আইএসএল ২০২০-২১, মোহনবাগান বনাম মুম্বই প্রিভিউ

AFC Cup, ATKMB vs Blue Star

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল ২০২০-২১, মোহনবাগান বনাম মুম্বই ম্যাচ ফাইনালের আগেই ফাইনালের রূপ নিয়েছে। আগামী বছর এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভারতের কোন ক্লাব খেলবে? তার ফয়সালা রবিবার সন্ধ্যায়, বাম্বোলিমের জিএমসি স্টেডিয়ামে। যেখানে মুখোমুখি হবে চলতি হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগের সেরা দুই ক্লাব এটিকে মোহনবাগান ও মুম্বই সিটি এফসি।

দুই দলই এ বারের লিগের সেমিফাইনালে আগেই উঠে গিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কারা এক নম্বরে থাকবে, কারা দুইয়ে। নিয়ম অনুযায়ী যারা লিগ টেবলে এক নম্বরে থেকে সেমিফাইনালে উঠবে, তারা আগামী মরশুমের এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের (এসিএল) গ্রুপ পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। তারই ফয়সালা হবে রবিবারের এই ম্যাচে।

৪০ পয়েন্ট নিয়ে এটিকে মোহনবাগান এখন এক নম্বরে রয়েছে। আর ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে মুম্বই সিটি এফসি দুইয়ে। ফলে রবিবারের এই ফুটবলযুদ্ধে এটিকে মোহনবাগানের হার মানে তাদের এই দৌড় থেকে ছিটকে যাওয়া এবং মুম্বইয়ের দলের ক্ষেত্রেও একই কথা যায়।

কিন্তু এক দিক থেকে এটিকে মোহনবাগান তাদের প্রতিপক্ষের চেয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে। এই ম্যাচ ড্র করেও তারা এসিএলের টিকিট পেয়ে যেতে পারে, যা মুম্বই সিটি এফসি-র ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্লাব-লিগে খেলার ছাড়পত্র পেতে তাদের সামনে জয় ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনও রাস্তাই নেই। তাই এই ম্যাচকে আগামী ১৩ মার্চের হিরো আইএসএল ৭ ফাইনালের আগে আর এক ‘ফাইনাল’ বলা যেতে পারে অনায়াসে।

দুই দল দুই মেরু

গত ম্যাচে হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে এটিকে মোহনবাগান জিতলে অবশ্য এই ম্যাচ এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত না। সেই ম্যাচে জিতলেই স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দল সে দিনই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টিকিট হাতে পেয়ে যেতেন। কিন্তু সে দিন শেষ মুহূর্তের গোলে তারা ড্র করায় মুম্বই সিটি এফসি আর একটা সুযোগ পেয়ে যায়। সেই সুযোগ রবিবার তারা কাজে লাগাতে পারবে? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

অপর স্প্যানিশ কোচ সের্খিও লোবেরা, যিনি গতবার এফসি গোয়াকে এসিএলের দরজার দিকে এগিয়ে দিয়ে মাঝপথে দায়িত্ব ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, সেই লোবেরা এ বার মুম্বই সিটি এফসি-কে সেই একই সম্মান এনে দিতে পারবেন কি না, সেটাই দেখার। তবে তাঁর দলও অনেক আগেই এই জায়গাটা নিশ্চিত করে ফেলত, যদি তারা লিগের শেষদিকে টানা তিন ম্যাচে জয়হীন না থাকত। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ৩-৩ ড্র, বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ২-৪ হার ও জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে ০-২ হারই তাদের রাস্তা কঠিন করে দেয়।

গত ম্যাচে তারা ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে ৬-১ জিতে ব্যর্থতার জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে ঠিকই। কিন্তু লিগ টেবলের সর্বশেষ স্থানে থাকা ওডিশা এফসি আর এক নম্বরে থাকা এটিকে মোহনবাগান তো কোনও ভাবেই এক রকম প্রতিপক্ষ নয়। তাই ওই জয়টা এটিকে মোহনবাগানের কাছে কোনও কঠোর বার্তা বলে ধরে নেওয়াটা বোধহয় ঠিক হবে না।

বরং হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে এটিকে মোহনবাগানের ড্রয়ে মুম্বই সিটি এফসি-র সমর্থকদের আশান্বিত হওয়ার অনেক কারণ আছে। গঙ্গাপাড়ের দলের পক্ষে ওই রকম পারফরম্যান্স দিয়ে মুম্বই সিটি এফসি-র মতো দলকে হারানো কঠিন। বরং টানা চারটি ম্যাচ জেতার সময়ে তারা যে অপ্রতিরোধ্য ফর্মে ছিল, সেই ফর্ম ফিরিয়ে আনতে পারলে এটিকে মোহনবাগানের জয়ের সম্ভাবনা যথেষ্ট। তবে রবিবার তাদের ওপর চাপ অনেক কম থাকবে। কারণ, ম্যাচটা ড্র রাখতে পারলেও তারা এক নম্বরেই থাকতে পারবে, যে সুবিধাটা মুম্বইয়ের দল পাবে না। তাদের কাছে এটা ডু অর ডাই ম্যাচ।

রক্ষণে সংশয়

আন্তোনিও লোপেজ হাবাস অবশ্য কোনও ম্যাচই ড্র করার কথা মাথায় রেখে দল নামান না। প্রতি ম্যাচেই তাঁর ও তাঁর দলের লক্ষ্য থাকে তিন পয়েন্ট। তাই নিশ্চয়ই এই ম্যাচেও সেই একই লক্ষ্য থাকবে রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামসদের। কিন্তু গত ম্যাচে যে পারফরম্যান্স দেখা গিয়েছে তাদের, বিশেষ করে রক্ষণ বিভাগে, সেই পারফরম্যান্স দিয়ে মুম্বই সিটি এফসি-কে রোখা মোটেই সোজা হবে না।

ম্যাচ শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই দশ জন হয়ে যাওয়া হায়দরাবাদ এফসি-কে সামলাতে সারা ম্যাচে হিমশিম খেয়ে যেতে হয় সবুজ-মেরুন বাহিনীকে। বিশেষ করে সেই ম্যাচে তিরির ফর্মে না থাকা সবুজ মেরুন শিবিরকে চিন্তায় ফেলে দেওয়ার মতোই। আট মিনিটের মাথায় নিজেদের গোল এরিয়ায় যে ভাবে প্রীতম কোটাল ও তিরির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতে গোল করে চলে যান আরিদানে সান্তানা, তা এটিকে মোহনবাগানের মতো সফল দলের কাছে আশা করা যায় না।

তিরি মানসিক ভাবে সে দিন সেরা জায়গায় ছিলেন না। হায়দরাবাদের দুই ভারতীয় ফুটবলার হালিচরণ নার্জারি ও লিস্টন কোলাসো যে ভাবে দ্রুত গতিতে সমানে ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন তিরি, প্রীতমদের, তা তাঁদের বেশ হতচকিত করে দেয়। এই চাপ সারা ম্যাচে কাটাতে পারেননি তাঁরা। রবিবার মুম্বইয়ের হুগো বুমৌস, অ্যাডাম লে ফন্দ্রে, সি গদার্ড, আহমেদ জাহু, বার্থোলোমিউ ওগবেচেদের তৈরি করা চাপ তাঁরা নিতে পারবেন কি না, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। গত ম্যাচে হ্যাটট্রিক পাওয়া বিপিন সিং-কেও নজরে রাখতে হবে এটিকে মোহনবাগান ডিফেন্ডারদের। তিরি, সন্দেশ ঝিঙ্গন, প্রীতম থাকলেও এই ম্যাচে পাওয়া যাবে না শুভাশিস বসুকে। তাঁর জায়গায় কঠিন পরীক্ষায় নামতে হতে পারে সুমিত রাঠিকে।

গত ম্যাচের আগে যখন এটিকে মোহনবাগান তাদের সেরা ফর্মে ছিল, টানা চারটি ম্যাচ জেতে তারা, সেই সময় মুম্বই সিটি এফসি-র সময়টা একেবারেই ভাল যাচ্ছিল না। ওডিশা ম্যাচের আগে ছ’টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পায় তারা। একসময়ে টানা ১২ ম্যাচে অপরাজিত ছিল যারা (এর মধ্যে ৯টি ম্যাচে জয়), তাদের পক্ষে এমন পারফরম্যান্স সত্যিই বেমানান। সেই দুঃসময় কাটিয়ে ওডিশার বিরুদ্ধে ৬-১ জয় তাদের বাড়তি আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে। এই আত্মবিশ্বাস রবিবার এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে গেলে লোবেরাদের সেই আগের সময়ে ফিরে যেতে হবে, যখন তাঁরা টানা এক ডজন ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন।

এটিকে মোহনবাগানের যেটা সমস্যা ছিল, গোলখরা, সেটা কেটে যাওয়ায় তারা ধারাবাহিক সাফল্যের পথে ফিরে আসে। মাঝখানে চোট-আঘাতে জর্জরিত হয়ে দলটার ছন্দ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ক্রমশ সেই ছন্দ ফিরে আসতে শুরু করেছে। সবচেয়ে বড় কথা দলের সেরা ফরোয়ার্ড রয় কৃষ্ণা এখন ফর্মের শিখরে। ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড মার্সেলিনহো ওডিশা থেকে কলকাতার দলে যোগ দেওয়ার পরে গোলে ফিরেছেন। সম্প্রতি এডু গার্সিয়া চোট পেয়ে মাঠের বাইরে ছিলেন। দু’জনেই এই ম্যাচে খেলতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। সাইড ব্যাক শুভাশিস বসু গত ম্যাচে চতুর্থ হলুদ কার্ড দেখেছেন। ফলে এই ম্যাচে তাঁকে বসতে হবে। তবে সবুজ মেরুন শিবিরের অন্যান্য সব খেলোয়াড়ই লিগের শেষ ম্যাচে নামার জন্য প্রস্তুত। অর্থাৎ প্রায় পূর্ণশক্তি নিয়েই নামছে হাবাসের দল।

প্রথম দফার যুদ্ধে

প্রথম লেগে দুই স্প্যানিশ কোচের কৌশলের যুদ্ধে একমাত্র গোলটি করেন নাইজেরিয়া-জাত তারকা ফরোয়ার্ড বার্থোলোমিউ ওগবেচে। সে দিন ফতোরদা স্টেডিয়ামে ৬৯ মিনিটের মাথায় ফরাসি মিডফিল্ডার হুগো বুমৌসের পাস থেকে দর্শনীয় গোল করে দলকে জেতান তিনি। তবে এই গোলের এগারো মিনিট আগেই গঙ্গাপাড়ের ক্লাব এগিয়ে যেতে পারত এডু গার্সিয়ার গোলে। প্রায় ফাঁকা গোল পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট হন তিনি। এ বার আর লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া চলবে না কারও। কারণ, এ বার গোল হাতছাড়া হওয়া মানে এক নম্বর জায়গা ও এসিএলে খেলার সুযোগও হাতছাড়া। তা ছাড়া প্রতিশোধ নেওয়ার একটা তাগিদও তো রয়েছে তাদের।

(আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)