আইএসএল ২০২০-২১, এটিকে মোহনবাগান বনাম ওড়িশা এফসি ম্যাচ

ISL 8 HFC vs ATKMB

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল ২০২০-২১, এটিকে মোহনবাগান বনাম ওড়িশা এফসি ম্যাচ দেখল চারটি বিশ্বমানের গোল। একটি নিখুঁত পেনাল্টি ও আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের ঝড়— ৯০ মিনিটের এক অসাধারণ ফুটবল শো দেখা গেল শনিবার, বাম্বোলিমের জিএমসি স্টেডিয়ামে। যার ফল ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে এটিকে মোহনবাগানের ৪-১ জয়। মনবীর সিং ও রয় কৃষ্ণার জোড়া গোল গঙ্গাপাড়ের দলকে এনে দিল আরও তিন পয়েন্ট। ১৫ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে চলতি হিরো আইএসএলে শীর্ষে থাকা আরব সাগর পাড়ের মুম্বই সিটি এফসি-র ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দল।

রয় কৃষ্ণা জ্বলে উঠলেই যে এটিকে মোহনবাগানের দৌড়ের গতি বেড়ে যায়, তা এ দিন ফের প্রমাণ হয়ে গেল বাম্বোলিমে। নিজে দু’টি গোল করেন ফিজিয়ান তারকা স্ট্রাইকার। মনবীরকে দু’টি গোলেই অ্যাসিস্ট করেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করে দেন সতীর্থদের জন্য। চেনা রয় কৃষ্ণাকে ফিরে পাওয়া গেল এ দিনই। ফুটবলপ্রেমীরা নিশ্চয়ই এই রয় কৃষ্ণাকেই দেখতে চান।

এ দিন শুরু থেকেই বিপক্ষকে চাপে ফেলে ১১ মিনিটের মাথায় মনবীরের অসাধারণ একক দক্ষতায় করা গোলে এগিয়ে যায় এটিকে মোহনবাগান। প্রথমার্ধের একেবারে শেষে সাড়ে একুশ মিটার দূর থেকে নেওয়া শটে যে গোলটি করে সমতা আনেন ওডিশার দক্ষিণ আফ্রিকান মিডফিল্ডার কোল আলেকজান্দার, সেটিও বিশ্বমানের। দ্বিতীয়ার্ধে তিনটি গোল হয়। ৫৪ মিনিটে বক্সের মধ্যে ডানদিকে ৪৫ ডিগ্রি কোণ থেকে নেওয়া শটে ফের গোল করে দলকে ২-১-এ এগিয়ে দেন ম্যাচের ‘হিরো’ মনবীর। ৮৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে নেওয়া নিখুঁত শটে গোল করে ব্যবধান বাড়ান রয়। তার তিন মিনিট পরেই ফের এক আন্তর্জাতিক মানের গোল আসে রয়ের পা থেকে।

এ দিন পাঁচ-পাঁচটি পরিবর্তন করে দল নামান আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। প্রবীর দাস, শেখ সাহিল, জয়েশ রানে, সুমিত রাঠি ও কার্ল ম্যাকহিউয়ের জায়গায় প্রথম এগারোয় আসেন যথাক্রমে শুভাশিস বসু, প্রণয় হালদার, হাভিয়ে হার্নান্ডেজ, লেনি রড্রিগেজ ও মনবীর সিং। প্রতিটি পরিবর্তনই কার্যকরী হয়ে ওঠে।

শুরু থেকেই তাদের পারফরম্যান্স দেখে মনে হচ্ছিল যথাসম্ভব দ্রুত গোল তুলে নিতে মরিয়া এটিকে মোহনবাগান এবং সেই লক্ষ্যে তারা সফল হয় খেলা শুরুর ১৫ মিনিটের মধ্যেই। ১১ মিনিটের মাথায় মনবীরের অসাধারণ আন্তর্জাতিক মানের গোলে এগিয়ে যায় এটিকে মোহনবাগান। বক্সের বাঁ দিক থেকে মার্সেলিনহোর ক্রসে পাওয়া বল প্রণয় হালদার দেন বক্সের মাথায় থাকা রয় কৃষ্ণাকে। বক্সের ডান দিকে থাকা মনবীরকে পাস দেন তিনি। বাঁ পায়ে হাওয়ায় ভাসানো শটে গোলের বাঁ দিকের কোন দিয়ে তিনি বল ঢুকিয়ে দেন গোলে। এমন অসাধারণ কার্লিং শটে গোল এ বারের হিরো আইএসএলে সম্ভবত আর হয়নি।

শুরুতেই গোল পেয়ে সবুজ-মেরুন বাহিনী আরও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ১৫ মিনিটের মাথায় রয় কৃষ্ণা মনবীরের মতোই দূরপল্লার শট নিয়েছিলেন গোলে। কিন্তু তা বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। ১৭ মিনিটের মাথায় মার্সেলিনহো ও ২৩ মিনিটের মাথায় লেনির লম্বা শটও ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ৪০ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে মার্সেলিনহোকে সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দেন রয় কৃষ্ণা। কিন্তু গোলের ডান দিক থেকে তা ফাঁকা জায়গা দিয়ে গোলে ঠেলতে পারেননি ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড।

অধিনায়ক স্টিভন টেলর না থাকায় ও শুরুতেই গোল খেয়ে যাওয়ায় চাপে পড়ে গেলেও ওডিশা এফসি ২৫ মিনিটের পর থেকে ম্যাচে ফিরে আসার মরিয়া চেষ্টা শুরু করে। তবে এটিকে মোহনবাগানের দুর্ভেদ্য রক্ষণের দেওয়ালে আটকে যায় তারা। ২৬ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে রাকেশ প্রধান গোলমুখী শট নিলেও প্রীতম কোটাল গোলের সামনে তা হেড করে বার করে দেন গোল লাইনের বাইরে। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার জেরি  মাওয়িমিংথাঙ্গা প্রায়ই বল নিয়ে দ্রুত গতিতে বিপজ্জনক জায়গায় উঠে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁকে সামলে নেন তিরি, সন্দেশরা।

বিপক্ষের গোল এরিয়ায় ঢুকে গোল করা সম্ভব নয় বুঝে নিয়ে তারা বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার শটে গোল শোধ করার চেষ্টা শুরু করে এবং দ্বিতীয়ার্ধের শেষ মিনিটে সে রকমই একটা চেষ্টা থেকে গোল পেয়ে যান ওডিশার অধিনায়ক দক্ষিণ আফ্রিকান সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার কোল আলেকজান্দার।

প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে প্রথমে গোলের বাঁ দিকে শট নিয়েছিলেন পল রামফাংজাউভা, যা অরিন্দম ভট্টাচার্যকে পরাস্ত করে বাঁ দিকের পোস্টে লেগে ফিরে আসে বক্সের সামনে থাকা কোলের কাছে। তিনি সাড়ে ২১ মিটারের দূরপাল্লার শট নেন গোলের ডানদিকে, যা ওপরের কোন দিয়ে ঝড়ের গতিতে জালে জড়িয়ে যায়। অরিন্দম ফের ডাইভ দিয়েও বাঁচাতে পারেননি।

দুই দলের আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার দশ মিনিটের মধ্যেই ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় এটিকে মোহনবাগান। ফের নায়ক সেই মনবীর। ৫৪ মিনিটের মাথায় বক্সের মাথা থেকে দেওয়া রয়ের ক্রস নিয়ে ডান দিকের উইং দিয়ে ওঠা মনবীর এগিয়ে যান গোলের দিকে। প্রায় ৪৫ ডিগ্রি কোণ থেকে নেওয়া শট গোলকিপার অর্শদীপ সিংয়ের পায়ের বাঁ দিক দিয়ে গোলে ঢুকে যায়।

চলতি হিরো আইএসএলে ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন সুনীল ছেত্রী। পাঁচ গোল পাওয়া বেঙ্গালুরু এফসি-র অধিনায়কের পরেই রয়েছেন মনবীর, যাঁর চারটি গোল হয়ে গেল এই লিগে।

ওডিশা অবশ্য সমানে চাপ রেখে যাচ্ছিল বিপক্ষের ওপর। ৬৫ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে দিয়েগো মরিসিওর নেওয়া ফ্রি-কিক ক্রসবারের সামান্য ওপর দিয়ে উড়ে যায়। ৭৬ মিনিটে বক্সের বাঁ দিক থেকে শুভম সারেঙ্গির ক্রসে হেড করেছিলেন ডান দিক দিয়ে দ্রুত বক্সে ঢুকে পড়া ডিফেন্ডার মহম্মদ সাজিদ, কিন্তু সাইড নেটে লাগে বল।

তবে ৮৩ মিনিটের মাথায় রয় কৃষ্ণার পেনাল্টি থেকে দেওয়া গোলের পরে তাদের সব লড়াই ম্লান হয়ে যায়। প্রণয় হালদারের গোলমুখী শট বক্সের মধ্যে কোল আলেকজান্দারের হাতে লাগায় পেনাল্টি পেয়ে যায় এটিকে মোহনবাগান। পেনাল্টি থেকে নিজের দশ নম্বর গোলটি করতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি রয়।

এর তিন মিনিট পরে ফের গোল পান রয়। এবারেরটা অসাধারণ। উড়ে আসা বল বুক দিয়ে রিসিভ করে ডান দিক দিয়ে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। তাঁকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও পারেননি শুভম সারেঙ্গি। কোনাকুনি শটে বল দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন রয়। চলতি লিগে ১১ নম্বর গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় সবার মাথায় উঠে পড়লেন তিনি। ১-৪-এ পিছিয়ে যাওয়ার পরে ওডিশা এফসি-র পক্ষে আর ম্যাচে ফেরার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না।

এ দিন নিজের জোড়া গোলের আগে গোলের সুযোগ তৈরিতে বেশ তৎপর ছিলেন রয় কৃষ্ণা। মনবীরের দু’টি গোলেই যেমন অ্যাসিস্ট করেন তিনি, একাধিক গোলের সুযোগও তৈরি করে দেন সতীর্থ ফরোয়ার্ডদের। মনবীরের দ্বিতীয় গোলের চার মিনিট আগেই বক্সের মধ্যে মার্সেলিনহোকে প্রায় গোল সাজিয়ে দিয়েছিলেন রয়। কিন্তু মার্সেলিনহো বল গোলে রাখতে পারেননি। রয়ের ফর্মে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই এটিকে মোহনবাগানের দাপটও বাড়ছে। যা তাদের আসন্ন কলকাতা ডার্বিতেও সাহায্য করবে।

এটিকে মোহনবাগান দলঅরিন্দম ভট্টাচার্য (গোল), প্রীতম কোটাল, তিরি, সন্দেশ ঝিঙ্গন, শুভাশিস বসু, প্রণয় হালদার, লেনি রড্রিগেজ, হাভিয়ে হার্নান্ডেজ (জয়েশ রানে), মনবীর সিং (এন ইংসন সিং), মার্সেলো পেরেইরা (ডেভিড উইলিয়ামস), রয় কৃষ্ণা ।

(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)

(আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)