এএফসি কাপ বাছাই পর্বে মুখোমুখি মোহনবাগান-হায়দরাবাদ

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগে শিল্ড জেতা হয়নি কোনও দলেরই। হিরো সুপার কাপের খেতাবও জিততে পারেনি কোনও পক্ষ। এটিকে মোহনবাগান সদ্য শেষ হওয়া ২০২২-২৩ মরশুমের হিরো আইএসএল নক আউট খেতাব জিতেছে এবং হায়দরাবাদ এফসি এই একই খেতাব জিতেছিল তার আগের মরশুমে, ২০২১-২২-এ। এই দুই সাফল্যের সুবাদেই বুধবার সন্ধ্যায় কোঝিকোড়েতে মুখোমুখি হতে চলেছে দুই দল। উদ্দেশ্য, আগামী এএফসি কাপের বাছাই পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ অর্জন। যারা জিতবে, তারাই এই সুযোগ পাবে।

গত ফিফা বিশ্বকাপের জন্য এ বারের এএফসি ক্লাব মরশুম পিছিয়ে যাওয়ায় ভারতে গত মরশুম ও এ মরশুমে সফল ক্লাবগুলিকে প্লে-অফ খেলে মহাদেশীয় স্তরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে হচ্ছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যেমন জামশেদপুর এফসি-কে হারিয়ে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে এ বারের হিরো আইএসএলের লিগশিল্ড জয়ী মুম্বই সিটি এফসি।

এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে হিরো সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন ওডিশা এফসি প্লে অফে গত মরশুমের হিরো আই লিগজয়ী গোকুলাম কেরালা এফসি-কে হারিয়ে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে খেলার যোগ্যতা পেয়েছে। এ বার এএফসি কাপের বাছাই পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে কারা, তার উত্তর পাওয়া যাবে বুধবার সন্ধ্যায় এটিকে মোহনবাগান ও হায়দরাবাদ এফসি-র দ্বৈরথের পর।

হিরো আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হলেও এটিকে মোহনবাগান সুপার কাপে সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি। জামশেদপুর এফসি ও এফসি গোয়ার কাছে অপ্রত্যাশিত হার স্বীকার করে নিয়ে গ্রুপ লিগ থেকেই ছিটকে যায় তারা। অন্যদিকে, ধারাবাহিকতার অভাবে হিরো আইএসএল সেমিফাইনালিস্ট হায়দরাবাদ এফসি-ও সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি।

তবে দুই দলের কাছেই এএফসি কাপের বাছাই পর্বে জায়গা পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মঙ্গলবার এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো এই ম্যাচ নিয়ে বলেন, “আন্তর্জাতিক ফুটবলে অংশ নিতে পারাটা শুধু যে খেলোয়াড়দের কাছে গর্বের, তা নয় ক্লাবের কাছেও গর্বের ব্যাপার। এই স্তরে খেলে প্রচুর উন্নতি করা যায়। তাই আমাদের কাছে এই ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ”।

গত বছর সেপ্টেম্বরে এএফসি কাপের ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে কুয়ালালামপুর এফসি-র কাছে ১-৩-এ হেরেছিল এটিকে মোহনবাগান। ৯০ মিনিট পর্যন্ত এক গোলে পিছিয়ে থাকার পর ফারদিন আলি মোল্লার গোলে সমতা আনে তারা। কিন্তু স্টপেজ টাইমে পরপর দু’গোল খেয়ে ম্যাচ হেরে যায়।

সেই হার থেকে পাওয়া শিক্ষা যে এ বার কাজে লাগবে, তা স্বীকার করে নিয়ে ফেরান্দো বলেন, “এই স্তরের ফুটবলে খুঁটিনাটি ব্যাপারে কিছু ভুল হলেই ম্যাচ হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যায়। গতবার কুয়ালালামপুরে আমরা সে জন্যই শেষ মিনিটে ম্যাচ হেরে যাই। তাই ৯০ মিনিটের একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মনসংযোগ বজায় রাখাটা খুব জরুরি। পেশাদার হিসেবে নিজেদের সেরাটা দেওয়া খুবই জরুরি। কারণ, এই সুযোগ বারবার আসবে কি না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই”।

গত মরশুমে চারবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। দু’পক্ষই একটি করে ম্যাচ জিতেছে এবং দু’বার ড্র হয়েছে। দ্বিতীয় ড্রয়ের পর পেনাল্টি শুট আউটে জিতে হিরো আইএসএল ফাইনালে ওঠে সবুজ-মেরুন বাহিনী। সব মিলিয়ে দশ বারের মুখোমুখিতে কলকাতার দল জিতেছে চারবার ও দু’বার জিতেছে হায়দরাবাদ এফসি এবং অমীমাংসিত থেকেছে চারবার। ২১-২২ মরশুমে এটিকে মোহনবাগানকে ছিটকে দিয়ে হিরো আইএসএল ফাইনালে উঠেছিল হায়দরাবাদ। ২২-২৩-এ হায়দরাবাদকে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে দিয়ে তার মধুর প্রতিশোধ নিয়ে নেয় এটিকে মোহনবাগান। অর্থাৎ, বোঝাই যাচ্ছে, ফুটবল মাঠে দুই দলের সম্পর্ক বেশ অম্ল-মধুর।

এ বারও সে রকমই লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন এটিকে মোহনবাগান কোচ। প্রতিপক্ষ সম্পর্কে তিনি বলেন, “গত তিন মরশুম ধরেই হায়দরাবাদ যথেষ্ট ভাল জায়গায় থাকছে। সেরা দুই-তিনের মধ্যেই থাকে ওরা। গত মরশুমে এক নম্বর জায়গায় থাকার জন্য মুম্বইয়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে। ওরা খুব সঙ্ঘবদ্ধ ও শক্তিশালী দল। এই ম্যাচটা আমাদের কাছে তাই বেশ কঠিন হবে”।

অন্যদিকে, হায়দরাবাদ এফসি-র স্প্যানিশ কোচ মানোলো মার্কেজও প্রতিপক্ষ নিয়ে বেশ সচেতন। তিনি বলেন, “ভারতের দুই সেরা রক্ষণাত্মক দলের লড়াই এই ম্যাচে। দুই দলই একে অপরকে খুব ভাল করে জানে। ওরা ওদের স্টাইলে সামান্য পরিবর্তন এনেছে এবং ওদের রক্ষণ আরও সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছে। আশা করি, দুই দলের খেলোয়াড়রাই যথেষ্ট ভাল প্রস্তুতি নিতে পেরেছে এই ম্যাচের জন্য। দুই দলের কাছেই ম্যাচটা বেশ কঠিন হবে”।

দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ও হুগো বুমৌস একসঙ্গে ভাল খেললে এটিকে মোহনবাগানকে আটকানো যে বেশ কঠিন হয়, তা এই মরশুমে বারবার দেখা গিয়েছে। এ ছাড়া দু’দিক দিয়ে আশিক কুরুনিয়ান, মনবীর সিং বা লিস্টন কোলাসো ও মনবীরের উইঙ্গার জুটি যে প্রতিপক্ষের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাব ও সুযোগ হাতছাড়া করা তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।

হ্য়দরাবাদের চিন্তা হল দুই প্রধান গোলকিপারের অভাব। লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমণি সুস্থ নেই ও গুরমিত সিং সাসপেন্ড। ফলে দলের শেষ রক্ষণ এই ম্যাচে কতটা সবল থাকতে পারবে, সেটাই আকর্ষণীয় বিষয়। তার ওপর যদি এটিকে মোহনবাগানের আক্রমণ বিভাগ নিজেদের সেরা ছন্দে থাকে, তা হলে নিজামের শহরের দল এই ম্যাচে বেশ চাপে পড়ে যেতে পারে।

কিক অফ- ৩ মে, সন্ধ্যা ৭.০০, ইএমএস কর্পোরেশন স্টেডিয়াম, কোঝিকোড়ে

সম্প্রচার- সোনি স্পোর্টস নেটওয়ার্ক ও ফ্যানকোড

 (লেখা ও ছবি— আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle