কলকাতা ডার্বির শততম বর্ষ: দু’বার জয় তুলে নিল মোহনবাগান

AFC Cup Inter Zonal Semifinal

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: কলকাতা ডার্বির শততম বর্ষ লেখা থাকল এটিকে মোহনবাগানের নামে। প্রথম লেগে ২-০ গোলে জেতার পরে শুক্রবার গোয়ার ফতোরদায় জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ফিরতি লেগের ম্যাচ ৩-১ গোলে জিতে নিল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। ম্যাচের শুরুতেই রয় কৃষ্ণা ও দ্বিতীয়ার্ধে ডেভিড উইলিয়ামস ও হাভিয়ে হার্নান্ডেজের গোলে জয় ছিনিয়ে নেয় তারা। তাঁদের সতীর্থ ডিফেন্ডার তিরির আত্মঘাতী গোল এসসি ইস্টবেঙ্গলকে সমতা এনে দেওয়া সত্ত্বেও অবশ্য সেই স্কোর ধরে রাখতে পারেনি লাল-হলুদ শিবির।

শুক্রবার এসসি ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠে লড়াই করলেও প্রতিপক্ষের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে তাদের রক্ষণ ভেঙে পড়ে ও আক্রমণের ব্যর্থতাই তাদের হার মানতে বাধ্য করে। এটিকে মোহনবাগানের রক্ষণ যেমন বিপক্ষের সামনে দুর্ভেদ্য দেওয়াল হয়ে উঠেছিল, এসসি ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডাররা কিন্তু রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামসদের ধরে রাখতে পারেননি।

সারা ম্যাচে যেখানে সবুজ-মেরুন ফরোয়ার্ডরা সাতবার গোলে শট নিয়েছেন, ব্রাইট ইনোবাখারে, অ্যান্থনি পিলকিংটনরা সেখানে সারা ম্যাচে একটির বেশি শট গোলে রাখতে পারেননি (নীচে দেওয়া পরিসংখ্যান দেখুন)। তাদের সেরা স্ট্রাইকার ব্রাইটকে এ দিন কড়া পাহাড়ায় রেখে দিয়েছিলেন প্রীতম, সন্দেশ, তিরিরা। পিলকিংটন, মাঘোমারাও সুবিধা করতে পারেননি।

এই জয়ের ফলে এটিকে মোহনবাগান ১৮ ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই রয়ে গেল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-র সঙ্গে তাদের এখন পাঁচ পয়েন্টের তফাৎ। যদিও মুম্বই একটি ম্যাচ কম খেলেছে। তবে এটিকে মোহনবাগান শেষ দুই ম্যাচে পয়েন্ট না খোয়ালে তাদের আর এক নম্বরে ফেরার কোনও সম্ভাবনা নেই।

দুই দলই এ দিন অপরিবর্তিত একাদশ নামায়। ফর্মেশনও প্রায় একই ছিল। এটিকে মোহনবাগান যেখানে ৩-৪-৩-এ দল সাজায়, সেখানে এসসি ইস্টবেঙ্গল প্রথম এগারো সাজায় ৩-৪-১-২-এ।

এ দিন শুরু থেকেই উইং প্লে-র ওপর জোর দিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা শুরু করে এটিকে মোহনবাগান। বাঁ দিক দিয়ে শুভাশিস ও ডানদিক দিয়ে মনবীরকে উঠতে দেখা যায় বারবার। মাঝখান দিয়ে বারবার বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন রয়। একটু পিছন থেকে খেলেন ডেভিড উইলিয়ামস ও মার্সেলো পেরেইরা।

সপ্তম মিনিটেই একটি গোলের সুযোগ তৈরি করে ফেলে তারা। সার্থক গলুইয়ের পা থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে রয় কৃষ্ণা বক্সের মধ্যে বাঁ দিকের উইং দিয়ে ওঠা শুভাশিস বসুকে বল দিয়ে গোলের সামনে চলে যান। শুভাশিস গোলের সামনে রয়কে সেন্টার করেন। কিন্তু রয় সেই বলে মাথা বা পা ছোঁয়াতে পারেননি। একই সঙ্গে ডানদিক দিয়ে উঠে আসা মনবীর সিংও বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন।

ক্রমশ চাপ বাড়াতে থাকা সবুজ-মেরুন বাহিনী ১৫ মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যায় সেই রয় কৃষ্ণার পা থেকেই। নিজেদের এলাকা থেকে দেওয়া তিরির উড়ন্ত ভলি পেয়ে যখন মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে দৌড় শুরু করেন রয়, তখন তাঁর সামনে এসসি ইস্টবেঙ্গলের কোনও ডিফেন্ডার ছিলেন না। রয়কে তাড়া করেও তাঁর নাগাল পাননি ড্যানিয়েল ফক্স, সার্থক গলুইরা। বক্সে ঢুকে গোলকিপার সুব্রত পালকে বোকা বানিয়ে গোলে বল ঠেলে দেন রয়।

শুরুতেই গোল খেয়ে কার্যত ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এসসি ইস্টবেঙ্গল। এই সুযোগে তাদের ওপর আরও চাপ বাড়ান রয় কৃষ্ণারা। ২৩ মিনিটের মাথায় মার্সেলিনহোর গোলমুখী শট সুব্রত না বাঁচালে ব্যবধান আরও বাড়ত। ডেভিড উইলিয়ামসের সামনের দিকে বাড়ানো বল অনুসরণ করে বক্সের মধ্যে ঢুকে সোজা গোলে শট নেন মার্সেলিনহো। কিন্তু অভিজ্ঞ সুব্রত তা অসাধারণ দক্ষতায় বাঁচিয়ে দেন।

