আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম চেন্নাই সুপার কিংস ম্যাচ

আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম চেন্নাই সুপার কিংস

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম চেন্নাই সুপার কিংস ম্যাচ ড্র হল। তাদের প্রথম হিরো আইএসএলে রাস্তা যে ক্রমশ বেশ কঠিন হয়ে উঠছে, তা বুঝতেই পারছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। সাতটি ম্যাচ খেলা হয়ে গেলেও এখনও জয়ের স্বাদ পেল না লাল-হলুদ ব্রিগেড। শনিবার ভাস্কোর তিলক ময়দানের ম্যাচে চার-চারটি গোল হলেও গতবারের ফাইনালিস্ট চেন্নাইন এফসি-র সঙ্গে তা ২-২-এ ভাগাভাগি করে ফের ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল এসসি ইস্টবেঙ্গলকে। রবি ফাউলারের দলের আক্রমণ বিভাগ প্রতিদিন দ্রুত উন্নতি করলেও রক্ষণের দুর্বলতা কিছুতেই কাটছে না তাদের। ডিফেন্সের বিস্ময়কর ব্যর্থতাই এ দিন জোড়া গোল হজম করতে বাধ্য করল এসসি ইস্টবেঙ্গলকে।

জার্মান মিডফিল্ডার ম্যাটি স্টাইনমান ৫৯ ও ৬৮ মিনিটে দু’টি অসাধারণ গোল করে এ দিন সম্মান রক্ষা করলেও জাক মাঘোমা, মহম্মদ রফিকরা সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচটা হয়তো জিততেও পারতেন তাঁরা। অন্যদিকে চেন্নাইয়ের দলটিও এ দিন কম সুযোগ পায়নি। বিপক্ষের ডিফেন্সের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে বারবার সুযোগ তৈরি করে তারা। কিন্তু ১৩ মিনিটের মাথায় লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে ও ৬৪ মিনিটে বাংলার রহিম আলি ছাড়া কেউ সুযোগকে গোলে পরিণত করতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধে দশ মিনিটের মধ্যে তিনটি গোল হওয়ায় ম্যাচের উত্তেজনা চরমে ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার-জিতের ফয়সালা হয়নি। এই ড্রয়ের পরে দুই দলই লিগ তালিকায় একধাপ করে উঠে এল।


খেলার জগতের আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে যে দল নামিয়েছিল এসসি ইস্টবেঙ্গল এ দিন তাতে একটিও পরিবর্তন না করে প্রথম এগারো সাজান কোচ রবি ফাউলার। গত ম্যাচে যাঁদের নিয়ে জয়ের দোরগোড়ায় চলে গিয়েছিলেন তিনি, তাঁদেরই এ দিন হিরো আইএসএলের প্রথম জয় তোলার দায়িত্ব দেন ব্রিটিশ কোচ। ফর্মেশনও একই রেখে লাল-হলুদ শিবির খেলা শুরু করে। ৪-২-৩-১। রক্ষণ জমাট রেখে তার সামনে মাঝমাঠের একটি স্তর ও আক্রমণ বিভাগের পিছনে মাঝমাঠের আর একটি স্তর রেখে অপারেট করাই ছিল উদ্দেশ্য, যাতে গোল হজম করতে না হয় এবং গোল আসেও।

অন্যদিকে, চেন্নাইন এফসি-র কোচ কসাবা লাজলো লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, রহিম আলি ও জাকুব সিলভেস্টর—এই তিন ফরোয়ার্ডে আক্রমণ বিভাগ সাজান। দলের সেরা তারকা ব্রাজিলিয়ান রাফায়েল ক্রিভেলারো ও অনিরুদ্ধ থাপা তাঁদের পিছন থেকে সহায়তা দেন। ডিফেন্সে চার ফুটবলার রেখে আক্রমণে ওঠার পরিকল্পনা ছিল লাজলোর।

শুরু থেকে দুই দল আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করলেও দু’দিকের রক্ষণ বিভাগকে পরীক্ষা দিতে হয় বারবার। কিন্তু এসসি ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্স যেহেতু বরাবরই নড়বড়ে, তাই তাদের ওপরই বেশি চাপ পড়ে যায়। বাঁ দিকের উইং দিয়ে ছাঙতে বারবার বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়ছিলেন বিপজ্জনক ভাবে। তাঁকে মার্ক করার কাজটা সুরচন্দ্রকে দেওয়া হলেও তিনি কিন্তু তা ঠিকমতো করতে পারছিলেন না। ১৩ মিনিটের মাথায় এমনই এক মুভে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ২৩ বছর বয়সি মিজো তারকা।

মাঝমাঠে সিলভেস্টরের পাস থেকে বল নিয়ে বাঁ দিক দিয়ে গোলের উদ্দেশ্যে একটা স্প্রিন্ট শুরু করেন ছাঙতে। পিছন থেকে তাঁকে তাড়া করলেও নাগাল পাননি সুরচন্দ্র। যখন নাগাল পান, তখন ছাঙতের পা থেকে বল বেরিয়ে যায় গোলের দিকে এবং বল তখন দেবজিৎ মজুমদারকে পরাস্ত করে এসসি ইস্টবেঙ্গলের জালে জড়িয়ে গিয়েছে। রক্ষণের ব্যর্থতাতেই সপ্তম ম্যাচে ১২ নম্বর গোলটি খায় তারা। সিলভেস্টর ও ছাঙতে, দু’জনকেই যথেষ্ট জায়গা দেওয়া হয় এবং তাঁরা স্বচ্ছন্দেই গোলটি পেয়ে যান।

