সিলভা, সেম্বয় হাওকিপ।

(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle