বিদায়বেলায় চোখে জল নিয়েই মাঠ কাঁপানো ইনিয়েস্তা, টোরেসের জন্য কাঁদল ফুটবল বিশ্ব

চোখে জল নিয়েই মাঠ কাঁপানো ইনিয়েস্তাচোখে জল নিয়েই মাঠ কাঁপানো ইনিয়েস্তা

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: শেষ দিনেও মাঠ কাঁপানো ইনিয়েস্তা, টোরেস— দুই তারকা ফুটবলার চিনিয়ে দিলেন তাঁদের পেশাদারিত্ব। চোখের কোনা মুছতে মুছতেই বল নিয়ে ছুটে বেড়ালেন গোটা মাঠ। বাড়িয়ে দিলেন গোলের বল। লা লিগার শেষ মুহূর্তের দু’টি ম্যাচই স্মরণীয় করে রাখলেন বার্সা ও মাদ্রিদের এই দুই নক্ষত্র।

রবিবার রাতের এই দুই ম্যাচই ছিল দু’জনের শেষ ম্যাচ। আর কখনও বার্সার হয়ে নামতে দেখা যাবে না আন্দ্রে ইনিয়েস্তাকে। এমনকী, বার্সেলোনার বিরুদ্ধেও আর কখনও খেলবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন আগেই। কাজেই আর ধারাভাষ্যকারদের মুখে কখনও শোনা হবে না, জাভি থেকে ইনিয়েস্তার পা ঘুরে বল মেসির কাছে… এবং গো…ও…ল! আবার ফার্নান্দো টোরেসকেও দেখা যাবে না কখনও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে বিপক্ষের জালে বল জড়াতে। শেষ দিনের দু’টি গোল তাই থেকে গেল ইতিহাস হয়ে। আর কখনও এমন রাত নামবে কি ফুটবলের আঙিনায়?

প্রায় দু’দশক মাঠকেই বাড়ি বলে মনে করতেন ইনিয়েস্তা। সহ-খেলোয়াড়দের নিয়েই তাঁর স্বপ্নের পরিবার। দু’দশকের সেই বাড়ি-পরিবারকে ‘গুডবাই’ জানানো সত্যিই যে কতটা কষ্টের, তা রিজার্ভ বেঞ্চে বসা মানুষটিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। বারে বারে চোখের কোণে আঙুল চালাচ্ছিলেন। হাত দিয়ে মুখ ঢাকতে চাইছিলেন ক্যামেরা থেকে। কিন্তু, কিছুই লুকোতে পারেননি। ঠিক যেমন ভাবে মাঠে থাকা ৮৪ মিনিট নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারেননি কোথাও! বারে বারেই পায়ের জাদুতে বুঝিয়ে দিচ্ছেলেন, দেখ আমি আজও আছি।

বিদায় বুঁফো, ১৭ বছর পর জুভেন্তাস ছাড়ছেন তিনি

নিয়ম রক্ষার ম্যাচ শেষ হওয়া মাত্রই অন্ধকারে ঢেকে যায় গোটা স্টেডিয়াম। তার পর বিন্দু বিন্দু আলো জ্বলতে শুরু করে। সেই বিন্দুই একটা সময়ে আলোর সিন্ধুতে গিয়ে মেশে। সতীর্থরা আলোর সেই ঝর্নাধারায় তুলে ধরেন তাঁদের প্রিয় ইনিয়েস্তাকে। শূন্যে ভাসতে থাকা ইনিয়েস্তার সেই ছবি যেমন ফুটবল বিশ্বে ইতিহাস, তেমনই চোখের কোল মুছতে থাকা ইনিয়েস্তার একাকীত্বও আজ রূপকথায় ঢুকে পড়ল। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সেই ইতি-কথার ডালি সাজাবেন হয়তো তাঁরই কোনও সতীর্থ! ২২ বছর বড় কম সময় নয় যে! আর সেই দীর্ঘ সময়ে ৩৪ বছরের ইনিয়েস্তা ৬৭৪টি ম্যাচ খেলেছেন। রবিবার রাতের ম্যাচেও তাঁর পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া।

ফার্নান্দো টোরেস ক্লাবকে বিদায় জানালেন দু’গোলের সঙ্গে।

ফার্নান্দো টোরেস ক্লাবকে বিদায় জানালেন দু’গোলের সঙ্গে।

আট নম্বরী ইনিয়েস্তার সঙ্গে এ দিন একই রকম ভাবে বিদায় নিলেন নয় নম্বরী ফার্নান্দো টোরেস। বিদায় বেলায় তাঁর মুখের আরও চওড়া হাসি কোথাও যেন ফুটিয়ে তুলছিল ভিতরের যন্ত্রণাকে। সেই যন্ত্রণাবিদ্ধ বাঘই শেষ ম্যাচে জোড়া গোল উৎসর্গ করলেন ক্লাবকে। আর কখনও মাদ্রিদের হয়ে খেলবেন না! তাতে কী! শেষ ম্যাচেও নিজেকে নিঃশেষ করে, উজাড় করে দিলেন সমর্থক-দর্শকদের কাছে।

শেষ বার ক্লাবের জার্সিতে নেমে, খেলা শেষে সন্তানদের নিয়ে পোজ দিলেন। ছবি তুললেন। হাসলেন। ‌লুকিয়ে রাখলেন ভেতরের সেই কষ্টটাকে। তাঁর জন্যই তো চোখের জলে ভাসল গোটা স্টেডিয়াম। অধিনায়কত্বের পাশাপাশি ক্লাবের হয়ে ৪০৪ ম্যাচে ১২৮ গোল— এ-ও তো এক ইতিহাস। সেই ইতিহাসের রথের রশি এ বার টানতে হবে নবীন প্রজন্মকে। বিদায় বেলায় সেই বার্তাই দিয়ে গেলেন টোরেস।

দুই নক্ষত্রই চোখের জলে ভিজিয়ে দিয়ে গেলেন বিশ্ব ফুটবলের মাঠ। দুই মাঠে হাজির দর্শকদের মনে তখনও একটাই প্রশ্ন, আর কী কখনও কবে, এমন সন্ধ্যা হবে?