আইএসএল ২০২০-২১, ওড়িশা এফসি বনাম এটিকে মোহনবাগান প্রিভিউ

আইএসএল ২০২০-২১, ওড়িশা এফসি বনাম এটিকে মোহনবাগান

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল ২০২০-২১, ওড়িশা এফসি বনাম এটিকে মোহনবাগান খেলা বৃহস্পতিবার। প্রথম দুই ম্যাচে জয়ের পরে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছে এটিকে মোহনবাগান। সম্পুর্ণ অন্য মেরুতে ওডিশা এফসি। চলতি হিরো আইএসএলে এখন পর্যন্ত জয়ের মুখ দেখতে পায়নি তারা। লিগ টেবলের দুই মেরুতে থাকা এই দুই দল মুখোমুখি হচ্ছে বৃহস্পতিবার, ফতোরদা স্টেডিয়ামে। তৃতীয় ম্যাচেও জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখাটা যেমন এই ম্যাচে কলকাতার দলের উদ্দেশ্য, তেমনই বৃহস্পতিবার লিগে প্রথম জয় পাওয়া ওডিশার প্রধান লক্ষ্য।

জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ

প্রথম ম্যাচেই এক গোলে কেরালা ব্লাস্টার্সকে হারানোর পরে চিরপ্রতিদ্বন্দী এসসি ইস্টবেঙ্গলকে দু’গোলে হারায় এটিকে মোহনবাগান। এ বারের হিরো আইএসএল এখন পর্যন্ত আর কোনও দলই এতটা ধারাবাহিক ভাবে শুরু করতে পারেনি। তাই লিগ টেবলে আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দলই শীর্ষে। মুম্বই সিটি এফসি-ও সমান পয়েন্ট পেয়ে এক নম্বরে থাকলেও একটি ম্যাচ বেশি খেলেছে তারা। তা ছাড়া এখন পর্যন্ত হার বা ড্রয়ের মুখ দেখেননি শুধু রয় কৃষ্ণারাই।


(খেলার জগতের আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

শুরু থেকেই যে ছন্দ পেয়ে গিয়েছে সবুজ-মেরুন শিবির, তা তাদের পরবর্তী ম্যাচগুলোতে সফল হতে সাহায্য করবে। তারকা মিডফিল্ডার মাইকেল সুসাইরাজ চোট পেয়ে কার্যত লিগের বাইরে ছিটকে যাওয়ায় প্রথম ম্যাচেই অবশ্য তাল কেটে গিয়েছিল। কিন্তু এটিকে মোহনবাগানের রিজার্ভ বেঞ্চ এতটাই শক্তিশালী যে, তাঁর পরিবর্ত পেতে অসুবিধা হয়নি স্প্যানিশ কোচ হাবাসের। জয়েশ রানেকে সুসাইরাজের দায়িত্ব দিয়ে মাঠে নামিয়ে সাফল্য পান।

সুমিত রাঠি, প্রণয় হালদার, মনবীর সিং, ব্র্যাডেন ইনম্যান, গ্লেন মার্টিন্সদের মতো প্রথম এগারোয় থাকার মতো ফুটবলাররাদের যে দলের রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকতে হয়, সেই দলের প্রথম এগারোর খেলোয়াড়রা কতটা কার্যকরী, তা আন্দাজ করাই যায়। হাবাস বলছেন, দলের প্রত্যেককেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সুযোগ দিতে চান তিনি। কারণ, দীর্ঘ লিগে কাউকে টানা খেলিয়ে তার ওপর অতিরিক্ত চাপ দিতে চান না। সেই কথা ভেবেই এই রকম দল গড়েছেন।

