আইএসএল ২০২০-২১, বেঙ্গালুরু এফসি বনাম এটিকে মোহনবাগান ম্যাচ

আইএসএল ২০২০-২১, বেঙ্গালুরু এফসি বনাম এটিকে মোহনবাগানছবি: আইএসএল টুইটার থেকে

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল ২০২০-২১, বেঙ্গালুরু এফসি বনাম এটিকে মোহনবাগান ম্যাচে ফিরতি কলকাতা ডার্বির আগে রীতিমতো আগুনে পারফরম্যান্স দেখাল এটিকে মোহনবাগান। মঙ্গলবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে গত হিরো আইএসএলের সেমিফাইনালিস্ট বেঙ্গালুরু এফসি-কে ২-০-য় হারাল তারা। সুনীল ছেত্রী ও তাঁর দলের ওপর রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে এই ব্যবধানে জিতল কলকাতার দল। এই জয়ের ফলে ১৬ ম্যাচে ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে এখন তারা লিগ টেবলের শীর্ষে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-র চেয়ে মাত্র এক পয়েন্ট পিছনে।

অর্থাৎ বাকি তিনটি ম্যাচের সব ক’টিতে এটিকে মোহনবাগান জিতলে ও মুম্বই সিটি এফসি একটি ম্যাচে ড্র করলেই এক নম্বরে থেকে লিগ শেষ করবে ও আগামী বছর এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দল। যদি উল্টোটা হয়, তা হলে অবশ্য সাগরপাড়ের দলই এক নম্বরে থাকবে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল, লিগের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে এই দুই দলই।

মঙ্গলবার সারা ম্যাচে রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে জেতে এটিকে মোহনবাগান। ৩৭ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে এ বারের হিরো আইএসএলে তাঁর ১২ নম্বর গোলটি করে দলকে এগিয়ে দেন ফিজিয়ান তারকা স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণা। তার সাত মিনিট পরেই বিপক্ষের বক্সের বাঁ দিকের মাথা থেকে নেওয়া ফ্রি কিক থেকে সোজা গোলে শট নেন সদ্য ওডিশা এফসি থেকে সবুজ মেরুন শিবিরে আসা ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্সেলো পেরেইরা বা মার্সেলিনহো। তিনিই ম্যাচের ‘হিরো’-র খেতাব পান।

চার বিশেষজ্ঞ ফরোয়ার্ডে এ দিন দল সাজিয়েছিলেন হাবাস। আক্রমণাত্মক ফুটবলের স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল এই প্রথম এগারোর মধ্যে। মাঝমাঠে লেনির সঙ্গে ম্যাকহিউ-ও যথেষ্ট কার্যকরী হয়ে ওঠেন। প্রীতম কোটালের জায়গায় প্রবীর দাসকে এ দিন রাখা হয় প্রথম দলে। ম্যাকহিউ নামেন প্রণয় হালদারের জায়গায় ও ডেভিড নামেন হাভিয়ে হার্নান্ডেজের জায়গায়। বেঙ্গালুরুর নির্ভরযোগ্য ফুটবলার ক্লেটন সিলভা এ দিন চোটের জন্য খেলতে পারেননি। তাঁর জায়গায় ক্রিস্টিয়ান ওপসেঠকে প্রথম এগারোয় নামানো হয়।

প্রত্যাশিত ভাবেই শুরু থেকে আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিল এটিকে মোহনবাগান। প্রথমার্ধে সারাক্ষণ এই মেজাজেই খেলে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। শুরু থেকেই গুরপ্রীত সিং সান্ধুকে চাপে রেখেছিলেন রয় কৃষ্ণারা। সাত মিনিট গড়ানোর পরেই বাঁ দিক দিয়ে মার্সেলিনহো বক্সে ঢুকে সোজা গোলে শট নিয়েছিলেন। গুরপ্রীত তা সেভ করেন। ১৮ মিনিটের মাথায় ডান দিক দিয়ে উঠে রয় গোলে ফের শট নেন। এ বার তা বুক দিয়ে বাঁচান গুরপ্রীত। ৩০ মিনিটের মাথায় দূরপাল্লার গোলমুখী শট নেন মার্সেলিনহো, যা গুরপ্রীতের মাথার ওপর দিয়ে গোলে ঢোকার পথে ছিল। লাফিয়ে উঠে তা বাঁচিয়ে দেন গুরপ্রীত।

সমানে চাপ সামলাতে থাকা বেঙ্গালুরু ডিফেন্ডাররা বিপক্ষের ফরোয়ার্ডদের আটকাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন এবং ৩৭ মিনিটের মাথায় এমনই এক মরিয়া প্রচেষ্টায় বক্সের মধ্যে রয়কে স্পষ্ট ফাউল করে এটিকে মোহনবাগানকে কার্যত পেনাল্টি পেতে সাহায্য করেন প্রতীক চৌধরি। পেনাল্টি থেকে চলতি লিগের ১২ নম্বর গোলটি করতে গোল করতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি ফিজিয়ান তারকা।

