আইএসএল ২০২০-২১, এটিকে মোহনবাগান বনাম বেঙ্গালুরু এফসি ম্যাচ

David Williams-ATKMB Relation

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল ২০২০-২১, এটিকে মোহনবাগান বনাম বেঙ্গালুরু এফসি ম্যাচে অপরাজিতের তকমা হারালেন সুনীল ছেত্রীরা। গত ছ’টি ম্যাচে যারা বিপক্ষের কাছে কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিল, সোমবার ফতোরদায় সেই বেঙ্গালুরু এফসি-কে রীতিমতো শাসন করে তাদের প্রথম হারের মুখ দেখতে বাধ্য করল এটিকে মোহনবাগান। ১-০-য় জিতলেও সারা ম্যাচে রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে ও একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করার পরে শেষ হাসি হাসেন সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের ফুটবলাররা। অসাধারণ ও আগ্রাসী ফুটবল খেলে সুনীল ছেত্রীদের হতবাক করে দেয় স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দল। দুই কোচের কৌশলের লড়াইয়ে কার্লস কুয়াদ্রাতকে এ দিন অনেকটাই পিছনে ফেলে দেন হাবাস।

বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে মাঠে নামলেই যিনি জ্বলে ওঠেন, সেই অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড ডেভিড উইলিয়ামসের অনবদ্য গোলে এ দিন দাপুটে জয় নিয়ে লিগ তালিকার দুই নম্বরে উঠে এল কলকাতার দল। তিন নম্বরে থাকা বেঙ্গালুরুর সঙ্গে এখন চার পয়েন্টের তফাৎ তাদের। শীর্ষে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-র সঙ্গে পয়েন্টের কোনও তফাৎ নেই তাদের। শুধু গোল-পার্থক্যে এগিয়ে থাকার জন্য মুম্বই এখন এক নম্বরে।

হাভিয়ে হার্নান্ডেজ ও প্রবীর দাসকে এ দিনও বাইরে রেখে প্রথম এগারো সাজান আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। প্রবীর তবু ডাগ আউটে ছিলেন। কিন্তু হাভি এখনও চোটের তালিকাতেই রয়ে গিয়েছেন। ডেভিড উইলিয়ামস, মনবীর সিং ও রয়  কৃষ্ণার সঙ্গে এডু গার্সিয়াকেও এ দিন জুড়ে দেন হাবাস।

কেন চার ফরোয়ার্ডে দল নামান তিনি, তা প্রথম ১৫ মিনিটেই বুঝিয়ে দেয় দল। শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তুলে দেয় সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। বেঙ্গালুরুর গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধুকে প্রায়ই পরীক্ষার মুখে ফেলছিলেন কৃষ্ণা, মনবীর, ডেভিড, এডুরা। ৬ মিনিটের মাথাতেই এডুর ফ্রি-কিকে মাথা ছুঁইয়ে গোলের চেষ্টা করেন ডেভিড। কিন্তু বারের ওপর দিয়ে বল বেরিয়ে যায়। অফসাইডও ছিলেন তিনি।

১১ মিনিটে বিপক্ষের বক্সের মধ্যেই এডু স্কোয়ার পাস করেন মনবীরকে। কিন্তু রাহুল ভেকে তাঁকে আটকে দেন। এর পাঁচ মিনিট পরে ডেভিডের লব থেকে ফের সুযোগ পান রয়। কিন্তু ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় এবং হুয়ানান তাঁকে ব্লক করায় ব্যর্থ হন। ২২ মিনিটে মনবীরও গোলের শট নিয়েছিলেন, কিন্তু আটকে দেন গুরপ্রীত।

আধ ঘণ্টা ধরে রীতিমতো বিপক্ষকে শাসন করার পরে ৩৩ মিনিটের মাথায় অনবদ্য গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ডেভিড উইলিয়ামস। মাঝমাঠ থেকে এডু গার্সিয়ার লবে বল পেয়ে বাঁ দিকের উইং থেকে কাট করে ঢুকে দুই ডিফেন্ডার হরমনজ্যোৎ খাবরা ও প্রতীক চৌধুরিকে বোকা বানিয়ে বক্সের মাথা থেকে কামানের গোলার গতিতে সোজা গোলে শট নেন। গুরপ্রীতের এ বার আর কিছুই করার ছিল না।

বেঙ্গালুরুর মতো কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই আগ্রাসী হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই যে নেমেছিল হাবাস-বাহিনী, তা এ দিন তাদের প্রথমার্ধের খেলা দেখেই বোঝা যায়। আগের দিন বেঙ্গালুরুর কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ম্যাচটা মূলত দু’পক্ষের ডিফেন্সের মধ্যে হবে। তিনি যে শুরুতে রক্ষণ সামলে পরে কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠার পরিকল্পনা নিয়ে দল নামাবেন, তা তাঁর কথা থেকেই বোঝা গিয়েছিল। এটিকে মোহনবাগানও যে শুরু থেকে অযথা ঝুঁকি নেবে না, হয়তো এ রকমই ভেবেছিলেন তাঁর দলের খেলোয়াড়রা।

কিন্তু শুরু থেকেই রয়, ডেভিডরা যে আগ্রাসন নিয়ে আক্রমণ শানাতে থাকেন, তার আকস্মিকতায় প্রায় দিশাহারা মনে হচ্ছিল বেঙ্গালুরু এফসি-কে। সুনীল ছেত্রী ও তাঁর তারকা সতীর্থ দিমাস দেলগাদো, ক্লেটন সিলভা, এরিক পার্তালু, হুয়ানানদের এ দিন মাঠে প্রায়ই অসহায় লাগছিল। চমকে দেওয়া এই কৌশলেই বিপক্ষের কোচকে মাত করে দেন হাবাস। কেন তিনি হিরো আইএসএলের সবচেয়ে সফল কোচ, তা এ দিনই বুঝিয়ে দিলেন তিনি। আর বেঙ্গালুরু এফসি-কে সামনে পেলে যে ডেভিড উইলিয়ামস জ্বলে ওঠেন, তা গত মরশুমেও প্রমাণ করেছিলেন তিনি। এ বারও সেটাই দেখা গেল। এ দিনই প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড ছিলেন নিজের সেরা ফর্মে। দ্বিতীয়ার্ধে খেলা না গড়ালে গোল পায় না এটিকে মোহনবাগান, এই বদনামও রটছিল সম্প্রতি। কিন্তু সোমবার ফতোরদায় সেই বদনাম ঘুচিয়ে দিলেন তারা নিজেরাই।

দ্বিতীয়ার্ধেও আগ্রাসনের মাত্রা এতটুকু কমেনি এটিকে মোহনবাগানের খেলায়। ৫১ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়িয়ে নেওয়ার দুর্দান্ত সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল তারা। এ বারেও গোলমুখী দূরপাল্লার শট নেন ডেভিড। কিন্তু ক্রসবারের কয়েক ইঞ্চি ওপর দিয়ে বল উড়ে যায়। তাঁকে নিখুঁত পাস দিয়েছিলেন রয় কৃষ্ণা।

বিপক্ষের দাপট সামলাতে ও আক্রমণে গতি বাড়াতে ৬১ মিনিটের মাথায় রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে তিন-তিনজন তরতাজা খেলোয়াড়কে একসঙ্গে নামান বেঙ্গালুরুর কোচ কুয়াদ্রাত। তুলে নেন প্রতীক, দেশর্ন ব্রাউন ও পার্তালুকে। নামান দুই ফরোয়ার্ড নরওয়ের ক্রিস্টিয়ান ওপসেঠ, লিয়ন অগাস্টিন ও ডিফেন্ডার ফ্রান গঞ্জালেসকে। তখনও কিন্তু টগবগ করে ফুটছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী। হাবাস তাঁর দলের প্রথম পরিবর্তন করেন ৭৩ মিনিটে। প্রণয় হালদারকে তুলে জয়েশ রানেকে নামান। এই পরিবর্তনের ঠিক আগেই ফের দ্বিতীয় গোলের সুযোগ পেয়ে যান রয়। তিরির কাছ থেকে পাওয়া একটি লম্বা পাস পেয়ে সোজা গোলে শট নেন রয়। কিন্তু ক্রস বারের ওপর দিয়ে বল চলে যায়।

শেষ ২০ মিনিটে সমতা আনার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে বেঙ্গালুরু এফসি। ৭৪ মিনিটে সুরেশের স্কোয়ার পাস থেকে গোলের সামনে বল পেয়ে যান ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড ক্লেটন সিলভা। কিন্তু গোলের বাইরে শট নেন তিনি। ৮৩ মিনিটের মাথায় বক্সের ডান দিক থেকে ইনসাইড বক্সে সুনীল ছেত্রীর উদ্দেশ্যে ক্রস করেন সিলভা। সুনীলের হেড ক্লিয়ার করেন সন্দেশ ঝিঙ্গন।

৮০ মিনিটের পর থেকে রক্ষণে জমাট বাঁধা শুরু করে দেয় এটিকে মোহনবাগান। বিপক্ষের মরিয়া চেষ্টা সামলানোর জন্য ৮৪ মিনিটের মাথায় ডেভিডকে তুলে প্রবীর দাসকে নামান হাবাস। অন্য দিকে ৮৬ মিনিটে আক্রমণে লোক বাড়ানোর জন্য ডিফেন্ডার রাহুল ভেকের পরিবর্তে ফরোয়ার্ড সেমবয় হাওকিপকে নামান কুয়াদ্রাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সন্দেশ, প্রীতম, তিরিদের তোলা দেওয়াল আর ভেদ করতে পারেনি তাঁর দল।

এটিকে মোহনবাগান দলঅরিন্দম ভট্টাচার্য (গোল), প্রীতম কোটাল, সন্দেশ ঝিঙ্গন, তিরি, শুভাশিস বসু, কার্ল ম্যাকহিউএডু গার্সিয়া (গ্ল্যান মার্টিন্স), প্রণয় হালদার (জয়েশ রানে), মনবীর সিংডেভিড উইলিয়ামস (প্রবীর দাস), রয় কৃষ্ণা 

লেখা আইএসএল-এর ওয়েবসাইট থেকে)

(খেলার জগতের আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)