আইএসএল ২০২০-২১ ডার্বি, প্লেয়ারদের অভিজ্ঞতায় কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে

আইএসএল ২০২০-২১ ডার্বি

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল ২০২০-২১ ডার্বি আর মাত্র দু’ দিনের অপেক্ষা। ভারতীয় ফুটবলের তারকা হয়েও কলকাতা ফুটবলের ডার্বি খেলা তো দূরের কথা, দেখেনওনি কখনও! এমন কথা শুনে অবাক লাগলেও সন্দেশ ঝিঙ্গনের জীবনে এটাই সবচেয়ে বড় সত্যি। সে জন্য আফসোসও করেছেন বহুবার। এ বার সেই আফসোস দূর হতে চলেছে তাঁর। শুক্রবার নামতে চলেছেন জীবনের প্রথম কলকাতা ডার্বিতে। যা নিয়ে রীতিমতো উত্তেজনায় ছটফট করছেন তিনি।

ছ’বছর কেরালা ব্লাস্টার্সের জার্সি গায়ে মাঠে নামার পরে এ বছর সেই ক্লাব ছেড়ে কলকাতায় আসার সিদ্ধান্ত নেন পঞ্জাব থেকে উঠে আসা ঝিঙ্গন। কলকাতা ফুটবলের উত্তেজনার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটাই যে একজন ফুটবলারের আসল পরীক্ষা—এমন কথা অনেক বার শুনেছেন। কিন্তু নিজেকে সেই ম্যাচের যোগ্য প্রমাণ করার সুযোগ পাননি কখনও। এ বার সুযোগ আসায় মাঠে নামার জন্য ছটফট করছেন এই সেন্টার ব্যাক।


খেলার জগতের আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

ম্যাচটা নিয়ে বিশেষ অনুভূতি থাকলেও আর পাঁচটা ম্যাচের মতোই দেখতে চান আইএসএল ২০২০-২১ ডার্বি-কে। আইএসএল মিডিয়াকে ঝিঙ্গন বলেন, “বিশ্বের সেরা ডার্বিগুলোর অন্যতম এই ম্যাচ। ফুটবলার হিসেবে সব সময়ই এই ম্যাচে খেলতে চায় সবাই। ম্যাচটার অপেক্ষায় আছি আমি। তবে বেশি গভীরে গিয়ে ডার্বি নিয়ে ভাবতে চাই না আমি। কলকাতা ডার্বি হোক বা অন্য ম্যাচ, মাঠে তো সবই এক। সব ম্যাচই সমান গুরুত্বপূর্ণ। অন্য ম্যাচের মতো একই ভূমিকা আমাকে পালন করতে হবে এই ম্যাচেও। তাই এই ম্যাচটা নিয়ে আবেগে ভাসতে চাই না আমি। তিন পয়েন্টই লক্ষ্য থাকবে আমাদের, কোনও গোল না খেয়ে”।

এটিকে মোহনবাগান একটা ম্যাচ খেলে ফেললেও এসসি ইস্টবেঙ্গল কিন্তু এখনও মাঠে নামেনি। যার ফলে রবি ফাউলারের দলের ছেলেদের খেলা এখনও দেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি সবুজ মেরুন শিবিরের। এ জন্য যে তাদের শক্তি-দুর্বলতা সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন হবে, তা স্বীকার করে নিয়েই ঝিঙ্গন বলেন, “আমরা সেট টিম। তাই আমাদের শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে ওরা একটা ধারণা নিয়ে মাঠে নামতে পারবে। কিন্তু ওরা সম্পুর্ণ নতুন একটা দল। ওরা আমাদের জন্য কী নিয়ে আসছে, তা তো আর আমাদের জানা নেই। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের সিস্টেম ও কোচের ওপর আস্থা রয়েছে। আমি নিশ্চিত, উনি এই ম্যাচের জন্য নিখুঁত একটা পরিকল্পনা তৈরি করবেন”।

ঝিঙ্গন নয় ডার্বি খেলেননি। তাঁর ধারণা এক রকম। কিন্তু যাঁদের ডার্বি খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে, সবুজ-মেরুন শিবিরের সেইসব ফুটবলাররা আইএসএল ২০২০-২১ ডার্বি নিয়ে কী বলছেন?

বাংলার যে ফুটবলাররা রয়েছেন আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দলে, তাঁদের মধ্যে ডার্বির মাঠে নামার অভিজ্ঞতা রয়েছে বেশিরভাগেরই। প্রীতম কোটাল যেমন ১৩বার ডার্বি খেলেছেন। অরিন্দম ভট্টাচার্য, প্রবীর দাস, প্রণয় হালদার, শুভাশিস বসু, শেখ সাহিলদেরও ডার্বির অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাঁরা যে এই ম্যাচের টেম্পারামেন্টের দিক থেকে দলের অন্যান্য সতীর্থদের থেকে এগিয়ে থাকবেন, এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। “আমরা যারা ডার্বি খেলেছি, শুক্রবারের ম্যাচে তারা মানসিক ভাবে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে। এই ম্যাচে বাংলার ফুটবলারদের শরীরে একটু বেশিই অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ হয়। ডার্বি দেখেই বড় হয়েছি আমরা। তাই এই ম্যাচ নিয়ে আমাদের আবেগ একটু বেশিই”, এটিকে মোহনবাগান মিডিয়াকে সোমবার এই কথা বলেন দলের অধিনায়ক প্রীতম।

পাঁচ বছর (২০১৩ থেকে ২০১৭) মোহনবাগানের হয়ে খেললেও কখনও নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ হয়নি তাঁর। প্রীতমের এই আক্ষেপ হয়তো শুক্রবার মিটবে। প্রথম ম্যাচেই দলের অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পেয়েছিলেন তিনি। সম্ভবত দ্বিতীয়ও ম্যাচেও তিনিই হবেন অধিনায়ক। এটা তো ঠিকই যে দলে তাঁর চেয়ে বেশি ডার্বি খেলার অভিজ্ঞতা আর কারও নেই। যে ১৩টি ডার্বি খেলেছেন উত্তরপাড়ার তারকা, তার মধ্যে দশটিতেই জিতেছেন।

বিপক্ষকে না দেখে নিতে পারায় তাঁদের অসুবিধা হতে পারে, ঝিঙ্গন এটা বললেও প্রীতম তা মানতে রাজি নন। বলেন, “ওদের দলে যে সব ভারতীয় ফুটবলার আছে, তাদের সম্পর্কে তো আমরা জানি। তা হলে আর অসুবিধা হবে কেন? তা ছাড়া আধুনিক টেকনোলজির যুগে বিদেশি ফুটবলারদের পারফরম্যান্স সম্পর্কে ধারণা না পাওয়ার তো কোনও কারণ দেখছি না”।

ডার্বির বাড়তি চাপ নিয়ে আর এক তারকা প্রবীর দাস খুব একটা চিন্তিত নন। বলেন, “আমরা অনেক ডার্বি খেলেছি। তাই ওই ম্যাচের চাপ সহ্য করে খেলার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে আমাদের। এখন আর ডার্বিতে খুব একটা চাপ অনুভব করছি না। ছোট থেকে এই ম্যাচে খেলার স্বপ্ন দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। এ রকম একটা স্বপ্নের ম্যাচে তিন পয়েন্টই একমাত্র লক্ষ্য”। গত মরশুমে এটিকে এফসি-র হয়ে রাইট উইং ব্যাকের ভূমিকায় মাতিয়ে দিয়েছিলেন প্রবীর। এ বার প্রথম ম্যাচে অবশ্য তাঁকে সেই ভূমিকায় দেখা যায়নি। তবে বিপক্ষের লাল-হলুদ জার্সি দেখলে জ্বলে উঠবেন কি না, সেটাই দেখার।

গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যের হিসেবটা আবার অন্য রকমের। তিনি বলেন, “আমি যখন মোহনবাগানে খেলতাম, তখন মাত্র একবার ডার্বি খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সেই ম্যাচে তুমুল ঝামেলা হওয়ায় ম্যাচটা ভেস্তে যায়। তার পরেই আমি গোয়ার ক্লাবে খেলতে চলে যাই। আর ডার্বি খেলার সুযোগ পাইনি। তাই এই ডার্বিটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচটা আমাদের জিততেই হবে”।

ডিফেন্ডার শুভাশিস বসু মোট তিনটি ডার্বি খেলেছেন, কোনওটিতেই হারেননি। ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে এই প্রথম দর্শকশূন্য গ্যালারিতে ডার্বি হবে মনে করে বেশ হতাশ। বলেন, “ডার্বিতে দর্শক থাকবে না, তা আবার হয় না কী? গ্যালারিতে সমর্থকরা থাকলে ম্যাচের শেষের দিকের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এমন হাই ভোল্টেজ ম্যাচে আশি মিনিটের পর থেকে খুব ক্লান্তি আসে। এই ম্যাচে সেটা কী করে কাটাব, সেটাই ভাবছি”।

শুক্রবারের আইএসএল ২০২০-২১ ডার্বি নিয়ে রবিবার থেকে প্রস্তুতি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবুজ মেরুন শিবিরের মধ্যে চিন্তা-আলোচনাও শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদস্তুর। এখন তাঁদের সবার একটাই চিন্তা, কখন মাঠে নামবেন, দুর্দান্ত খেলবেন ও ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়বেন।

(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)

 


(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)