প্রথম গোলের সাত মিনিট পরে ফের ডেভিড উইলিয়ামসকে টেনে মাটিতে ফেলে দেওয়ায় বক্সের বাঁদিকের মাথায় ফ্রি কিক পায় এটিকে মোহনবাগান এবং সেই ফ্রি কিক থেকে অসাধারণ গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন ওডিশা এফসি থেকে আসা ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার মার্সেলিনহো। বাঁ পায়ে নেওয়া ফ্রি কিক সোজা জালে জড়িয়ে দেন তিনি। গুরপ্রীত বাঁ দিকে শরীর ভাসিয়ে দিয়েও বলের নাগাল পাননি।

প্রথম ৪৫ মিনিটে এটিকে মোহনবাগান সুনীল ছেত্রী ও তাঁর দলকে এতটাই চাপে রেখেছিল যে, তাঁরা একটিও শট গোলে রাখতে পারেননি। অথচ এটিকে মোহনবাগান প্রথমার্ধে ছ-ছ’টি শট নেয় গোলে। শেষ পর্যন্ত পরিসংখ্যানটা দাঁড়ায় ৩-৯।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান সন্দেশ ঝিঙ্গন। ডেভিড উইলিয়ামসের কর্নার থেকে প্রথমে হেড করে বল উড়িয়ে দেন তিনি। নীচে নেমে আসা বল গোলের বাঁ দিক লক্ষ্য করে শট নেন ঝিঙ্গন। কিন্তু অসাধারণ দক্ষতায় ডানদিকে ডাইভ দিয়ে বল বার করে দেন গুরপ্রীত।

৫৭ মিনিটের মাথায় ওপসেঠের জায়গায় সিস্কো হার্নান্ডেজকে নামান বেঙ্গালুরুর ভারপ্রাপ্ত কোচ নৌশাদ মুসা। যখন তাদের গোল দরকার, তখন একজন ফরোয়ার্ডকে তুলে কেন একজন মিডফিল্ডারকে নামানো হল, সেই প্রশ্নটা অবশ্য রয়েই গেল।

এটিকে মোহনবাগান অবশ্য চাপ বজায় রেখে যায়। ৬০ মিনিটের মাথায় মনবীর ডানদিক দিয়ে বল নিয়ে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে কাছের পোস্টের দিক দিয়ে সোজা গোলে শট নেন, কিন্তু গুরপ্রীত তা বাঁচিয়ে দেন।

সুনীল ছেত্রীকে এ দিন বেশ হতাশ লাগছিল। একাধিকবার তাঁকে বিপক্ষের ফুটবলারদের অবৈধ ভাবে বাধা দিতে দেখা যায়। ৭০ মিনিটের মাথায় যে ভাবে প্রথমে লেনি রড্রিগেজের গোড়ালিতে আঘাত করেন ও পরে তাঁর জার্সি টেনে ধরে মাটিতে ফেলে দেন, তাকে সুনীল ছেত্রী-সুলভ মনে হয়নি। তবে শুধু সুনীলই নয়, এ দিন বেশ কয়েকবার বেঙ্গালুরুর ফুটবলাররা দক্ষতার লড়াইয়ে না পেরে অবৈধ ভাবে বাধা দিয়ে এটিকে মোহনবাগানের ফুটবলারদের বাধা দেন। যার জেরে ফাউলের সংখ্যায় বা হলুদ কার্ডের সংখ্যায় বেঙ্গালুরু এ দিন এগিয়ে ছিল।

শেষ ২৫ মিনিটে স্বাভাবিক ভাবেই রক্ষণে লোক বাড়িয়ে দেয় এটিকে মোহনবাগান। তা সত্ত্বেও অবশ্য কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠা বন্ধ হয়নি তাদের। ৮৩ মিনিটে মার্সেলিনহোর জায়গায় নামা হাভিয়ে হার্নান্ডেজের লম্বা ও হাওয়ায় ভাসানো ফ্রিকিকে গোলের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাথা ছুঁইয়ে তৃতীয় গোল করার মরিয়া চেষ্টা করেন রয়। কিন্তু দূরের পোস্টের বাইরে দিয়ে বল বেরিয়ে যায়।

ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে ৮৮ মিনিটে সুনীল ছেত্রী বক্সের মাথা থেকে সোজা গোলে শট নিয়েছিলেন। কিন্তু অরিন্দম তা বাঁচিয়ে নেন। তবে গোলটা হলেও এটিকে মোহনবাগানের জয় হয়তো আটকাতে পারতেন না সুনীলরা।

এটিকে মোহনবাগান দল: অরিন্দম ভট্টাচার্য (গোল), প্রবীর দাস, তিরি, সন্দেশ ঝিঙ্গন, শুভাশিস বসু, লেনি রড্রিগেজ, কার্ল ম্যাকহিউ, মার্সেলো পেরেইরা (হাভিয়ে হার্নান্ডেজ), মনবীর সিং (কোমল থাটাল), ডেভিড উইলিয়ামস (জয়েশ রানে), রয় কৃষ্ণা।

(লেখা আইএসএস-এর ওয়েবসাইট থেকে)

(আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)