কাতারের কাছে ১ গোলে হার ভারতের, ফুটবলে মন জয় গুরপ্রীতদের

কাতারের কাছে ১ গোলে হারছবি ভারতীয় ফুটবলের টুইটার থেকে

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: কাতারের কাছে ১ গোলে হার বিশ্বকাপ ও এশীয় কাপের বাছাই পর্বের ম্যাচে তবুও সমর্থকদের মন জয় করে নিল ভারতীয় ফুটবল দল। বৃহস্পতিবার রাতে দোহার জাসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে ৭০ মিনিটেরও বেশি দশ জনে খেলা সত্ত্বেও এশিয়ার সেরা দলকে একটির বেশি গোল করতে দেয়নি ভারত। কঠিন রক্ষণ ও গুরপ্রীত সিং সান্ধুর দুর্ভেদ্য গোলকিপিংয়ে রীতিমতো অজেয় দূর্গ হয়ে ওঠে ভারত। শুধুমাত্র আক্রমণের ধার না থাকায় ভারত এ দিন গোলশোধ করতে পারেনি। না হলে হয়তো দুবছর আগের মতো ম্যাচ অমীমাংসিত রেখেই মাঠ ছাড়তে পারতেন সুনীল ছেত্রীরা। এই হারের ফলে বিশ্বকাপের রাস্তায় এগোনোর সম্ভাবনা পুরোপুরি শেষ হয়ে গেল তাঁদের। এখন সামনে শুধু এশীয় কাপের রাস্তা।

বৃহস্পতিবারের ম্যাচে কুড়ি মিনিটের মধ্যেই পরপর দুবার হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় ডিফেন্ডার রাহুল ভেকে-কে। প্রথমে নিজেদের বক্সে আল হেদোজকে ফাউল করেন তিনি, পরে হেদোজেরই গোলমুখী ক্রস হাতে লাগিয়ে দ্বিতীয় হলুদ তথা লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন রাহুল।  ফলে ভারতীয় রক্ষণ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ৩৪ মিনিটের মাথায় আব্দেল আজিজের গোলে এগিয়ে যায় ফিফা ক্রমতালিকায় ভারতের চেয়ে ৪৭ ধাপ ওপরে থাকা কাতার। কিন্তু তার পরে আর বিপক্ষের গোলমুখ খুলতে পারেনি তারা। বহুদিন পরে গ্যালারিতে গলা ফাটানো ভারতীয় সমর্থকেরা এই পারফরম্যান্সে হতাশ হননি।

৬৬ শতাংশ বল পজেশন নিজেদের দিকে রেখেও, নবার গোলে শট নিয়েও একটির বেশি গোল করতে পারেনি কাতার। কাতারের মতো দলের বিরুদ্ধে জয়ের সম্ভাবনা ভারতের মতো দলের পক্ষে কার্যত অবাস্তব। তাই সেই চেষ্টা না করে তাদের কীভাবে আটকানো যায়, সে দিকে বেশি মন দেয় ক্রোয়েশিয়ান কোচ ইগর স্টিমাচের দল। সেই চেষ্টায় অনেকটাই সফল তারা। এই ম্যাচ থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে পরের দুই ম্যাচে নিশ্চয়ই কাজে লাগবে ভারতের।

রাওলিন বোরজেসের হ্যামস্ট্রিং সমস্যার জন্য এ দিন প্রথমবারের জন্য ভারতীয় সিনিয়র দলের জার্সি পেয়ে যান মিডফিল্ডার গ্ল্যান মার্টিন্স। শুরু থেকেই এ দিন ভারতীয় ডিফেন্সকে পরীক্ষার সামনে ফেলে দেয় কাতারের আক্রমণ বিভাগ। ইউসুফ, আব্দেল করিম, আব্দেল আজিজরা গুরপ্রীত সিং সান্ধুকে সমানে ব্যস্ত রাখেন। রাহুল বেরিয়ে যাওয়ায় তিন ডিফেন্ডারকে সাহায্য করতে নেমে আসেন মাঝমাঠের খেলোয়াড়রাও। সন্দেশ ঝিঙ্গন, প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বসুদের সঙ্গ দিতে দেখা যায় কখনও গ্ল্যান মার্টিন্সকে, কখনও বিপিন সিংকে।

এর মধ্যেই গোলের সম্ভাবনা তৈরি করে ফেলেছিলেন মনবীর সিং। ম্যাচের ঘড়ি আধ ঘণ্টা পেরনোর আগেই তিনি আশিক কুরুনিয়ানের দেওয়া বল নিয়ে ঢুকে পড়েন বিপক্ষের বক্সে। কিন্তু মনবীরের সঙ্গে দৌড়নো কাতারি মিডিফিল্ডার বুয়ালেমের বাধায় শেষ পর্যন্ত সেই বল চলে যায় তাঁদের গোলকিপার সাদের হাতে।

ভারতীয় রক্ষণকে তুমুল চাপে রাখা কাতার তাদের প্রথম সাফল্য পেয়ে যায় ৩৪ মিনিটের মাথায়। বক্সের মধ্যে আব্দেল করিম গোলের সুযোগটি তৈরি করেন ও আব্দেল আজিজকে গোলের পাসটি দেন মুনতারি। আজিজের সামনে ভারতের চার ফুটবলার থাকলেও তাঁরা তাঁকে আটকাতে পারেননি। প্রীতমের পায়ের ফাঁক দিয়ে গোলকিপার গুরপ্রীতের হাতে লেগে বল গোলে ঢুকে যায়। দু’বছর আগে এই জাসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামেই কাতারের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্রয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলেন যিনি, সেই গুরপ্রীত সারা ম্যাচেই ছিলেন দুর্দান্ত। রাহুল ভেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে যে বাড়তি চাপ এসে পড়ে, তার অনেকটাই একা সামলান এই গোলকিপার। বারবার কাতারের তৈরি ইতিবাচক গোলের সুযোগ নষ্ট করে দেন তিনি।

বিরতির পরে ভারতীয় দল মাঠে নামে সুনীল ছেত্রীকে ছাড়াই। তাঁর জায়গায় মিডফিল্ডার উদান্ত সিংকে নামতে দেখা যায়। সম্ভবত কৌশলগত কারণেই এই পরিবর্তন করেন স্টিমাচ। রক্ষণের ওপর থেকে চাপ কমানোর উদ্দেশ্যেই হয়তো উদান্তকে নামানো হয়। দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের গোলের সামনে প্রায় দেওয়াল তুলে দেয় ভারত। সাত-আটজন মিলে ডিফেন্স করতে শুরু করে। শেষ দশ মিনিটে সাহাল আব্দুল সামাদ ও লিস্টন কোলাসোকে নামিয়ে সমতা আনার শেষ চেষ্টা করেন স্টিমাচ। কিন্তু সমতায় ফেরা হয়নি ভারতের।

ভারতীয় দল: গুরপ্রীত সিং সান্ধু (গোল), রাহুল ভেকে (লাল কার্ড), প্রীতম কোটাল, সন্দেশ ঝিঙ্গন, শুভাশিস বসু, আশিক কুরুনিয়ান (সাহাল আব্দুল সামাদ), সুরেশ সিং (লিস্টন কোলাসো), গ্ল্যান মার্টিন্স (লালেঙমাউইয়া), বিপিন সিং (আকাশ মিশ্র), সুনীল ছেত্রী (উদান্ত সিং), মনবীর সিং।

লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)