আইপিএল ২০২২-২৩-এর সেরা ১০ উত্তেজক ম্যাচ এক নজরে

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: অনেক ঘটনা-অঘটন, ঘাত-প্রতিঘাত, অপ্রত্যাশিত ফল, আনন্দ, হতাশা পেরিয়ে সম্প্রতি শেষ হল ভারতের সেরা ফুটবলের আসর হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। গত বছর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে এ বছর মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত, প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসের এই লিগে দেখা গিয়েছে একাধিক স্মরণীয় ম্যাচ, যা ফুটবলপ্রেমীদের মনে থাকবে বহুকাল। সে লিগ টেবলের ওপরের দিকের দলের সঙ্গে নীচের দিকের দলেরই হোক বা শীর্ষস্থানীয় দলগুলির মধ্যেই হোক, বহু ম্যাচেই উত্তেজনার পারদ উঠেছে চরমে। ২২ সপ্তাহে এসেছে বহু চড়াই-উতরাই।  এ রকমই দশটি সেরা ম্যাচের ‘ফ্ল্যাশ ব্যাক’ তুলে ধরা হয়েছে এই বিশেষ প্রতিবেদনে।

সপ্তাহ ১, হায়দরাবাদ এফসি ৩-৩ মুম্বই সিটি এফসি

লড়াইটা যখন গতবারের চ্যাম্পিয়ন ও প্রাক্তন চ্যাম্পিয়নদের, তখন তা যে রোমহর্ষক হবে, এমনটাই ধরে নেওয়া যায়। হয়েছেও তাই। ছ’গোলের এই ম্যাচে প্রায় প্রতি মুহূর্ত ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। চিঙলেনসানা সিংয়ের নিজগোলে এগিয়ে যায় ডেস বাকিংহামের দল। তবে বিরতির ঠিক আগে পেনাল্টি পায় হায়দরাবাদ এফসি এবং জোয়াও ভিক্টর তা থেকে গোল করে সমতা আনেন। দ্বিতীয়ার্ধে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ উঠতে থাকে এবং একটা সময় তা পৌঁছয় চরমে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই হালিচরণ নার্জারির গোলে এগিয়ে যায় গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। তবে তাদের সেই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। গ্রেগ স্টুয়ার্ট ৬৭ মিনিটের মাথায় ফের সমতা আনেন। কেউই কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে যখন রাজি নয়, তখন স্টুয়ার্টের দ্বিতীয় গোলই গতবারের চ্যাম্পিয়নদের বড়সড় ধাক্কা দেয়। কিন্তু সেই ধাক্কাও সামলে ওঠে তারা এবং ম্যাচে শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে আলবার্তো নগুয়েরার গোল ফের সমতা এনে দেয়। শেষ পর্যন্ত কোনও দলই না জিতলেও এমন রোমহর্ষক ম্যাচে যে ফুটবল নামক খেলাটাই সবার মন জিতে নেয়, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

সপ্তাহ ১, জামশেদপুর এফসি ২-৩ ওডিশা এফসি

পূর্বভারতের দুই দলের এই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে প্রথম দশ মিনিটের মধ্যে দু-দু’টি গোল হয়ে যায়। ড্যানিয়েল চুকুউ প্রথমে জামশেদপুরকে এগিয়ে দেন। এর পরেই বরিস সিং ব্যবধান দ্বিগুন করে দেন। এ বার লিগে একাধিক ম্যাচে ওডিশা পিছিয়ে গিয়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে এ মরশুমে এটাই তাদের প্রথম লড়াইয়ে ফেরার ঘটনা। ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড ও গোল্ডেন বুটজয়ী দিয়েগো মরিসিও এক অনবদ্য দূরপাল্লার শটে বিপক্ষের জালে বল জড়ালেও বিরতিতে এগিয়ে থেকেই মাঠ ছাড়ে ইস্পাতনগরীর দল। দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলের লড়াইই কঠিন করে তোলে একে অপরের প্রতিপক্ষ। জামশেদপুর যখন তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ার কথা ভাবছিল, তখনই, ৮৮ মিনিটের মাথায় আইজ্যাক ভানমালসওমা ওডিশাকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে। কিন্তু দিয়েগো মরিসিওর মনে যে অন্য কিছু ছিল, তা তার তিন মিনিট পরেই বোঝা যায়, যখন তিনি ম্যাচের একেবারের শেষ মুহূর্তে বক্সের মাথা থেকে তাঁর দ্বিতীয় গোল করে রোমহর্ষক জয় ছিনিয়ে নেন।

সপ্তাহ ২, কেরালা ব্লাস্টার্স ২-৫ এটিকে মোহনবাগান

কেরালা ব্লাস্টার্সের ঘরের মাঠে নেমে তাদের হারিয়ে আসা যে কতটা কঠিন, তা ন’দিন আগেই টের পেয়েছিল কলকাতার আরেক দল ইস্টবেঙ্গল এফসি। একেই এগারো জন দুর্ধর্ষ ফুটবলারের মুখোমুখি হওয়া, তার ওপর গ্যালারিতে হাজার হাজার সমর্থকের উল্লাস ও চিৎকার। এই দুইয়ের বিরুদ্ধে খেলেও যে তাদের বিরুদ্ধে দাপুটে জয় পাওয়া যায়, তা সে ম্যাচে দেখিয়ে দেয় চ্যাম্পিয়ন এটিকে মোহনবাগান, যখন অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার দিমিত্রিয়স পেট্রাটস তাঁর হ্যাটট্রিকটি পূর্ণ করে ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ৫-২-এ জয় ছিনিয়ে নেন। শুরু থেকেই এটিকে মোহনবাগানকে অপ্রত্যাশিত রকমের চাপে ফেলে দেয় কেরালা ব্লাস্টার্স এবং ছ’মিনিটের মধ্যে গোলও পেয়ে যায় তারা। ইউক্রেনের ইভান কালিউঝনির গোলেই এগিয়ে যায় ব্লাস্টার্স। ২৬ মিনিটের মাথায় সমতা এনে ফেলেন দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। হুগো বুমৌসের নিখুঁত ক্রস পেয়ে নিখুঁত শটে জালে বল জড়াতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড। ডান উইং দিয়ে ওঠা মনবীর সিং যে অনবদ্য গোলটি তৈরি করে দেন জনি কাউকো-কে, সেই গোলেই ৩৮ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় এটিকে মোহনবাগান।

দ্বিতীয়ার্ধে পিছন থেকে বুমৌসের পাসে পাওয়া বল নিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন লিস্টন কোলাসো এবং তা নিখুঁত ভাবে গোলের সামনে পেট্রাটসকে প্রায় সাজিয়ে দেন তিনি। এ বারও ভুল করেননি পেট্রাটস। শেষ ২০ মিনিট নিজেদের গোলের সামনে প্রায় দেওয়াল তুলে দেয় ৩-১-এ এগিয়ে থাকা সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। কিন্তু সেই রক্ষণের ফাঁক দিয়েই দ্বিতীয় গোল করে দেন ব্লাস্টার্সের কেপি রাহুল। তাঁর দূরপাল্লার শট গোলকিপার বিশাল কয়েথের হাত ও পায়ের ফাঁক দিয়ে ঢুকে যায় গোলে। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দু’মিনিট আগে লেনি রড্রিগেজকে গোলের পাস বাড়ান পেট্রাটস এবং নিখুঁত টোকায় গোলকিপার গিলকে পরাস্ত করে জালে বল জড়িয়ে দেন লেনি। ছ’মিনিট বাড়তি সময় পাওয়ায় তাঁরা ফের আশাবাদী হয়ে উঠলেও সেই বাড়তি সময়কে কাজে লাগিয়ে নেয় এটিকে মোহনবাগানই। এ বার পেট্রাটসের হ্যাটট্রিক গোল। মাঝমাঠ থেকে কোলাসোকে বল বাড়ান লেনি। সেই বল নিয়ে প্রায় বিনা বাধায় প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে লিস্টন ডানদিকে পেট্রাটসকে বল বাড়ান এবং তখন তাঁর সামনে ফাঁকা গোল ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

সপ্তাহ ৫, মুম্বই সিটি এফসি ২-২ এটিকে মোহনবাগান

ম্যাচটি সম্পর্কে উত্তেজনার চরম উপাদানে ঠাসা রোমহর্ষক এক ফুটবল দ্বৈরথ বললে কিছুটা কাছাকাছি যেতে পারে, কিন্তু তাতেও অনেকে অখুশি থেকে যেতে পারেন। দু’পক্ষের দু’টি করে গোল, অসংখ্য গোলের সুযোগ, অজস্রবার ক্রসবারে লেগে ফিরে আসা, দুই দলের ওঠানামার গতিতে অভাবনীয় ক্ষিপ্রতা ও দু’পক্ষের রক্ষণের মরিয়া লড়াই— সব কিছুই মজুত থাকা এই ম্যাচকে এই মরশুমের অন্যতম সেরা ম্যাচের তকমা দিয়েছে। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে শুভাশিস বোসের বাধা কাটিয়ে কাট ইন করে সোজা গোলে যে শট নেন মিজোরামের তারকা ফরোয়ার্ড লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, তা বারে লেগে গোললাইনের ওপারে ড্রপ করে ফের বাইরে চলে আসে। রেফারি গোলের বাঁশি বাজাতে দ্বিধা করেননি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা শুরু করে দেয় সবুজ-মেরুন বাহিনী, যে চাপ ক্রমশ তারা বাড়াতে থাকে। গোলশোধে মরিয়া এটিকে মোহনবাগানের উদ্দেশ্য সফল হয় তিন মিনিটের মধ্যেই। বুমৌসের কাছ থেকে পাওয়া বল বক্সের মধ্যে এক পাক ঘুরে তাঁর ডানদিকে জনি কাউকোকে গোলের বল সরবরাহ করেন কোলাসো এবং কাউকো মাটি ঘেঁষা শটে বল সোজা গোলে ঢোকাতে ভুল করেননি। ৭২ মিনিটের মাথায় আহমেদ জাহুর কর্নার ক্লিয়ার হওয়ার পরে তাঁর কাছেই বল যায়। ডানদিক থেকে ক্রস দেন জাহু, গোললাইনের একেবারে সামনে থাকা ডিফেন্ডার রস্টন গ্রিফিথের প্রথম চেষ্টায় বারে বল লাগান। বার থেকে নেমে আসা বল বিশাল হাত দিয়ে বের করে দিতে যান। কিন্তু তাঁর প্রায় গায়ে লেগে থাকা রস্টনের মাথায় লেগে তা গোলে ঢুকে যায়। উত্তেজনার জেরে গ্রেগ স্টুয়ার্টকে বল ছাড়াই আঘাত করে লাল কার্ড দেখেন পরিবর্ত হিসেবে নামা লেনি রড্রিগেজ। এর আগেই অবশ্য স্টুয়ার্ট ফাউল করেছিলেন লেনিকে। শেষ ১৯ মিনিট (বাড়তি সময় সহ) তাই দশ জনে খেলতে হয় এটিকে মোহনবাগানকে। দূর্গ বাঁচানোর জ্ন্য কার্ল ম্যাকহিউকে নামায় এটিকে মোহনবাগান। কিন্তু তিনিই গোল করে দলকে হারের হাত থেকে বাঁচান। ৮৯ মিনিটের মাথায় ডান উইং থেকে পেট্রাটসের নিখুঁত ফ্রি কিকে জোরালো হেড করে গোলে বল ঢুকিয়ে দেন আইরিশ মিডফিল্ডার। বাড়তি সময়ে জয়সূচক গোলেরও সুযোগ পান দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। কিন্তু বারে লেগে বল ফিরে আসে। এ ভাবে সে দিন কতবার যে দু’পক্ষের ফুটবলারদের গোলমুখী শট বিপক্ষের ক্রসবারে প্রতিহত হয়েছে, তার সঠিক হিসাব দেওয়া বেশ কঠিন।

সপ্তাহ ৬, চেন্নাইন এফসি ২-৬ মুম্বই সিটি এফসি

আট গোলের এই ম্যাচ ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে জায়গা করে নিতেই পারে। পিছিয়ে গিয়েও কী ভাবে আধিপত্য বিস্তার করে বড় ব্যবধানে ম্যাচ জিততে হয়, তার শিক্ষা এই ম্যাচ থেকে নেওয়া যেতে পারে আনায়াসে। ১৯ মিনিটের মাথায় পেটার স্লিসকোভিচ ও ৩২ মিনিটের মাথায় আব্দেনাসের এল খয়াতি চেন্নাইন এফসি-কে ঘরের মাঠে প্রত্যাশিত ভাবেই জোড়া গোলে এগিয়ে দেয়। বেশিক্ষণ সেই আনন্দে থাকতে পারেননি তাঁরা। জর্জ দিয়াজ ও গ্রেগ স্টুয়ার্ট (পেনাল্টি থেকে) পরপর গোল করে সমতা আনেন এবং হোম টিমের উদ্বেগ বাড়ান। দ্বিতীয়ার্ধে ঝড় ওঠে। আরব সাগর থেকে ওঠা সাইক্লোন যেন বঙ্গোপসাগরে এসে আছড়ে পড়ে। বিনীত রাইয়ের গোলে এগিয়ে যায় মুম্বই। এই গোলের পরে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। বরং পরপর গোল করে চেন্নাইনের কফিনে পেরেক পুঁতে দেন ভিগ্নেশ দক্ষিণামূর্তি, আলবার্তো নগুয়েরা ও বিপিন সিং। অসাধারণ এই ম্যাচে আটটি গোল করেন আটজন ফুটবলার, যা সচরাচর দেখা যায় না।

