Sandesh Jhingan বাতিল হয়েছিলেন কলকাতায় ট্রায়ালে

Sandesh Jhingan

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: দেশের হয়ে মাঠে নামার স্বপ্ন পূরণ করতে গেলে জীবনে প্রচুর লড়াইয়ের জন্য তৈরি থাকতে হবে, নতুন প্রজন্মের ফুটবলারদের জন্য এমনই পরামর্শ ভারতীয় দলের তারকা ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গনের (Sandesh Jhingan)। তিনি তাঁর নিজের কঠিন লড়াইয়ের কাহিনী শুনিয়ে এমনই পরামর্শ দিয়েছেন সেই সব ফুটবলারদের, যারা একদিন দেশের জার্সি গায়ে দিয়ে মাঠে নামার স্বপ্ন চোখে নিয়ে ফুটবল শুরু করেছে। অর্জুন পুরস্কার পাওয়া সন্দেশ ঝিঙ্গন সদ্য এশিয়ান কাপ ২০২৩-এর মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জন করা ভারতীয় দলের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার। চলতি মাসে কলকাতায় হয়ে যাওয়া বাছাই পর্বের তিনটি ম্যাচে ভারত মাত্র একটি গোল খায়, যে কৃতিত্ব দাবি করতেই পারে সন্দেশের নেতৃত্বে খেলা ভারতীয় দলের রক্ষণ বিভাগ।

ফুটবল জীবন শুরুর সময় এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল সন্দেশকে যে অন্য কেউ হলে হয়তো হাল ছেড়েই দিত। কিন্তু পঞ্জাবি তরুণের অসীম ধৈর্য্য ও দেশের ফুটবল খেলার অদম্য জেদই তাঁকে আজ এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। সম্প্রতি ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর এই কঠিন লড়াইয়ের কথা শুনিয়েছেন সন্দেশ। তিনি বলেন, “ছোটবেলায় আমি যাদের সঙ্গে খেলতাম, তাদের সবার ইউরোপে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবে খেলার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু আমি স্বপ্ন দেখতাম ভারতের হয়ে খেলব। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্যই অনেক পাগলামি করেছি। ভোর চারটেয় উঠে শরীরচর্চা করতাম। এটাই আমাকে পরিশ্রমের শক্তি জোগাত”।

কলকাতায় ট্রায়ালে স্বপ্নভঙ্গ

আমি রাস্তায় ফুটবল খেলেই বড় হয়েছি। তাই আমার সেই প্রথাগত ফুটবলের জ্ঞান ছিল না। যখন আমার বয়স ১৭-১৮, স্কুলের পড়াশোনা শেষ, একটা কাজের দরকার, তখন আমার মনে হল, কোনও একটা ক্লাবের হয়ে খেলতে হবে আমাকে। কলকাতায় গিয়ে দেখলাম একটা ট্রায়াল হচ্ছে, যেখানে প্রায় আড়াইশো আমার বয়সী ফুটবলার। কিছু করে দেখাবার সুযোগই পেলাম না। বাতিলও হয়ে গেলাম। কিন্তু ভেঙে পড়িনি। ওখানে অনেক পরিচিত পঞ্জাবী, উত্তর ভারতীয় থাকেন। তাঁদের সবাইকে বললাম, কোথাও কোনও ট্রায়ালের খোঁজ পেলে যেন আমাকে তাঁরা জানান।

রোজ ট্রেনে করে হাওড়া যেতাম। সেখান থেকে বাস ধরে খুঁজতে যেতাম, যদি কোথাও কোনও ট্রায়াল হয়। খুঁজতে খুঁজতে একদিন এক দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাবের খোঁজ পাই। সেই ক্লাবে প্রায় ঢুকেই পড়েছিলাম। ওরা আমাকে কিছুদিন কলকাতায় থেকে অনুশীলন করতে বলে। কিন্তু সেখানে আমার খাবার নিয়ে ওরা অসন্তুষ্ট হয়। পরের দিন ম্যানেজার এসে আমাকে বলেন, ব্যগপত্র গুছিয়ে এখান থেকে চলে যাও”।

