জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রায় সাড়ে ৬২ হাজার দর্শকের সামনে শনিবার রাতে শুধু যে এটিকে মোহনবাগান জিতল, তা নয়, জয় হল ফুটবলেরও (ISL 2022-23 EBFC vs ATKMB)। অনেক দিন পর কলকাতার দুই প্রধান ক্লাবকে সমানে সমানে মিলিয়ে লড়াই করতে দেখল বাংলার ফুটবলপ্রেমী জনতা। চলতি হিরো আইএসএল-এর প্রথম কলকাতা ডার্বি ২-০ গোলে জিতে এটিকে মোহনবাগান শেষ হাসি হাসলেও ইস্টবেঙ্গল এফসি যে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
দ্বিতীয়ার্ধে পরপর দু’টি গোল করে বাজিমাত করল মোহনবাগান। ৫৬ মিনিটে হুগো বুমৌস ও ৬৬ মিনিটে মনবীর সিং গোল করে দলকে জেতালেও দু’টি গোলের জন্যই তাঁরা কৃতজ্ঞ থাকবেন লাল-হলুদ গোলকিপার কমলজিৎ সিংয়ের কাছে। দুই গোলদাতার কৃতিত্ব ছাড়াও কমলজিতের অপ্রত্যাশিত ভুলও এই জোড়া গোলের অন্যতম উপাদান। গোলদুটি বাদ দিলে সারা ম্যাচে লাল-হলুদের লড়াই ছিল মনে রাখার মতো। গত দু’বছরে আইএসএল-এর কলকাতা ডার্বিতে এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যায়নি। গোলের সংখ্যা ও বল দখলের লড়াইয়ে (৫৫-৪৫) এটিকে মোহনবাগান এগিয়ে থাকলেও ফুটবল-যুদ্ধের তীব্রতা চরমে পৌঁছেছিল।
এ দিন চার ব্যাকে দল সাজান এটিকে মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দো। প্রথম দলে নিয়ে আসেন শুভাশিস বোসকে এবং রিজার্ভ বেঞ্চে রেখে দেন আশিক কুরুনিয়ানকে। সামনে স্ট্রাইকার হিসেবে রাখেন গত ম্যাচের হ্যাটট্রিকের নায়ক দিমিত্রিয়স পেট্রাটসকে। অন্যদিকে, লাল-হলুদ কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন গত ম্যাচের প্রথম এগারোই নামানোর সিদ্ধান্ত নেন।
প্রথম দশ মিনিটে এটিকে মোহনবাগানকেই বেশি আক্রমণে উঠতে দেখা যায়। দশ মিনিটের পর থেকে ক্রমশ খোলস ছেড়ে বেরতে শুরু করে ইস্টবেঙ্গল এবং ১৫ মিনিটে প্রায় প্রথম গোলটি করেই ফেলেছিলেন সেম্বয় হাওকিপ। বাঁ দিকের উইং থেকে নাওরেম মহেশের মাপা ক্রসে হেড করেন তিনি, যা গোলে ঢোকার আগের মুহূর্তে বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে অসাধারণ দক্ষতায় সেভ করেন গোলকিপার বিশাল কয়েথ।
কলকাতার দুই প্রধানের মধ্যে এমন ইতিবাচক ও আত্মবিশ্বাসী ফুটবল যুদ্ধ গত দুই মরশুমে দেখা গিয়েছে বলে মনে পড়ে না। এটিকে মোহনবাগান দুই উইং দিয়ে আক্রমণে ওঠার চেষ্ট করলেও ইস্টবেঙ্গল এফসি-র আক্রমণ মূলত হচ্ছিল বাঁ দিক দিয়ে।হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে কাউকোকে অবৈধভাবে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন চ্যারিস কিরিয়াকু। সবুজ-মেরুন বক্সে গোলমুখী জর্ডান ও’ডোহার্টি বাধা পেয়ে পেনাল্টির দাবি জানালেও রেফারি তা নাকচ করে দেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে দু’পক্ষকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে দেখা যায়। মাঝমাঠে টাঙরির কাছ থেকে বল পেয়ে দ্রুত মাঝ বরাবর উঠে বক্সের সামনে থেকেই দূরপাল্লার শট নেন বুমৌস। যা সহজেই তালুবন্দী করতে পারতেন গোলকিপার কমলজিৎ। কিন্তু তাঁর অপ্রত্যাশিত ভুল বোঝার কারণে বল তাঁর সামনে ড্রপ করে সোজা গোলে ঢুকে পড়ে। প্রথম গোলের দশ মিনিট পরেই ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় এটিকে মোহনবাগান। ৬৬ মিনিটে বক্সের মধ্যে বুমৌসের পাস থেকে প্রায় ৪৫ ডিগ্রির কোণাকুনি শটে গোল করে দলকে জয়ের দিকে আরও এগিয়ে দেন মনবীর।
এই গোলের পরেই আশিক কুরুনিয়ান ও লেনি রড্রিগেজকে নামান টাঙরি ও কোলাসোকে বসিয়ে। গোলশোধের রাস্তা তৈরি করতে ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড এলিয়ান্দ্রোকে নামায় ইস্টবেঙ্গল। আক্রমণ তৈরিতে আরও ধার আনতে শৌভিক চক্রবর্তী ও অনিকেত যাদবকেও নামান তিনি। কিন্তু খেলার ফলের আর কোনও পরিবর্তন হয়নি। ২-০ গোলে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে টানা সাতটি ডার্বি জিতে নিল মোহনবাগান।
এটিকে মোহনবাগান দল: বিশাল কয়েথ (গোল), প্রীতম কোটাল (অধি), ব্রেন্ডান হ্যামিল, আশিস রাই, শুভাশিস বোস, দীপক টাঙরি (আশিক কুরুনিয়ান), জনি কাউকো (ফ্লোরেন্তিন পোগবা), হুগো বুমৌস (কার্ল ম্যাকহিউ), মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো (লেনি রড্রিগেজ) , দিমিত্রিয়স পেট্রাটস।
ইস্টবেঙ্গল দল: কমলজিৎ সিং (গোল), লালুচুঙনুঙ্গা, ইভান গঞ্জালেজ (এলিয়ান্দ্রো), জেরি লালরিনজুয়ালা, সার্থক গলুই, চ্যারিস কিরিয়াকু, জর্ডন ও’ডোহার্টি (অ্যালেক্স লিমা), নাওরেম সিং (তুহীন দাস), সেম্বয় হাওকিপ (শৌভিক চক্রবর্তী), ক্লেটন সিলভা (অধি), ভিপি সুহের (অনিকেত যাদব)।
(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট ও ছবি এটিকে মোহনবাগান টুইটার থেকে)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google