ফাইনালে এটিকে, চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে আর মাত্র এক ম্যাচ দূরে হাবাসের দল

ফাইনালে এটিকেফাইনালে এটিকে

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: ফাইনালে এটিকে এই নিয়ে তৃতীয়বার। এক গোলে পিছিয়ে পড়েও অসাধারণ ভাবে জয়ে ফিরল এটিকে এফসি। দুর্দান্ত ও সাহসী ফুটবল খেলে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ৩-১ গোলে জিতল কলকাতার দল। মোট গোলের বিচারে গতবারের চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু এফসি-কে ৩-২-এ হারিয়ে হিরো আইএসএল ২০১৯-২০-র ফাইনালে উঠে পড়ল তারা। এই নিয়ে তৃতীয়বার হিরো আইএসএল ফাইনালে উঠল এটিকে। এর আগে যে দু’বার ফাইনালে উঠেছে তারা, সেই দু’বারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এ বার তাদের সামনে চেন্নাইন এফসি। তারাও দু’বার ফাইনালে উঠে দু’বারই জিতেছে। অর্থাৎ আগামী শনিবার হিরো আইএসএল ফাইনালে সমানে সমানে টক্কর হতে চলেছে।

রবিবার কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ৫০ হাজারেরও বেশি সমর্থকের সামনে দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় এটিকে এফসি। আশিক কুরুনিয়ানের গোলে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই পিছিয়ে পড়ার পরে প্রথমার্ধেই গোল শোধ করেন রয় কৃষ্ণা ও দ্বিতীয়ার্ধে দু’টি গোল করে দলকে ফাইনালে পৌঁছে দেন ডেভিড উইলিয়ামস। এর মধ্যে একটি ছিল পেনাল্টি থেকে। অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখান বাংলার তারকা উইং ব্যাক প্রবীর দাস এবং একাধিকবার অভাবনীয় ভাবে গোল বাঁচিয়ে দলকে হারের হাত থেকে রক্ষা করেন গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্য। দুই গোলদাতার সঙ্গে তাই এ দিন এটিকে-র জয়ের নায়ক এই দু’জনও।


(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

শুরুতেই গোল করার কথা বলেছিলেন এটিকে এফসি-র কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। কিন্তু উল্টে বেঙ্গালুরু এফসি-ই এ দিন ম্যাচের পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোল করে অনেক এগিয়ে যায়। মাঝমাঠ থেকে বল ধরে ফ্রান্সিসকো বোর্জেস দেন ডানদিকের উইং দিয়ে ওঠা আশিক কুরুনিয়ানকে। ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে যাওয়া আশিককে বাধা দিয়েও ব্যর্থ হন সুমিত রাঠি। মাইকেল সুসাইরাজ ও তাঁর ভাই রেজিন, দু’জনেই তাঁকে তাড়া করেও আটকাতে পারেননি। শেষে গোলকিপার অরিন্দমের মুখোমুখি হন আশিক এবং নিখুঁত স্লাইডে তাঁকেও পরাস্তও করেন।

আশিক এ দিন ডান দিক দিয়ে আরও কয়েকবার আক্রমণে ওঠেন। কিন্তু বারবার তাঁকে আটকাতে ব্যর্থ হন এটিকে ডিফেন্ডাররা। মাইকেল সুসাইরাজ বারবার বাঁ দিক দিয়ে বল নিয়ে উঠে যাচ্ছিলেন বলেও তাঁর পক্ষে ডিফেন্সের বাঁ দিকে ঠিকমতো পাহাড়া দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। আসলে বেঙ্গালুরু প্রথম গোল দিয়ে দেওয়ার পরে নিজেদের গোলের সামনে প্রত্যাশিত ভাবেই দেওয়াল তুলে দেয়। যতবারই আক্রমণে উঠছিল এটিকে, ততবারই পাঁচ-ছজন মিলে আটকে দিচ্ছিলেন তাঁদের।

এই অবস্থায় সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ছিল ভাল উইং প্লে-র। যেটা বেশির ভাগই করছিলেন প্রবীর দাস। ডান দিক থেকে বারবার বল নিয়ে উঠে ক্রস বাড়াচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু গোলের সামনে পজিশন ঠিক রাখতে না পারায় এবং বিএফসি ডিফেন্ডারদের তৎপরতায় সেই চেষ্টাগুলো ব্যর্থ হচ্ছিল। এমনই এক মুভ থেকে গোলটা করে ফেলে এটিকে।

৩০ মিনিটের মাথায় ডান দিক দিয়ে ওঠা প্রবীরের ক্রসে পা ছুঁইয়ে গোলে বল ঠেলে দেন রয় কৃষ্ণা, যাঁকে এ বার আটকানো সম্ভব হয়নি বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডারদের পক্ষে। প্রথম পোস্টের দিকে দ্রুত ছুটে যাওয়া কৃষ্ণা শরীরের এক মোচড়ে লাইন বদলে বাঁ পা দিয়ে উড়ন্ত বলে পা লাগিয়ে অসাধারণ গোলটি করেন। এই নিয়ে ১৫ নম্বর গোল করে তিনি সোনার বুটের দৌড়ে ফের এক নম্বরে চলে এলেন।

এই গোলেরই সাত মিনিট আগে একই ভাবে বক্সের মধ্যে কৃষ্ণার পাস থেকে গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন উইলিয়ামস। তিনি গোলে শট নিলেও গুরপ্রীত সিং সান্ধু তা বাঁচিয়ে দেন। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ মিনিটেও এডু গার্সিয়া অসাধারণ একটা শট মেরেছিলেন গোলের দিকে। কিন্তু গোলের সামনে বল পড়ে তা লাইন বদলে গোলের বাইরে চলে যায়। সারা অর্ধেই চাপ বেঙ্গালুরুর ডিফেন্সকে চাপে রাখে এটিকে। কিন্তু নিশ্ছিদ্র রক্ষণ দিয়ে বারবার তাদের আটকে দেয় গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। ১-১ অবস্থায় বিশ্রামে যান দুই দলের ফুটবলাররা।

আরও অন্তত দুই গোল দেওয়ার কঠিন লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে নামলেও শুরুতে কলকাতার দলকে কিন্তু ততটা তৎপর হতে দেখা যায়নি। বেশ শ্লথ গতিতে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে এটিকে এফসি। বিএফসি তাদের প্রথম প্ল্যানই ধরে রেখেছিল। গোলের সামনে যত পারো লোক বাড়িয়ে রাখো। আশিক কুরুনিয়ান এ বার বাঁ দিকের উইং বরাবর আক্রমণে উঠছিলেন। কিন্তু ওদিকে প্রীতম কোটাল থাকায় তাঁকে বেশি বাড়তে দিচ্ছিলেন না। অপ্রত্যাশিত ভাবে এ দিন সুনীল ছেত্রী ছিলেন খুবই ম্লান। তাঁকে এ দিন সে ভাবে খুঁজেই পাওয়া যায়নি প্রথমার্ধে।

৬০ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ডেভিড উইলিয়ামসকে অন্যায় ভাবে বাধা দেন সুরেশ সিং এবং সেই পেনাল্টি থেকে গোল করেন ডেভিড নিজেই। গুরপ্রীত বাঁদিকে ঝাঁপালেও ডানদিক দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। এটিকে ২-১ গোলে এগিয়ে গেলেও ফাইনালে উঠতে তখনও তাদের আরও এক গোল দরকার। প্রচণ্ড চাপের মধ্যে এই সাফল্য পেয়ে যাওয়ায় বেশ কিছুটা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেন উইলিয়ামস।

তাঁর গোলের পরেই আশিক কুরুনিয়ানকে তুলে উদান্ত সিংকে নামান বেঙ্গালুরু কোচ কার্ল কুয়াদ্রাত। গোল খাওয়ার পরে সুনীল ছেত্রীও কিছুটা তৎপর হয়ে ওঠেন। তাঁর নিখুঁত ফ্রি কিক থেকে দিমাস দেলগাদোর চমৎকার ব্যাাক হিল গোলের বাইরে চলে যায়, না হলে বিপদে পড়ত এটিকে।

৭৪ মিনিটে রেজিনের জায়গায় জয়েশ রানে ও হাভি হার্নান্ডেজের জায়গায় ম্যান্ডি সোসা পেনাকে নামান হাবাস। তার পরেই অবশ্য ওয়ান টু ওয়ান অবস্থায় গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন বিএফসি ফরোয়ার্ড কেভন ফ্রেটার। কিন্তু অরিন্দম অসাধারণ তৎপরতায় তা পা দিয়ে বাঁচিয়ে দেন। ৭০ মিনিটের পর থেকে বেঙ্গালুরুর অর্ধেই বেশিরভাগ সময়ে খেলা হচ্ছিল।

৭৮ মিনিটের মাথায় আসে সেই চির আকাঙ্খিত গোলটি আসে প্রবীর ও উইলিয়ামসের যুগলবন্দীতে। ডানদিক থেকে প্রবীরের নিখুঁত সেন্টারে জোরালো হেড করে গোল করেন উইলিয়ামস। বক্সের মাঝখানে পুরোপুরি অরক্ষিত অবস্থায় ছিলেন উইলিয়ামস। গোলের সামনে ছিলেন কৃষ্ণা। কিন্তু উইলিয়ামসকে অরক্ষিত অবস্থায় দেখেই তাঁর উদ্দেশে সেন্টার করেন প্রবীর।

গোল খাওয়ার পরে মরিয়া হয়ে ওঠে বেঙ্গালুরু। ৮৭ মিনিটে আরও একটি দুর্দান্ত সেভ করে দলকে বাঁচান অরিন্দম। দিমাসের ফ্রি কিক থেকে হুয়ানানের শরীরে লেগে বল ঢুকতে যাচ্ছিল গোলে। কিন্তু অরিন্দম তা ডাইভ দিয়ে দুর্দান্ত ভাবে বাঁচিয়ে দেন। শেষ দিকে পাওয়া কর্নার থেকে গোল পেতে এটিকে-র বক্সে উঠে আসেন বিএফসি গোলকিপার গুরপ্রীতও। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি কেউই। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারিতে জনবিস্ফোরণ ঘটে। দোল ও হোলির আগের রাতেই শুরু হয়ে যায় আবীর খেলা।

(খবর আইএসএল ওয়েবসাইট)


এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়তে ক্লিক করুন