বিফল মনোরথে বাড়ি ফেরা

তখন আমার কাছে ট্রেনের টিকিটের পয়সাও ছিল না। আম্বালা থেকে চণ্ডীগড় যাওয়ার বাসের টিকিটের পয়সা নিয়েও কন্ডাক্টরের সঙ্গে ঝামেলা হয়। তবে ভদ্রলোক খুব ভাল ছিলেন। আমাকে কম পয়সাতেই সফর করতে দিয়েছিলেন সে দিন। দেড় মাস পরে আমি বাড়ি ফিরি। তবে তখনও কিন্তু আমি ভেঙে পড়িনি। তখন আমার আর কোনও উপায় ছিল না। হয় আমাকে ভেসে থাকতে হবে, না হলে আমাকে ডুবে মরতে হবে।

যতই আমাকে ফিরিয়ে দিক, না বলুক, আমাকে চেষ্টা করে যেতেই হবে। জীবন আমাকে এই শিক্ষাই দিয়েছে যে, যা কিছুই ঘটুক না কেন, তার পিছনে কোনও না কোনও কারণ রয়েছে।

জীবনের মোড় বাইচুংয়ের ক্লাবে

ইউনাইটেড সিকিমে বাইচুং ভুটিয়ার কাছে গেলাম ট্রায়াল দিতে। বহু বছর ধরে যাঁকে আমি আমার ফোনের ওয়ালপেপারে রেখে দিয়েছিলাম। ওখানে আমি আড়াই মাস ধরে ট্রায়াল দিই। কারণ, তখন ওদের তিনজন কোচ বদল হয়। প্রথমে ট্রায়াল দেওয়ার পরে শুনলাম আমাকে ওরা সই করাবে। কিন্তু সেই কোচকে সরিয়ে দেওয়া হল। তার পরে এক পর্তুগিজ কোচ এসে তিনিও আমাকে নেবেন বলে জানালেন। কিন্তু তাঁকেও একটা টুর্নামেন্টের পরে সরে যেতে হয়। তাঁর জায়গায় এলেন বেলজিয়ান কোচ ফিলিপ ডি রাইডার। তাঁর কাছেও এক মাস ধরে ট্রায়াল দেওয়ার পর তিনি আমাকে অবশেষে চুক্তিপত্রে সই করালেন। তার পর থেকে আমাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তার আগের তিন বছর আমি যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, সেই সময়টাকে অনেকে হয়তো দুঃসময় বলবেন। কিন্তু আমি বলি, সেটা ছিল আমার শেখার সময়। জীবনের চরম শিক্ষা।

লড়াই এখনও চলছে

গত বছর আগস্ট মাসে এটিকে মোহনবাগান মলদ্বীপে এএফসি কাপে খেলতে যাওয়ার আগেই  ক্লাবকে জানিয়ে দিয়েছিলাম ক্রোয়েশিয়ার ক্লাব ফুটবলে খেলতে যাচ্ছি, তাই সেই মরশুমে এটিকে মোহনবাগানের হয়ে খেলতে পারব না।

জীবনে যাই ঘটুক, স্বপ্ন দেখা ছেড়ো না। জানবে যা ঘটছে, তার পিছনে একটা না একটা কারণ ঠিক আছে। অনেক আঘাত আসবে। যদি তুমি সত্যিই মন থেকে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চাও, তা হলে আর অন্য কোনও কিছুই তোমার কাছে বড় হয়ে উঠতে পারে না। ফুটবল আমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে। এই মানসিকতা আমার ফুটবল খেলেই তৈরি হয়েছে। যদি দেশের হয়ে খেলতে চাও, পেশাদার ফুটবলার হতে চাও, তা হলে লক্ষ্যস্থির রাখো। ফুটবলই আমাকে শিখিয়েছে, খারাপ কিছু হলে তা মনে নিও না, লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য লড়াই করে যাও।    

(তথ্য্য ও লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট) 

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle