হায়দরাবাদকে হারিয়ে এএফসি কাপে এটিকে মোহনবাগান

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: গতবারের মতো এ বারও এএফসি কাপে খেলার ছাড়পত্র অর্জন করে নিল হিরো আইএসএল ট্রফি চ্যাম্পিয়ন এটিকে মোহনবাগান। বুধবার কোঝিকোড়েতে তারা গতবারের হিরো আইএসএল ট্রফি জয়ী হায়দরাবাদ এফসি-কে হারিয়ে এই সন্মান অর্জন করে মরশুম শেষ করল। নির্ধারিত সময়ে ফল ১-১ থাকার পরে পেনাল্টি শুট আউটে ৩-১-এ জেতে সবুজ-মেরুন বাহিনী। এই নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার এএফসি কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব।

বুধবার ইএমএস কর্পোরেশন স্টেডিয়ামে মরশুমের পঞ্চম মুখোমুখিতে প্রথমার্ধে দু’পক্ষই গোল পায়। ২০ মিনিটের মাথায় দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ও ৪৪ মিনিটে জোয়েল চিয়ানিজ গোল করেন। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে কোনও গোল না হওয়ায় ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়। মরশুমের শেষ ম্যাচে ক্লান্ত ফুটবলাররা পরের আধ ঘণ্টাতেও কোনও গোল করতে পারেননি। ফলে হিরো আইএসএল সেমিফাইনালের মতো পেনাল্টি শুট আউটেই ম্যাচের নিষ্পত্তি হয়।

হায়দরাবাদের গোলকিপার অনুজ কুমার কার্ল ম্যাকহিউয়ের শট আটকে দিলেও দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, লিস্টন কোলাসো ও শেষে কিয়ান নাসিরির গোল তাদের এএফসি কাপের প্রবেশপত্র পাইয়ে দেয়। প্রতিপক্ষের তিন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় সাহিল তাভোরা, জোয়েল চিয়ানিজ এবং ওদেই ওনাইন্দিয়া গোলের বাইরে বল পাঠানোয় সবুজ-মেরুন বাহিনীর কাজ অনেক সোজা হয়ে যায়। পঞ্চম শটটি নিতে যাওয়ার আগেই তাদের জয় সুনিশ্চিত হয়ে যায়। হায়দরাবাদের শুধু জোয়াও ভিক্টর এই পর্বে গোল পান।

এএফসি কাপের দক্ষিণ এশীয় বাছাই পর্বে এটিকে মোহনবাগান যোগ দেবে মলদ্বীপের ক্লাব ঈগলস, নেপালের মাছিন্দ্রা এফসি, শ্রীলঙ্কার ব্লু স্টার, ভুটানের পারো এফসি ও পাকিস্তানের ওয়াপডা এফসি-র সঙ্গে। এএফসি-র সূচী অনুযায়ী তাদের অগাস্টে প্রাথমিক পর্বের ম্যাচ খেলতে হবে। প্রতিপক্ষ কারা, তা পরে জানাবে এশীয় ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা এএফসি।

হিরো সুপার কাপের শেষ ম্যাচের দলে চারটি পরিবর্তন করে এ দিন প্রথম এগারো নামান এটিকে মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দো। প্রীতম কোটাল, ব্রেন্ডান হ্যামিল, হুগো বুমৌস ও মনবীর সিং প্রথম দলে ফিরে আসেন। অন্য দিকে হায়দরাবাদের দুই তারকা স্ট্রাইকার বার্থোলোমিউ ওগবেচে ও হাভিয়ে সিভেরিওকে এ দিন প্রখম এগারোয় রাখেননি কোচ মানোলো মার্কেজ, যাঁর এ দিন হায়দরাবাদের হয়ে শেষ ম্যাচ ছিল।

শুরুর দশ মিনিটে হায়দরাবাদ আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করলেও তার পর থেকে পাল্টা চাপ বাড়াতে শুরু করে হিরো আইএসএলের ট্রফি জয়ীরা। হুগো বুমৌস ও দিমিত্রিয়স পেট্রাটস এ দিন শুরু থেকেই তৎপর ছিলেন এবং তার ফল একেবারে হাতেনাতেই পায় সবুজ-মেরুন শিবির। ২০ মিনিটের মাথায় বুমৌসের সহায়তায় গোল পেয়ে যান পেট্রাটস।

বুমৌস ডানদিক দিয়ে বল নিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে বাঁ দিকে অস্ট্রেলীয় সতীর্থকে গোলের নিখুঁত স্কোয়ার পাস বাড়ান। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি এ মরশুমে এটিকে মোহনবাগানের সর্বোচ্চ গোলদাতা। হাল্কা ও মাপা শটে জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি (১-০)। গোলের মিনিট চারেক পরেই হায়দরাবাদের ডিফেন্ডার চিঙলেনসানা সিং ও পেট্রাটসের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। যার জেরে দু’জনকেই হলুদ কার্ড দেখতে হয়।

গোল খাওয়ার পর তা শোধ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে নিজামের শহরের দল। বোরহা হেরেরা, ইয়াসির মহম্মদ, জোয়াও ভিক্টর, জোয়েল চিয়ানিজরা গোলের সুযোগও তৈরি করেন। কিন্তু সবুজ-মেরুন রক্ষণ ও গোলকিপারের তৎপরতায় সাফল্য পাননি তাঁরা। ৪২ মিনিটের মাথায় ইয়াসিরের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। তবে প্রথমার্ধের একেবারে শেষে, ৪৪ মিনিটে চিয়ানিজের গোলে সমতা এনে ফেলে হলুদ-বাহিনী। বক্সের মধ্যে বোরহার ব্যাক-মাইনাস পেয়ে যখন গোলে শট নেন চিয়ানিজ, তখন তিনি সম্পুর্ণ অরক্ষিত ছিলেন (১-১)।

তার আগের  মিনিটেই চিয়ানিজ গোলে শট নিয়েছিলেন, যা আটকে দেন বিশাল। তা সত্ত্বেও তাঁকে পাহাড়ায় না রাখার মাশুল দিতে হয় প্রীতম কোটালদের। প্রথমার্ধে মোট দশটি শট নেয় হায়দরাবাদ, যার মধ্যে তিনটি ছিল গোলমুখী। এটিকে মোহনবাগানের মোট দুটি শটের মধ্যে একটি ছিল গোলে। এই পরিসংখ্যানেই আন্দাজ করা যায় প্রথম ৪৫ মিনিটে আক্রমণে আধিপত্য ছিল হিরো আইএসএল সেমিফাইনালিস্টদেরই।

দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলের মধ্যে সেই খেলা দেখা যায়, যা এ মরশুমে গত চার ম্যাচে দেখা গিয়েছিল। অযথা ঝুঁকি না নিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় থেকে প্রতি আক্রমণে ওঠা। আক্রমণের প্রবণতায় অবশ্য হায়দরাবাদই এগিয়ে ছিল। ১২০ মিনিটের ওপেন প্লে-তে তারা মোট ১৯টি শট নেয়, যার মধ্যে চারটি ছিল লক্ষ্যে। যার ফলে এটিকে মোহনবাগানের রক্ষণ কিছুটা বেশিই চাপে পড়ে যায়। এই সময়ে কার্ল ম্যাকহিউকেও নেমে এসে ডিফেন্ডারের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। ৫৯ মিনিটে চিয়ানিজের কোণাকুনি শট বিশাল ডাইভ দিয়ে না বাঁচালে হয়তো এগিয়ে যেত হায়দরাবাদ।

আক্রমণ বিভাগকে তরতাজা করে তোলার জন্য ৬৭ মিনিটের মাথায় বুমৌসের জায়গায় ফেদরিকো গায়েগোকে নামান ফেরান্দো। ৭২ মিনিটে হ্যামিলের জায়গায় নামেন স্লাভকো দামিয়ানোভিচ। হায়দরাবাদও আক্রমণে আরও গতি আনার উদ্দেশ্যে ৮০ মিনিটের মাথায় বোরহাকে তুলে তুরুণ আব্দুল রাবিকে নামায়। তবে কোনও পরিবর্তনেই খেলায় খুব একটা পরিবর্তন দেখা যায়নি। বরং হায়দরাবাদ তাদের আক্রমণের গতি বজায় রাখে। ৮২ মিনিটের মাথায় চিয়ানিজের স্কোয়ার পাস গোললাইনের সামনে থেকে ক্লিয়ার করেন শুভাশিস বোস। না হলে বিপদে পড়ত তাঁর দল।

নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ছ’মিনিট আগে আশিকের জায়গায় লিস্টন কোলাসোকে নামায় সবুজ-মেরুন শিবির। ম্যাচের শেষ দিকে গোলের আশায় দুই দলই ক্রমশ তীব্রতা বাড়াতে শুরু করে। ৮৬ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে গায়েগোর কোণাকুনি গোলে শট কোনও রকমে আটকে দেন হায়দরাবাদের গোলকিপার অনুজ কুমার। ৮৮ মিনিটের মাথায় গ্ল্যান মার্টিন্সের দূরপাল্লার শট গোলকিপারের সামনে গিয়ে পড়ে।

নির্ধারিত সময়ের শেষ দশ মিনিট বল দখল বাড়িয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন পেট্রাটসরা। কিন্তু হায়দরাবাদের দুর্ভেদ্য রক্ষণে চিড় ধরানো তাদের পক্ষে বেশ কঠিন হয়ে ওঠে। স্টপেজ টাইমে অবশ্য চরম বিপদের সন্মুখীন হয় সবুজ-মেরুন বাহিনী, যখন বক্সের মধ্যে থেকে নেওয়া চিয়ানিজের গোলমুখী শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়।

৯০ মিনিটের খেলা শেষ হওয়ার পর মাত্রাতিরিক্ত তর্ক করার জন্য হায়দরাবাদের কোচ মানোলো মার্কেজকে লাল কার্ড দেখান রেফারি ভেঙ্কটেশ। ক্লাবের হয়ে কোচ হিসেবে এটাই ছিল মার্কেজের শেষ ম্যাচ। কিন্তু শেষটা একেবারেই ভাল হল না তাঁর। হায়দরাবাদ কোচকে লাল কার্ড দেখানোর পরে অতিরিক্ত সময়ের পাঁচ মিনিটের মাথায় পায়ের পেশীতে টান ধরায় মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন রেফারি নিজেও। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব নেন চতুর্থ রেফারি।

অতিরিক্ত সময়ে দুই দলের ফুটবলারদেরই ক্লান্তির ছাপ পড়ে তাদের পারফরম্যান্সে। এই সময়ে মনবীরকে তুলে নেন ফেরান্দো এবং নামান কিয়ান নাসিরিকে। কোনও দলের মধ্যেই সে রকম মরিয়া চেষ্টা দেখা যায়নি এই আধ ঘণ্টায়। অতিরিক্ত সময় শেষ হওয়ার ছ’মিনিট আগে বল নিয়ে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে কোলাসো গোলের উদ্দেশ্যে শট নেন বটে, কিন্তু তা বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ টাইব্রেকারেই গড়ায়।

হিরো আইএসএলে দু-দু’বার পেনাল্টি শুট আউটে জেতা এটিকে মোহনবাগান মানসিক ভাবে এগিয়ে থেকেই টাই ব্রেকার শুরু করে। তবে হায়দরাবাদের তিন ফুটবলার বল গোলে রাখতে না পারায় এই লড়াইয়ে জিততে অসুবিধা হয়নি সবুজ-মেরুন বাহিনীর।

মরশুমের শেষ ম্যাচ জেতার পর এটিকে মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দো বলেন, “কঠিন ম্যাচ ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে আরও কঠিন হয় লড়াই। মরশুমের একেবারে শেষে এই ম্যাচ সহজ হওয়ার কথাও নয়। দলে চোট-আঘাত, অসুস্থতা ছিল। সে সব নিয়েই মাঠে নামতে হয়েছে আমাদের। আবেগকে সরিয়ে রেখে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরীক্ষা দিতে হয়েছে। আমাদের ক্লাবের কাছে এই সাফল্য স্বাভাবিক ব্যাপার। আরও এগোতে হবে। নিজেদের ভুল শোধরাতে হবে। পেনাল্টি শুট আউটে জেতা পছন্দ করি না আমি। তবে এটা ফুটবলের অঙ্গ। আমাদের ছেলেরা অবশ্য জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল”।

এটিকে মোহনবাগান দল: বিশাল কয়েথ (গোল), প্রীতম কোটাল (অধি), ব্রেন্ডান হ্যামিল (স্লাভকো দামিয়ানোভিচ), শুভাশিস বোস, কার্ল ম্যাকহিউ, লালরিনলিয়ানা হ্নামতে, আশিক কুরুনিয়ান (লিস্টন কোলাসো), হুগো বুমৌস (ফেদরিকো গায়েগো), গ্ল্যান মার্টিন্স, দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, মনবীর সিং (কিয়ান নাসিরি)।

 (লেখা ও ছবি— আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle