আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড প্রিভিউ

আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড ম্যাচের আগে চাপে লাল-হলুদ ব্রিগেড। যে ফতোরদা স্টেডিয়াম তিন দিন আগেই চরম হতাশ করেছে তাদের, সেই ফতোরদাতেই আবার এসসি ইস্টবেঙ্গলের কঠিন পরীক্ষা। যদিও এই পরীক্ষায় পাস বা ফেল করার তেমন কোনও তাগিদ নেই লাল-হলুদ জার্সিধারীদের। কিন্ত পাস করলে বা জিতলে কিছুটা হলেও মান বাঁচবে। লিগ টেবলের একেবারে নীচে নেমে যেতে হবে না তাদের।

তাদের প্রতিপক্ষ নর্থইস্ট ইউনাইটেডের ক্ষেত্রে এই ম্যাচটা অবশ্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এক বা দুই না হোক, লিগের সেরা চারে তিন বা চার নম্বর হয়ে তো সেমিফাইনালে ওঠাই যায়। সেই দৌড়ে টিকে থাকতে গেলে মঙ্গলবার ফতোরদায় শেষ হাসি হাসতে হবে তাদের।

সেরা চারের দৌড়ে জামিলের দল

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ফুটবলার দাপিড়ে বেড়াচ্ছে ভারতীয় ফুটবলে। দেশের সেরা ফুটবল লিগে তাঁদেরই প্রতিনিধি এই ক্লাব। এ বার তারা সেরা চারে থাকতে পারলে উন্নয়ন ও অর্থনীতির দিক থেকে পিছিয়ে থাকা এই অঞ্চলের ফুটবলারদের সম্মান ও গুরুত্ব দুটোই বাড়বে।

তা ছাড়া এক ভারতীয় কোচের প্রশিক্ষণে থাকা দল সেরা চারে উঠলে সেটা ভারতীয় কোচদেরও খুশি হওয়ার মতোই ঘটনা হবে। আইজল এফসি-কে হিরো আই লিগ খেতাব জেতানো খালিদ জামিলের প্রশিক্ষণে থাকা এই দল এখন পর্যন্ত টানা আট ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। এই আট ম্যাচে চারটি জয় ও চারটি ড্র রয়েছে তাদের।

শেষ সাতটি ম্যাচে ১৪টি গোল করেছে তারা। বেঙ্গালুরু এফসি থেকে নর্থইস্টে যোগ দেওয়া ফরোয়ার্ড দেশর্ন ব্রাউন ছ’টি গোল পেয়ে গিয়েছেন। ব্রাউন ও মাচাডোর জুটি এসসি ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তবে দলটার নিউক্লিয়াস আসলে উরুগুয়ের মিডফিল্ডার ফেদরিকো গালেগো, যিনি এখন পর্যন্ত চারটি গোল করেছেন ও ছ’টি করিয়েছেন।

পারফরম্যান্স ও ধারাবাহিকতার দিক থেকে এসসি ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছে নর্থইস্ট ইউনাইটেড। গত মাসের শেষ সপ্তাহে তারা শীর্ষস্থানীয় দুই দল এটিকে মোহনবাগান (২-১) ও মুম্বই সিটি এফসি-কে (২-১) হারায় পরপর দুই ম্যাচে। বেঙ্গালুরু এফসি (১-১) ও এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে (২-২) ড্র করে। গত ম্যাচে চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে ২-১-এ এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র দু’মিনিটের মধ্যে পরপর দু’টি গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে ও স্টপেজ টাইমের শেষ মুহূর্তে গোল করে হার বাঁচান লুই মাচাডো।

ড্র করলেও দলের ছেলেদের লড়াকু মনোভাবের প্রশংসা করে কোচ খালিদ সে দিন বলেন, “আজ আমরা জিততে না পারলেও ছেলেদের ফাইটিং স্পিরিট নিয়ে আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই। মুহূর্তের মনসংযোগের অভাবে আমরা দু’মিনিটে দু’গোল খেয়ে যাই ঠিকই। কিন্তু আমাদের যে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে, সেটাই ফের প্রমাণ করে দিল আমাদের ছেলেরা”।

ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন কোচ খালিদ সোমবার সাংবাদিকদের সামনে আসেননি। পাঠান সহকারী কোচ অ্যালিসন খার্সিনতিউকে, যিনি বলেন, “এই ম্যাচটা আমাদের হালকা ভাবে নিলে চলবে না। আমাদের রক্ষণ, আক্রমণ সব দিক দিয়েই ভাল খেলতে হবে। সুযোগ তৈরি করতে হবে এবং সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। ৯০ মিনিট ধরেই নিজেদের সেরাটা দিতে হবে। আশা করি কাল তিন পয়েন্টই পাব”।

মোটিভেশন বজায় রাখার পরীক্ষা

লড়াকু মনোভাব যে এসসি ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের মধ্যেও রয়েছে, তা তাঁরা আগেও বহুবার প্রমাণ করেছেন। এমন একাধিক ম্যাচ খেলেছে তারা, যাতে জয়ের মুখ থেকে ফিরে এসেছে। ফুটবলপ্রেমীরা তাদের লড়াকু পারফরম্যান্স দেখে প্রশংসা না করে পারেননি। তিনটি ম্যাচে দশজনে খেলেও হার স্বীকার করেননি লাল-হলুদ জার্সিধারীরা। একটা সময়ে টানা সাত ম্যাচে অপরাজিত ছিল তারা। এই সাতটি ম্যাচের মধ্যে দু’টিতে জয় পায় তারা। কিন্তু তখন মোটিভেশন ছিল তাদের। এখন সেটা নেই।

গত ছয় ম্যাচের তিনটিতে হারা এসসি ইস্টবেঙ্গল গত ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দী এটিকে মোহনবাগানের কাছে হেরে গিয়ে মানসিক ভাবে নিশ্চয়ই বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। সামনে নিজেদের জায়গা বাঁচানো ছাড়া আর কোনও মোটিভেশন নেই তাদের। এই অল্পস্বল্প মোটিভেশন নিয়ে মঙ্গলবার তারা কতটা লড়াই করতে পারবে, সেটাই দেখার।

নিজেদের প্রমাণ করার তাগিদ অবশ্য সব সময়ই থাকে। সেই তাগিদ থেকে ভাল খেলার প্রেরণাও পায় খেলোয়াড়রা। এখন আর কিছু হারানোর নেই তাদের। তাই চাপমুক্ত অবস্থায় সেরা খেলাটা বেরিয়েও আসতে পারে ব্রাইট ইনোবাখারে, অ্যান্থনি পিলকিংটন, রাজু গায়কোয়াড়, সার্থক গলুইদের পা থেকে। চারটি করে হলুদ কার্ড দেখায় নিয়ম অনুযায়ী অবশ্য ড্যানিয়েল ফক্স ও জাক মাঘোমা এই ম্যাচে খেলতে পারবেন না।

হাতা গুটিয়ে ফিরে আসার সময়

ডার্বিতে হারের পর মোটিভেশনের ভাব নিয়ে প্রশ্ন করলে সোমবার ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে দলের সহকারী কোচ অ্যান্থনি গ্রান্ট বলেন, “এটাই জামার হাতা গুটিয়ে মাঠে ফিরে আসার আসল সময়। তবে আমাদের ছেলেদের মোটিভেশন নিয়ে কোনও সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। নিজেদের ক্ষমতা ও দক্ষতার প্রমাণ দেওয়ার এটাই তো আসল সময়”।

“ওরা (নর্থইস্ট ইউনাইটেড) খুবই ভাল দল। ওরা মরশুম শুরু করেছে খুব ভাল ভাবে। ওদের দলটাও ভাল ভাবে সাজিয়েছে। তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার ভাল মিশ্রণ রয়েছে। সেরা চারে একটা জায়গা ওদের প্রাপ্য। কাল আমাদের কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে। আর এই ম্যাচেই বোঝা যাবে আমাদের ছেলেরা আসলে কেমন”।

তবে সাম্প্রতিক ডার্বির মতো প্রতিপক্ষকে গোল উপহার দিতে নারাজ রবি ফাউলারের সহকারী। বলেন, “সে দিন আমরা দ্বিতীয় গোলটা এটিকে মোহনবাগানকে আমরা উপহার দিয়েছিলাম। কিন্তু তার আগে আমরা জামশেদপুরের মতো দলকে হারিয়েছিলাম ও আমাদের ডিফেন্স খুব ভাল অবস্থায় ছিল। এখনও আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে। ফুটবলে উন্নতি করার কোনও শেষ নেই”।

প্রথম লেগের ম্যাচে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র কাছে ২-০ গোলে হারে লাল-হলুদ বাহিনী। তবে সারা ম্যাচে যথেষ্ট দাপট ছিল তাদের। বিপক্ষ দুর্ভেদ্য রক্ষণের দেওয়াল তুলে দেওয়া সত্ত্বেও মাঘোমা, পিলকিংটনদের অনবরত গোল করার মরিয়া চেষ্টা ছিল প্রশংসনীয়। তা সত্ত্বেও রক্ষণের ব্যর্থতায় জোড়া গোল খেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে হার স্বীকার করতে হয় তাদের। ৩৩ মিনিটের মাথায় সুরচন্দ্রের নিজগোল ও ৯০ মিনিটে মিজোরামের তরুণ মিডফিল্ডার রোচারজেলার গোলে জয় পায় নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি। এ বারে ছবিটা অন্য রকম হবে, না একই থাকবে, সেটাই দেখার।   

(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)

(আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)