আইএসএল ২০২০-২১, এটিকে মোহনবাগান বনাম বেঙ্গালুরু এফসি প্রিভিউ

AFC Cup 2022, ATKMB vs Maziya

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল ২০২০-২১, এটিকে মোহনবাগান বনাম বেঙ্গালুরু এফসি প্রিভিউ আসলে লিগ টেবলের দুই নম্বর দলের সঙ্গে তিন নম্বরের দ্বৈরথ। তা যে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে, এমনটাই আশা করা যায়। দুই নম্বরে থাকা এটিকে মোহনবাগান সোমবার সন্ধ্যায় যখন ফতোরদা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে বেঙ্গালুরু এফসি-র, তখন মাঠে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব থাকাই স্বাভাবিক।

তিনটি জয় ও তিনটি ড্রয়ের পরে এ বার অপরাজিত সুনীল ছেত্রীর দলের রয় কৃষ্ণাদের মুখোমুখি হওয়ার পালা। অন্যদিকে কলকাতার দল একটি ম্যাচে হারলেও চারটি জয়ই বেঙ্গালুরুর চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে রেখেছে তাদের। এক নম্বরে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-র সঙ্গে হাবাসের দলের পয়েন্টের কোনও তফাৎ নেই ঠিকই, তবে গোলসংখ্যায় পিছিয়ে থাকায় তাদের আপাতত দুইয়ে থাকতে হচ্ছে। সোমবার জয়ের ধারা বজায় রাখতে পারলে মুম্বইকে টপকে যেতে পারেন ডেভিড উইলিয়ামসরা। না পারলে দু’নম্বর জায়গাটা ছেড়ে দিতে হবে সুনীলদেরই।

ছয় ম্যাচে এগারো গোল করেছে বেঙ্গালুরু এফসি। এত গোল অন্য কোনও দলই করতে পারেনি এখন পর্যন্ত। গোলের মধ্যেই রয়েছেন ছেত্রী ও তাঁর সঙ্গী ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড ক্লেটন সিলভা। তিনটি করে গোল করা হয়ে গিয়েছে তাঁদের। তাই বিপক্ষের গোলে বল জড়ানো নিয়ে খুব একটা চিন্তা থাকার কথা নয় বেঙ্গালুরু শিবিরের। তবে রক্ষণ নিয়ে চিন্তার আছে বই কি। দলটা যেমন এগারোটি গোল দিয়েছে, তেমনই সাতটি গোল খেয়েওছে। তাই এটিকে মোহনবাগান কোচ হাবাসের রক্ষণ সামলে গোলের জন্য ঝাঁপানোর নীতি তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী হয়ে উঠতেই পারে।

অপেক্ষাকৃত দুর্বল ডিফেন্সের ফাঁককে কাজে লাগাতে পারলে লাভবান হতে পারে কলকাতার দলটি। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যদি রক্ষণে ফাটল দেখা যায়, তা হলে সেই ফাটল ভেদ করে গোল করে বেরিয়ে আসতে খুব একটা কঠিন হবে না সুনীল, সিলভাদের কাছে। সুযোগকে কী ভাবে কাজে লাগাতে হয়, তা চলতি লিগে দেখিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। এই সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকারদের সামলানোটাই তিরি, ঝিঙ্গন, প্রীতমদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

প্রতিপক্ষ নিয়ে হাবাসের বক্তব্য, “বেঙ্গালুরু খুবই শক্তিশালী দল। ওদের অনেক অভিজ্ঞ ও ভাল খেলোয়াড় আছে। তবে আমাদের লক্ষ্য একই থাকবে, তিন পয়েন্ট, যা সব ম্যাচেই থাকে। এটা লিগের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। বিপক্ষকে আমরা শ্রদ্ধা করি। কাল ৯০ মিনিট হাতে থাকবে। সুযোগ পেলেই গোল দিতে হবে”।

এটিকে মোহনবাগানের রক্ষণকে দুর্ভেদ্য বলা যেতেই পারে। আধ ডজন ম্যাচে মাত্র তিনটি গোল খেয়েছে তারা। গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্য নিজেই স্বীকার করেছেন, তাঁর দলের অসাধারণ ডিফেন্স লাইন-আপই তাঁর কাজকে অনেক সোজা করে দিয়েছে। রবিবার বেঙ্গালুরু এফসি-র কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতের ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকেও উঠে আসে এই প্রসঙ্গ। যা নিয়ে তিনি বলেন, “ওদের ডিফেন্ডাররা বেশ বড় শরীরের। তাই লড়াইটা অনেকটাই শারীরিক হয়ে উঠতে পারে। গোয়ার বিরুদ্ধেই দেখেছেন নিশ্চয়ই, কতটা সঙ্ঘবদ্ধভাবে খেলে ওরা আর ফাঁকা জায়গাকে দুর্দান্ত ভাবে কাজে লাগাতে পারে। এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচটা তাই বেশ কঠিন হয়ে উঠবে”।

এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত কৌশলগত ফুটবল খেলেন হাবাসের দলের ফুটবলাররা। বেশির ভাগ সময়েই রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেন তাঁরা। গোয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে অযথা ঝুঁকি নেননি। মাঝে মাঝে প্রতি আক্রমণে উঠেছেন কৃষ্ণা, উইলিয়ামসরা। কিন্তু তাতে মরিয়া ভাব কম ছিল। কিন্তু খেলার শেষ দিকে হঠাৎ আক্রমণের ধার বাড়িয়ে এবং বিপক্ষের ডিফেন্সের ফাঁক কাজে লাগিয়ে দুর্দান্ত একটি গোল করে ম্যাচ জিতে নেয়।

হাবাসের এই চতুর কৌশল নিয়েই বেশি চিন্তিত তাঁর বিপক্ষের কোচ। তাঁদের বিরুদ্ধেও এটিকে মোহনবাগান চরম কৌশলী ফুটবল খেলবে বলে মনে করেন কুয়াদ্রাত। বলেন, “দুটো সঙ্ঘবদ্ধ দল যখন মুখোমুখি হয়, তখন আক্রমণভাগে দারুণ আকর্ষণীয় কিছু হবে, এমন আশা করাটা ঠিক নয়। এই ধরনের ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ থাকে মূলত ডিফেন্ডারদের হাতে। তাদের ওপরই অনেকটা নির্ভর করে ম্যাচের ফল”।

এ পর্যন্ত এটিকে মোহনবাগান তাদের সব ম্যাচেই গোল পেয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। বিপক্ষকে প্রথমার্ধে পরখ করে নিয়ে সেই অনুযায়ী আক্রমণের জাল বিছানোই তাদের কৌশল, বিশেষজ্ঞরা এ রকম বললেও হাবাস কিন্তু সেটা মানতে রাজি নন। তিনি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “একটা দল শুধু দ্বিতীয়ার্ধেই গোল করে, এও সম্ভব! এটা পুরোপুরি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে ডেভিড উইলিয়ামস একটা দুর্দান্ত গোলের সুযোগ পেয়েছিল। ৯০ মিনিটের খেলা। যখনই সুযোগ পাব, তখনই গোল করতে হবে”।

ক্লেটন সিলভা ও সুনীল ছেত্রীকে সামলানোর জন্য কোনও বিশেষ পরিকল্পনাও নেই বলেই জানালেন হাবাস। বলেন, “জানি, সিলভা ভাল ফুটবলার। তাইল্যান্ডে ও যে ভাল খেলে এসেছে, তাও শুনেছি। আর ছেত্রীর বিরুদ্ধে কোনও বিশেষ কৌশল নেই। আমার কাছে ও গত ১৫ বছরে ভারতের সেরা ফুটবলার। ওর পরিসংখ্যানই সেটা বলে দেয়। তবে আমার দলের ছেলেদেরই আমি বেশি গুরুত্ব দিই। বিপক্ষের পুরো দলকেই মার্ক করার কথা ভাবি আমরা”। সোমবার ফতোরদায় কী ভাবে সেটা করেন, সেটাই দেখার।

লেখা আইএসএল-এর ওয়েবসাইট থেকে)

(খেলার জগতের আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)