৩৯ মিনিটের মাথায় ফের ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়ে যান রয়। মাঝমাঠ থেকে কার্ল ম্যাকহিউয়ের বাড়ানো বল অনুসরণ করে বক্সে ঢুকে রাজু গায়কোয়াড়কে গতিতে পরাস্ত করে শট নেন। কিন্তু তা গোলের বাইরে চলে যায়।

এ পর্যন্ত ৩১ মিনিটে ড্যানিয়েল ফক্সের একটি শট গোলের অনেক বাইরে দিয়ে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনও সুযোগই তৈরি করতে পারেনি এসসি ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ দিকে তিরির আত্মঘাতী গোলে সমতা এসে যাওয়ায় কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তারা। ৪১ মিনিটের মাথায় লাল-হলুদ ডিফেন্ডার রাজু গায়কোয়াড়ের বিখ্যাত লম্বা থ্রো হেড করে ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের গোলেই ঠেলে দেন তিরি। তাদের খাতায় একটি গোল জমা হলেও প্রথম ৪৫ মিনিটে এসসি ইস্টবেঙ্গল কিন্তু একটাও শট গোলে রাখতে পারেনি। তবে দুই দলেরই বল পজেশন তখন ছিল ৫০-৫০।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বক্সের বাইরে থেকে শট নেন ডেভিড উইলিয়ামস, যা গোলে রাখতে পারেননি তিনি। চার মিনিট পরে তাঁর আরও একটি শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। এই দুই শটের মাঝে এসসি ইস্টবেঙ্গলের তারকা স্ট্রাইকার ব্রাইট ইনোবাখারেও একটি দূরপাল্লার শট নিয়েছিলেন, যা বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। ব্রাইটকে এ দিন প্রত্যাশিত ভাবেই কড়া পাহাড়ায় রেখেছিল এটিকে মোহনবাগান।

তা সত্ত্বেও ৬৭ মিনিটে নাইজেরীয় তারকা বিপক্ষের তিন খেলোয়াড়কে ধোঁকা দিয়ে বক্সে ঢুকে গোলের সুযোগ তৈরি করে দেন সতীর্থদের। স্টাইনমানকে ছোট পাস দেন তিনি। জার্মান মিডফিল্ডার গোলের বাঁ দিকে পিলকিংটনের উদ্দেশ্যে ক্রস দিলেও তা গোললাইন পেরিয়ে চলে যায়। ৬৫ মিনিট পর্যন্ত দুই দলই মূলত মাঝমাঠে তাদের প্রতিদ্বন্দিতা সীমাবদ্ধ রাখলেও তার পর থেকে ফের আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণ শুরু হয়। ৬৬ মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া মার্সেলিনহোর জায়গায় নামেন হাভিয়ে হার্নান্ডেজ। তার পরই ব্যবধান বাড়ানোর জন্য ফের চাপ বাড়াতে থাকে সবুজ-মেরুন বাহিনী।

এই চাপের মুখে কার্যত ভেঙে পড়ে লাল-হলুদ ডিফেন্স। ৭২ মিনিটে দ্বিতীয় গোল পেয়ে যায় এটিকে মোহনবাগান। বক্সের সামনে ড্যানিয়েল ফক্সের পা থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে বক্সে ঢুকে ডেভিড উইলিয়ামসকে পাস দেন রয়। বক্সের মাথা থেকে ডেভিডের জোরালো শট সোজা জালে জড়িয়ে যায়। তার দুমিনিট আগেই ফের লাল-হলুদ ডিফেন্সের ভুল কাজে লাগিয়ে গোলে শট নিয়েছিলেন রয়। কিন্তু এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে তা বেরিয়ে যায়।

নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দুমিনিট আগে ফের গোল করে জয় সুনিশ্চিত করে ফেলেন হাভিয়ে হার্নান্ডেজ। এবারেও তাতে অবদান ছিল রয় কৃষ্ণার। বক্সের ডান দিক থেকে তিনি বল দেন হাভিকে। নিখুঁত ও জোরালো হেডে গোলে বল ঠেলে দেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার।

এসসি ইস্টবেঙ্গলের আর দু’টি ম্যাচ বাকি রইল, নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি (২৩ ফেব্রুয়ারি) এবং ওডিশা এফসি-র (২৭) বিরুদ্ধে। এটিকে মোহনবাগানকে খেলতে হবে হায়দরাবাদ (২২) ও মুম্বইয়ের (২৮) বিরুদ্ধে। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে নামার আগেই এক নম্বর জায়গাটা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্য সোমবার হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে নামবে আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দল।

এটিকে মোহনবাগান দল: অরিন্দম ভট্টাচার্য (গোল), প্রীতম কোটাল, তিরি, সন্দেশ ঝিঙ্গন, শুভাশিস বসু, লেনি রড্রিগেজ, কার্ল ম্যাকহিউ, মনবীর সিং (প্রবীর দাস), মার্সেলো পেরেইরা (হাভিয়ে হার্নান্ডেজ), রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস (প্রণয় হালদার)।

এসসি ইস্টবেঙ্গল দলসুব্রত পাল (গোল), সার্থক গলুই, রাজু গায়কোয়াড়, ড্যানিয়েল ফক্স, অঙ্কিত মুখার্জি, নারায়ণ দাস, সৌরভ দাস, জাক মাঘোমা, ম্যাটি স্টাইনমান (অ্যারন হলোওয়ে), অ্যান্থনি পিলকিংটন, ব্রাইট ইনোবাখারে।

(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)

(আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)