রক্ষণে প্রীতম কোটাল, তিরি, সন্দেশ ঝিঙ্গন, শুভাশিস বসুদের ফাঁকি দিয়ে বিপক্ষের ফরোয়ার্ড বা মিডফিল্ডারদের গোলের মুখ খোলা যেমন কঠিন, তেমনই আক্রমণে রয় কৃষ্ণাকে আটকানোও সোজা নয়। ডিফেন্সের এক মুহূর্তের ভুলকে কাজে লাগিয়ে যে গোল দিতে পারেন, তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন কলকাতা ডার্বিতে করা গোলেই। তাও ডেভিড উইলিয়ামস এখনও তাঁর সেরা ফর্মে আসেননি। এডু গার্সিয়াকে প্রথম ম্যাচে রয়ের সঙ্গে নামানো হলেও তিনি তেমন কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেননি। দীর্ঘ সময় ম্যাচে না থাকার প্রভাব দলের অনেকের পারফরম্যান্সেই লক্ষ্য করা গিয়েছে। আক্রমণ বিভাগে মনবীর সিং বরং ওঁদের চেয়ে অনেক সক্রিয়। গোল করছেন যেমন, করাচ্ছেনও পঞ্জাবের এই তরুণ ফরোয়ার্ড।

প্রথম দুই ম্যাচেই ৩-৫-২ ছকে দলকে খেলিয়েছেন হাবাস। মাঝমাঠে লোক বেশি থাকলেও কার্ল ম্যাকহিউ, হাভিয়ে হার্নান্ডেজরা এখনও নিজেদের সেরা জায়গায় আসতে পারেননি। প্রবীর দাসকে প্রথম ম্যাচে বিবর্ণ মনে হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে তিনি সমর্থকদের আস্বস্ত করেছেন যে, গতবারের মতো ফর্মে ফেরার পথেই রয়েছেন তিনি। কার্যকরী ফুটবল খেলছেন প্রণয় হালদারও। কিন্তু তাঁর হঠাৎ হঠাৎ মাথা গরম করার প্রবণতা কোচকে বরাবর চিন্তায় রাখে। যার ফলে তাঁকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবর্ত হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে।

গোলকিপার অরিন্দম বরাবরের মতোই তৎপর। কিন্তু শক্তপোক্ত রক্ষণের দুর্ভেদ্য দেওয়াল সামনে থাকায় তাঁকে এখন পর্যন্ত খুব বেশি পরীক্ষার মুখো পড়তে হয়নি। যেটুকু পরীক্ষা দিয়েছেন, তাতে অরিন্দমকে সফলই বলা যায়। এই সবুজ-মেরুন বাহিনীকে আটকানো ওডিশা এফসি-র পক্ষে বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। প্রতিপক্ষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল বলে বৃহস্পতিবার রিজার্ভ বেঞ্চের কয়েকজনকে প্রথম এগারোয় রেখে পরখ করেও দেখে নিতে পারেন হাবাস।

লড়াইয়ে ফেরার ইঙ্গিত

গত রবিবার জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে দুই গোলে পিছিয়ে থাকার পরে যে ভাবে ম্যাচটা ২-২ গোলে ড্র করে ওডিশা এফসি, তার পরে অবশ্য দলটাকে আর দুর্বল মনে করা উচিত হবে না। শেষ মুহূর্তের গোলে পাওয়া নাটকীয় ড্রয়ের ফলে দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে বলে মনে করেন তাদের অভিজ্ঞ ইংরেজ কোচ স্টুয়ার্ট ব্যাক্সটার। বছর দুয়েক ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব ১৯ দলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসা ৬২ বছর বয়সি এই কোচকে এই বিষয়ে আস্বস্ত করেন ২৯ বছর বয়সি ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড দিয়েগো মরিসিও।

প্রথমে ৭৭ মিনিটে ও পরে স্টপেজ টাইমে গোল করে দলকে হারের হাত থেকে বাঁচান রোনাল্ডিনহোর সঙ্গে ফ্লামেঙ্গো ক্লাবে খেলে আসা মরিসিও। যিনি আবার অনূর্ধ ২০ জাতীয় দলের হয়ে নেইমার, অস্কার, ফিলিপ কুটিনহো, কাসেমিরো, ফার্মিনোদের সঙ্গেও খেলেছেন। প্রথম ম্যাচে হায়দরাবাদ এফসি পেনাল্টি থেকে পাওয়া গোলে হারায় তাদের।

গতবার হিরো আইএসএলে অভিষেক হওয়া দলটি ছিল লিগ তালিকার ছয় নম্বরে। প্লে অফে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে এ বার দলে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন বাংলার প্রতিবেশী রাজ্যের এই ক্লাবের কর্তারা। দলের রক্ষণকে শক্তিশালী করে তুলতে ইংল্যান্ড থেকে নিয়ে আসা হয় নিউক্যাসল ইউনাইটেড অ্যাকাডেমিতে তৈরি ও গত দু’বছর রয় কৃষ্ণার প্রাক্তন ক্লাব ওয়েলিংটন ফিনিক্সের হয়ে খেলে আসা ডিফেন্ডার স্টিভেন টেলর ও অস্ট্রেলিয়ান জ্যাকব ট্রাটকে।

৩৩ বছর বয়সি ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড মার্সেলো পেরেইরা, যিনি মার্সেলিনহো নামেই বেশি বিখ্যাত হিরো আইএসএলে, তিনিই এই দলের আক্রমণের প্রধান হাতিয়ার। এটি দেশের সেরা লিগে পঞ্চম মরশুম তাঁর। গত বছর হায়দরাবাদ এফসি-র হয়ে খেলে সাতটি গোল করেছিলেন ও দু’টি করিয়েছিলেন। গতবার বেঙ্গালুরু এফসি থেকে লিয়েনে ওডিশা এফসি-তে আসা স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড মানুয়েল ওনু-কে রেখে দেয় ওডিশা এফসি। তিনিও তাদের আক্রমণ বিভাগে বড় ভরসা।


(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

গত দুই ম্যাচে দিয়েগো মরিসিওকে প্রথম দলে রাখেননি কোচ। ভারতের পরিবেশের সঙ্গে তাঁর মানিয়ে নিতে অসুবিধা হচ্ছে, এই যুক্তিতে তাঁকে পরিবর্ত হিসেবে নামিয়েছেন । দুই ম্যাচে সব মিলিয়ে ১২০ মিনিট খেলেছেন মরিসিও। গত ম্যাচে তিনি ৫৯ মিনিটে নামেন ওনুর জায়গায় এবং দুটি গোল করে দলকে এক পয়েন্ট এনে দেন। এই পারফরম্যান্সের পরে হয়তো তাঁকে বৃহস্পতিবার প্রথম দলেই দেখা যেতে পারে। মরিসিও ও মার্সেলিনহো একসঙ্গে বিপক্ষের গোল এরিয়ায় হানা দিলে বিপদে পড়তে পারেন উল্টো দিকের গোলকিপার, ডিফেন্ডাররা। সে কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাবেন না হাবাস।

এটিকে মোহনবাগান স্কোয়াড:

গোলকিপার: অরিন্দম ভট্টাচার্য, ধীরজ সিং, অভিলাষ পাল, আর্শ শেখ, আরিয়ান নিরজ লাম্বা

ডিফেন্ডার: তিরি, প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাস, সন্দেশ ঝিঙ্গন, শুভাশিস বসু, সুমিত রাঠি

মিডফিল্ডার: প্রণয় হালদার, ব্র্যাডেন ইনম্যান, হাভিয়ে হার্নান্ডেজ, এডু গার্সিয়া, কার্ল ম্যাকহিউ, গ্ল্যান মার্টিন্স, জয়েশ রানে, বরিস সিং, রেজিন মাইকেল, শেখ সাহিল, এন ইংসন সিং

ফরোয়ার্ড: ডেভিড উইলিয়ামস, রয় কৃষ্ণা, মনবীর সিং, মহম্মদ ফারদিন আলি মোল্লা

(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)