আইএসএল ২০২০-২১, জামশেদপুর এফসি বনাম এসসি ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ

আইএসএল ২০২০-২১, জামশেদপুর এফসি বনাম এসসি ইস্টবেঙ্গল

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল ২০২০-২১, জামশেদপুর এফসি বনাম এসসি ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জয়ে ফিরল টিম ফাউলার। নতুন করে টিকে থাকার আশা তৈরি হলে এসসি ইস্টবেঙ্গলের। সেরা চারে পৌঁছনোর সামান্যতম আশা জিইয়ে রাখার জন্য যা দরকার ছিল এসসি ইস্টবেঙ্গলের, রবিবার বিকেলে ফতোরদা স্টেডিয়ামে সেটাই পেয়ে গেল তারা। বহু অপেক্ষার পরে এল জয়। টানা পাঁচ ম্যাচে জয়ের মুখ না দেখা লাল-হলুদ ব্রিগেড এ দিন জামশেদপুর এফসি-কে ২-১ গোলে হারিয়ে লিগ টেবলে এক ধাপ উঠে এল। অন্য দিকে, টানা পাঁচ ম্যাচে জয়হীন থাকার পরে গত ম্যাচেই জয়ে ফেরা ইস্পাতনগরীর দল ফের ব্যর্থতার মেঘে ঢাকা পড়ল ম্যাটি স্টাইনমান ও অ্যান্থনি পিলকিংটনের গোলে।

গত ম্যাচে লাল-হলুদ বাহিনীকে যে বেহাল অবস্থায় দেখা গিয়েছিল, তার চেয়ে একেবারে অন্য চেহারায় দেখা যায় তাদের। রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করা এই ম্যাচের শুরুতেই ম্যাটি স্টাইনমানের গোলে এগিয়ে যায় তারা। ৬৮ মিনিটে স্টাইনমানের অ্যাসিস্টেই ব্যবধান বাড়ান পিলকিংটন। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার সাত মিনিট আগে পিটার হার্টলের হেড থেকে করা গোলে ব্যবধান কমে। স্টপেজ টাইমে ভাল্সকিসের গোলমুখী হেড গোলকিপার সুব্রত পাল সেভ না করলে ফের দু’পয়েন্ট নষ্ট হত তাদের।

গত ম্যাচে এসসি ইস্টবেঙ্গল চারটি পরিবর্তন করে দল নামিয়েছিল। এ দিন দলে ছ’টি পরিবর্তন দেখা যায়। সার্থক গলুই, সৌরভ দাস, রাজু গায়কোয়াড়, অ্যান্থনি পিলকিংটন, জাক মাঘোমা, সুব্রত পালদের প্রথম এগারোয় রাখা হয় স্কট নেভিল, অজয় ছেত্রী, ওয়াহেংবাম লুয়াং, হরমনপ্রীত সিং, অ্যারন হলোওয়ে ও দেবজিতের জায়গায়। এই ছ’টি পরিবর্তনেই দলের চেহারা পুরো বদলে যায়। তাদের পারফরম্যান্স দেখে মনে হচ্ছিল, এটাই এই মুহূর্তে লাল-হলুদ ব্রিগেডের সেরা এগারো।

শুরু থেকেই বিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা করে তারা। জয়ের জন্য মরিয়া জামশেদপুরও পাল্টা চাপ দেওয়ার চেষ্টা করে। পাঁচ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে ওঠা নারায়ণের ক্রসে ঠিকমতো পৌঁছতে পারলে হয়তো দলকে এগিয়ে দিতে পারতেন পিলকিংটন। কিন্তু টাইমিংয়েই গোলমাল হয়ে যায়। এ ছাড়াও প্রথমার্ধের মাঝামাঝি তাঁর একটি দূরপাল্লার শট ক্রসবারের সামান্য ওপর দিয়ে চলে যায়।

কিন্তু পরের মিনিটেই কর্নার থেকে দুর্দান্ত গোল পেয়ে যায় এসসি ইস্টবেঙ্গল। ডানদিক থেকে নারায়ণ দাসের নিখুঁত কর্নারে ৪৫ ডিগ্রি কোণ থেকে হেড করে কাছের পোস্ট দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন ম্যাটি স্টাইনমান। তাদের যে একজন সেটপিস কোচ রয়েছেন এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে যে ভালই অনুশীললন করছেন লাল-হলুদ শিবিরের ফুটবলাররা, তা এই গোল থেকেই বোঝা যায়।

শুরুতেই গোল পেয়ে চাঙ্গা হয়ে ওঠে লাল-হলুদ ব্রিগেড। অন্যদিকে গোল শোধ করার জন্যও মরিয়া হয়ে ওঠে জামশেদপুর এফসি। তবে নিজেদের গোলের সামনে সঙ্ঘবদ্ধ ডিফেন্স নেরিয়াস ভাল্সকিস, ফারুখ চৌধুরি, লেকজান্দ্রে লিমাদের রুখে দেয় বারবার। গোলমেশিন হিসেবে পরিচিত ভাল্সকিস গত পাঁচ ম্যাচে কোনও গোল না পাওয়ায় এই ম্যাচে গোল পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। প্রথমার্ধে সারাক্ষণ তাঁকে বিপক্ষের গোল এরিয়াতেই দেখা যায়। কিন্তু একবারও সত্যিকারের ভাল সুযোগ তৈরি করতে পারেননি বিপক্ষের রক্ষণের বাধায়।

সার্থক গলুই ও রাজু গায়কোয়াড় দলে ফিরে আসায় এ দিন এসসি ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণকে অনেক শক্তিশালী লাগছিল। এই দু’জনের জন্য ড্যানিয়েল ফক্সকেও অনেকটা চাপমুক্ত হয়ে খেলতে দেখা যায়। যার ফলে জামশেদপুর অ্যাটাককে কার্যকরী হয়ে উঠতে দেখা যায়নি এ দিন।

এসসি ইস্টবেঙ্গল অবশ্য ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়। প্রথামার্ধের স্টপেজ টাইমে রাজুর লম্বা থ্রোয়ে হেড করে দ্বিতীয় গোল দেওয়ার চেষ্টা করেন স্টাইনমান। কিন্তু তা গোলের বাইরে চলে যায়। বিরতিতে বল পজেশন ও পাসিংয়ে এগিয়েই ছিল লাল-হলুদ ব্রিগেড।

পিটার হার্টলে ও স্টিফেন এজের মতো দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডারদের পরাস্ত করে জামশেদপুরের বক্সে ঢুকে গোল করা ক্রমশ কঠিন হয়ে ওঠে এসসি ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে। তাই সেট পিস থেকে গোল করার চেষ্টা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না তাদের। জামশেদপুরও এ দিন একই সমস্যার সম্মুখীন হয় বিপক্ষের গোল এরিয়ায়। জোটবদ্ধ লাল-হলুদ ডিফেন্সকে ধোঁকা দিয়ে গোলের সামনে যেতেই পারছিল না তারা।

তবে ৫৭ মিনিটের মাথায় কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বিপক্ষের রক্ষণ প্রায় ফাঁকা পেয়ে গিয়েছিলেন বাঁ দিকের উইং দিয়ে ওঠা নারায়ণ দাস। মাঝমাঠ থেকে ব্রাইটের বাড়ানো ক্রস ধরে উঠে যান তিনি। বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ে সোজা গোলে শট নেন তিনি। কিন্তু জামশেদপুরের গোলকিপার রেহনেশ তা ফিস্ট করে বার করে দেন।

৬২ মিনিটের মাথায় প্রায় সমতা এনে ফেলেছিলেন ভাল্সকিস। বাঁ দিক দিয়ে ওঠা ফারুখ চৌধুরির মাইনাস থেকে গোলে জোরালো শট নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নারায়ণের পায়ে লেগে তা পোস্টে ধাক্কা খায়। ওই একবারই রক্ষণের ভুলকে কাজে লাগিয়ে গোলের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে ফেলেছিল জামশেদপুর।

এ দিন ৮২ মিনিট পর্যন্ত ডাগ আউট থেকে কোনও খেলোয়াড়কে নামাননি এসসি ইস্টবেঙ্গলের সহকারী কোচ অ্যান্থনি গ্রান্ট। এতটাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলছিলেন তাঁর ফুটবলাররা। ততক্ষণে জামশেদপুরের রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে আইতর মনরয়-সহ চারজন খেলোয়াড় মাঠে নেমে পড়েন। তাও ওই সময়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন পিলকিংটন। তাঁর জায়গায় নামেন অ্যারন হলোওয়ে।

গোল শোধের জন্য মরিয়া জামশেদপুর যখন প্রায় অল আউট চলে যায়, সেই সুযোগে ৬৮ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়িয়ে নেন অ্যান্থনি পিলকিংটন। ডান দিকের উইং দিয়ে ওঠা স্টাইনমান সামনে বক্সের মধ্যে বল বাড়ান পিলকিংটনের উদ্দেশ্যে। তখন বক্সে বিপক্ষের মাত্র একজন ডিফেন্ডার। তাঁকে ধোঁকা দিয়ে গোলে শট নেন ও জালে জড়িয়ে দেন পিলকিংটন।

৭৮ মিনিটে ফের গোলের সুযোগ পেয়ে যান পিলকিংটন। কিন্তু তাঁর গোলমুখী শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। মাঝমাঠে বাঁ দিক থেকে সামনে বল বাড়িয়েছিলেন ব্রাইট। ওই বল নিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে গোলে শট নিয়েছিলেন পিলকিংটন। কিন্তু ব্যর্থ হন।

৮৩ মিনিটে ব্যবধান কমান পিটার হার্টলে। মনরয়ের কর্নারে প্রথমে মাথা ছোঁয়ান ভাল্সকিস। সেই বল বক্সের বাঁ দিকের লাইনে থাকা আইজ্যাক ভানমালসওমার কাছে চলে গেলে তিনি হাওয়ায় ভাসানো ক্রস রাখেন গোলের সামনে ও হার্টলে সেই বল হেড করে জালে জড়িয়ে দেন।

স্টপেজ টাইমে সমতা প্রায় এনেই দিয়েছিলেন ভাল্সকিস। গোলের সামনে থেকেই নিখুঁত হেড করেছিলেন তিনি। কিন্তু অসাধারণ দক্ষতায় বারের ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে সেভ করে দলের দু’টি পয়েন্টও বাঁচিয়ে দেন সুব্রত। কর্নারের পরে বক্সের বাঁদিক থেকে আইজ্যাক আগেরবারের মতোই ক্রস ভাসিয়ে দিয়েছিলেন ভাল্সকিসের দিকে। কিন্তু ফের ব্যর্থ হন তিনি।

এসসি ইস্টবেঙ্গল দলসুব্রত পাল (গোল), সার্থক গলুই, রাজু গায়কোয়াড়, ড্যানিয়েল ফক্স, নারায়ণ দাস, অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়, ম্যাটি স্টাইনমান, সৌরভ দাস, জাক মাঘোমা, অ্যান্থনি পিলকিংটন (অ্যারন হলোওয়ে), ব্রাইট ইনোবাখারে

(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)

(আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)