বিসিসিআই কি ঠিক করছে হার্দিক-লোকেশের সঙ্গে?

Koffee With Karan

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: বিসিসিআই খুব রেগে গিয়েছে। বড় অন্যায় করে ফেলেছেন যে আপনারা। জীবন-মরন সমস্যা। শাস্তি আপনাদের পেতেই হবে। অপমান করেছেন, টেলিভিশন চ্যানেলে বসে বহু নারী সঙ্গের কথা সোচ্চারে বলে ফেলেছেন আপনারা। অন্যায়, অন্যায়, অন্যায়। দেশ জ্বলছে, সমালোচনা হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া আপনাদের দিকে আঙুল তুলছে। সতীর্থরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আপনারা অন্যায় করেছেন। শাস্তি তো পেতেই হবে। তাই নির্বাসন। আপনারা ক্রিকেটার। তাই খেলা থেকে নির্বাসন। শো-কজ। একবার জবাব পছন্দ না হলে আবারও শো-কজ। জবাব। তদন্ত। আরও বড় তদন্ত।

সবই তো ঠিক ছিল। একদম ঠিকই হচ্ছে। আপনাদের শাস্তি হওয়াই উচিৎ। ক্রিকেট কেড়ে নেওয়া হোক ওদের জীবন থেকে। না তেমনটা নাকি চাইছেন না ভারতীয় ক্রিকেটের মাথায় বসে থাকা ব্যাক্তিত্বরা। কিন্তু দুই ক্রিকেটারের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ নষ্ট করার জন্য আর কিই বা বাকি রাখলেন তাঁরা? স্পনসর চলে যাচ্ছে ওদের হাত থেকে। এমন চলতে থাকলে বিশ্বকাপ দল থেকেও হয়তো বাদ পড়তে হবে। কতদিন অপেক্ষা করবে টিম ম্যানেজমেন্ট। দল তো গোছাতে হবে।

এতক্ষণে নিশ্চই বুঝে গিয়েছেন, আমি হার্দিক পাণ্ড্যে আর লোকেশ রাহুলের কথা বলছি। ভারতীয় ক্রিকেট দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝ পথ থেকে দু’জনকে তুলে আনা হয়েছে দেশে। নির্বাসন তো হয়েছেই অনির্দিষ্ট কালের জন্য। চলবে তদন্ত। তদন্তের প্রথম ধাপে দুই প্লেয়ারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন বিসিসিআই-এর সিইও রাহুল জোহুরি। যাঁকে কিনা কিছুদিন আগে যৌন হেনস্থার অভিযোগে বিসিসিআই-এর কাজ থেকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। তাঁর হাতে এই দুই প্লেয়ারের মন্তব্যের তদন্তের দায়িত্ব।

নির্বাসিত হার্দিক-লোকেশ, দল থেকে বাদ, ফেরানো হচ্ছে দেশে

আবারও বলছি, মন্তব্যের তদন্ত্য! হয় নাকি!

খুন করেছেন? রেপ করেছেন? অত্যাচার করেছেন? চুরি বা ডাকাতি? তা হলে তদন্ত কিসের? হ্যাঁ, একটা প্রশ্ন ওঁদের কাছে রাখলেই মিটে যেত, সেই টেলিভিশন শোয়ে যাওয়ার অনুমতি ওঁদের কে দিয়েছিল। বিসিসিআই-এর অনুমতি ছাড়া কেন তাঁরা কোনও অনুষ্ঠানে গেলেন। যদি চুক্তিবদ্ধ প্লেয়ারদের ক্ষেত্রে এমন নিয়ম থেকে থাকে তাহলে অনুমতি না নিয়ে গিয়ে অবশ্যই অন্যায় করেছেন তাঁরা। তার জন্য তাঁদের ক্রিকেট কেরিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে না।

হঠাৎ করে বিসিসিআই-এর বিবেক জেগে উঠেছে। যার অন্দরে অজস্র অন্যায়ের খতিয়ান রয়েছে। যার মাথায় বসে রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি। যার দুই সদস্য বিনোদ রাই আর ডায়না এডুলজি সারাক্ষণ ঝগড়া করছেন। তাঁরা করবে বিচার এই দুই ক্রিকেটারের। আর কিসের বিচার? কেন বিচার?

কয়েকদিন আগের ঘটনা। বলিউড পরিচালক করন জোহরের টেলিভিশন শো ‘কফি উইথ করন’এ গিয়েছিলেন দুই ক্রিকেটার হার্দিক পাণ্ড্যে ও লোকেশ রাহুল। সেখানে করনের খুল্লাম খুল্লা প্রশ্নে মজে গিয়ে দু’জনেই খুল্লাম খুল্লা জবাব দিয়েছেন। তাতে নারী জাতির সম্মানে লেগে গেল? এত ঠুনকো নারী জাতির সম্মান জানা ছিল না। লুকিয়ে লুকিয়ে একাধিক সম্পর্ক রাখা মানুষরা তো কলার তুলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভদ্র লোক সেজে। জেনেও না জানার ভান করে আমরাই তাঁদের মাথায় বসিয়ে রেখেছি। আর এই উড়তি বয়সের দুটো ছেলে কী বলতে কী বলল তা নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ। যেন কোনও কাজই নেই আর ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড আর কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্সের।

মহিলা ক্রিকেটের বিতর্ক তো দু’বার মেল চালাচালি করেই শেষ হয়ে গেল। সবাই সবার বিরুদ্ধে যে অভিযোগের আঙুল তুলল যার জন্য বিশ্বকাপের আসর থেকে হেরে ফিরতে হল, তার কী হল? নতুন কোচ এনে দিয়েই কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। দলের মধ্যের এই দলাদলি যে ফিরে আসবে না তা কে বলতে পারে। কী শাস্তি হল প্লেয়ারদের। কোথায় হল তদন্ত? কে তুলবে প্রশ্ন। এরকম আরও একগুচ্ছ প্রশ্ন তোলা যায়। কিন্তু আজ একটাই প্রশ্ন সত্যিই কী হার্দিক-লোকেশ এত বড় শাস্তি পাওয়ার মতো অন্যায় করেছেন, যার জন্য শুরুতেই ওদের ক্রিকেট কেরিয়ার শেষ হয়ে যেতে বসেছে?

দুই ক্রিকেটার নিজেদের গৃহবন্দী করে নিয়েছেন। ফোন ধরছেন না, কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। গুমরে মরছেন। সমাজ আঙুল তুলছে বলে কথা? আদৌ কি সমাজ আঙুল তুলছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একদিন আলোচনা হয়েছিল। তার পর তো আর কোথাও কোনও মন্তব্য নেই। মনে পড়ছে কিছুদিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরাট কোহলি এক ক্রিকেট ফ্যানকে দেশ ছাড়ার কথা বলে চূড়ান্ত সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। সেই সমালোচনার তুলনায় হার্দিক-লোকেশের মন্তব্য নিয়ে কিছুই হয়নি সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিরাটকে সেই মন্তব্যের জন্য কোন তদন্তের মুখে পড়তে হয়েছিল?

অনেক বড় অন্যায় করেছিলেন সেদিন বিরাট কোহলি এক ভারতীয়কে দেশ ছাড়ার কথা বলে। হার্দিকরা টিভি শোয়ে বলেছেন, বিরাট সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছিলেন। কোনও পার্থক্য নেই। দুটোই পাবলিক মাধ্যম। তদন্ত হল না কেন বিরাটের মন্তব্য নিয়ে? আরও একটা প্রশ্ন, সোশ্যাল মিডিয়ায় সারাক্ষণ সোশ্যাল কাজ করা প্রাক্তন ক্রিকেটাররা সব কোথায় গেলেন? আজ কেন মুখে কুল‌ুপ? বুঝতে পারছেন না কার পক্ষ নেবেন, তাই না?

প্রশ্নগুলো আপনাদের সবার কাছেই থাকল। ভেবে দেখুন তো, ভুলতো সবাই করে। অভিভাবক হিসেবে সেই ভুল শোধরাতে হয় বুঝিয়ে। নাকি তাঁদের আত্মবিশ্বাস পুরো ভেঙে দিয়ে। বিসিসিআই এই ঘটনার কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন হার্দিক। তার পরও বার বার ক্ষমা চেয়েছেন দু’জনে। মন গলেনি সেই কর্তাদের। সত্যিই কি ছেলেগুলোর ক্রিকেট কেরিয়ার শেষ হয়ে যাবে? কবে বিসিসিআই সবার জন্য সমান নিয়ম আনবে? কবে হবে আসল তদন্ত?

(আরও ফিচার স্টোরি পড়তে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন)