হাফ ডজন গোল খেল এটিকে মোহনবাগান, উজবেকিস্তানের এফসি নসফের কাছে

হাফ ডজন গোল খেল এটিকে মোহনবাগান

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: হাফ ডজন গোল খেল এটিকে মোহনবাগান, উজবেকিস্তানের এফসি নসফের কাছে। বুধবার উজবেকিস্তানের কার্শি শহরের মার্কাজি স্টেডিয়ামে এএফসি কাপের ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে প্রথমার্ধেই ০-৫-এ পিছিয়ে যায় তারা। দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের শুধরে নিয়ে কিছুটা ভাল খেললেও ম্যাচে ফেরার কোনও বাস্তব সম্ভাবনাই ছিল না আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দলের। হাফ ডজন গোল খেল এটিকে মোহনবাগান, এ ভাবে হারার ফলে এ বারের এএফসি কাপ থেকে বিদায় নিতে হল সবুজ-মেরুন বাহিনীকে।

এ দিন অসাধারণ ও দাপুটে ফুটবল খেলে ভারতীয় প্রতিপক্ষকে হারায় ২০১১-র এএফসি কাপ চ্যাম্পিয়ন নসফ। বিপজ্জনক ফরোয়ার্ড খুসেইন নর্চায়েভ হ্যাটট্রিক করেন। এ ছাড়াও ওয়েবেক বজরভ ও দনিয়র্জন নরসুল্লায়েভ শেষ দু’টি গোল করেন। প্রথম গোলটি হয় এটিকে মোহনবাগান ডিফেন্ডার প্রীতম কোটালের গায়ে লেগে।

২০১১-য় এএফসি কাপে নসফ ভারতের ডেম্পো স্পোর্টস ক্লাবকে যথাক্রমে ৯-০ ও ৪-০-য় হারিয়েছিল। এ দিন দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের কিছুটা সামলাতে না পারলে এটিকে মোহনবাগানকেও হয়তো সে রকমই বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হত। একটি পেনাল্টি পেয়েও সেই সুযোগ হাতছাড়া করে নসফ। ইউরো কাপে খেলে আসা ফিনল্যান্ডের মিডফিল্ডার ইওনি কাউকো এ দিন কলকাতার দলের হয়ে প্রথম মাঠে নামেন। প্রথম ম্যাচে সে ভাবে সমর্থকদের মনে ছাপ ফেলার মতো খেলতে পারেননি তিনি। মাঝ মাঠ থেকে সে ভাবে সাপ্লাই না আসায় রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামসদেরও ম্লান লেগেছে।

ইওনি কাউকো এ দিন প্রথম এগারোয় থাকলেও মাইকেল সুসাইরাজ ও প্রবীর দাসকে রাখেননি এটিকে মোহনবাগান কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। দু’জনকেই রিজার্ভ বেঞ্চে রেখে দল নামান তিনি। পরে সুসাইরাজ নামলেও প্রবীর সুযোগ পাননি।

প্রত্যাশিত ভাবেই শুরু থেকেই এটিকে মোহনবাগানকে চাপে রাখতে শুরু করে নসফ। শুরুতেই গোল খেয়ে যাওয়ায় চাপটা আরও বেড়ে যায়। চতুর্থ মিনিটে কর্নার থেকে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে হেড করেন কার্ল ম্যাকহিউ। তা প্রীতম কোটালের গায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়। তার ছ’মিনিট পরে ফের নিজের গোলের দিকে বল ক্লিয়ার করতে গিয়েছিলেন বাংলার ডিফেন্ডার। তবে সৌভাগ্যবশত এ বার তা বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়।

ম্যাচ ও জয়ের মধ্যে থাকা নসফ যে তাজা ঘোড়ার মতো দৌড়বে, সেটাই প্রত্যাশিত ছিল এবং সেটাই হয়। শুরু থেকেই এটিকে মোহনবাগানের গোল এরিয়ায় ঝড় তুলে দেয় নসফ। নিজেদের রক্ষণ ঠিকমতো গুছিয়ে নেওয়ার আগেই উজবেক দলটি তিন গোলে এগিয়ে যায়। পরে আরও তিন গোল দেয় তারা। প্রতিবারই সবুজ- মেরুন রক্ষণের ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ফলে হাফ ডজন গোল খেল এটিকে মোহনবাগান, এবং বাড়ি ফিরে আসতে হল।

বিপজ্জনক ফরোয়ার্ড খুসেইন নর্চায়েভকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হন সবুজ-মেরুন শিবিরের ডিফেন্ডাররা। তাঁর হ্যাটট্রিকেই ম্যাচ এটিকে মোহনবাগানের হাতের বাইরে চলে যায়। তিনিই বিপক্ষের গোলের একেবারে সামনে থেকে ১৫ মিনিটের ব্যবধানে পরপর তিনটি গোল করে দলের জয়ের ভিত তৈরি করে দেন।

১৮ মিনিটের মাথায় বাঁ দিকের উইং দিয়ে ওঠা ফুল ব্যাক শারজদ নাসরুল্লায়েভের নিখুঁত ক্রস পেয়ে গোল লাইনের সামনে থেকে গোলে বল ঠেলে দেন নর্চায়েভ। তাঁকে আটকাতে ব্যর্থ হন প্রীতমরা। এর তিন মিনিট পরে ফের নর্চায়েভই গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন। সেই নাসরুল্লায়েভই ফের বাঁ দিক থেকে গোলের বল বাড়িয়েছিলেন নর্চায়েভের উদ্দেশ্যে। এ বারও বক্সের মধ্যে প্রায় অরক্ষিতই ছিলেন তিনি। বক্সের মাঝখান থেকে পরপর দু’বার গোলে শট নেন। প্রথমবার প্রীতম ব্লক করলেও পরের বার গোলকিপার অমরিন্দর আটকাতে পারেননি তাঁর শট।

৩১ মিনিটের মাথায় ফের আকমল মজগভয়ের পাস থেকে নিজের তৃতীয় গোলটি পেয়ে যান নর্চায়েভ। বক্সের মাথা থেকে তাঁকে পাস দিয়েছিলেন মজগভয়। বারবার নর্চায়েভকে ছেড়ে রাখার মাশুল দিতে হয় এটিকে মোহনবাগানকে। ভারতে আসার পরে স্প্যানিশ কোচ হাবাসের দলের বিরুদ্ধে এর আগে কোনও ফুটবলার হ্যাটট্রিক করতে পারেননি। বুধবার সেই নিয়ম ভেঙে দিলেন নর্চায়েভ।

ম্যাচের ৪২ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে বাখরম আবদুরাখিমভ অবৈধ ভাবে বাধা পাওয়ায় পেনাল্টি পায় নসফ। ওয়েবেক বজরভের পেনাল্টি শট বারে লেগে ফিরে আসে। আবদুরাখিমভ ফিরতি বলে হেড করলেও তা সোজা অমরিন্দরের হাতে চলে যায়। প্রথমার্ধে ব্যবধান আরও বেড়ে যায়। পেনাল্টির সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন যিনি, সেই বজরভ তিন মিনিটের বাড়তি সময়ে দলের পঞ্চম গোলটি করেন। এ বার ডানদিক দিয়ে ওঠা দিলশদ সাইতভের লো ক্রস থেকে ট্যাপ করে গোল করতে কোনও ভুল করেননি বজরভ।

বিপক্ষের আক্রমণ সামলাতেই ব্যস্ত এটিকে মোহনবাগান প্রথমার্ধে একবারও গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। তিন ফরোয়ার্ডকে কার্যত অসহায় লেগেছে এ দিন। মাঝমাঠে ইউরো কাপ ফেরত ইওনি কাউকোও সে ভাবে তৎপর হয়ে উঠতে পারেননি।

দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের শুধরে নিয়ে মাঠে নামে তারা। শুরুতেই ডানদিকের উইং দিয়ে উঠে মনবীর সিং গোলে শট নিয়েছিলেন। তবে তা বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। পরের মুহূর্তেই অবশ্য বজরভ বক্সের বাইরে থেকে গোলে শট নিয়েছিলেন, যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। হ্যাটট্রিকের নায়ক নর্চায়েভের পরিবর্তে আর এক সফল ফরোয়ার্ড আন্দ্রিয়া কালুদেরোভিচ মাঠে নামেন। অন্য দিকে লিস্টন কোলাসো নামেন শেখ সাহিলের জায়গায়।

প্রথমার্ধে এটিকে মোহনবাগানকে যে রকম চাপে রেখেছিল তারা, দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য ততটা রাখতে পারেনি। ডিফেন্ডাররাও আগের চেয়ে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই ফুটবলটা শুরু থেকে খেলতে পারলে হাবাসের দলকে প্রথমার্ধে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হত না। ৬৮ মিনিটের মাথায় মনবীরের জায়গায় সুসাইরাজকে নামান হাবাস। আগের চেয়ে বেশি পাস খেলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়াই যে উদ্দেশ্য ছিল তাদের, তা দ্বিতীয়ার্ধে সবুজ-মেরুন ফুটবলারদের খেলা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। তবে বিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠার প্রবণতা কমেনি নসফের।

এ রকমই এক কাউন্টার অ্যাটাকে ছ’নম্বর গোলটি করেন পরিবর্ত খেলোয়াড় দনিয়র্জন নরসুল্লায়েভ। ৭১ মিনিটে মার্কো স্টানোজেভিচের ফরোয়ার্ড পাসে বল পেয়ে বক্সের মধ্যে ডানদিক থেকে কোনাকুনি শটে গোল করেন অরক্ষিত নরসুল্লায়েভ। শুভাশিস, কার্লরা রেফারির কাছে অফ সাইডের দাবি জানালেও রেফারি তাতে সাড়া দেননি। ৮২ মিনিটের মাথায় এই নরসুল্লায়েভই ব্যবধান বাড়াতে পারতেন। কিন্তু গোলের সামনে থেকে তাঁর বাঁপায়ের শট বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়।

এটিকে মোহনবাগান দল: অমরিন্দর সিং (গোল), আশুতোষ মেহতা, প্রীতম কোটাল, কার্ল ম্যাকহিউ, শুভাশিস বসু, লেনি রড্রিগেজ, শেখ সাহিল (লিস্টন কোলাসো), ইওনি কাউকো (অভিষেক ধনঞ্জয়), মনবীর সিং (মাইকেল সুসাইরাজ), ডেভিড উইলিয়ামস (কিয়ান নাসিরি), রয় কৃষ্ণা।


প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)