বাংলার হকিতে মধ্যযুগীয় বর্বরতা আর তাঁর শিকার একদল হকির স্বপ্ন দেখা ছেলে

বাংলার হকিতে মধ্যযুগীয় বর্বরতামাথা ন্যাড়া করার পর অনুর্ধ্ব-১৯ বাংলা হকি দলের প্লেয়াররা

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: বাংলার হকিতে মধ্যযুগীয় বর্বরতা প্রশ্ন তুলে দিল অনেকগুলো। আজ ২০১৯ সালে দাঁড়িয়ে এমন ঘটনার কথা কি কেউ ভুল করেও ভাবতে পারে? যা ঘটে গেল বাংলার হকিতে। এমনিতে বাংলার হকিতে বিতর্কের অভাব নেই। কিছু না কিছু নিয়ে চলছেই। মাঝে তো খবর রটে গেল বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশনের অফিসটাই নাকি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তা যাও কিছুদিন বন্ধ থাকার পর খুলল। একবছর বাদ দিয়ে বেটন কাপও ফিরল শহরে। সাফল্যের সঙ্গেই আয়োজন করলেন কর্তারা। কিন্তু এটা কেমন কাণ্ড ঘটে গেল বাংলার হকিতে, যা নিয়ে রীতিমতো ছিঃ ছিঃ করছে গোটা ময়দান থেকে ক্রীড়া জগৎ।

হারের শাস্তি নাকি এভাবেও হয়! ভয়ঙ্কর সেই ঘটনার স্মৃতি কি সহজে মুছবে বাংলার জুনিয়র হকি দলৈর এই প্লেয়ারদের মধ্যে থেকে। এ যেন মধ্যযুগীয় বর্বরতা ফিরে এল বাংলার হকিতে। এমনিতে বাংলার হকি বলতে কিছু নেই। যে রাজ্য এক সময় ভারতীয় হকিকে সমৃদ্ধ করেছে সেই বাংলার আজ কোনও ভূমিকা নেই। যা আছে শুধু জুনিয়র দল। তাঁদের সঙ্গে এমন ব্যবহার হলে তাঁরা তো ভয়েই আর খেলায় আসবেন না।

ঘটনা জুনিয়ার ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপের। জব্বলপুরে সেই টুর্নামেন্টে যোগ দিতে গিয়েছিল বাংলা দলও। প্রথম দুই ম্যাচে বড় ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছিল বাংলা। প্রথম ম্যাচে গুজরাতকে ৪-০ ও দ্বিতীয় ম্যাচে অন্ধ্রপ্রদেশকে ৯-১-এ হারিয়ে দেওয়ার পর পঞ্জাবের কাছে ১-৫-এ হেরে যেতে হয় বাংলাকে। তার পরই জ্বলে ওঠেন বাংলার কোচ আনন্দ কুমার। ছেলেদের শাস্তি দিতে তাঁর তৎপড়তা বেড়ে যায়। জানা যাচ্ছে সেই রাতে তিনি হেরে যাওয়ার জন্য ছেলেদের মারধোরও করেন।

তার পরই নেমে আসে আরও বড় শাস্তির খাড়া। দলের কোচ আ‌নন্দ কুমার নাকি ছেলেদের নির্দেশ দেন শাস্তি স্বরূপ সবাইকে মাথা মুড়িয়ে ফেলতে হবে। জব্বলপুরেই এমনটা হলে জানাজানি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সেখানে করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তা সম্ভব না হলে সেই কোচই নাকি নির্দেশ দেন সকলে বাড়ি ফিরে মাথা মুড়িয়ে ছবি হোয়াটসঅ্যাপ করবেন। না হলে পরের বার আর বাংলা দলে সুযোগ পাবেন না সেই ছেলেরা। যদিও আনন্দ কুমার সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর মতে, হতাশায় ছেলেরা নাকি এমনটা করেছেন।

বিসিসিআই কি ঠিক করছে হার্দিক-লোকেশের সঙ্গে?

যা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দশ দিয়েছে বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশন। হকি ইন্ডিয়া এখনও এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। এই ১৬ জনের দলের একজনই চোখে চোখ রেখে অস্বীকার করেছিলেন এই শাস্তি মেনে নিতে। জব্বলপুরে যখন এই কথা হচ্ছে তখন সে অস্বীকার করায় তাঁকে ঘর থেকেও বের করে বাকিদের সঙ্গে কথাও বলেন কোচ। আর তিনিই কলকাতায় ফিরে ফাঁস করলেন পুরো ঘটনা। গৌতম শর্মা নামে সেই প্লেয়ার জানিয়ে দেন তিনি ন্যাড়া হতে নারাজ। কিন্তু সেই সাহস দেখাতে পারেননি বাকিরা। কলকাতায় ফিরে বাকিরা সকলেই মাথা ন্যাড়া করে ছবি হোয়াটসঅ্যাপ করেন। সেই ছবিই বেরিয়ে পড়ে। তার পর থেকেই শুরু হয়ে আলোচনা।

অনূর্ধ্ব-১৯-এর ছেলেগুলোর আতঙ্ক যেন কিছুতেই কাটছে না। যদিও প্লেয়ারদের অভিযোগ কোচের নির্দেশেই তাঁরা এটা করেছেন। ১৮ জানুয়ারি কলকাতায় ফিরেছে দল। তার পর সকলেই মাথা কামিয়ে ছবি হোয়াটসঅ্যাপ করেন। শুধু গৌতম শর্মা ব্যাতিক্রম। তিনিই সামনে এসেছেন সংবাদ মাধ্যমের। বাকিরা কথা বললেও কেউ নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি। এতটাই ভয় দেখানো হয়েছে তাঁদের।

তদন্ত কতটা কী হবে তা সময়ই বলবে। কিন্তু এর মধ্যেই হকির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কেউ কেউ বলছেন, প্লেয়াররা যদি জব্বলপুরে মাথা কামাতেন তা হলে সহজেই কোচকে দায়ী করা যেত। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর কে কী করছেন তার দায় কোচের উপর কী করে দেওয়া যায়। কিন্তু যখন গোটা টিম এক কথা বলছে তখন তো সেই ১৬ জনের কথাই মেনে নিতে হবে হকি অ্যাসোসিয়েশনকে একজনের কথার বদলে।

ভারতীয় ফুটবলে একটা যুগ ছিল সৈয়দ নইমুদ্দিনের। তাঁর কোচিংয়ে ফুটবলাররা রীতমতো আতঙ্কে থাকতেন। তিনি কখন কী করবেন কী শাস্তি দেবেন রেগে গিয়ে কেউ বুঝতে পারত না। তাঁর আরও একটা বিষয় ছিল, প্লেয়ারদের চুলের নানা স্টাইল এবং বড় চুল একদমই পছন্দ করতেন না তিনি। তাই তাঁর কোচিংয়ে যাঁরাই যতদিন খেলেছে ততদিন চুল ছোট ছোট করে ছেটে রাখতে হত। তা বলে এমন ঘটনা কখনও ভারতীয় ক্রীড়ায় ঘটেছে কিনা জানা নেই।

(খেলার আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)