ডিফেন্স দুর্বল হলেও গত দুই ম্যাচে এসসি ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ বিভাগ কিন্তু প্রমাণ করেছে, তারা দ্রুত উন্নতি করছে। এ দিনও তার ইঙ্গিত দেন জাক মাঘোমা, অ্যান্থনি পিলকিংটন, মহম্মদ রফিকরা। ৩০ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠে ম্যাটি স্টাইনমানের পা থেকে উড়ে আসা বল বক্সের মধ্যে গোলের সামনে বুক দিয়ে নামিয়েও গোলে ঠেলতে পারেননি মাঘোমা। ফাইনাল শট নেওয়ার আগেই ডিফেন্ডার দীপক টাঙ্গরির হাল্কা ধাক্কায় বেসামাল হয়ে যান তিনি এবং গোলকিপার বিশাল কয়েথ সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলের দখল নিয়ে নেন।

মাঘোমার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার সাত মিনিট পরে এর চেয়েও বড় সুযোগ হাতছাড়া করেন রফিক। এ বারও গোলের পাসটি দিয়েছিলেন স্টাইনমান। ইনসাইড বক্সে প্রথম টাচে গোলকিপারকে পরাস্ত করে সামনে ফাঁকা গোল পেয়ে যান রফিক। কিন্তু গোলে শট নেওয়ার মুহূর্তে দীপক পিছন থেকে স্লাইড করে তাঁকে আটকে দেন। এই দুটো সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে প্রথমার্ধেই ২-১ গোলে এগিয়ে যেতে পারত এসসি ইস্টবেঙ্গল। তবে সব মিলিয়ে প্রথম ৪৫ মিনিটে চেন্নাইন এফসি বিপক্ষকে অনেকটা পিছনে ফেলে দেয়, যা রবি ফাউলারের দলের পক্ষে মোটেই শুভ ইঙ্গিত ছিল না।

দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার বাড়ানোর জন্য জেজে লালপেখলুয়াকে নামান ফাউলার। কিন্তু রক্ষণ থেকে শেহনাজকে তুলে কেন তাঁকে নামানো হয়, সেটাই প্রশ্ন। সুরচন্দ্রকেও তুলে নিয়ে নামানো হয় ১৭ বছর বয়সি ডিফেন্ডার এন রোহেন সিংকে।

প্রথম দশ মিনিটের মধ্যে দু-দু’টি কর্নার আদায় করেও তা কাজে লাগাতে পারেনি এসসি ইস্টবেঙ্গল। প্রথমার্ধে চারটি কর্নার পেয়েছিল তারা। প্রত্যেকটিতেই ব্যর্থ হয়। কিন্তু পাঁচ নম্বর কর্নার থেকে সমতা আনেন স্টাইনমান। ৫৯ মিনিটের মাথায় বিকাশ জাইরুর নিখুঁত কর্নারে হাওয়ায় ভাসানো বলে মাথার বাঁ দিক দিয়ে জোরালো হেডে গোল করেন জার্মান মিডফিল্ডারটি।

সমতা এলেও তা পাঁচ মিনিটের বেশি ধরে রাখতে পারেনি এসসি ইস্টবেঙ্গল। ৬৪ মিনিটের মাথায় ফের তাদের ডিফেন্সের বিস্ময়কর ব্যর্থতা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যায় চেন্নাইন এফসি। বাংলার ফুটবলার রহিম আলি ডানদিক থেকে পাস দেন ক্রিভেলারোকে। তিনি তা বক্সের মাথায় থাকা সিলভেস্টরকে দেন। তিনি বক্সে ঢুকে আসা রহিমকে দেন এবং তিনি জাইরুকে পরাস্ত করে বল গোলে ঠেলে দেন।

পিছিয়ে পড়ার পরও অবশ্য হাল ছাড়েনি লাল-হলুদ বাহিনী। বিপক্ষের ডিফেন্সকেই ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে যায় তারা। ৬৮ মিনিটের মাথায় ফের দলের পক্ষে সমতা আনেন স্টাইনমান। কর্নার থেকে হেডে গোলের দিকে প্রথমে বল ঠেলে দেন ড্যানিয়েল ফক্স। গোলকিপার কয়েথ গোল বাঁচান ঠিকই, কিন্তু বল তাঁর হাত থেকে ছিটকে চলে আসে সোজা স্টাইনমানের পায়ে। তিনি এই সুযোগ হাতছাড়া করেননি। সোজা জালে বল জড়িয়ে দেন।

২-২ হয়ে যাওয়ার পরেও দু’বার এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল চেন্নাইন। এসসি ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের দৈন্যদশা তখন চরমে পৌঁছে যায়। একবার অবধারিত গোল বাঁচান দেবজিৎ মজুমদার ও পরের বার প্রায় ফাঁকা গোল পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি সিলভেস্টর। লাল-হলুদের পরিবর্ত ডিফেন্ডার মিলন সিংয়ের বক্সের মাথায় প্রায় আত্মঘাতী ব্যাকপাস থেকে বল পেয়ে গিয়েছিলেন সিলভেস্টর, যার মাশুল দিতে হত হয়তো। ৮৭ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে সিপোভিচের গোলমুখী হেডও এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে গোলের বাইরে চলে যায়।

শেষ দশ মিনিটে জয়সূচক গোল পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন মাঘোমা, পিলকিংটনরা। কিন্তু প্রতিবারই বিপক্ষের ডিফেন্সে দেওয়ালে আটকে যায় তাদের উদ্যোগ। সারা ম্যাচে বহু গোলের সুযোগ পেয়েও শেষ পর্যন্ত এ বারেও হিরো আইএসএলের প্রথম জয়ের স্বাদ পাওয়া হল না লাল-হলুদ বাহিনীর।

(লেখা আইএসএল-এর ওয়েবসাইট থেকে)


(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)