মোহনবাগান নির্বাচন: তার আগে অঞ্জন মিত্রর চমককে কুর্নিশ

মোহনবাগান নির্বাচনএই দৃশ্য কী আর দেখা যাবে মোহনবাগান ক্লাবে?

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: মোহনবাগান নির্বাচন আগামী ২৮ অক্টোবর। তার আগে বুধবার সবাইকে চমকে দিয়ে মনোনয়ন তুলে নিলেন ক্লাব সচিব অঞ্জন মিত্র। কারণ হিসেবে বুঝিয়ে গেলেন বন্ধুত্বকে এগিয়ে রাখতেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু, এত দিন এটা মনে আসেনি কেন?

সেই কবেকার বন্ধুত্ব কখন যেন শত্রুতায় পরিণত হল! বাইরে থেকে টেরই পাওয়া যায়নি। ক্ষমতার লড়াই যে সব ভুলিয়ে দেয় বোঝা যায় মোহনবাগানের অন্দরের এই কলহ দেখলে। বোঝা যায় কী ভাবে এক-আত্মা, এক-প্রাণ হয়ে কলকাতা ময়দান কাঁপানো টুটু-অঞ্জন জুটি ভরা সভায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ে মেতে ওঠে। সঙ্গে কাদা ছোড়াছুড়ি।

সবটাই মশাই আসলে চেয়ারের মোহ। ক্ষমতার আস্ফালন যে বন্ধ হয়ে যাবে ওই ক্লাবটা নামের পাশে না থাকলে। কে চিনবে মোহনবাগান না থাকলে? মনস্তত্ত্বের গভীরে গেলে এই একটাই উপসংহার বেরিয়ে আসবে। যদিও মহান ব্যক্তিত্বরা তা স্বীকার করবেন না জানি। তবুও বলতে দ্বিধা নেই ক্লাবের শীর্ষকর্তাদের এই লড়াই ৮ বছর পর পাওয়া কলকাতা লিগের গুরুত্বকেই উধাও করে দিয়েছে। আর কিনা শেষ পর্যন্ত এসে এই সিদ্ধান্ত নিলেন অঞ্জনবাবু।

স্বপ্ন ভাঙল বিশ্বকাপের 

 যাঁরা আপনার জন্য টুটুগোষ্ঠীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছিলেন তাঁদের কী হবে? যখন আপনাদের অন্তরকলহ সামনে চলে এল সেই সময় আফসোস করে অঞ্জন মিত্র এক দিন বলছিলেন, ‘‘এই দেবাশিসকে হাতে ধরে নিয়ে এসেছিলাম এক দিন মোহনবাগান ক্লাবে। সবাই আমার হাত ধরে এসেছে। আর আজ ওরাই আমার সঙ্গে এই ব্যবহার করছে! ভাবতে খারাপ লাগছে।’’ শুনে আমারও যে একটু খারাপ লেগেছে তা স্বীকার করতে অসুবিধে নেই। মনে হয়েছিল সত্যিই তো। কিন্তু পর ক্ষণেই মনে হয়েছিল, চূড়ান্ত অসুস্থ শরীর নিয়ে যে মানুষটা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ফিরে এসেছেন তিনি কেন এই বয়সে এসেও ক্লাব চেয়ারের মোহ থেকে নিজেকে অব্যাহতি দেবেন না?

নিন্দুকেরা বলেন, মেয়ে সোহিনী আর জামাই কল্যাণ চৌবেকে ক্লাবে শক্তপোক্ত জায়গা করে দিতেই অঞ্জন মিত্রের এই লড়াই। কেন অঞ্জনদা, ওঁরা নিজেদের জায়গাটা নিজেরা তৈরি করতে পারবেন না? আর তার জন্য এই জায়গায় চলে যাবে দীর্ঘ দিনের সফল মোহনবাগান ক্লাবের নামজাদা কর্তারা? প্রশ্নটা যদিও করে উঠতে পারিনি।

বার্ষিক সাধারণ সভার সেই দৃশ্য।

শুধু অঞ্জন মিত্রকে নয়, প্রশ্ন টুটু বসুদের কাছেও। ওই লোকটা তো অসুস্থ, তাঁকে আর একটু সম্মান দেওয়া গেল না? টুটু বসু না হয় বন্ধুস্থানীয়। তা-ও তিনি সর্বসমক্ষে অঞ্জন মিত্রকে কখনও অপমান করেননি। এর মধ্যেও ক্লাবের প্রয়োজনে টাকা দিয়েছেন। কিন্তু ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় মঞ্চের নিচে দাঁড়িয়ে সৃঞ্জয় বসু গলা ফাটিয়ে যে চিৎকারটা করছিলেন, তা কি তাঁকে শোভা পায়?

দেবাশিসদা আপনিও তো এই নোংরামোকে আটকালেন না! গর্ব করে মোহনবাগান ক্লাবের পরিচালনা নিয়ে আর কী বলতে পারবেন সমর্থকরা? এত দিন পর যে সঞ্জয় সেনের হাত ধরে আই লিগ, শঙ্করলাল চক্রবর্তীর হাত ধরে কলকাতা লিগ এল ক্লাবে, সে সব তো আপনাদেরও সাফল্য। আপনাদের যৌথ সাফল্য। স্পনসরহীন, টাকার হাহাকার, তার মধ্যেই দল বানিয়েছেন আপনারা। সেই দল ট্রফি জিতেছে। গলা মিলিয়ে গলা ফাটানো যেত না দলের সঙ্গে?

অঞ্জন মিত্র কেন নমিনেশন জমা দিয়েও শেষ দিন তুলে নিলেন তা নিয়ে ময়দানে অনেক জল্পনা। তিনি আসলে টুটুদের সঙ্গে জোট করেই লড়তে চেয়েছিলেন। সেটা না হওয়ায় তিনি বুঝে গিয়েছিলেন তাঁর এত দিনের জয়ের ইতিহাস এ বার বদলাতে চলেছে। তাই হারটা মানা সম্ভব নয়। আর সে কারণেই সরে দাঁড়ানো। তাঁর সঙ্গে সরে দাঁড়িয়েছেন হকি সচিবের পদে নমিনেশন দায়ের করা শৈলেন ঘোষ আর এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য শুভাশিস পাল। বাকিরা লড়বেন। যদিও অঞ্জন মিত্র সরে দাঁড়ানোর পর বল এ বার পুরোপুরি টুটুদাদের কোর্টে। কারণ যাই হোক না কেন, এই সিদ্ধান্তের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ অঞ্জন মিত্র।