এটিকে মোহনবাগানের তিন প্রাক্তনী বেঙ্গালুরুর শক্তি

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: শনিবার রাতে কাদের হাতে উঠবে হিরো আইএসএল ২০২২-২৩-এর চ্যাম্পিয়নদের ট্রফি? কারা হাসবে শেষ হাসি? হতাশায় অন্ধকারে ডুববে কোন দল? কাদের সমর্থকেরা বিফল মনোরথে ঘরে ফিরে যাবেন? ফাইনালের দু’দিন আগে যখন এসব নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে, তখন ছোটখাটো অনেকগুলি বিষয় উঠে আসছে ফুটবলপ্রেমীদের আলোচনায়। যেগুলি শনিবারের ফুটবল মহাযুদ্ধে হয়ে উঠতে পারে বড় ফ্যাক্টর।

যেমন বেঙ্গালুরু এফসি-র তিন মূর্তি, যাঁরা এটিকে মোহনবাগানে খেলেছেন গত মরশুম পর্যন্ত। দীর্ঘদিন থেকেছেন স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দোর প্রশিক্ষণে। কাদের কথা বলছি, নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছেন। রয় কৃষ্ণা, সন্দেশ ঝিঙ্গন ও প্রবীর দাস। বিশেষজ্ঞরা অনেকেই বলছেন, যেহেতু গত মরশুমে ফেরান্দোর প্রশিক্ষণে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন সন্দেশরা। তাঁর ভাবনা, কৌশল সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল এঁরা। তাই শনিবার ফাইনালে প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন এই তিনজন।

প্রবীর দাস, (রাইট ব্যাক, রাইট উইঙ্গার)

প্রবীর চলতি লিগে বেঙ্গালুরুর হয়ে মোট ১৬টি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন। তিনটি ম্যাচে তিনি বেঞ্চে ছিলেন। একটিতে স্কোয়াডে ছিলেন না। মাঝখানে তিনটি ম্যাচে তিনি রাইট ব্যাক হিসেবে খেলেন, বাকি সব ম্যাচেই ডানদিকের উইং দিয়ে আক্রমণে ওঠার দায়িত্বই দেওয়া হয় তাঁকে। নক আউট পর্বে সব ম্যাচে পুরো সময়ের জন্য মাঠে ছিলেন তিনি। জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুর ৩-০ জয়ে একটি গোলে তাঁর অ্যাসিস্ট ছিল। দলের আর কোনও গোলে তাঁর প্রত্যক্ষ মদত না থাকলেও গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন বেশ কয়েকটি। মোট ৩০টি ক্রস দিয়েছেন তিনি।

এ বারে সব মিলিয়ে প্রায় ১৯ ঘণ্টা মাঠে ছিলেন প্রবীর। কিন্তু গত মরশুমে হিরো আইএসএলে ৭৯৩ মিনিটের বেশি মাঠে থাকতে পারেননি তিনি। সে বার লিগ পর্বে ১৯টি ম্যাচে তিনি দলে থাকলেও দুটি ম্যাচে বেঞ্চেই বসে থাকতে হয় তাঁকে এবং প্রথম একাদশে ছিলেন মাত্র পাঁচটি ম্যাচে। ১২টি ম্যাচে পরিবর্ত হিসেবে নামেন। সে জন্যই বেশি ম্যাচটাইম পাননি।

এটিকে মোহনবাগানের দায়িত্ব নেওয়ার পর হুয়ান ফেরান্দো প্রথম ম্যাচেই তাঁকে প্রথম এগারোর বাইরে রাখেন। তার পর থেকে সব ম্যাচে তাঁকে খেলালেও মাত্র পাঁচটি ম্যাচে পুরো ৯০ মিনিট খেলান। যে কোনও কারণেই হোক ফেরান্দোর হয়তো মনে হয়, তাঁর ফুটবলের স্টাইলের সঙ্গে প্রবীর খুব একটা মানানসই নয়। তাই পরের মরসুমে তাঁকে ছেড়ে দেন। এ বার লিগ পর্বে ১৩টি ম্যাচে শুরু থেকে খেলেন প্রবীর এবং পরিবর্ত হিসেবে নামেন তিনটিতে। প্লে অফে তিন ম্যাচেই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলেন তিনি। ফেরান্দো তাঁকে কার্যকরী খেলোয়াড় মনে না করলেও বেঙ্গালুরুর কোচ সাইমন গ্রেসনের কাছে তিনি সেই গুরুত্ব অর্জন করে নিতে পেরেছেন। এ বার নিজেকে সেরা প্রমাণ করার সুযোগ শনিবারের ফাইনালেই।

রয় কৃষ্ণা (সেন্টার ফরোয়ার্ড)

প্রবীরকে এটিকে মোহনবাগান এ মরশুমে কার্যকরী খেলোয়াড় মনে না করলেও রয় কৃষ্ণার ক্ষেত্রে তেমনটা মনে করার কোনও কারণ ছিল না। কারণ, গত মরশুমে তিনি হিরো আইএসএলে পাঁচটি গোল করেন ও চারটি করান। প্লে অফেও দুটি গোল ছিল তাঁর। সব মিলিয়ে লিগে সাতটি গোল ও চারটি অ্যাসিস্ট ছিল তাঁর। দুটি সেমিফাইনালেই একটি করে গোল করেন তিনি। এ ছাড়া লিগে কেরালা ব্লাস্টার্স, ইস্টবেঙ্গল, বেঙ্গালুরু এফসি, এফসি গোয়া এবং চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে গোল পান তিনি।

কিন্তু মরশুমের মাঝখানে চোট-আঘাত, অসুস্থতা (কোভিড), ব্যক্তিগত সমস্যা নানা কারণে তিনি সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচে খেলতে পারেননি। যেমন ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ফিরতি ম্যাচে তিনি রিজার্ভ বেঞ্চেই ছিলেন। তার পরের চারটি ম্যাচ তিনি স্কোয়াডেই ছিলেন না। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি অসুস্থ। প্রায় কুড়ি দিন পরে মাঠে ফিরে আসেন রয়। তবে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ১৮ মিনিটের বেশি তাঁকে মাঠে রাখেননি কোচ। ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে দু’বার হলুদ কার্ড দেখে পরের ম্যাচে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে সাসপেন্ড ছিলেন তিনি। পরের ম্যাচেই মাঠে ফিরে চেন্নাইনের বিরুদ্ধে অবশ্য গোল করে দলকে জেতান। তবে ততদিনে কোচের আস্থা হারান। এপ্রিলে এএফসি কাপের বাছাই পর্বের সময় পারিবারিক সমস্যায় দেশে ফিরে যান রয়। এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে অবশ্য তিনটি ম্যাচেই খেলেন। কিন্তু গোল করেন মাত্র একটি, শেষ ম্যাচে মাজিয়া এসআরসি-র বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে দলের ৫-২ জয়ে একটি গোলে সহায়তাও দিয়েছিলেন তিনি। শেষ দিকে তাঁর অনুপস্থিতি, পারিবারিক কারণে এএফসি কাপের বাছাই পর্বে না খেলা, এ সব ক্লাব হয়তো ভাল ভাবে মেনে নেয়নি। তা ছাড়া তাঁর মতো বিশেষজ্ঞ স্ট্রাইকার যে দলে চান না ফেরান্দো, তা তো এই মরশুমেই বুঝিয়ে দেন তিনি। তাঁর সিস্টেমে দলের সবাই প্রয়োজনে ফরোয়ার্ড ও সবাই প্রয়োজনে ডিফেন্ডার। তাই রয়ের মতো জেনুইন স্ট্রাইকারকে দলে আটকে রাখেননি।

এ বারও তাঁর গোলের খরা তেমন কাটেনি। নতুন দলে এসে তাদের জার্সি গায়ে হিরো আইএসএলে লিগ পর্বে পাঁচটি গোল করেন ও পাঁচটি করান। ২৭টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি। গোলের উদ্দেশ্যে ৪৩টি শট নেন। কিন্তু গোল কনভারশন রেট বেশ কম, মাত্র ১২ শতাংশ, যা গতবার ছিল ১৯% ও তার আগেরবার ছিল ২২%। সেবার ১৪টি গোল করেছিলেন রয় এবং দলকে ফাইনালেও তুলেছিলেন। কিন্তু ফুটবল এমনই। পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা দেখাতে না পারলে দীর্ঘদিন সাফল্যের সঙ্গে খেলা ক্লাবেও ব্রাত্য হয়ে যেতে হয় ফুটবলারদের।

এই মরশুমে ফিজিয়ান তারকা ধারাবাহিক ভাবে সুযোগ পেলেও তার প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। লিগের দ্বিতীয় ম্যাচে চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথম গোল করার পর টানা দশটি ম্যাচে গোল ছিল না তাঁর। ১৪ অক্টোবরের পরে লিগে তাঁর দ্বিতীয় গোলটি আসে ১৪ জানুয়ারি, ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে। তারপর থেকে ছ’টি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই গোল পেয়েছেন রয় এবং মাঝে যে ম্যাচে গোল পাননি, সেই ম্যাচে অ্যাসিস্টও করেন তিনি। তবে প্লে অফে এখন পর্যন্ত কোনও গোল পাননি তিনি। ফাইনালে কোনও গোল করতে পারেন কি না, সেটাই দেখার।

সন্দেশ ঝিঙ্গন (সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার)

সন্দেশ ঝিঙ্গন এ বার বেঙ্গালুরু এফসি-র গোলের সামনে এক বড় ভরসা। যদিও এ বার কম গোল খায়নি তাঁর দল, এখন পর্যন্ত ২৫টি। তবে সন্দেশের চেষ্টায় কোনও খামতি ছিল না। ৩৭টি ইন্টারসেপশন করেছেন তিনি। ৪২টি ট্যাকল করেছেন। ১৫৫টি ক্লিয়ারেন্স ও ৩৩টি ব্লকও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।

১৩ মাস মাঠের বাইরে থাকার পর ২০২০-২১ মরশুমের আগে এটিকে মোহনবাগানের চুক্তিতে সই করেন সন্দেশ। দলের নেতৃত্বের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। সেই মরশুমে এটিকে মোহনবাগানের হিরো আইএসএল ফাইনালে পৌঁছনোর অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই পঞ্জাবী ডিফেন্ডারের। ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন তাঁকে ২০২০-২১ মরশুমের বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারও দেয়।

কিন্তু ২০২০-র অগাস্টে এটিকে মোহনবাগান মলদ্বীপে এএফসি কাপে খেলতে যাওয়ার আগেই সন্দেশ ক্লাবকে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ক্রোয়েশিয়ার ক্লাব ফুটবলে খেলতে যাচ্ছেন, তাই সেই মরশুমে এটিকে মোহনবাগানের হয়ে খেলতে পারবেন না। তাতে ক্লাব আপত্তি করেনি। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার ক্লাব এইচএনকে সিবেনিকে তাঁর সময় খুব একটা ভাল কাটেনি। অনুশীলনে দ্বিতীয় দিনই চোট পান তিনি।  পরের তিন মাসে আরও তিনবার তাঁর পায়ের পেশীতে চোট লাগে। তাই ওই ক্লাবের হয়ে মাঠে নামা হয়নি তাঁর। এর মধ্যেই কলকাতার ক্লাব তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাই দেশে ফিরে আসারই সিদ্ধান্ত নেন সন্দেশ। তবে চোট সারিয়ে সারা মরশুমে ন’টির বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি। শোনা যাচ্ছিল, এটিকে মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দোর পরিকল্পনায় তিনি নেই। তাই দুই বিদেশি ডিফেন্ডার ব্রেন্ডান হ্যামিল ও ফ্লোরেন্তিন পোগবাকে আনেন তিনি। সেই কারণেই চুক্তির মেয়াদ শেষে তাঁকে ছেড়ে দেয় সবুজ-মেরুন বাহিনী।

(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle