আইএসএল ২০২০-২১, এটিকে মোহনবাগান বনাম জামশেদপুর এফসি ম্যাচ

আইএসএল ২০২০-২১, এটিকে মোহনবাগান বনাম জামশেদপুর এফসিগোলের পর রয় কৃষ্ণা। ছবি—এটিকে মোহনবাগানের টুইটার থেকে।

এই জয়ের ফলে মুম্বই সিটি এফসি-কে টপকে ১৭ ম্যাচে ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে হিরো আইএসএল টেবলের এক নম্বরে উঠে এল হাবাস-বাহিনী। মুম্বই সিটি এফসি-র খাতায় ১৬ ম্যাচে ৩৪। শীর্ষস্থান ফিরে পেতে সোমবার বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে জিততেই হবে সাগরপাড়ের দলকে। ড্র করলেও পিছিয়ে পড়বে তারা। আগামী শুক্রবারের কলকাতা ডার্বির আগে এই জয় এটিকে মোহনবাগানের ফুটবলারদের প্রচুর আত্মবিশ্বাস জোগানোর জন্য যথেষ্ট।

রবিবার একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে ঠাসা ম্যাচে একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করেও সফল না হওয়ার পরে আসল সময়ে বহু প্রতীক্ষিত গোলটি পেয়ে যায় এটিকে মোহনবাগান। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত দুই দল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে। রয়ের গোলের পাঁচ মিনিট আগে জামশেদপুরের সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকার নেরিয়াস ভাল্সকিসের বিপজ্জনক হেড গোললাইন অতিক্রম করার ঠিক আগে অসাধারণ দক্ষতায় বাঁচান গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্য। এই গোলটি তিনি না বাঁচালে এটিকে মোহনবাগানের এই ম্যাচ থেকে হয়তো তিন পয়েন্ট পাওয়া হত না।

চার বিশেষজ্ঞ ফরোয়ার্ডকে নিয়ে এদিন খেলা শুরু করে এটিকে মোহনবাগান। গত ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া প্রীতম কোটালকে এ দিন ফিরিয়ে আনা হয় প্রথম এগারোয়। প্রথমার্ধের শুরু থেকে দুই দলই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার চেষ্টা করলেও দুই পক্ষেরই ডিফেন্সই এতটাই সতর্ক ছিল যে বাকি সব কিছু করলেও গোলে শট নিতে পারেনি কোনও পক্ষই। এটিকে মোহনবাগান যেখানে ৪-৪-২ ছক নিয়ে শুরু করে, সেখানে ৪-৪-১-১ ছকে খেলা শুরু করে জামশেদপুর। দুই ছকে তফাৎ সামান্যই। তাই কোনও পক্ষই একে অপরের চেয়ে এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকেনি।

সাত মিনিটের মাথায় জামশেদপুরের বক্সের মধ্যে গোলমুখী রয় কৃষ্ণাকে পিটার হার্টলে আগ্রাসী বাধা দেওয়ায় পেনাল্টির দাবি জানিয়েও সাড়া পায়নি সবুজ-মেরুন শিবির। বাধা না পেলে ডেভিড উইলিয়ামসের বাড়ানো ফরোয়ার্ড পাস নিয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারতেন রয়। ১৫ মিনিটের মাথায় ডেভিড উইলিয়ামসকে নিখুঁত ক্রস দিয়েছিলেন প্রীতম। কিন্তু ডেভিড ঠিকমতো বল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।

৩৫ মিনিটের মাথায় সেমিনলেন দুঙ্গেল ডান দিকের উইং দিয়ে উঠে এসে গোল লক্ষ্য করে অসাধারণ এক শট নেন, যা অরিন্দম ভট্টাচার্য তাঁর চেনা দক্ষতায় বাঁদিকে ডাইভ দিয়ে সেভ করেন। ৪১ মিনিটের মাথায় ফের অরিন্দম দলকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেন আইতর মনরয়ের বাঁকানো ফ্রিকিক ঘুষি মেরে বার করে দিয়ে। ৪৫ মিনিটে বিপক্ষের গোলের সামনে হেডে গোল করার ভাল সুযোগ তৈরি করে ফেলেছিলেন মার্সেলিনহো। কিন্তু রিকি লাল্লমাওমা হেড করে সেই বল ক্লিয়ার করে দেন। কর্নার থেকে হেডে গোলে বল ঠেলার সুযোগ পেয়ে যান সন্দেশ। কিন্তু তিনি বলে মাথা ছোঁয়াতেই পারেননি।  প্রথম ৪৫ মিনিটে যেমন কোনও দলই কোনও পজিটিভ সুযোগ তৈরি করতে পারেনি, তেমনই বল পজেশনেও দুই দলই প্রায় একই জায়গায় ছিল (৫২-৪৮)।