সপ্তাহ ৭, ইস্টবেঙ্গল এফসি ২-৪ ওডিশা এফসি

যুবভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারিতে উপস্থিত লাল-হলুদ সমর্থকেরা যখন ঘরের মাঠে প্রিয় দলের প্রথম জয় দেখার অপেক্ষা শুরু করেছিলেন, তখন আশায় বুক বাঁধা সমর্থকদের হতাশায় ডুবিয়ে দেয় বিরতিতে ওডিশা এফসি-র তিনটি পরিবর্তন। ডাগ আউট থেকে নামা ওডিশার তিন ফুটবলারই ওডিশা এফসি-কে লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনেন এবং শেষে ৪-২-এ জয়ও এনে দেন। হিরো আইএসএলের ইতিহাসে ঘুরে দাঁড়ানোর অন্যতম সেরা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে এই ম্যাচ। ২৩ মিনিটের মাথায় অসাধারণ একটি মুভ থেকে গোল পান সেম্বয় হাওকিপ। মাঝমাঠ থেকে ডানদিকের উইংয়ে সুহেরকে বল দেন জর্ডন ও’ডোহার্টি। বল নিয়ে বক্সে ঢুকে গোলের সামনে হাওকিপকে ক্রস দেন সুহের। কার্যত অরক্ষিত হাওকিপ গোলে বল ঠেলতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি। হিরো আইএসএলে সেই প্রথম কোনও ম্যাচের ৩০ মিনিটের মধ্যে গোল পায় ইস্টবেঙ্গল।

দ্বিতীয় গোল পেতেও খুব বেশি সময় লাগেনি লাল-হলুদ ব্রিগেডের। মাঝমাঠ থেকে চ্যারিস কিরিয়াকুর পাস পেয়ে বাঁ দিক দিয়ে উঠে বক্সের মাঝখানে থাকা মহেশকে প্রায় গোলের বল সাজিয়ে দেন সুহের, যা নিখুঁত ভাবে কাজে লাগান মণিপুরি ফরোয়ার্ড। পেদ্রো মার্টিন খেলা শুরু হওয়ার তিন মিনিটের মধ্যেই পরপর দু’টি গোল শোধ করে দেন। দু’টি গোলেই অ্যাসিস্ট করেন পেদ্রোর ব্রাজিলীয় সঙ্গী মরিসিও। লাল-হলুদ রক্ষণ যে পরপর দুই গোল খেয়ে যে কিছুটা ছন্নছাড়া হয়ে যায়, তার প্রমাণ ওডিশার তৃতীয় গোল। বক্সের বাঁ দিক থেকে মাপা ক্রস দেন আর এক পরিবর্ত খেলোয়াড় দনচন্দ্র মিতেই এবং সেই ক্রস থেকে জেরি হেড করে জালে বল জড়িয়ে দেন। প্রথমার্ধে নিজেরা চাপে থাকার পরে দ্বিতীয়ার্ধে ওডিশা পাল্টা চাপে ফেলে দেয় প্রতিপক্ষকে। ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের ভুলের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করে। সব শেষে সল ক্রেসপোর অসাধারণ ও মাপা একটি পাস থেকে বল নিয়ে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে মাটি ঘেঁষা কোণাকুনি শটে জালে বল জড়িয়ে দেন নন্দকুমার।

সপ্তাহ ১০, নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি ৩-৭ চেন্নাইন এফসি

