আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম বেঙ্গালুরু এফসি ম্যাচ

আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম বেঙ্গালুরু এফসি

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক:  আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম বেঙ্গালুরু এফসি ম্যাচে জয়ে ফিরলেন সুনীলরা। টানা আট ম্যাচে জয়হীন থাকার পরে মঙ্গলবার এসসি ইস্টবেঙ্গলকে ২-০ গোলে হারিয়ে জয়ে ফিরল বেঙ্গালুরু এফসি। প্রথম লেগে ০-১ হারের বদলা নিল তারা। তিলক ময়দান স্টেডিয়ামে হিরো আইসএল টেবলের সাত ও ন’নম্বর দলের মধ্যে ম্যাচে এ দিন প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে ক্লেটন সিলভার গোলে এগিয়ে যায় বেঙ্গালুরু এফসি। বিরতির বাঁশি বাজার ঠিক আগেই পরাগ শ্রীবাসের শট পোস্টে লেগে ফিরে এসসি ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদারের পায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়।

সুনীল ছেত্রী এ দিন নিজের জায়গা ও ভূমিকা বদলে নিজের পুরনো ও চেনা ফর্মে ফিরে আসেন। সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি। ফলে তাঁকে ম্যাচের ‘হিরো’-র খেতাব দেওয়া হয়। ম্যাচের শেষ দিকে তাঁর এক দূরপাল্লার শট ক্রসবারে লেগে ফিরে না এলে আরও বেশি ব্যবধানে জিততে পারত বেঙ্গালুরু। এই জয়ের ফলে লিগ টেবলে ছ’নম্বরে উঠে এল তারা। এসসি ইস্টবেঙ্গল দশ নম্বরেই রয়ে গেল। এই নিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে জয়হীন তারা।

এ দিন জাক মাঘোমা, অ্যান্থনি পিলকিংটনকে ছাড়াই প্রথম এগারো নামায় এসসি ইস্টবেঙ্গল। হয়তো তারই মাশুল দিতে হল তাদের। গত দুই ম্যাচে এফসি গোয়া ও মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে যে পারফরম্যান্স দেখা গিয়েছিল লাল-হলুদ ফুটবলারদের, তার ধারেকাছেও এ দিন ছিলেন না তাঁরা। প্রথম ৪৫ মিনিটেই দু’গোলে পিছিয়ে গিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে তাদের দিশাহারা লাগে। বল পজেশন ও পাসের সংখ্যায় অনেক এগিয়ে (নীচে পরিসংখ্যান দেখুন) থাকলেও সারা ম্যাচে একবারও গোলে শট নিতে দেখা যায়নি তাদের। এই প্রথম এমন হল তাদের। ব্রাইট ইনোবাখারেকে এ দিন কড়া পাহাড়ায় রাখে বেঙ্গালুরু। ফলে জাক মাঘোমা দ্বিতীয়ার্ধে নেমেও তাঁকে সাহায্য করে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেননি।

এসসি ইস্টবেঙ্গল এ দিন চারটি পরিবর্তন করে দল নামায়। অঙ্কিত মুখার্জি, ওয়াহেংবাম লুয়াং, ম্যাটি স্টাইনমান ও অ্যারন হলোওয়ে এ দিন প্রথম এগারোয় ছিলেন যথাক্রমে রাণা ঘরামি, মহম্মদ রফিক, অ্যান্থনি পিলকিংটন ও জাক মাঘোমার পরিবর্তে। মাঘোমা, পিলকিংটন দু’জনেই ছিলেন ডাগ আউটে। বেঙ্গালুরু দু’গোল দিয়ে দেওয়ার পরে নামেন এই দুই তারকা।

অন্যদিকে, বেঙ্গালুরু এফসি তাদের দলে দুটি পরিবর্তন করে দল নামায়। আহত হুয়ানান ও সাসপেন্ড এরিক পার্তালুর জায়গায় দেখা যায় যথাক্রমে অজিত কুমার ও প্রতীক চৌধুরিকে। মাত্র দু’জন বিদেশিকে প্রথম এগারোয় রেখে দল নামান সুনীল ছেত্রীদের ভারপ্রাপ্ত কোচ নৌশাদ মুসা।

আক্রমণাত্মক ফুটবল দিয়ে শুরু করলেও ১২ মিনিটের মাথায় গোল খেয়ে যায় এসসি ইস্টবেঙ্গল। গুরপ্রীত সিং সান্ধুর লম্বা গোলকিক বিপক্ষের বক্সের মাথায় পৌঁছলে উড়ে আসা বল সুনীল ছেত্রী হেড করে বক্সের মাথায় থাকা ক্লেটন সিলভাকে দেন এবং বাঁ পায়ের ইনস্টেপে গোলের ঠিকানা লেখা নিখুঁত ভলি করেন ক্লেটন।

এই ম্যাচে জেতা খুবই জরুরি ছিল দুই পক্ষেরই। বেঙ্গালুরু যেখানে টানা আট ম্যাচে জয়হীন থাকার পরে এই ম্যাচে খেলতে নামে, সেখানে এসসি ইস্টবেঙ্গল এর আগে চারটি ম্যাচে জয় পায়নি। শেষ যে ম্যাচে তারা জয় পেয়েছিল, তার প্রতিপক্ষ ছিল এই বেঙ্গালুরু এফসি-ই। সেই হারের বদলা নেওয়ার তাগিদও ছিল বেঙ্গালুরুর। শুরুতে লাল-হলুদের আক্রমণের বহর দেখে মনে হচ্ছিল তাগিদটা তাদেরই বেশি। কিন্তু গত কয়েকটি ম্যাচে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে যে রোগে আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে, সেই রোগ যে এখনও সারেনি, তা এ দিন বোঝা যায়। একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করলেও কাজের কাজ করতে পারেনি তারা।

২০ মিনিটের মাথায় বিপক্ষের বক্সের মাথায় ফ্রি কিক পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি ব্রাইট ইনোবাখারে। আগের ম্যাচের ব্রাইটকে এ দিন একেবারেই পাওয়া যায়নি। তাঁকে কড়া পাহাড়ায় রেখেছিলেন বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডাররা। ম্যান মার্কিংয়ে রেখে বল নিয়ে তাঁকে বেশি নড়াচড়া করার জায়গাই দেওয়া হয়নি। পিলকিংটন, মাঘোমার প্রথম এগারোয় না থাকার রেশ সরাসরি এসে পড়ে দলের ওপর। সারা ম্যাচে একটিও শট গোলে রাখতে পারেননি লাল-হলুদ ব্রিগেডের ফুটবলাররা। যা এর আগে তাদের আর কোনও ম্যাচে হয়নি।

এসসি ইস্টবেঙ্গল শুরুটা ভাল করলেও পাল্টা আক্রমণ ক্রমশ বাড়াচ্ছিল বেঙ্গালুরু। ৪২ মিনিটের মাথায় লিয়ন অগাস্টিন চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় যিনি নামেন, সেই তরুণ ডিফেন্ডার পরাগ শ্রীবাসই দ্বিতীয় গোল এনে দেন বেঙ্গালুরুকে। তবে নিজের খাতায় গোলটি জমা করতে পারেননি।

৪৫ মিনিটের মাথায় রাহুল ভেকে ডান দিক দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে বক্সের মাঝামাঝি পরাগের উদ্দেশ্যে কাট ব্যাক করেন। পরাগ প্রথম সুযোগেই গোলে শট নেন। কিন্তু তা পোস্টে লেগে ফিরে এসে ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার দেবজিতের পায়ের পিছনে লেগে গোলে ঢুকে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধে জাক মাঘোমা ও রাণা ঘরামিকে নামান লাল-হলুদ কোচ রবি ফাউলার। তুলে নেন ড্যানিয়েল ফক্স ও হরমনপ্রীত সিংকে। উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট। ব্রাইটের সঙ্গে মাঘোমাকে জুড়ে দিয়ে আক্রমণের ধার বাড়ানো। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। ব্রাইট ম্যান মার্কিংয়ে থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি। প্রথমার্ধেই দু’গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরে দ্বিতীয়ার্ধে অযথা ঝুঁকি নিতেও রাজি ছিলেন না সুনীল ছেত্রীরা। তারা মাঝমাঠ থেকেই বিপক্ষের ফুটবলারদের সামনে ব্যারিকেড তোলার চেষ্টা শুরু করেন। যার জেরে মাঘোমাও ম্যান মার্কিংয়ের আওতায় পড়ে যান। ফলে ৭১ মিনিটে পিলকিংটন নেমেও কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেননি।

৮৫ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টা করেন সুনীল ছেত্রী। রাণা ঘরামির পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে বক্সের বাইরে থেকে গোলে দূরপাল্লার শট নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা ক্রসবারে লাগে। এ দিন বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক একেবারে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন। তিনি এ দিন কিছুটা উঠে খেলায় দলের পারফরম্যান্সে এক আলাদা মাত্রা যোগ হয়।

এর আগের ম্যাচগুলোতে এতটা এগিয়ে থেকে খেলতে দেখা যায়নি সুনীলকে। এ দিন তিনি নিজের জায়গা কিছুটা বদলে মরিয়া হয়ে ওঠায় পুরো দলটার চেহারাই বদলে যায়। সঙ্গত কারণেই তাই ম্যাচের হিরোর খেতাব জিতে নেন সুনীলই। টানা আট ম্যাচে জয় না পাওয়া একটা দলকে বোধহয় সুনীল ছেত্রীর মতো ফুটবলাররাই সাফল্যের রাস্তায় ফিরিয়ে আনতে পারেন।

এসসি ইস্টবেঙ্গল দলদেবজিৎ মজুমদার (গোল), অঙ্কিত মুখার্জি, স্কট নেভিল, ড্যানিয়েল ফক্স (জাক মাঘোমা), নারায়ণ দাস, ওয়াহেংবাম লুয়াং (ইয়ুমনাম সিং), অজয় ছেত্রী (মিলন সিং), ম্যাটি স্টাইনমান (অ্যান্থনি পিলকিংটন), অ্যারন হলোওয়ে, ব্রাইট ইনোবাখারে, হরমনপ্রীত সিং (রাণা ঘরামি)

(আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)