দ্বিতীয়ার্ধ ঝোড়ো গতিতে শুরু করে এটিকে মোহনবাগান। প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যেই দু’টো কর্নার আদায় করে নেয় তারা। কিন্তু কোনওটিতেই সফল হয়নি তারা। ৫০ মিনিটের মাথায় ডানদিকের উইং দিয়ে উঠে নিখুঁত ক্রস করেছিলেন দূরের পোস্টে ডেভিড উইলিয়ামসের উদ্দেশ্যে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে লেগে থাকা লালদিনলিয়ানা রান্থলে সেই বল গোললাইনের বাইরে বার করে দেন। এই চাপটা বজায় রাখার চেষ্টা করে তারা।

৫৮ মিনিটের মাথায় জামশেদপুরের সেরা স্ট্রাইকার নেরিয়াস ভাল্সকিসকে ডাগ আউট থেকে নামান তাঁদের কোচ ওয়েন কোইল। উদ্দেশ্য অবশ্যই আক্রমণে ধার বাড়ানো। এ ছাড়াও আইজ্যাক ভানমালসওমাকে নামান তিনি। তা সত্ত্বেও সবুজ-মেরুন শিবির আক্রমণ থামায়নি। ৬২ মিনিটের মাথায় বাঁ দিকের উইং দিয়ে উঠে বক্সের মধ্যে রয় কৃষ্ণাকে ক্রস করেন। ডিফেন্ডারে ঘিরে থাকা রয় গোলের দিকে ঘুরে শটও নেন। কিন্তু গোলকিপার রেহনেশের হাতে তা আটকে যায়।

৬৮ মিনিটের মাথায় রয় ফের বাঁ  দিকের উইং দিয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন পিটার হার্টলেকে ধোঁকা দিয়ে। কিন্তু বক্সের বাঁ দিকের মাথায় তাঁকে রান্থলে বাধা দেওয়ায় তিনি পড়ে যান। পড়ে যাওয়ার আগে অবশ্য গোলের দিকে বল ঠেলে দেন তিনি, যা রেহনেশ আটকে দেন। এই মুভের পরেই আক্রমণে ধার বাড়ানোর উদ্দেশ্যে জোড়া পরিবর্তন করেন হাবাস। মনবীরের জায়গায় প্রণয় হালদার ও কার্ল ম্যাকহিউয়ের জায়গায় হাভিয়ে হার্নান্ডেজ। কিন্তু তাতে সে রকম লাভ হয়নি। বরং জামশেদপুর শেষ দিকে চাপ বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করে।

৮০ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে উড়ে আসা বলে হেড করে প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন ভাল্সকিস। কিন্তু ঠিক গোললাইন অতিক্রম করার আগেই তা অরিন্দমের গ্লাভসে আটকে যায়। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ এই সেভটি করেন সবুজ-মেরুন গোলকিপার।

বহু প্রতীক্ষিত সেই মুহূর্তটি চলে আসে ৮৫ মিনিটের মাথায়। রয় কৃষ্ণা এই লিগে তাঁর ১৩ নম্বর গোলটি করে ফেলেন অসাধারণ দক্ষতায়। সেই রয়-ডেভিড জুটির ক্যারিশ্মায় সবুজ-মেরুন বাহিনীর গোল। বক্সের বাইরে ডান দিক থেকে পাস বাড়ান ডেভিড। যা অরক্ষিত রয় বক্সের মাথায় প্রায় ছোঁ মেরে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় বক্সে ঢুকেই গোলে শট নেন এবং গোল। এই গোলের পরে আর এটিকে মোহনবাগানের জয় আটকাতে পারেনি জামশেদপুর এফসি।

এটিকে মোহনবাগান দল: অরিন্দম ভট্টাচার্য (গোল), প্রীতম কোটাল, সন্দেশ ঝিঙ্গন, তিরি, শুভাশিস বসু, লেনি রড্রিগেজ, কার্ল ম্যাকহিউ (হাভিয়ে হার্নান্ডেজ), মনবীর সিং (প্রণয় হালদার), ডেভিড উইলিয়ামস, রয় কৃষ্ণা, মার্সেলো পেরেইরা (প্রবীর দাস)।

(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)

(আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)