কোনও ম্যাচে গড়ে প্রতি ন’মিনিট অন্তর একটি করে গোল হলে ফুটবলপ্রেমীরা এর চেয়ে বেশি আর কী চাইতে পারেন? গুয়াহাটিতে এই সে রকমই দেখা যায়। ফুটবলের ভরপুর আনন্দ উপভোগ করেন সেখানকার ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু ফলটা যদি তাদের প্রিয় দলের পক্ষে যেত, তা হলে আনন্দটা ষোলো আনা পূর্ণ হত। দশ গোলের ম্যাচ তো বড় একটা দেখা যায় না। ১১ মিনিটের মাথায় আব্দেনাসের এল খয়াতি গোলের খাতা খোলেন চেন্নাইনের তরফে। তবে ৩৬ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে তা শোধ করেন জর্ডান গিল। বিরতির আগে এল খয়াতি ফের গোল করে তাঁর দলকে এগিয়ে দেন।

বিরতির পর গোলের ঝড় ওঠে। সাত-সাতটি গোল হয় এই ৪৫ মিনিটের মধ্যে। এল খয়াতির হ্যাটট্রিকও আসে এই অর্ধে। সব মিলিয়ে এই ম্যাচের পাঁচটি গোলে তাঁর অবদান ছিল, যা এই লিগে এক অনন্য নজির। রোমান ফিলিপোতো ও রোচারজেলা তাঁদের ফের কড়া চ্যালেঞ্জ জানালেও পেটার স্লিসকোভিচ ও জুলিয়াস ডুকের তার আগেই চেন্নাইনের তিন পয়েন্ট সুরক্ষিত করে ফেলেন। হিরো আইএসএলে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় জয়।

সপ্তাহ ২০, এফসি গোয়া ৩-৫ মুম্বই সিটি এফসি

হিরো আইএসএলে আরব সাগরপাড়ের এই দুই প্রতিবেশী রাজ্যের দলের মধ্যে রেশারেশি বরবারেরই। এই ম্যাচে সেই চিরশত্রুতা তীব্র আকার ধারণ করে। যার ফসল সারা ম্যাচে আটটি গোল। দুই সেরা আক্রমণাত্মক দলের দ্বৈরথ দেখতে সে দিন গ্যালারি উপছে পড়ে। ফুটবলপ্রেমী জনতা এক টানটান রুদ্ধশ্বাস ম্যাচও দেখতে পান। কিন্তু স্থানীয় ফুটবলপ্রেমীরা এফসি গোয়ার হারে বেশ হতাশ হন।

পাঁচ মিনিটের মধ্যেই নোয়া সাদাউইর গোলে এগিয়ে যায় হোম টিম। কিন্তু তা ফেরৎ দেন সেই গ্রেগ স্টুয়ার্ট, মুম্বইয়ের দলের বহু যুদ্ধের নায়ক। ৪০ মিনিটের মাথায় জর্জ দিয়াজ গোল করে মুম্বইকে এগিয়ে দিলেও সেই আধিপত্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি গোয়ার দলের অভিজ্ঞ ভারতীয় তারকা ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ। স্টুয়ার্ট অবশ্য কোনও ম্যাচে একটি গোল করে সন্তুষ্ট থাকেন না। দ্বিতীয় গোল পাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকেন। এই ম্যাচেও তা-ই দেখা যায় এবং বিরতির আগে দ্বিতীয় গোল করে মুম্বইকে ফের এগিয়ে দেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সাত মিনিটের ব্যবধানে পরপর দুটি গোল করে সফরকারী দলের দুই ভারতীয় তারকা লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে ও বিক্রমপ্রতাপ সিং। ২-৫-এ পিছিয়ে থাকা গোয়াকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন ব্রাইসন ফার্নান্ডেজ। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

সপ্তাহ ২২, চেন্নাইন এফসি ৪-৩ নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি

এ বারের হিরো আইএসএলের শেষ পর্যায়ে আরও একটি হাইস্কোরিং ম্যাচ দেখতে পান ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা। এই ম্যাচের দুই দলই তখন প্লে অফের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছে। তাই কারও ওপরেই কোনও চাপ ছিল না। চেন্নাইন এফসি-কে এগিয়ে দেন বাংলার ফরোয়ার্ড রহিম আলি। প্রথমার্ধে এই একটিই মাত্র গোল হয়। দ্বিতীয়ার্ধে পরপর ছ’টি গোল দেখতে পান দর্শকেরা। ৫২ মিনিটের মাথায় নর্থইস্টকে লড়াইয়ে ফেরান জর্ডান গিল। কোয়ামি কারকারি চেন্নাইনকে ফের এগিয়ে দেন। ৬২ মিনিটের মাথায় চেন্নাইন অধিনায়ক অনিরুদ্ধ থাপা ব্যবধান বাড়ান। পার্থিব গগৈ যে ব্যবধান কমানোর পরে ফের সমতা আনেন জর্ডান। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে যখন অনেকেই পয়েন্ট ভাগাভাগির কথা ভাবছিলেন, ঠিক তখনই, স্টপেজ টাইমে মোহনবাগান অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা তরুণ বঙ্গীয় মিডফিল্ডার সজল বাগ অসাধারণ এক সুযোগসন্ধানী গোল করে চেন্নাইন এফসি-কে লিগের সাত নম্বর জয়টি এনে দেন।

সেমিফাইনাল দ্বিতীয় লেগ, বেঙ্গালুরু এফসি ১-২ মুম্বই সিটি এফসি (পেনাল্টিতে ৯-৮-এ জয়ী বেঙ্গালুরু এফসি)

উত্তেজনায় ঠাসা লড়াইয়ের শেষে পেনাল্টি শুট আউটে নিষ্পত্তি হল হিরো আইএসএলের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের। শেষ পর্যন্ত মেহতাব সিংয়ের শট আটকে দিয়ে জয় ছিনিয়ে নেন বেঙ্গালুরু এফসি-র গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু এবং তাঁর এই অসাধারণ সেভের সঙ্গে বেঙ্গালুরু এফসি পৌঁছে যায় চলতি হিরো আইএসএলের ফাইনালে। শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনায় ভরপুর দ্বিতীয় সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের নির্ধারিত নব্বই মিনিটে মুম্বই সিটি এফসি ২-১-এ এগিয়ে থাকলেও প্রথম লেগে বেঙ্গালুরু ১-০-য় জিতে থাকায় মোট গোলের ব্যবধান দাঁড়ায় ২-২।

হিরো আইএসএল ২০২২-২৩-এর অন্যতম সেরা ম্যাচটি সে দিন দেখেন ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা। সেদিন প্রথম মিনিট থেকে ১২০তম মিনিট পর্যন্ত দুই দলই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে। ২২ মিনিটের মাথায় শিবশক্তি নারায়ণের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে বেঙ্গালুরু এফসি-কে এগিয়ে দেন হাভিয়ে হার্নান্ডেজ। ৩০ মিনিটের মাথায় রাওলিন বোর্জেসের গোলমুখী শট গুরপ্রীতের গায়ে লেগে ফিরে এলে সেই বল জালে জড়িয়ে দিয়ে মুম্বই এফসি-র পক্ষে সমতা আনেন বিপিন সিং। প্রথমার্ধে মুম্বই সিটি এফসি পেনাল্টি পেলেও গ্রেগ স্টুয়ার্টের শট আটকে দেন গুরপ্রীত। প্রথমার্ধ ১-১ থাকার পরে দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ৬৬ মিনিটের মাথায় গ্রেগ স্টুয়ার্টের কর্নারে উড়ে আসা বলে হেড করে দলকে এগিয়ে দেন মেহতাব সিং। কিন্তু ফাইনালে ওঠার জন্য তখন দুই দলেরই প্রয়োজন ছিল আরও এক গোল, যা অতিরিক্ত সময়েও করতে পারেনি কেউই।

টাইব্রেকারে প্রথম পাঁচটি শটে মুম্বইয়ের হয়ে পরপর হয়ে গোল করেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট, জর্জ পেরেইরা দিয়াজ, ছাঙতে, আহমেদ জাহু ও রাহুল ভেকে। বেঙ্গালুরুর হয়ে গোল করেন হাভিয়ে হার্নান্ডেজ, রয় কৃষ্ণা, অ্যালান কোস্টা, সুনীল ছেত্রী ও পাবলো পেরেস। টাই ব্রেকার ৫-৫-এ শেষ হওয়ায় শুরু হয় সাডেন ডেথ এবং মুম্বইয়ের বিক্রম প্রতাপ সিং, মুর্তাদা ফল ও বিনীত রাইয়ের গোলের উপযুক্ত জবাব দেন প্রবীর দাস, রোহিত কুমার ও সুরেশ সিং (৮-৮)। কিন্তু এর পরই মেহতাব সিংয়ের শট গুরপ্রীত বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকে দেওয়ায় মুম্বইয়ের ছন্দপতন ঘটে। শেষ শটে গোল করতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গন। এতেই আসে বহু আকাঙ্খিত জয়।

(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle